বীণা দাশ স্মরণীয় কেন? Bina Das

Rate this post

বীণা দাশ স্মরণীয় কেন? Bina Das: ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে আদর্শবোধ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে সমস্ত নারী নিজেদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছিলেন তাদের মধ্যে বীণা দাশের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।1911 খ্রিস্টাব্দের ২4শে আগস্ট বাংলাদেশের কৃষ্ণনগরে বীণা দাশ জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবা বেনীমাধব দাশ ছিলেন বিশিষ্ট ব্রাহ্ম শিক্ষক এবং মা সরলা দেবী ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী।

রাজনৈতিক আন্দোলন: 1930 গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে বীণা দাশ সেই আন্দোলনে যোগদান করেন। কিন্তু 1931 খ্রিস্টাব্দে গান্ধী-আরউইন চুক্তির পর গান্ধীবাদী আন্দোলনের প্রতি তিনি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতার ছাত্রী সংঘে যোগ দেন।

স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা: কলকাতার সেন্ট জন ডায়োসেশন কলেজের ছাত্রী ছিলেন বীণা দাশ।1932 খ্রিস্টাব্দের 6ই ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসাবে ভাষণরত বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে তিনি গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেন। যৌবনের প্রারম্ভে অস্ত্র চালানো শিক্ষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করলেও কার্যক্ষেত্রে তাকে ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়। তোমার চালানো গুলি লক্ষ্যভষ্ট হয়।

গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড: বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টার অপরাধী ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং বিচারে তার 9 বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়। প্রথমে তাকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এবং পরে মেদিনীপুর জেলা স্থানান্তরিত করা হয়। মেদিনীপুর জেলে থাকার সময় তিনি জেলরের অত্যাচারের প্রতিবাদে জেলের ভেতর অনশন শুরু করেছিলেন।

শেষ জীবন: 1939 খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে মুক্তি লাভের পরেও বীণা দাশ স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যান। ‘মন্দিরা’ নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাবধারা প্রচার করতেন।1942 খ্রিস্টাব্দের ভারতছাড়ো আন্দোলনও তিনি যোগদান করেছিলেন এবং 3 বছর কারাদন্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। ‘শৃংখল ঝংকার’ এবং ‘পিতৃদান’ নামক দুটি আত্মজীবনী তিনি রচনা করেন। অবশেষে 1986 খ্রিস্টাব্দের 26শে ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশে ঋষিকেশে বা হরিদ্বারে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মূল্যায়ন: ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে বীণা দাশের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে তার যোগদান প্রদান করে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই। তার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ তৎকালীন ভারতীয় নারী সমাজকে বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদানের প্রেরণা জুগিয়েছিল। শুধু সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনেই নয়, স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও তিনি দেশের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন।

Leave a Comment