ভারতরত্ন পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা: ভারতরত্ন হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি এই সম্মান চালু হয়। জাতি, পেশা, পদমর্যাদা বা লিঙ্গ নির্বিশেষে “সর্বোচ্চ স্তরের ব্যতিক্রমী সেবা/কার্যের স্বীকৃতি স্বরূপ” এই সম্মান প্রদান করা হয়। প্রথম দিকে এই সম্মান কেবলমাত্র শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও জনসেবায় বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারীদেরই দেওয়া হত। কিন্তু ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত সরকার এই সম্মান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে “মানবিক কৃতিত্বের যে কোনো ক্ষেত্র” নামে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে। যাকে ভারতরত্ন প্রদান করা হয় তার নাম ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন। বছরে সর্বোচ্চ তিন জনকে ভারতরত্ন সম্মান প্রদান করা হয়। প্রাপক ভারতের রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর-সংবলিত একটি সনদ (প্রশংসাপত্র) এবং অশ্বত্থ পাতার আকৃতি-বিশিষ্ট একটি পদক পান। এই সম্মানের সঙ্গে কোনো অর্থমূল্য দেওয়া হয় না। ভারতীয় পদমর্যাদা ক্রমে ভারতরত্ন প্রাপকদের স্থান সপ্তম। তবে এই সম্মানের নাম উপাধি হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা আছে।
১৯৫৪ সালে রাজনীতিবিদ চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ও বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন ভারতরত্ন সম্মান পান। তারাই ছিলেন এই সম্মানের প্রথম প্রাপক। তারপর থেকে ৪৫ জন ব্যক্তি এই সম্মান পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ জনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদানের ব্যবস্থা না থাকলেও ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। ১৯৬৬ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রথম মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান পান। ২০১৩ সালে ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর ৪০ বছর বয়সে ভারতরত্ন সম্মান পান। তিনিই কনিষ্ঠতম ভারতরত্ন প্রাপক। অন্যদিকে ধোন্দো কেশব কার্ভেকে তার ১০০তম জন্মদিনে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়। সাধারণত ভারতীয় নাগরিকদের এই সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ১৯৮০ সালে বিদেশি-বংশোদ্ভূত ভারতীয় নাগরিক মাদার টেরেসা ভারতরত্ন সম্মান পান। এছাড়া দু-জন বিদেশি নাগরিককেও ভারতরত্ন সম্মান প্রদান করা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানি নাগরিক খান আবদুল গফফর খান এবং ১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা ভারতরত্ন সম্মান পান। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামী মদনমোহন মালব্য (মরণোত্তর) ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে এই সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
১৯৭৭ সালের জুলাই মাস থেকে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারতের প্রথম অকংগ্রেসী কেন্দ্রীয় সরকার অন্যান্য ব্যক্তিগত বেসামরিক সম্মাননার সঙ্গে ভারতরত্ন সম্মানও রদ করেছিল। এরপর ১৯৯২ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই সম্মানের সাংবিধানিক বৈধতা-সংক্রান্ত কয়েকটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বার এই সম্মান প্রদান বন্ধ ছিল। ১৯৯২ সালে সরকার সুভাষচন্দ্র বসুকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান প্রদান করতে চাইলে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থাকায়, এই সম্মানের সঙ্গে মরণোত্তর শব্দটি যুক্ত করায় সমালোচিত হয় এবং সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার এই সম্মান গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ১৯৯৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্তের পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুভাষচন্দ্র বসুর সম্মাননা প্রদান বাতিল করা হয়। এই একবারই সম্মাননা ঘোষণার পর সেটি বাতিল করা হয়েছিল।
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয় সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও ইন্দিরা গান্ধী যথাক্রমে ১৯৫৫ এবং ১৯৭১ সালে মনোনীত হওয়ায় সমালোচিত হয়েছেন। কে কামারাজ (১৯৭৬) এবং এম জি রামচন্দ্রনের (১৯৮৮) মরণোত্তর পুরস্কার অর্জন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারণার লক্ষ্যে হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। বল্লভভাই পটেল (১৯৯১) ও মদনমোহন মালব্যের (২০১৫) মরণোত্তর পুরস্কার অর্জনও সমালোচিত হয়েছিল।
ভারতরত্ন পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা
নং | নাম | সাল | বিবরণ |
---|---|---|---|
১ | চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী | ১৯৫৪ | ভারতের শেষ গভর্নরজেনারেল |
২ | চন্দ্রশেখৰ ভেঙ্কটরমন | ১৯৫৪ | পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী |
৩ | ড: সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন | ১৯৫৪ | ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি |
৪ | ভগবান দাস | ১৯৫৫ | স্বাধীনতা সংগ্রামী ও লেখক |
৫ | এম. বিশ্বস্বরেয়া | ১৯৫৫ | মহীশূরের দেওয়ান, বাস্তুবিদ |
৬ | জওহরলাল নেহেরু | ১৯৫৫ | স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী |
৭ | গোবিন্দ বল্লভ পন্থ | ১৯৫৭ | ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী |
৮ | ধোন্দেকেনাব কার্ভে | ১৯৫৮ | সমাজ সংস্কার ও শিক্ষাবিদ |
৯ | ড: বিধান চন্দ্র রায় | ১৯৬১ | ভারতের বিখ্যাত চিকিৎসক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী |
১০ | পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন | ১৯৬১ | শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী |
১১ | ড: রাজেন্দ্র প্রাসাদ | ১৯৬২ | স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি,স্বধীনতা সংগ্রামী |
১২ | ড: জাকির হুসেন | ১৯৬৩ | স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি |
১৩ | পুন্ডুরঙ্গ বামান কানে | ১৯৬৩ | ভারতত্ত্ববিদ ও সংস্কৃত সাহিত্যে পন্ডিত |
১৪ | লাল বাহাদুর শাস্ত্রী | ১৯৬৬ | প্রথম মরোণত্তর ভারতরত্নপাপ্ৰক,ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী |
১৫ | ইন্দিরা গান্ধী | ১৯৭১ | ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী |
১৬ | ভি.ভি. গিরি | ১৯৭৫ | শ্রমিক নেতা ও ভারতের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি |
১৭ | কে. কামরাজ | ১৯৭৬ | তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
১৮ | মাদার টেরেসা | ১৯৮০ | মিশনারি অফ চ্যারিটি- এর প্রতিষ্ঠাত্রী, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তা |
১৯ | বিনবো ভাবে | ১৯৮৩ | সমাজ সংস্কারক, স্বাধীনতা সংগ্রামী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২০ | খান আব্দুল গফ্ফর খান | ১৯৮৭ | স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতীয় নাগরিক না হয়ে প্রথম উপাধি প্রাপ্ত |
২১ | এম. জি. রামচন্দ্রন | ১৯৮৮ | চিত্রাভিনেতা, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২২ | বি. আর. আম্বেদকর | ১৯৯০ | ভারতীয় সংবিধানের প্রধান রূপকার, অর্থনীতিবিদ (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২৩ | নেলসন ম্যান্ডেলা | ১৯৯০ | দক্ষিন আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি, দ্বিতীয় অ-নাগরিক ব্যক্তি উপাধি প্রাপ্ত |
২৪ | রাজীব গান্ধী | ১৯৯১ | ভারতের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২৫ | বল্লভ ভাই প্যাটেল | ১৯৯১ | ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২৬ | মোরারজি দেশাই | ১৯৯১ | স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী |
২৭ | আবুল কালাম আজাদ | ১৯৯২ | ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
২৮ | জে. আর. ডি. টাটা | ১৯৯২ | ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি |
২৯ | সত্যজিৎ রায় | ১৯৯২ | বিশ্ববিখ্যাত চলচিত্র পরিচালক, লেখক ও শিল্পী |
৩০ | এ. পি. জে আব্দুল কালাম | ১৯৯৭ | ভারতের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক,একাদশ রাষ্ট্রপতি |
৩১ | গুলজারিলাল নন্দা | ১৯৯৭ | স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী |
৩২ | অরুণা আসফ আলি | ১৯৯৭ | স্বাধীনতা সংগ্রামী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
৩৩ | এম. এস. শুভলক্ষ্মী | ১৯৯৮ | কর্ণাটকী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞা |
৩৪ | সি. সুব্রমনিয়ম | ১৯৯৮ | স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ভারতের কৃষিমন্ত্রী |
৩৫ | জয়প্রকাশ নারায়ণ | ১৯৯৯ | স্বাধীনতা সংগ্রামী, রাজনীতিবিদ (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
৩৬ | রবিশঙ্কর | ১৯৯৯ | বিশ্ববিখ্যাত সেতার বাদক |
৩৭ | অমর্ত্য সেন | ১৯৯৯ | বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত |
৩৮ | গোপীনাথ বরদলৈ | ১৯৯৯ | অসমের মুখ্যমন্ত্রী (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
৩৯ | লতা মঙ্গেশকর | ২০০১ | ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ |
৪০ | বিসমিল্লা খাঁ | ২০০১ | ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সানাই বাদক |
৪১ | ভীমসেন যোশী | ২০০৮ | ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ |
৪২ | সি. এন. আর. রাও | ২০১৪ | বৈজ্ঞানিক |
৪৩ | সচিন টেন্ডুলকার | ২০১৪ | বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় |
৪৪ | মদন মোহন মালব্য | ২০১৫ | শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ (মরনোত্তর উপাধি প্রাপ্ত) |
৪৫ | অটলবিহারী বাজপেয়ী | ২০১৫ | ভারতের প্রধানমন্ত্রী |
৪৬ | প্রণব মুখার্জি | ২০১৯ | ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি |
৪৭ | ভূপেন হাজারিকা | ২০১৯ | গায়ক , লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞ |
৪৮ | নানাজী দেশমুখ | ২০১৯ | সমাজ সেবি |