হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Homi Jehangir Bhabha Biography in Bengali. আপনারা যারা হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা কে ছিলেন? Who is Homi Jehangir Bhabha?
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা (৩০ অক্টোবর ১৯০৯- ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৬) ভারতের একজন প্রসিদ্ধ নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী, প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক এবং টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন৷ তাছাড়া তাঁকে ‘ভারতের নিউক্লীয় প্রোগ্রামের জনক’ বলা হয়। ভাভা ভারতের দুটি প্রসিদ্ধ শিক্ষা তথা গবেষণা প্রতিষ্ঠান টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (TIFR) এবং ট্রম্বে এটমিক এনার্জি (AEET) প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক ছিলেন (যা বর্তমানে তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে); উভয় প্রতিষ্ঠান ই নিউক্লিয়ার অস্ত্রে ভারতের অগ্রগতিতে ভিত্তি হিসেবে কাজ করছিল যেখানে ভাভা স্বয়ং তত্ত্বাবধায়করূপে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতেন।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা জীবনী – Homi Jehangir Bhabha Biography in Bengali
নাম | হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা |
জন্ম | 30 অক্টোবর 1909 |
পিতা | হরমুসজি ভাভা |
মাতা | মেহেরিন |
জন্মস্থান | মুম্বই, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান ভারত) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী |
মৃত্যু | 24 জানুয়ারী 1966 (বয়স 56) |
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র জন্ম: Homi Jehangir Bhabha’s Birthday
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ১৯০৯ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।
ভারতে পরমাণু শক্তি গবেষণার পথিকৃৎ ও পুরোধা – পুরুষ হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসেও এক স্মরণীয় নাম। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ভাবা আকস্মিক ভাবেই মোড় নিয়েছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার দিকে। উত্তরকালে তার নানা আবিষ্কার বিজ্ঞানের এই শাখাটিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। আমরা যাকে বলি মহাজাগতিক রশ্মি, বিজ্ঞানের ভাষায় তারই নাম কসমিক – রে।
এই রশ্মি হল অত্যন্ত শক্তি সমৃদ্ধ ফোটন কণিকার এক মহাসমুদ্র। বিজ্ঞানীদের ধারণা বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় পরমাণুর সঙ্গে ফোটন কণিকার সঙ্গে যে তীব্র সংঘর্ষ ঘটে তারই ফলে উৎপন্ন হয় ঋণক বা ইলেকট্রনের ধারা। সৌর বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আবিষ্কার করতে সমর্থ হন যে, সূর্যও ক্বচিৎ কখনো এই রশ্মি উৎপন্ন করে থাকে।
তবে মহাজাগতিক রশ্মির প্রকৃত উৎসস্থল হল বিপুল বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক অঞ্চল। আর এই সম্পূর্ণ এলাকাটিই চুম্বক শক্তির অধীন। কোন কোন বিজ্ঞানীর মত হল, মহাজাগতিক রশ্মির উৎসস্থল আন্তঃনাক্ষত্রিক ক্ষেত্রের অন্তর্গত চুম্বকশক্তি সম্পন্ন গ্যাসীয় মেঘ। এই মেঘের স্তর থেকেই রহস্যাচ্ছাদিত মহাজাগতিক রশ্মি নিরবিচ্ছিন্ন ধারায় বিচ্ছুরিত হয়। এর পরেও মতভেদ রয়েছে।
অনেক বিজ্ঞানীর মতে, মহাকাশের নানা নক্ষত্রই হল মহাজাগতিক রশ্মির উৎস। অল্প শক্তিসম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মি নির্গত হয় নক্ষত্রগুলি থেকে। এই রশ্মি যখন চৌম্বক প্রভাবযুক্ত আন্তঃনাক্ষত্রিক এলাকায় গ্যাসীয় মেঘের সংস্পর্শে আসে তখনই হয় সংঘর্ষ। এই বিপুল সংঘর্ষের ফলেই অল্প শক্তিযুক্ত রশ্মি পরিণত হয় শক্তিসমৃদ্ধ মহাজাগতিক রশ্মিতে। হোমি জাহাঙ্গীর ভাবার যাত্রা শুরু হয়েছিল এই মহাজাগতিক রশ্মির তাত্ত্বিক গবেষণা নিয়ে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই মহাজাগতিক রশ্মির রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করে চলেছেন। তাদের সেই অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছিল ভাবা এবং জার্মান বিজ্ঞানী ডব্লু হিটলারের মহাজাগতিক রশ্মির ওপর গাণিতিক গবেষণা। এই কৃতিত্বের পথ ধরেই বিশ্ববিজ্ঞানী রূপে ভাবার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ভাবা হিসেব করে দেখিয়েছিলেন, মহাজাগতিক রশ্মি যখন আন্তঃনাক্ষত্রিক চৌম্বকক্ষেত্রে এসে আলোড়িত হয় তখন সেই রশ্মি আলোকের গতিবেগ সম্পন্ন এবং শক্তিসমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
এই শক্তিসমৃদ্ধ মহাজাগতিক রশ্মি বায়ুমণ্ডলের বায়ুকণার সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন করে ঋণক বা ইলেকট্রন নয় – মেসন নামক এক পরমাণুকেন্দ্র নিঃসৃত অতি সূক্ষ্ম কণা। গাণিতিক হিসেবের দ্বারাই ভাবা ইলেকট্রনের স্থলে মেসনকে আবিষ্কার করেছেন। এই মেসনকে বলা হয় গৌণকণা বা সেকেন্ডারী পারটিকল। প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন হল মুখ্য কণা। মহাজাগতিক রশ্মিকে ভাবা বলেছেন মেসন ধৃক্ত রশ্মি বা গৌণক।
তার এই বিশ্লেষণকেই বলা হয় মহাজাগতিক রশ্মি ধারার ক্যাসেড – তত্ত্ব। মহাজাগতিক রশ্মি – ঘটিত তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার গবেষণা ভাবার ক্যাসেড – তত্ত্ব দ্বারা দূরপ্রসারী উদ্দীপনা লাভ করেছে। মাত্র ৪১ বছর বয়সে ভাবা ১৯৫০ খ্রিঃ লন্ডনের রয়াল সোসাইটির পদার্থ বিজ্ঞানী সভায় তার গাণিতিক আবিষ্কার ব্যাখ্যা করেন এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম পুরোধারূপে স্বীকৃতি লাভ করেন।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Homi Jehangir Bhabha’s Parents And Birth Place
হোমি জাহাঙ্গীর ভাবার জন্ম ১৯০৯ খ্রিঃ ৩০ শে অক্টোবর এক ব্যবসায়ী পার্সী পরিবারে। তার বাবা ব্যবসায়ী হলেও বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। নানা বিষয়ের ওপর লেখা বিজ্ঞানের বই দিয়ে তিনি বাড়িতেই একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন। কাজের অবসরে সেখানে ডুবে থাকতেন বই নিয়ে। স্বভাবতঃই এই পরিবেশে বাল্যবয়স থেকেই ভাবা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র ছোটবেলা: Homi Jehangir Bhabha’s Childhood
বিজ্ঞানের ওপর নানান বই যেমন ঘাঁটতেন লাইব্রেরীতে বসে তেমনি নিজের মতই সময় সময় নানা পরীক্ষা নিয়ে মেতে উঠতেন বালক ভাবা। বাবা তাঁকে নানাভাবে উৎসাহিত করতেন। বহুমুখী প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলেন বিজ্ঞানী ভাবা। নিজেই রং – তুলি নিয়ে সুন্দর ছবি আঁকতে শিখেছিলেন। কেবল কি তাই, খাতা তৈরি করেছিলেন কবিতার জন্য। পাতার পর পাতা ভরিয়েছেন কবিতা লিখে।
কবিতার সঙ্গে ছিল গানের ঝোঁক। গাইতেও পারতেন ভাল। শ্রোতা হিসেবেও সমঝদার। অল্পবয়সেই পশ্চিমী ধ্রুপদ গানের ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এসব তো বাইরের ব্যাপার। বালক বয়সে মূল বিষয় হল স্কুলের লেখাপড়া। তাতেও ছিলেন সেরা ফলটির দাবীদার।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র শিক্ষাজীবন: Homi Jehangir Bhabha’s Educational Life
স্কুলের পড়া শেষ করলেন কৃতিত্বের সঙ্গে। এরপরই পড়লেন আতান্তরে। পছন্দের বিষয় তো অনেক। বিজ্ঞান ভালবাসেন। সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই অঙ্কন, কাব্যচর্চা বা সঙ্গীত। কলেজে ভর্তি হবার আগে বিষয় নির্বাচন তো দরকার। শেষ পর্যন্ত কোনদিকে না তাকিয়ে বাবা বিলেত পাঠিয়ে দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। কিন্তু বেশিদিন ভাল লাগল না কলকব্জার ব্যাকরণ নিয়ে পড়াশোনা। মাঝপথেই ইস্তফা দিয়ে পদার্থবিদ্যার ক্লাশে ভর্তি হয়ে গেলেন।
১৯৩০ খ্রিঃ ২১ বছর বয়সে কেমব্রিজ থেকে পদার্থবিদ্যায় বি.এ.পাশ করলেন। সেই সময় তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গণিতের আসর সরগরম করে রেখেছেন ডির্যাক, পাউলি, হিজেনবার্গ, শ্রোয়ডিঙ্গার ও বনের মতো দিকপাল পদার্থবিদগণ। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ডির্যাক। পদার্থবিদদের গবেষণার ধারা নাড়াচাড়া করে ডির্যাকের মতামতটিই অধিকতর স্বচ্ছ বলে মনে হল ভাবার কাছে।
প্রায়োগিক পদার্থবিদ্যার পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসকে ঘিরে যেসব ইলেকট্রন বা ঋণক নানা শক্তিস্তরে ঘোরাফেরা করছে, তাদের রহস্যময় বৈশিষ্ট্য ডির্যাক তার গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে অত্যন্ত তরল করে বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন। কেমব্রিজে বি.এ পড়তে পড়তেই ডির্যাকের গবেষণার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন ভাবা। ফলে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার বই নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তাঁর কেটে গেছে কেমব্রিজের সমৃদ্ধ লাইব্রেরিতে।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র কর্ম জীবন: Homi Jehangir Bhabha’s Work Life
পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হবার পর কেমব্রিজেই গবেষণায় বসে পড়লেন ভাবা। বিষয় সেই তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা। ১৯৩৪ খ্রিঃ পঁচিশ বছর বয়সেই কেমব্রিজ থেকে পদার্থবিদ্যার ডক্টরেট হলেন। ভাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ইলেকট্রন ও অন্যান্য মুখ্য কণাদের যথাযথ ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা নিরূপণ। এই কাজই তাঁকে জগদ্বিখ্যাত করেছে।
সত্যেন বোস উদ্ভাবিত কণা বোসন ও এনরিকো ফের্মির উদ্ভাবিত গাণিতিক কণা ফের্মিয়ন কণাদেরও তিনি তার গাণিতিক ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ৷ কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যেই তিনি তার উদ্ভাবিত মেসনের ধর্ম ব্যাখ্যা করেছিলেন। ভাবা দেখিয়েছেন, মেসন বা গৌণকের বিভিন্ন স্তর। তাতে যে বিদ্যুৎকে থাকতেই হবে তার কোন কারণ নেই।
তিনিই তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের মধ্যে প্রথম ঘোষণা করেন মহাজাগতিক রশ্মির সঙ্গে বায়ুমন্ডলের কণাগুলির বিপুল সংঘাতকে ল্যাবরেটরিতে পারটিকল অ্যাকসিলারেটর – এর সাহায্যে অনুধাবন করা সম্ভব। ভাবার ঘোষণার অব্যবহিত পরেই তাঁর বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র পুরস্কার ও সম্মান: Homi Jehangir Bhabha’s Awards And Honors
১৯৪১ খ্রিঃ মহাজাগতিক রশ্মি সংক্রান্ত গবেষণা ও ইলেকট্রনের অন্তর্গত দুই উপাংশের আবিষ্কারের ফলে ভাবা লন্ডনের রয়াল সোসাহিটির ফেলো নির্বাচিত হলেন। পরের বছরেই পেলেন অ্যাডমস পুরস্কার। ১৯৪৮ খ্রিঃ হপকিনস পুরস্কার। ১৯৫৪ খ্রিঃ ভারত সরকারের পদ্মভূষণ উপাধি। পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে ভাবার অবদানের স্বীকৃতি ও পুরস্কার এসেছিল দেশ বিদেশ থেকে। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দিয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। ভাবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত প্রবন্ধগুলির অন্যতম তিনটি হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব, মৌলিক ভৌতকণা তত্ত্ব ও মহাজাগতিক বিকিরণ।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র কর্ম জীবন: Homi Jehangir Bhabha’s Work Life
১৯৪০ খ্রিঃ ভাবা ৩১ বছর বয়সে দেশে ফিরে এলেন। এতদিনে তাঁর জগদ্বিখ্যাত আবিষ্কারগুলি সম্পন্ন হয়েছে। সেই সময় মানব ইতিহাসের ভাগ্যাকাশে দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কালমেঘ। হিংসা আর হননেচ্ছা মানুষকে নামিয়ে নিয়ে এল পাশবিক স্তরে। মানবজাতির করুণ পরিণতির কথা চিন্তা করে ভাবা গভীর বেদনা বোধ করলেন। নতুন সংকল্প ও পরিকল্পনার চিন্তা জেগে উঠতে লাগল তার মধ্যে।
১৯৪১ খ্রিঃ ভাবা কর্মজীবন শুরু করলেন। ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনসটিটিউট অব সায়েন্স – এ তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বিভাগে রিডার পদে যোগ দিলেন। ভারতীয় শিল্প সাম্রাজ্যের অন্যতম রূপকার জামশেদজী টাটার সঙ্গে ভাবার ছিল পারিবারিক সম্পর্ক। ভারতবর্ষে বিজ্ঞানের চর্চাকে প্রাণবন্ত করার উদ্দেশ্যে মহামতি টাটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টাটা ইনসটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ। ভাবা এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও মহাজাগতিক রশ্মি সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপকের পদে মনোনীত হলেন।
এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাবা এবারে দেশ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। বিজ্ঞানী ভাবার হাতেই ১৯৪৫ খ্রিঃ ভারতে পরমাণু গবেষণার পথ তৈরি হয়েছিল। এই সূত্রেই ১৯৪৮ খ্রিঃ ভারতে প্রতিষ্ঠিত হল পরমাণু শক্তিকমিশন। ভাবা হয়েছিলেন তার প্রথম সভাপতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভাবার বিজ্ঞান প্রতিভার স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
১৯৫৪ খ্রিঃ ভাবা ভারত সরকারের পরমাণু শক্তিবিভাগের সচীব পদে মনোনীত হলেন। ভাবার প্রেরণাতেই ভারতে পরমাণু শক্তিউন্নয়নের বীজ রোপিত হয়। দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয় পরমাণুশক্তি সম্পর্কিত গবেষণা। তারই ফলস্বরূপ দেশের মাটিতে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় পরমাণু শক্তিচুল্লি বা অ্যাটমিক রিঅ্যাকটর। ভারতবর্ষের প্রথম পারমাণু শক্তিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় মুম্বাই শহরের অদূরে তারাপুরে ১৯৬৩ খ্রিঃ।
দুবছর পরেই তারাপুরে গড়ে ওঠে প্রথম প্লুটোনিয়াম প্ল্যান্ট ৷ এই সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধানেই ছিলেন ভাবা। পরমাণু শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে পদার্পণ করে ভারত অবিলম্বে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে নিজের স্থান নির্দিষ্ট করে নিল। একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অবদান বিশ্ববিজ্ঞানের সাগ্রহ স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৭১ খ্রিঃ ১৮ ই মে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য দিন। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় এই দিন রাজস্থানের মরু অঞ্চলে প্রথম পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভারত ঘোষণা করে মানবকল্যাণে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এই পরমাণু বিস্ফোরণ। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভাবার অবদান বহুবিস্তৃত। ভারতে ইলেকট্রনিক গবেষণারও পথিকৃৎ তিনি। তাঁর চেষ্টাতেই ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের গবেষণাও বিশেষ স্থান অধিকার করতে সমর্থ হয়েছে।
ভারতে ভাবাই প্রথম শুরু করেছিলেন তেজঃ সৌরবিদ্যা ও জীবাণুবিদ্যার গবেষণা। তাঁর তত্ত্বাবধানেই স্থাপিত হয়েছে উটকামন্ডের রেডিও টেলিস্কোপটি। জগদ্বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছিল ভাবার অনন্যসাধারণ প্রতিভা। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন উদার মানবতাবাদী। দেশের প্রতি তার ভালবাসা ছিল অকৃত্রিম। বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হবার সকল প্রকার সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে তিনি দেশে ফিরে এসে স্বদেশের উন্নতিকল্পে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ভারতীয় বিজ্ঞান সাধনায় অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র মৃত্যু: Homi Jehangir Bhabha’s Death
১৯৬৬ খ্রিঃ এক বিমান দুর্ঘটনায় অকালে এই বিজ্ঞানসাধকের প্রাণবিয়োগ হয়।