মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির শ্রেনীবিভাগ

Rate this post

মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির শ্রেনীবিভাগ: সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৩০০ মিটারের অধিক উঁচুতে অবস্থিত খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউখেলানো বিস্তীর্ন ভূমিরূপকে মালভূমি বলা হয়। মালভূমির উপরিভাগ সমতল টেবিলের মতো দেখতে হয় বলে, মালভূমিকে টেবিলল্যান্ড বলা হয়। মালভূমি গুলির আকৃতি, উচ্চতা, বিস্তৃতি ও উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে মালভূমির শ্রেনীবিভাগ করা হয়ে থাকে। মালভূমি গুলিকে প্রধানত তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়ে থাকে – ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি খ) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি ও গ) লাভা মালভূমি। 

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি:

কোনো বিস্তীর্ন মালভূমি অঞ্চল অনেকগুলি নদী উপত্যকা দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভুমি বলে।  

সৃষ্টির কারণঃ ক্ষয়ের ফলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়ের প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি ও বিস্তৃত উঁচুভূমির কোমল শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোটো ছোটো পাহাড় রূপে অবস্থান করে। এরূপ পাহাড় গুলির উচ্চতা অনেক সময় প্রায় একই হয়। বৃষ্টিপাত ও বিভিন্ন খরস্রোতা নদীর ক্ষয়কাজের ফলে ওই পাহাড় গুলি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে বিভিন্ন নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণঃ ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি, কর্নাটকের মালনাদ অঞ্চল, গ্রেট ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস এর উচ্চভূমি প্রভৃতি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উদাহরণ।  

পর্বতবেষ্টিত মালভূমি

চারদিকে পর্বত দ্বারা বেষ্টিত হয়ে যে সব উঁচু মালভূমির সৃষ্টি হয় তাদের পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে। 

সৃষ্টির কারণঃ ভূ-আলোড়ন ও পাত সঞ্চালনের ফলেই পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়। I. পর্বত সৃষ্টির সময় প্রবল পার্শ্বচাপের প্রভাব, II. দুটি পাতের মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে একটি পাতের নিচে অপর পাতের অনুপ্রবেশ এবং III. দুটি পাতের বিপরীতমুখী চাপের প্রভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়েছে। 

উদাহরণঃ উত্তরে কুনলুন এবং দক্ষিনে কারাকোরাম, হিমালয় ও তিয়েন শান দ্বারা বেষ্টিত তিব্বত মালভূমি, পন্টিক ও টরাস পর্বত দ্বারা বেষ্টিত আনাতোলিয়া মালভূমি, এলবুর্জ ও জাগ্রোস পর্বত দ্বারা বেষ্টিত ইরাক মালভূমি প্রভৃতি। 

লাভা মালভূমি

ক্রমাগত লাভা সঞ্চয়ের ফলে ভূপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি হয় তাকে লাভা মালভূমি বলে। 

সৃষ্টির কারনঃ সঞ্চয়ের ফলে লাভা মালভূমির সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা অনেক সময় কোনো রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে তরল লাভা রূপে ভূপৃষ্ঠের ওপর বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে সঞ্চিত হয়। এইরূপে ক্রমাগত লাভা সঞ্চয়ের ফলে এই অঞ্চলটি উঁচু হয় এবং ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে মালভূমিতে পরিনত হয়। 

উদাহরণঃ ভারতের মহারাষ্ট্র মালভূমি ও মালব মালভূমি, আফ্রিকার আবিসিনিয়া ও সোমালিয়া মালভূমি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া মালভূমি প্রভৃতি। 

Leave a Comment