আন্দ্রে ভেসালিয়াস জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Andreas Vesalius Biography in Bengali. আপনারা যারা আন্দ্রে ভেসালিয়াস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আন্দ্রে ভেসালিয়াস এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
আন্দ্রে ভেসালিয়াস কে ছিলেন? Who is Andreas Vesalius?
আন্দ্রেআস ভেসালিউস (৩০ ডিসেম্বর ১৫১৪ – ১৫ অক্টোবর ১৫৬৪) বেলজিয়ামের ব্রাসেল শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৫২৯-১৫৩৩ পর্যন্ত অউভনিআ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন। তিনি ১৫৩৭ সালে আর-রাজির উপর গবেষণা করেন। তিনি শারীরসংস্থানবিদ্যার জনক। তিনি ১৫৪৪ সালে আন্নেন হ্যামকে বিয়ে করেন। ১৫৬৪ সালে গ্রিসের আয়োনীয় সাগরের দ্বীপ জাকিনথোসে তিনি মারা যান।
আন্দ্রে ভেসালিয়াস জীবনী – Andreas Vesalius Biography in Bengali
নাম | আন্দ্রে ভেসালিয়াস |
জন্ম | 31 ডিসেম্বর 1514 |
পিতা | অ্যান্ডার্স ভ্যান ওয়েসেল |
মাতা | ইসাবেল ক্র্যাবে |
জন্মস্থান | ব্রাসেলস, হ্যাবসবার্গ নেদারল্যান্ডস (আধুনিক বেলজিয়াম) |
জাতীয়তা | বেলজিয়াম |
পেশা | অ্যানাটমিস্ট, চিকিতসক |
মৃত্যু | 15 অক্টোবর 1564 (বয়স 49) |
আন্দ্রে ভেসালিয়াস এর জন্ম: Andreas Vesalius’s Birthday
আন্দ্রে ভেসালিয়াস ১৫১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
আন্দ্রে ভেসালিয়াস এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Andreas Vesalius’s Parents And Birth Place
ষোড়শ শতাব্দীর প্যারিস। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগের খুব নামযশ তখন। দারুণ এক গুণী অধ্যাপক জেকোবাস সিলভিয়াস সশরীরে বর্তমান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ফলে দেশ বিদেশের ছাত্রদের ভিড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগে। তরুণ আন্দ্রে ভেসালিয়াসও এসেছেন এই অধ্যাপকের নামডাক শুনে। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাশ করবার পরেই তাঁর আক্কেল গুডুম। মন হতাশায় ভরে গেল। বস্তাপচা পুরনো সব তত্ত্ব নিয়ে কেবল ঘাঁটাঘাঁটি করছেন অধ্যাপক।
নতুন কোন ভাবনার কথা জানাবার গরজও নেই, ভাবনাও যে আছে, তা পড়াবার ধরন ধারণ দেখে মনে হয় না। বিরক্ত হতাশ ভেসালিয়াস তবু ধৈর্য ধরে অধ্যাপকের ভ্যানরভ্যানর শুনে চলেন। কি করবেন অতঃপর সেই চিন্তা অনবরত মাথায় পাক খেতে থাকে। শব ব্যবচ্ছেদের ক্লাশে যেদিন ঢুকলেন, সেদিন ধৈর্য রক্ষা করাই কষ্টকর হল তাঁর পক্ষে। টেবিলের ওপর শায়িত একটা মৃতদেহ। পচা গন্ধে ভুরভুর করছে ঘর। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে অধ্যাপক সিলভিয়াস যা বলতে শুরু করলেন, সেসব কথা একহাজার বছরের পুরনো।
সেই কবে গ্যালেন তাঁর ধারণার কথা যেমন যেমন বলে গেছেন, তিনিও তাই নির্বিকারভাবে আবৃত্তিকরে চলেছেন। স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত যেন। হাতে লম্বা ছোরা নিয়ে কশাইমার্কা চেহারার এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের পাশে ৷ সিলভিয়াসের হুকুম মত এটা ওটা সেটা খটাখট কেটে চিমটের ডগায় তুলে এগিয়ে দিচ্ছে। সেই অংশের দিকে ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলভিয়াস এমন ভাব করছেন যেন মানব শরীরের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার নখদর্পণে।
ছাত্ররাও অধ্যাপকের করিৎকর্ম দেখে মুগ্ধ। কিন্তু একমাত্র মুগ্ধ হতে পারেন না একজন, তিনি ভেসালিয়াস। কেবল তিনিই বুঝতে পারছেন, অধ্যাপকের মুখ থেকে যা বেরিয়ে আসছে তা নিতান্তই ভূষিমাল ৷ সারা ইউরোপ জুড়ে প্রফেসর সিলভিয়াসের অ্যানাটমির নামডাক। আর ভেসালিয়াস হলেন এক পুঁচকে ছাত্র। তার কি অধ্যাপক্রে কথার কোন প্রতিবাদ করা সাজে। না তা ধোপে টিকবে। বিশেষ করে অধ্যাপক নিজে যেখানে আত্মসন্তুষ্টিতে টগবগ করছেন ৷ ডেকে বিপদ আনতে আর কে চায়। তাই সিলভিয়াসকেও সব জেনে বুঝে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হয়। দিনের পর দিন কাটে শেখার ঘরে টুটু। সময়ের এমন অপচয় কাঁহাতক সহ্য হয়? ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ল একদিন।
শবব্যবচ্ছেদের ঘরে সেদিনও অধ্যাপকের সঙ্গে ছাত্ররা জড়ো হয়েছে শবের টেবিল ঘিরে। সিলভিয়াস কি আদেশ করলেন, সেই কশাইমার্কা চেহারার ভদ্রলোক, শবের শরীর হাতড়ে চলেছেন, কিন্তু খুঁজে আর পাচ্ছেন না কিছুতে। অধ্যাপক নাকে রুমাল চেপে ছোঁয়াছুঁয়ির সীমার বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত হাঁক পাড়ছেন, ভাল করে খুঁজলেই শবের শরীরে অংশটা খুঁজে পাওয়া যাবে। কশাই ভদ্রলোকের বেগতিক অবস্থা দেখে ভেসালিয়াস আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। একবার সভয়ে অধ্যাপকের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলেন। কশাই ভদ্রলোককে সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই ক্লাশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। নির্বিকারভাবে, মৃতদেহের নানা অংশ তুলে ধরে মনোগ্রাহী ভাষণে বুঝিয়ে দিতে থাকেন ছাত্রদের।
অপ্রস্তুত অধ্যাপক দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন আগের মতই। কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা গেল যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তিনি এই বিদেশি ছাত্রের স্পর্ধা দেখে। কিন্তু ভেসালিয়াসের বক্তৃতা আর শবাংশ প্রদর্শনের কায়দায় ছাত্ররা এমনই মগ্ন হয়ে গেছে যে তার দিকে খেয়াল দেবার কথাও তাদের মন থেকে মুছে গেছে। নিঃশব্দে অপমান হজম করে সবার অলক্ষ্যে ক্লাশ থেকে সরে পড়েন তিনি। মাত্র আধঘন্টার ক্লাশ নিয়েছেন ভেসালিয়াস, তার মধ্যেই তিনি সব ছাত্রের মন জয় করে নিলেন। ক্লাশ শেষ হলে সকলে তাঁকে উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জানিয়ে যে যার নিজের জায়গায় চলে গেল।
আন্দ্রে ভেসালিয়াস এর প্রথম জীবন: Andreas Vesalius’s Early Life
এদিকে সিলভিয়াস যথেষ্ট অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হলেও তখনই ভেসালিয়াসকে কিছু বললেন না। বুদ্ধিমান তিনি। প্যারিসে অধ্যাপনার সঙ্গে ভাল দর্শনির জমজমাট কোচিং ক্লাশ খুলেছেন তিনি। পাছে তার এই জমিয়ে বসা আসরের সুনাম বিঘ্নিত হয়ে তার আর্থিক ক্ষতির কারণ ঘটায় সেই আশঙ্কায় সাময়িকভাবে চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধির কাজ বলে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু মনে মনে প্রস্তুত হয়ে রইলেন সুযোগের, সেই সময়েই অপমানের সমুচিত জবাব দেবেন। এই দিনের ঘটনা থেকে ছাত্ররা এটা বুঝে গিয়েছিল যে ভেসালিয়াসের কাছ থেকে তাদের জানার বিষয় যথেষ্ট রয়েছে। তারা অধ্যাপককে অনুরোধ জানান প্রতিদিন অন্ততঃ একটি অ্যানাটমিব ক্লাশ ভেসালিয়াসকে ছেড়ে দেবার জন্য। বাধ্য হয়েই ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে হল সিলভিয়াসকে।
ভেসালিয়াস এই আকস্মিক যোগায়োগেই ছাত্রদের মধ্যে হিরো বনে গেলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না যে ছাত্র হিসেবে তাঁর এই ঔদ্ধত্য সিলভিয়াসকে তার শত্রু করে তুলেছে। সেদিন বুঝতে না পারলেও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন উত্তরকালে। প্রিয় বিষয় অ্যানাটমি থেকে তাঁকে সেদিন মাথা নত করে দূরে সরে আসতে হয়েছিল। বড় বেদনাময় সেই ঘটনা। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগে ছাত্র হিসেবে পড়তে এসেছিলেন ভেসালিয়াস। কিন্তু শবব্যবচ্ছেদ ঘরে নিয়মিত ছাত্রদের ক্লাশ নেবার অঘটনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে হল তাকে অদ্ভুতভাবে।
সেই সময়ে বয়স তাঁর মাত্র আঠার। সময় ও বয়স অনুপাতে জ্ঞানের সমৃদ্ধিই তাঁর জীবনে এমন একটি অঘটন সম্ভব করেছিল। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস। এই শহরেরই এক প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক পরিবারে জন্ম হয়েছিল ভেসালিয়াসের। বংশানুক্রমে চিকিৎসাবিদ্যা এই পরিবারের পেশা। রক্তে সেই প্রবণতা নিয়েই জন্মেছিলেন ভেসালিয়াস ৷ তাঁর মা – ও ছিলেন বিদুষী। ষোড়শশতকের পরিবেশে রীতিমত এক ব্যতিক্রম। রান্নার কাজের ফাকে ফাকে পড়াশোনা করবেন বলে, রান্নার ঘরের পাশের ঘরেই নানা বিষয়ের বই জড়ো করে রীতিমত একটা লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
চিকিৎসক পরিবারের বউ হিসেবে স্বাভাবিক কারণেই চিকিৎসাবিদ্যার বই পড়তেই বেশি ভালবাসতেন তিনি। মায়ের এই পাঠাভ্যাস অতি অল্প বয়সেই দাগ কেটেছিল ভেসালিয়াসের মনে। স্বভাবতঃই এই পরিবেশে ভবিষ্যতে বড়চিকিৎসকহবার স্বপ্ন রূপ লাভ করেছিল তাঁর মনে। মায়ের উৎসাহে নানা রোগের কারণ নিয়ে মাথা ঘামাবার অভ্যাস ছোটবেলাতেই গড়ে উঠেছিল ভেসালিয়াসের। শরীরের কোন অংশে কি রকম বৈকল্য দেখা দিলে কোন রোগের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠার কারণ ঘটে তা জানার আগ্রহের সীমা ছিল না তাঁর। ব্যাঙ, ছুঁচো, টিকটিকি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার অভ্যাসও সেই ছেলেবেলাতেই শুরু।
রান্নাঘরের টেবিলেই ছুরি দিয়ে কাটাকুটি, ঘেঁটে ঘেঁটে নানা প্রাণীর শরীর দেখা, পরিচিত হওয়া বিভিন্ন অংশের সঙ্গে — এসব ব্যাপারে মায়ের উৎসাহ বরাবর তার সহায় হয়েছে। শরীরের কোন অংশের কি কাজ, কোথায় কোন প্রত্যঙ্গ কিভাবে থাকে- মায়ের মুখে শুনতে শুনতে বড় হয়ে উঠেছেন ভেসালিয়াস খোলা মন, খোলা চোখ আর খোলাখুলি পরীক্ষা সেই সঙ্গে যখন বই পড়া বিদ্যার যোগ হয়, বিজ্ঞানের জ্ঞান হয় পাকাপোক্ত।
এই সবকটি গুণই ছিল ভেসালিয়াসের মধ্যে — বইপড়া বিদ্যারও কমতি ছিল না কিছু। ফলে গোটা শরীরের রহস্য সবই জানা হয়ে গিয়েছিল তার। এই কারণেই মাত্র আঠারো বছর বয়সেই অ্যানাটমির জ্ঞান দেখিয়ে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র – শিক্ষক সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। ঘরের লেখাপড়ার পাট শেষ হলে ব্রাসেলস শহরের একটা নামি স্কুলে ভর্তি ’ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভেসালিয়াসকে। স্কুলের পড়া শেষ করে ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ নেবার জন্য ভর্তি হন লাউডেন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে। বছর দুই – তিনের মধ্যেই ভেসালিয়াস রপ্ত করলেন গ্রীক, আরবি, হিব্রু ও ল্যাটিন।
বিজ্ঞানের বিষয়ে পঠন – পাঠন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল খুবই অবহেলিত, তার ওপরে অ্যানাটমি শিক্ষার ওপরে রয়েছে চার্চের শাসন। মড়া কেটে পড়া শোনার ঘোর বিরোধী ধর্মপিতারা। বাধ্য হয়েই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পাড়ি জমাতে হয় ভেসালিয়াসকে ৷ ফ্রান্সে ধর্মের আঁট অত নেই। বিজ্ঞানের যুক্তিতে মানসিকতা এখানে খোলা হাওয়ায় লালিত হবার সুযোগ পায়। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিভাগের শবব্যবচ্ছেদের ঘরে মড়া কেটে পরীক্ষা – নিরীক্ষার কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। তার ওপরে বিভাগীয় অধ্যাপক সিলভিয়াসের খুবই নামডাক তখন।
সারা ইউরোপ জুড়েই তাঁর সুখ্যাতি। ভদ্রলোকের জ্ঞানের ঝুলিতে নিজস্ব চিন্তা ভাবনা বিশেষ কিছু না থাকলেও গ্যালেন ছিল পুরা দখলে। দিনের পর দিন ক্লাশে তাই কচপে নির্বিকারে ছাত্রদের বাহবা কুড়োতেন। গ্যালেনের অন্ধ ভক্ত সিলভিয়াস তাঁর ওই সীমিত বিদ্যার জোরেই জাঁকিয়ে বসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ ক্লাশের বাইরে মোটা দক্ষিণার বিনিময়ে নিজস্ব কোচিং – এ পাঠ দেওয়ার রেওয়াজও চালু করে ফেললেন। ছাত্ররা ভাল ভাবেই জেনে গিয়েছিল যে তার কোচিং নিলে ডাক্তারী পাশের পথে আর বাধা থাকবে না। তাই সিলভিয়াসের কোচিংয়ে ছাত্রদের ভিড় জমতেও দেরি হতো না।
বেশ মোটা দাগের উপরি একটা আয় প্রতিমাসে পকেটে আসতো তার। ছাত্ররা কিন্তু উপকৃত হত না কিছুই। ডাক্তারি শাস্ত্রে, বিশেষ করে অ্যানাটমিতে তাদের জ্ঞান ১৫০০ বছরের আগেকার গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেনের গন্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেত। তাদের মনের মধ্যে অধ্যাপকের শিক্ষার গুণে বদ্ধমূল হয়ে যেত, শরীরের অন্ধিসন্ধি বিষয়ে গ্যালেনই সর্বশেষ কথা, তার বইতে যা নেই শরীরের কোথাও তা থাকতে পারে না। এই একমুখীন পরিবেশে ভেসালিয়াস আবির্ভূত হয়েছিলেন জীবন্ত প্রতিবাদের মত ৷ গ্যালেনের বই পড়ে তিনি ভালভাবেই তার গলদগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।
তিনি জানতেন শরীরের এমন অনেক অংশেব কথাই গ্যালেন বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যার অস্তিত্ব আদৌ মানব শরীরে নেই, অথবা তার ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে। সিলভিয়াসের বিরাগ উৎপাদন করলেও ভেসালিয়াস সসম্মানেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক হলেন। স্নাতকোত্তর ক্লাশেও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। এমনি দিনে আবার ঘটল দুর্ঘটনা। সেদিনও সিলভিয়াস অ্যানাটমির ক্লাশ নিচ্ছেন। ছাত্ররা মন্ত্রমুগ্ধের মত তার বক্তৃতা শুনছে।
এই সময় হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন ভেসালিয়াস ৷ অধ্যাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, নিজের হাতে মড়া কেটে পরীক্ষা করে তিনি দেখেছেন পনেরোশ বছর আগের গ্যালেনের অ্যানাটমিতে বিস্তর গলদ রয়েছে। সেই গলদ গুলোকেই নির্ভুল ভেবে তিনি বর্ণনা করে চলেছেন। সবিনয়ে ভেসালিয়াস বললেন, আপনি অনুমতি করলে আমি নিজেই তা সকলের সামনে প্রমাণ করে দেখাতে পারি। সিলভিয়াস জানতেন না যে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমির ঘরের মড়া নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন না ভেসালিয়াস।
রাতের অন্ধকারে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় প্রতিরাতেই তিনি হাজির হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী ইনোসেন্ট কবরখানায়। সবার অলক্ষ্যে কবরের মড়া কেটে পরীক্ষা করেছেন আবার সকাল হবার আগেই মৃতদেহ কবরে যথাস্থানে রেখে ছাত্রাবাসে ফিরে এসেছেন। ছাত্রের হাতে কলমে জানার ব্যাপারটা জানতেন না বলেই সিলভিয়াস সেদিন একঘর ছাত্রের সামনে ভেসালিয়াসকে নানা শ্লেষাত্মক বিশেষণে বিদ্ধ করে বুঝিয়ে দিলেন যে গ্যালেনকে অমান্য করে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ার অযোগ্যতাকেই তুলে ধরছেন।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সিলভিয়াস ও ভেসালিয়াসের বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ল। সিলভিয়াস নিজের প্রভাব প্রয়োগ করে নানাভাবেই ভেসালিয়াসকে জব্দ করার কৌশল করলেন। চিকিৎসা বিভাগের অন্যান্য অধ্যাপকরাও বিরূপ হয়ে উঠলেন। ক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে স্নাতকোত্তর পড়া অসমাপ্ত রেখেই ভেসালিয়াসকে হতাশা ও মর্মপীড়া নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হল। সেই সময় তার বয়স মাত্র বাইশ বছর। সময়টা ১৫৩৬ খ্রিঃ। অ্যানাটমির ক্লাশে গ্যালেনের গলদ ধরিয়ে দিতে গিয়েই নিজের জীবনে এই বিভ্রাট ঘটালেন তিনি।
এবারে আর কোথাও নাম লেখালেন না। লাউভেন শহরে নিজের ঘরে বসেই কুকুর, বেড়াল, শুওরের শরীর খুলে পরীক্ষা – নিরীক্ষায় ডুবে গেলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের শরীরের মিল অনেক। তাই তাদের শরীর ঘেঁটেই মানব শরীরের ভূগোল উদ্ধার করেন তিনি। সেই বিবরণ লিখে রাখেন খাতায়। লাউভেন শহরে ধর্মীয় গোঁড়াপন্থীদের প্রাধান্য। তাদের চোখে মানুষের শরীরের ভেতরের কথা জানতে চাওয়া অন্যায় কাজ। তাই মড়াকাটা এখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবেই গণ্য হয়।
এদিকে এখানেই আস্তানা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু জানতে চায় বুঝতে চায় যে তার সামনে বাধা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ৷ নিষ্ঠা ও অনুসন্ধিৎসা অচিরেই সেই বাধাকে ধূলিসাৎ করে। ভেসালিয়াসও উপায় বার করে ফেললেন। অপরাধীকে যেখানে ফাঁসি দেওয়া হয়, রাতের অন্ধকারে সেখানে আনাগোনা শুরু হয় তাঁর। মৃতের শরীরের টুকরো টাকরা অংশ যা সংগ্রহ করতে পারেন তাই নিয়ে এসেই পরীক্ষায় বসেন।
এই কাজ করতে গিয়ে নিশাচর হিংস্র প্রাণীর কবলে পড়ে অনেকবারই জীবন সংশয় হয়েছে তার। কিন্তু সেসব বিপদ গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেননি তিনি। প্রহরীদের হাতে ধরা পড়লেও প্রাণদন্ড নিশ্চিত। তাই বলে গবেষণা তো বন্ধ হতে পারে না। একবার খবর পেয়ে সদ্য কবর দেওয়া এক অপরাধীর মৃতদেহ রাতের অন্ধকারে ঘাড়ে করে নিয়ে আসেন বাড়িতে। অক্ষত একটা দেহ। মনের সুখে সেই মড়া কেটেই অ্যানাটমির নানা দিকদর্শনের হদিশ পেয়ে যান ৷
একের পর এক আবিষ্কারের বিবরণে ভরে ওঠে তার খাতার পাতা, ছোট বড় হাড় থেকে পেশী – তন্তু, এমন কি, কিভাবে হাড়ের ওপর টিউমার গজায়, এই সব বিষয়েই পরিষ্কার ধারণা গড়ে ওঠে তার। সবে যখন ২৪ বছর বয়স, নিজের ঘরেই অ্যানাটমির ছাত্রদের জন্য খুলে বসলেন ক্লাশ। গ্যালেনের চিন্তা ছাড়িয়েও নতুন নতুন চিন্তা ভাবনার কথা তিনি ছাত্রদের শেখাতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে জমেও ওঠে তার অধ্যাপনা। আবিষ্কার আর পর্যবেক্ষণের সমস্ত বিবরণ জড়ো করে কিছুদিনের মধ্যেই বার করলেন অ্যানাটমির একটা বই। ততদিনে অবশ্য লাউভেন শহর থেকে ধর্মীয় শাসনের বিধিনিষেধ সরে গেছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে মুক্ত আলো। মড়াকাটার সরকারী বিধিনিষেধ উঠে গেছে। এখন প্রকাশ্য দিবালোকেই বেওয়ারিশ মড়া ধাঙড়েরা ভেসালিয়াসের ঘরে পৌঁছে দিয়ে যায়। কাজেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা লিখে প্রকাশ করতে কোন বাধাই ছিল না। বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আলোড়ন পড়ে গেল চারদিকে। মানব শরীরের নতুন নতুন আবিষ্কারের বিষয় চমৎকৃত করল সকলকে ৷ এই বইয়ের সুবাদেই ডাক এলো লাউভেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চিকিৎসা বিভাগের কর্তৃপক্ষ তাকে অ্যানাটমির ক্লাশ নেবার জন্য অনুরোধ জানালেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমির ঘরে শুরু হল ভেসালিয়াসের জীবনের নতুন অধ্যায়। নতুন বিষয়ের উপস্থাপনা ও অধ্যাপনার গুণে রীতিমত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ভেসালিয়াসের ক্লাশগুলি। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর খ্যাতি ছোট্ট লাউভেন শহরের সীমা ছাড়িয়ে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে অবশ্য পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে নিয়েছেন তিনি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই অ্যানাটমি ও শল্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপনার চাকরিতে কর্মজীবন শুরু হয়ে গেছে তার। ভেসালিয়াসের অ্যানাটমির ক্লাশকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বলা হয়েছে ” First Anatomy Class in Medical History “।
ভেসালিয়াস নিজের ক্লাশে সরাসরি ছুরিকাঁচি নিয়ে মড়া কেটে শরীরের নানা অংশ তুলে ধরে তার কার্যকারিতা ছাত্রদের বোঝান। তাদের উৎসাহিত করেন হাতে – কলমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। এতকাল শরীরের নানা অঙ্গ – প্রত্যঙ্গর সঙ্গে পরিচিতির জন্য নানা ড্রইং ব্যবহার করা হত। তিনি সেসব সরিয়ে দিলেন। অধ্যাপনা আর গবেষণার কাজ করতে করতেই আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজও সম্পূর্ণ করেন ভেসেলিয়াস। ছয় শতকের যুক্তিবাদী আরবীয় চিকিৎসক রাজেশ। তার একটা বিখ্যাত বই অনুবাদের কাজ শুরু করলেন।
রাজেশ তার বইতে বিশ্লেষণমুখী বর্ণনার মধ্য দিয়ে নিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন শরীরে কোন অংশে কোন রোগ দেখা দিলে কিভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে সেই উপায়। রাজেশের রোগ নিরাময়ের নির্দেশ অনুবাদের মাধ্যমে নাগালে পেয়ে মাথায় তুলে নিয়েছিলেন ইউরোপের কৃতবিদ্য চিকিৎসক মহল। ক্লাশ নেবার জন্য নতুন নতুন মড়ার প্রয়োজন হত।
সেই সময় মড়াকে তাজা রাখার কোন উপায় আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে মৃতদেহে পচন ধরে কদিনের মধ্যেই কাজের অযোগ্য হয়ে পড়ত। তার মধ্যেই নির্বিকারে ক্লাশ নিতেন ভেসেলিয়াস। প্রতিমাসে একাদিক্রমে তিন সপ্তাহ তিনি ক্লাশ নিতেন। প্রতিটি ক্লাশ চলত আটঘন্টা করে। তার শিক্ষাদানের প্রণালী এমনই প্রশংসিত হয়েছিল যে অনেক ডাক্তার ও গবেষক পর্যন্ত ছাত্রদের ভিড়ে মিশে তার কথা শুনতেন ৷ ভেসালিয়াস সবই জানতেন, কিন্তু তার জন্য তার কোন অহমিকা ছিল না। ভেসালিয়াসের ক্লাশে তিনি গ্যালেনের ভুলগুলি একের পর এক তুলে ধরতেন। নিজে জুড়ে দিতেন সংশোধনী।
এই ভাবে ছাত্রদের শিক্ষা দিতে গিয়ে ভেসালিয়াস উপলব্ধি করলেন, সাধারণ ছাত্রদের জন্য অ্যানাটমির একটা ভাল বই দরকার যার মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পথে একটা সুনির্দিষ্ট ধারা অনুসৃত হবে। তিনি সঙ্কল্প করলেন, সেই বই নিজেই লিখবেন। আর সেই বইতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিস্তারিত বিবরণের সঙ্গে পৃথক ও স্পষ্ট ছবিও রাখতে হবে। কিন্তু এই দুরূহ কাজ করবে কে ? অ্যানাটমির অংশ বুঝে নিখুঁত ছবি আঁকা তো সহজ কাজ নয় ৷ এমন একটা বিদঘুটে কাজে হাত দিতে কোন চিত্রকরই রাজি হতে চাইবেন না।
এই ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত যে বিজ্ঞান ভাবাপন্ন শিল্পী সাগ্রহে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি হলেন জন ভন কালকার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই শিল্পী তার কাজের জন্য অমরত্ব লাভ করেছেন। টানা ৩ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর শেষ পর্যন্ত সার্থক ভাবে রূপায়িত হল ভেসালিয়াসের পরিকল্পনা। তার চিত্রায়িত বই The Structure of the Human Body পূর্ণতা লাভ করল। বইয়ের ভূমিকায় ভেসালিয়াস নিজের কঠোর শ্রমের প্রসঙ্গে শিল্পীর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এখানেই শেষ করেননি ভেসেলিয়াস। বইটির ছাপার কাজ যাতে নিখুঁত হয় সেজন্য তিনি বইয়ের পান্ডুলিপিও ছবির কাঠের ছাঁচ জাহাজে করে পাঠিয়ে দিলেন সুইজারল্যান্ডে। সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে উন্নত ছাপাখানা থেকে ছাপিয়ে অনবদ্য বইটি আত্মপ্রকাশ করল ১৫৪২ খ্রিঃ। তখন তার বয়স মাত্র ২৮ বছর। সর্বাংশে নিখুঁত বইটি হাতে পেয়ে জীবনের মহৎ স্বপ্ন সফল হওয়ার আনন্দে মন ভরে উঠল ভেসালিয়াসের।
ডাক্তার ও ছাত্ররা এবারে যথার্থই উপকৃত হবেন এই বই থেকে এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কি হতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আড়ালে সুযোগের অপেক্ষায় ওৎ পেতে ছিল সর্বনাশা যে বিপর্যয়, সেই সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না সিলভিয়াসের। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই তা উদয় হয়ে সব আনন্দ সমূহ তৃপ্তি ছারখার করে দিল। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রভাবশালী ডাকসাইটে অধ্যাপক সিলভিয়াসের তখন পরিণত বয়স। কিন্তু তার বুকে অনির্বাণ ছিল পুরনো দিনের বিদ্বেষ আর অপমানের সর্বনাশা আগুন। সেই আগুনেই দগ্ধ হলেন ভেসালিয়াস ৷
আরও পড়ুন: সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী
আরও পড়ুন: কানাইলাল দত্ত জীবনী
আরও পড়ুন: অনন্ত সিং জীবনী
আরও পড়ুন: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জীবনী
আরও পড়ুন:প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার জীবনী
তিনি নখদন্ত ব্যাদান করে ঝাপিয়ে পড়লেন। হিংস্রভাবে ভেসালিয়াসের গ্রন্থের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, “My former student is a unprinicipled upstart and a mad man whose pestilential teachings are poisoning Europe.” সিলভিয়াস তার লেখায় ও কথায় স্পষ্টই ব্যক্ত করলেন দীর্ঘদিনের মনের জ্বালা। তার বিষোদ্গারের ফল ফলতেও দেরি হল না। ভেসালিয়াস লক্ষ করলেন, পাদুয়ার সহ – অধ্যাপকেরা কেবল নয়, ছাত্ররাও তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে। তাঁর বইটিকেও তারা বিপজ্জনক মনে করে সরিয়ে রেখেছে।
দেখতে দেখতে এক মাসের মধ্যেই ভেসালিয়াস সারা পাদুয়া শহরে একঘরে হয়ে গেলেন। তীব্র ঘৃণায়, দুঃখে ভেসালিয়াস চিরদিনের মত পাদুয়া ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর মধ্যে বিজ্ঞানের যে মহৎ সম্ভাবনা গড়ে উঠেছিল, এভাবেই তার ছেদ পড়ল। ভেসালিয়াস জীবনধারণের জন্য ভিন্ন পথের সন্ধান করতে লাগলেন। তীব্র অর্থকষ্টের মধ্যে তার দিন কাটতে লাগল। ভাগ্যের প্রসন্নতা ফিরে এলো দুবছর পরে ১৫৪৪ খ্রিঃ। স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লস ভেসালিয়াসকে রাজপরিবারের চিকিৎসক নিযুক্ত করলেন।
চিকিৎসক হিসেবে সুনামের সঙ্গে এই পদে কেটে গেল কুড়ি বছর। তৎকালীন স্পেনের বিজ্ঞানের আলোবাতাসহীন পরিবেশে জীবস্মৃত অবস্থায় কাটিয়ে দিলেন বিজ্ঞানী ভেসালিয়াস। নিজে কর্মক্ষেত্র থেকে সরে থাকলেও বিদ্রোহী বিজ্ঞানের প্রতিভা ইতিমধ্যে জাগিয়ে তুলেছে অনেক কয়জন প্রতিভাবান ছাত্রকে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফেলোপিয়াস। পাদুয়া ছেড়ে আসার পরে ফেলোপিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানাটমির অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন।
ভেসালিয়াসের সার্থক উত্তরসূরী হয়ে ওঠার প্রতিভা ও চেষ্টা ছিল তার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ১৫৬২ খ্রিঃ তার আকস্মিক অকাল মৃত্যু সেই সম্ভাবনারও ইতি টেনে দিল। ইতালির বিজ্ঞান ক্ষেত্রে এই দুই প্রতিভার অস্তগমনের পর পুনরায় অ্যানাটমিতে গ্যালেনের প্রতিপত্তি নির্বাধ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন পরে অবশ্য পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় ডাক পেয়েছিলেন ভেসালিয়াস। ফেলোপিয়াসের মৃত্যুর পর অ্যানাটমির অধ্যাপকের পদটি শূন্য অবস্থাতেই ছিল। পঞ্চাশ বছর বয়স তখন ভেসালিয়াসের। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি পাবার পর তিনি পুরনো ক্ষত ভুলে স্পেন ছেড়ে ইতালি রওনা হলেন। কিন্তু তার জাহাজ ভূমধ্যসাগরের বুকে ঝড়ের মুখে পড়ে বিধ্বস্ত হল। জাহাজের একটা ভাসমান কাঠ ধরে কোনক্রমে তিনি গ্রীসের কাছাকাছি জাঁতে নামক একটা দ্বীপে এসে উঠলেন। কিন্তু তাঁর জীবনীশক্তি নিঃশেষ হয়ে এসেছিল। এখানে দুদিন মাত্র বেঁচে ছিলেন।
আন্দ্রে ভেসালিয়াস এর মৃত্যু: Andreas Vesalius’s Death
১৫৬৪ খ্রিঃ মৃত্যুর কোলে চিরশান্তি লাভ করলেন অভিমানী বিজ্ঞানী ভেসালিয়াস। ১৬ শতকে অ্যানাটমি বিদ্যায় ভেসালিয়াস যে ঝড় তুলেছিলেন তা অবশ্য বৃথা যায় নি। মহাকাল তার অবদানকে অস্বীকার করতে পারেনি। পরবর্তীকালে ভেসালিয়াস আধুনিক অ্যানাটমির জনক রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন।