গ্রিন হাউস এফেক্ট এর কারণ ব্যাখ্যা কর

Rate this post

গ্রিন হাউস এফেক্ট এর কারণ ব্যাখ্যা কর: গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ ভূপৃষ্ঠে উপস্থিতিতেও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের তথা বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।

মূলত সৌর বিকিরণ দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ভূপৃষ্ঠ পরবর্তীকালে এই শক্তি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে অবলোহিত রশ্মি আকারে নির্গত করে। এই অবলোহিত রশ্মি বায়ুমণ্ডলস্থ গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে অনেক বেশি শক্তি আকারে ভূপৃষ্ঠে ও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে পুনঃবিকিরিত হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে সাধারণত কাচ নির্মিত গ্রিন হাউস তৈরি করে উদ্ভিদ উৎপাদন করার পদ্ধতি অনুসরণ এই প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়।

একটি গ্রিন হাউসে সৌর বিকিরণ কাচের মধ্য দিয়ে গ্রিন হাউসটিকে উত্তপ্ত রাখে,এখানে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে গ্রিন হাউসটিকে বাতাসের প্রবাহ হ্রাস করে উত্তপ্ত বাতাস কাচের কাঠামোর মধ্যে পরিচলন ব্যতিরেকে ধরে রাখতে পারে। সূর্য থেকে পৃথিবীর মতো দূরত্বে যদি কোনো আর্দশ তাপগ্রিনসুপরিবাহী কৃষ্ণবস্তু (আর্দশ ভৌত পদার্থ যা তার উপর আপতিত সকল তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ শোষণ করতে পারে) থাকত তাহলে বস্তুটির তাপমাত্রা হত প্রায় ৫.৩° সেলসিয়াস। যেথপৃথিবী িবী তার দিকে আগত সৌররশ্মির ৩০ শতাংশ প্রতিফলন করে সেহেতু, এই আর্দশ গ্রহের কার্যকর তাপমাত্রা (একটি কৃষ্ণবস্তুও এই সমপরিমাণ তাপমাত্রা বিকিরণ করবে) হবে প্রায় গ্রিন১৮° সেলসিয়াস। এই কল্পিত গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩৩° সেলসিয়াসের নিচে যেখানে পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রকৃত তাপমাত্রা প্রায় ১৪° সেলসিয়াস।বায়ুমণ্ডলেরডলের কারণে যে প্রক্রিয়া পৃষ্ঠের প্রকৃত তাপমাত্রা ও কার্যকর তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে তা গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া।

পৃথিবীতে এই প্রাকৃতিক গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া প্রাণের সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু, মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশেষত, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত দহন এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হচ্ছে ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে পৃথিবী যে সমস্থ জটিল সমস্যায় জর্জরিত তার মধ্যে অন্যতম হল গ্রিন হাউস এফেক্ট। তাই আমাদের গ্রিন হাউস এফেক্টের কারণ ব্যাখ্যা করার আগে “গ্রিন হাউস এফেক্ট” বলতে সাধারণত কি বোঝানো হয় তার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিম্নে গ্রিন হাউস এফেক্ট কী ও গ্রিন হাউস এফেক্টের কারণ ব্যাখ্যা করা হল।

গ্রিন হাউস এফেক্ট – গ্রিন হাউস কথাটি প্রধানত উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয়। শীত প্রধান দেশে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য কাচের ঘর ব্যবহার করা হয়। এই কাঁচের ঘরের মধ্যে যে পরিমান সূর্যালোক প্রবেশ করে ঠিক সেই পরিমান সূর্যালোক কাঁচের ঘর ভেদ করে বেরোতে পারেনা বলে কাঁচের ঘরের উষ্ণতা বাইরের থেকে অনেকটাই বেশি হয় যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

বর্তমানে পৃথিবীও এক বিশাল গ্রিন হাউসে পরিনত হতে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, কাঁচের ঘরের মতো পৃথিবীকে বেস্তন করে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। এই বায়ুমণ্ডল ভেদ করে দিনের বেলা যে পরিমান সূর্যালোক প্রবেশ করে রাতের বেলা সেই সূর্যালোক পার্থিব বিকিরনের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়, ফলে পৃথিবীতে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে।

কিন্তু বায়ুমণ্ডলে কিছু কিছু গ্যাস রয়েছে যাদের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। যেমন – কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), ক্লোরোফ্লোরোকার্বন(CFC), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), ওজোন (O3) ও জলীয় বাষ্প (H2O) প্রভৃতি। পৃথিবী থেকে পার্থিব বিকিরন রূপে যে পরিমান তাপ নির্গত হওয়ার কথা তা হচ্ছে না এই গ্যাস গুলি এই বিকিরিত তাপের কিছু অংশ শোষণ করে নেয়। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনা কে গ্রিন হাউস এফেক্ট বলে এবং উপরিক্ত গ্যাস গুলি কে গ্রিন হাউস গ্যাস বলে।

গ্রিন হাউস এফেক্ট এর কারণ

মানুষের বিভিন্ন কাজকর্মের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাস গুলির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে এই সব গ্যাস গুলির দ্বারা তাপ শোষণের পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সমস্ত উৎস থেকে এই গ্রিন হাউস গ্যাস গুলি নির্গত হচ্ছে ও গ্রিন হাউস এফেক্ট কে ত্বরান্বিত করছে, তা নিচে আলোচনা করা হল –

১. জীবাশ্ম জ্বালানির দহন – কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি কলকারখানা, যানবাহন চলাচলে ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সব জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে বাতাসে প্রচুর পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।

২. ক্লোরোফ্লোরোকার্বন  (CFC) ব্যবহার – হিমায়ন প্রক্রিয়া, রং শিল্প ও ইলেক্ট্রনিক শিল্পে প্রচুর CFC ব্যবহার হয়। ফলে বাতাসে CFC পরিমান বৃদ্ধি পায়।

৩. কৃষিতে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার – কৃষি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়। এই নাইট্রোজেন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন করে।

৪. জৈব আবর্জনার পচন – নানা ধরণের জৈব আবর্জনা পচে, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের পচন ও গবাদি পশুর মলমূত্র থেকে প্রচুর পরিমানে মিথেন গ্যাস বাতাসে মিশে।

৫. অন্যান্য গ্যাস – ওজোন গ্যাসের ধ্বংসের ফলে বায়ুওমন্ডলের উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া জলবায়ুগত পরিবর্তনে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারন করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমান বাড়ছে।

উপরিক্ত কারণ গুলির জন্য বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমান মাত্রারিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে।

Leave a Comment