মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন? Why Famous Matangini Hazra

Rate this post

মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন? Why Famous Matangini Hazra: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা।1870 খ্রিস্টাব্দের 19শে অক্টোবর মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার হোগলা গ্রামে তার জন্ম হয়। মাত্র আঠারো বছর বয়সী তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন।

স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান-1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় মাতঙ্গিনী হাজরা প্রত্যক্ষভাবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মতাদর্শগতভাবে গান্ধীবাদী এই মহিলা 1930 খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলনেও যোগদান করেন এবং তমলুক মহাকুমার আলিনান লবণ কেন্দ্রে লবণ আইন অমান্য করে কারারুদ্ধ হন। অল্প কাল পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

চৌকিদারী কর বন্ধ আন্দোলন-জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাতঙ্গিনী হাজরা চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলনে যোগ দেন এবং “গভর্নর ফিরে যাও” ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে পুনরায় কারাদণ্ডে দন্ডিত হন।

জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান-জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যা হিসাবে সমাজ সেবার কাজে যুক্ত হন। এই সময় তিনি নিজের হাতে চরকা কেটে খাদি কাপড় তৈরি করতেন। 1933 খ্রিস্টাব্দে তিনি শ্রীরামপুরে জাতীয় কংগ্রেসের মহকুমা অধিবেশনে যোগ দিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন-1942 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর ডাকে ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে মাতঙ্গিনী হাজরা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।1942 খ্রিস্টাব্দের 29 শে সেপ্টেম্বর 73 বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা দখল অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির 144 ধারা জারি করে সমাবেশ ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি মিছিলের অগ্রভাগে “বন্দেমাতরম” ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেন।

মৃত্যুবরণ-144 ধারা অমান্য করায় ব্রিটিশ পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালালে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কিন্তু মাতঙ্গিনী হাজরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে চলেন। এই সময় ব্রিটিশ পুলিশ তার দুহাতে ও পরে কপালে গুলি করে। এর ফলে মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার হাত থেকে জাতীয় পতাকা মুষ্ঠিচ্যুত হয়নি।

মূল্যায়ন-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। বাল্যবিধবা ও নিঃসন্তান এই মহিলার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান ও তার নির্ভীক সংগ্রাম তাঁকে ভারতবাসীর মনে স্মরণীয় করে রেখেছে। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারতছাড়ো আন্দোলনে যোগদান ও নেতৃত্ব দানের জন্য তিনি আজও আমাদের কাছে ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

Leave a Comment