জন্মহার ও মৃত্যুহার বলতে কী বোঝ?: জন্মহার ও মৃত্যুহার কোনো দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। কোনো দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার বিভিন্ন কারনের উপর নির্ভর করে। কোনো নিদিষ্ট সংখ্যক মানুষ নিদিষ্ট সময়ে যত জন শিশুর জন্ম দেয়, তার হারকে জন্মহার বলা হয়। জন্মহার নির্নয়ের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হল স্থূল জন্মহার।
স্থূল জন্মহার – প্রতি ১০০০ জন মানুষ পিছু সাধারণত এক বছরে যত জন জীবিত শিশুর জন্ম হয়, তাকে স্থূল জন্মহার বলে।
উদাহরণ – ২০১৯ সালে ভারতের জন্মহার ১৭.৮ জন/হাজার
বৈশিষ্ট্য
ক) জন্মহারের উপর নির্ভর করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রকৃতি নির্ধারিত হয়।
খ) জন্মহারের প্রকৃতি বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। যথা – শিক্ষার মান, মাথাপিছু আয়, পরিবার পরিকল্পনা, অবসর সময়, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার প্রভৃতি।
গ) সময়ের উপর নির্ভর করে দেশের জন্মহার পরিবর্তিত হয়।
ঘ) ধনাত্মক জন্মহার জনাধিক্য অবস্থা এবং ঋনাত্মক জন্মহার জনস্বল্পতা অবস্থার সৃষ্টি করে।
মৃত্যুহার – জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি উপাদান বা নিয়ন্ত্রক হল মরণশীলতা বা মৃত্যুহার। একটি নিদিষ্ট সময়ে যে জনসংখ্যার মৃত্যু হয়, তার হার কে মৃত্যুহার বলে। এই হার সাধারণত প্রতি হাজারে বা শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।
স্থূল মৃত্যুহার – প্রতি হাজার জন মানুষ পিছু একবছরে যত জন লোক মারা যায়, তাকে স্থূল মৃত্যুহার বলে।
উদাহরণ – ২০১৭ সালে ভারতের মৃত্যুহার ৭.২১ জন/হাজার
বৈশিষ্ট্য
ক) মৃত্যুহার জন্মহারের তুলনায় অধিক হলে জনসংখ্যা হ্রাস পায়।
খ) দারিদ্রতা, অপুষ্টি, চিকিৎসার অবনতি প্রভৃতি মৃত্যুহারকে ত্বরান্বিত করে।
গ) মৃত্যুহার কোন দেশের বয়স-লিঙ্গ পিরামিড ও লিঙ্গ অনুপাতকে পরিবর্তিত করে।
ঘ) সময়ভেদে কোনো দেশের মৃত্যুহার পরিবর্তিত হয়।
জন্মহার ও মৃত্যুহারের প্রধান প্রধান পার্থক্য গুলি হল –
1. সংজ্ঞাগত পার্থক্য
- প্রতি এক হাজার জন মানুষ পিছু কত জন জীবন্ত শিশুর জন্ম হয়, তাকে জন্মহার বলে।
- অন্যদিকে একটি নিদিষ্ট সময়ে প্রতি ১০০০ হাজারে কত জন লোক মারা যায়, তাকে মৃত্যুহার বলে।
2.জনসংখ্যার বৃদ্ধি- হ্রাস গত পার্থক্য
- জন্মহারের পরিমান বৃদ্ধি পেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
- অন্যদিকে মৃত্যু হার বাড়লে জনসংখ্যা হ্রাস পায়।
3. আর্থ-সামাজিক অবস্থা
- উচ্চ জন্মহার অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারকে নির্দেশ করে। নিম্ন জন্মহার উন্নত আর্থ-সামাজিক চরিত্রকে প্রকাশ করে।
- অন্যদিকে উচ্চ মৃত্যুহার অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিফলক এবং নিম্ন মৃত্যুহার চিকিৎসা ব্যবস্থার সূলভ বিকাশকে ইঙ্গিত করে।