জেমস ওয়াট জীবনী – James Watt Biography in Bengali

Rate this post

জেমস ওয়াট জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে James Watt Biography in Bengali. আপনারা যারা জেমস ওয়াট সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জেমস ওয়াট এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

জেমস ওয়াট কে ছিলেন? Who is James Watt?

জেমস ওয়াট (১৯ জানুয়ারি ১৭৩৬ – ২৫ আগস্ট ১৮২৫) ছিলেন একজন স্কটীয় আবিষ্কারক। তিনি ১৭৬৯ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের উন্নতি সাধন করেন। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নির্মাতারূপে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাষ্পীয় শক্তিচালিত ইঞ্জিন নিয়ে তাঁর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। ১৭৯৬ সালে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

জেমস ওয়াট জীবনী – James Watt Biography in Bengali

নামজেমস ওয়াট
জন্ম19 জানুয়ারী 1736
পিতাজেমস ওয়াট
মাতাআজনেস মুইরহেড
জন্মস্থানগ্রিনক, রেনফ্রুশায়ার, স্কটল্যান্ড
জাতীয়তাস্কটিশ
পেশাআবিষ্কারক
মৃত্যু25 আগস্ট 1819 (বয়স 83)

জেমস ওয়াট এর জন্ম: James Watt’s Birthday

জেমস ওয়াট ১৯ জানুয়ারি ১৭৩৬ জন্মগ্রহণ করেন।

জেমস ওয়াট এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: James Watt’s Parents And Birth Place

বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কর্তা হিসাবে যিনি পৃথিবীর শিল্পবিপ্লবের আবাহন জানিয়েছিলেন বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে তার নাম অমর হয়ে আছে তিনি হলেন জেমস ওয়াট। ১৭৩৬ খ্রিঃ ১৯ শে জানুয়ারী শিল্পনগরী গ্লাসগোর অন্তর্গত গ্রীনকের এক ছোট্ট গ্রামের এক স্কটিশ পরিবারে জেমসের জন্ম। জেমসের পিতার আর্থিক অবস্থা কোনকালেই স্বচ্ছল ছিল না। কিন্তু মনের দারিদ্র্য এই পরিবারে কখনো প্রশ্রয় পায়নি।

জেমস ওয়াট এর শিক্ষাজীবন: James Watt’s Educational Life

সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যে থেকেই উচ্চতর চিন্তায় অভ্যস্ত ছিলেন পরিবারের প্রতিটি মানুষ। ছেলেবেলা থেকেই জেমসের শরীর ছিল অত্যন্ত দুর্বল। স্কুলে যাবার ও পড়াশোনার ধকল সামলাবার মত শারীরিক ক্ষমতা ছিল না বলে ছোটবেলায় মায়ের কাছেই লেখাপড়া শিখতে হয়েছিল। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ের বই তার খুবই প্রিয় ছিল।

মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর জেমস একটু বেশি বয়সেই স্কুলে গেলেন। অল্পদিনের মধ্যেই মাষ্টারমশাইরা জেমসের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হলেন। স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষাতেই জেমসের স্থান থাকতো সবার ওপরে। কেবল তাই নয় ৷ রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও জ্যামিতি এই তিন বিষয়ে তাঁর চেয়ে বেশি নম্বর কোন ছাত্রের ভাগ্যে জুটত না। স্কুলের পড়া শেষ হবার আগেই হঠাৎ জেমসের মা মারা গেলেন। ফলে পড়াশোনারও ইতি টানতে হল।

জেমস ওয়াট এর প্রথম জীবন: James Watt’s Early Life

সংসারের প্রয়োজনে বেরতে হলো চাকরির খোঁজে। স্কুলের ওইটুকু বিদ্যের জোরে চাকরি জোটানো তো আর সহজ কথা নয়। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষানবিশের কাজে ঢুকতে হয় জেমসকে গ্লাসগোর এক চশমার দোকানে। এই দোকানের মালিক ছিল এক বিচিত্র প্রকৃতির মানুষ। ব্যবসাটাও তেমনি বিচিত্র। প্রধান কাজ ছিল চশমার পাওয়ার ঠিক করা। কিন্তু তার সঙ্গে করতেন বাড়ি বাড়ি আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ। নানা যন্ত্রপাতি বানাবার হাতটিও ছিল ভাল। আশ্চর্য এই যে, অবলীলায় বেহালাও সারাই করে দিতেন।

জেমস ওয়াট এর কর্ম জীবন: James Watt’s Work Life

এত সব কর্ম করার নিট ফল ছিল এই যে, ভদ্রলোক সবসময়েই সবজান্তার মেজাজ নিয়ে থাকতেন। এহেন মানুষটিও কিন্তু জেমসের সাফ মাথার কাজ দেখে বিস্মিত না হয়ে পারেন না। যা একবার দেখেন সেই কাজই আয়ত্তে এসে যায় জেমসের। খুব অল্প সময়ই লাগল শিক্ষানবিশের শিক্ষা সমাপ্ত করতে। ভদ্রলোকের কাছে জেমসের শেখার আর অবশিষ্ট রইল না কিছু। ততদিনে জেমস নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও মনস্থির করে নিয়েছেন। ঠিক করলেন যন্ত্রের কাজে আর একটু হাত পাকলে বিজ্ঞানের কিছু বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন।

তাহলে বড় বড় যন্ত্র নির্মাণের ব্যাপারে আর কোন বাধা থাকবে না। যন্ত্রবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করবার শ্রেষ্ঠ জায়গা হল লন্ডন। জেমস সরাসরি এবারে লন্ডনে পাড়ি জমালেন। লন্ডনে দিনকয়েক ঘোরাঘুরি করে এক মেকানিকের কাছে কাজ শিখতে আরম্ভ করলেন। সেইকালে লন্ডনে মেকানিকদের বড় নিয়মকানুনের আঁট ছিল। সাত বছর শিক্ষানবিশী না করলে কাউকে মেকানিক হিসেবে কাজ করবার লাইসেন্স দেওয়া হত না। কিন্তু কাজ শিখতে জেমসের সাতবছর শিক্ষানবিশী করবার দরকার হবে কেন ? যন্ত্রবিদ্যার সব কিছু আয়ত্ত করতে তার পক্ষে একবছরই যথেষ্ট সময়।

এই সময়ের মধ্যেই যন্ত্রবিদ্যার মূল বিষয় সবই রপ্ত হয়ে গেল তার। একবছরের মাথায় যখন জেমস তার এই কাজ থেকে বেরিয়ে এলেন তখন তিনি রীতিমত একজন দক্ষ যন্ত্রনির্মাতা। জানতেন এই শহরের যন্ত্রবিদ সঙ্ঘের কড়া নিয়মকানুনের কথা। তবুও লাইসেন্সের তোয়াক্কা না রেখে বেরিয়ে পড়লেন। এবারে হয় স্বাধীন ব্যবস ! নয়তো ভাল একটা চাকরি। দিনকতকের মধ্যেই মনস্থির করে ফেললেন জেমস। ঠিক করলেন পরের তাঁবেদারি আর নয়। ব্যবসাই করবেন। যে করে হোক একটা গেরাজ খুলতে হবে। সব রকম যন্ত্র সারাইয়ের কাজ হবে সেখানে।

কিন্তু সেখানেও সেই নিয়মের বাধা আড়াল হয়ে দেখা দিল। গ্লাসগোর যন্ত্রসঙ্ঘের সভ্য না হলে যন্ত্র সংক্রান্ত কোন দোকানই খোলা চলবে না— তা না হলে দোকান খোলা সরাসরি বেআইনী কাজ বলে গণ্য হবে। অগত্যা জেমস নিজের যোগ্যতার হিসেব ও ইচ্ছার কথা জানিয়ে গ্লাসগোর যন্ত্রসঙ্ঘের অফিসে আবেদনপত্র জমা দিলেন। কিন্তু যেহেতু জেমস সাতবছর শিক্ষানবিশী করেননি, সেই কারণে তার আবেদন নাকচ হয়ে গেল। জেমস অনেক আশাভরসা নিয়ে বুক বেঁধেছিলেন। এবারে মাথায় হাত পড়ল। কি করবেন ভেবে ঠিক করতে পারছেন না।

এমনি সংকট সময়ে কয়েকজন পারিবারিক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল আচমকা। তাদের কাছেই পাওয়া গেল পথের হদিস। বন্ধুরা একবাক্যে সকলে পরামর্শ দিলেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রভবনের একটা ঘরে স্বচ্ছন্দে নিজের কাজ নিয়ে বসে যাওয়া যায়। তার জন্য ব্যবস্থা যা করবার তারাই করে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যন্ত্রসঙ্ঘের নিয়মকানুন অচল। জেমস সানন্দে বন্ধুদের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করলেন। নিজের যন্ত্রপাতি নিয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রভবনের একটা ঘরে একরকম বলা যায় কারখানা খুলে বসলেন। কাজের তো অভাব ছিল না।

দিনকয়েক এটা সেটা নিয়ে কিছু কাজ করে দিতেই গোটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জেমসের হাতের কাজের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। যন্ত্রবিভাগের কিছু বিকল যন্ত্রপাতি কয়েকদিনের চেষ্টাতেই জেমস সারিয়ে তুললেন। দেখা গেল, সারাই করা যন্ত্রগুলো আগের তুলনায় অনেক ভাল কাজ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে একটা কাজ রাতারাতি জেমসকে বিখ্যাত করে তুলল। শব্দ বিজ্ঞানের গবেষণার জরুরী সঙ্গীত যন্ত্রগুলো জেমসের হাতে সারাই হয়ে যথারীতি কাজ দিতে শুরু করল। চোখ কান খোলা রেখেই সব কাজ করতেন জেমস।

তিনি জানতেন, শেখার শেষ নেই। সারা জীবনই শেখার সময়। তাই তিনি যা কিছু মেরামতের কাজ করতেন, নানান জাতের যন্ত্রে নানা ধরনের মেকানিজম খুঁটিয়ে দেখে রপ্ত করে নিতে লাগলেন। জেমস ওয়াট ছিলেন বলতে গেলে হাতুড়ে। দেখতে দেখতে জেমস হয়ে উঠলেন বৈজ্ঞানিক মিস্ত্রী। উত্তরকালে যিনি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের যুগপুরুষ হিসেবে বন্দিত হবেন, এভাবেই দিনে দিনে তাঁর ভিত তৈরি হয়ে চলল। জেমসের উৎসাহ ছিল অফুরন্ত। কাজের ফাঁকে যে অবসরটুকু পেতেন তা তিনি শুয়ে বসে নষ্ট করতেন না। সেই সময়ে ডুবে থাকতেন নানা ধরনের বিজ্ঞানের বইতে।

কিন্তু তাতে অতৃপ্তি বেড়েই চলেছিল। নানা দেশের বিজ্ঞানের বিষয়ে পড়তে হলে যে ভাষা শিক্ষার দরকার তা তো তার ছিল না। অধ্যবসায় বলে সেই বাধাও দূর করলেন জেমস। নিজের চেষ্টাতেই নানা ভাষা শিক্ষার বই কিনে পড়তে শুরু করলেন। নানা বিদেশী ভাষা এই সময়েই শেখা হয়ে যায় জেমসের। প্রধান বাধা দূর হবার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি প্রসারিত হল, সাহসও বাড়ল। দিনের শেষ লগ্নে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যখন ছাত্রছাত্রীদের ভিড় থাকে না, সেই সময়ে লাইব্রেরীও থাকে প্রায় ফঁাকা। জেমস প্রাথমিক সঙ্কোচ দূর করে লাইব্রেবীর এককোণ আশ্রয় করতে লাগলেন।

এভাবে একের পর এক বিজ্ঞানের বই পড়া চলল তাঁর। অবশ্য যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত বইই যে তার পড়ার প্রধান বিষয় ছিল তা বলাই বাহুল্য। কিছুকাল এভাবে কাটার পর রসদ যথেষ্টই সংগৃহীত হল। এরপরে বসে গেলেন ছোট বড় নানা যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্যই যা নিজের সীমিত সাধ্যের আয়ত্তাধীন। বাদ্যযন্ত্রের কাজে হাত দেবার আগে স্বর ও সুর সঙ্গতির মূল সূত্রগুলো ভাল করে রপ্ত করে নিয়েছিলেন। শব্দবিজ্ঞানের ওপর কাজ করবার জন্য কষ্টসাধ্য সুরজ্ঞান থেকেও পিছিয়ে থাকেননি জেমস। এই সময়ে জেমসের বিদ্যা ও জ্ঞান যে কোন বিজ্ঞানের অধ্যাপক কিংবা সঙ্গীতের অধ্যাপকের চেয়ে বেশি ছাড়া কম কিছু ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ছাত্ররা এই অশিক্ষিত মিস্ত্রীর হাতের যাদু দেখে মুগ্ধ। অধ্যাপকরাও আসেন। অধ্যাপকদের মধ্যে যোসেফ ব্ল্যাক জেমসের মুগ্ধ গুণগ্রাহী। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন। গবেষণা ও অধ্যাপনায় গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই নাম ডাক ব্ল্যাকের। তিনি তার বক্তৃতার ও গবেষণার জরুরী যন্ত্রপাতি তৈরি করার দায়িত্ব জেমসকে দেন। ব্ল্যাকের গবেষণার মূল বিষয় ছিল তাপ পদার্থবিদ্যা। এই গবেষণার দরকারী জিনিসপত্র বানাতে বানাতে বাষ্পীয় শক্তিঘটিত কারিগরি বিষয় সম্পর্কে জেমসের পরিষ্কার ধারণা গড়ে উঠল।

ইতিমধ্যে একটা বিশেষ ধরনের ইঞ্জিন মেরামতির জন্য জেমসের কাছে এল। একটা নিউকমেন মেসিন। সেই যুগে এই মেসিন ব্রিটেনে কয়লাখনিতে জল নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার কার হত। জেমস ইঞ্জিনের যন্ত্রকৌশল দেখে বুঝতে পারছেন, ইঞ্জিনটা চলে বায়ুর চাপকে কাজে লাগিয়ে ৷ দেখে শুনে তাঁর মনে হল বাষ্পীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই মেসিনের কার্যকারীতা আরও অনেক বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে মনস্থির করে ফেললেন জেমস ! কাজ বেশি দেবে, আবার ঝামেলাও কম হবে এমন একটা ইঞ্জিন তিনি নিজেই তৈরি করবেন স্থির করলেন।

জেমস জানতেন ২১২ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক পাউন্ড বাষ্প সহজেই ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পাঁচ পাউন্ড জলকে ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নিয়ে আসা যায়। বাষ্পীয় এই লীনতাপকে কাজে লাগাবার চিন্তায় ডুবে গেলেন জেমস। ১৭৬৫ খ্রিঃ নাগাদ জেমস বাষ্পীয় ইঞ্জিনের বায়ুকল বা এয়ারপাম্প আবিষ্কার করে ফেললেন। ইঞ্জিনের চোঙের ভেতরের বাষ্প কাজ শেষ করে যখন ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় জলবিন্দুতে পরিণত হয় তাকে পৃথক করবার জন্য ঘনীভবন কক্ষও এয়ার পাম্পের প্রায়োজন হয়।

এরপর তৈরি করলেন দুটি ছিদ্রযুক্ত বায়ুনিরন্ধ্র আবরণ। ছিদ্রপথের একটিতে চাপদণ্ডের ওঠানামা ও অন্যটিতে বাষ্প চলাচলের বন্দোবস্ত রাখা হল। এই আবরণটি তিনি এঁটে দেন বাষ্পীয় ইঞ্জিনের তলার দিকে। দেখা গেল এই নতুন ব্যবস্থায় চাপদন্ড বাষ্পের ধাক্কায় চোঙের ভেতরে অনায়াসে চলাফেরা করতে পারছে। এইভাবে একে একে নানা যন্ত্রাংশ ও তার কলাকৌশল উদ্ভাবন করতে করতে বাষ্পীয় ইঞ্জিন নির্মাণের পথ প্রশস্ত করতে লাগলেন। কিছুদিনের মধ্যেই একটি মডেল ইঞ্জিন তৈরি করে ফেললেন।

কিন্তু দেখা গেল, পরীক্ষাকালে ইঞ্জিনের নানা ফাঁকফোকর দিয়ে বাষ্প বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা করে ইঞ্জিনের চাপদন্ডটিতে ত্রুটি ধরা পড়ল। মডেল ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারটা ছিল খুবই খরচ সাপেক্ষ। সামলাতে গিয়ে বাজারে জেমসের অনেক দেনা হয়ে গেল। তাছাড়া আরও কয়েকটি নতুন মেসিনের কলাকৌশল নিয়েও তিনি এইসময় পরীক্ষার কাজ চালাচ্ছিলেন। তাতেও খরচ হচ্ছিল যথেষ্ট অর্থ। এসব নিয়ে যখন দিশাহারা অবস্থায় সেই দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন অধ্যাপক যোসেফ ব্ল্যাক।

অধ্যাপকের অনুরোধে ব্রিটেনের এক বিখ্যাত লৌহ কোম্পানি ক্যারন আয়রন ওয়ারকস – এর কর্তা ডক্টর জন রোবাক জেমসকে পরীক্ষা – নিরীক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করতে সম্মত হলেন। তবে একটাই শর্ত থাকবে, লভ্যাংশের দুই তৃতীয়াংশ ক্যারন কোম্পানির প্রাপ্য হবে। যথারীতি এবিষয়ে চুক্তিপত্র সইসাবুদ হতেও বিলম্ব হল না। ১৭৬৯ খ্রিঃ জেমস তার বাষ্পীয় ইঞ্জিনের পেটেন্ট পেয়ে গেলেন। এই যুগান্তকারী ঘটনার মাধ্যমেই বলা চলে প্রথমে ব্রিটেনে ও পরে বিশ্বের অন্যান্য সমৃদ্ধ দেশে শিল্পবিপ্লবের ঘন্টাধ্বনি হল।

জেমসের মডেল ইঞ্জিনটি তত্ত্বগতভাবে ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। কেবল গঠনগত কিছু ত্রুটি থাকার জন্য সেটি আশানুরূপ কাজ দেখাতে পারেনি। কাজেই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ইঞ্জিন তৈরির আর কোন বাধা ছিল না। এইসময় জেমসের সঙ্গে যোগাযোগ হল বার্মিংহামের বিশ্ববিখ্যাত লৌহ কারখানার মালিক ম্যাথু বুলটনের সঙ্গে। তারা জেমসের পূর্বতন চুক্তিকর্তা জন রোবাকের সঙ্গে ব্যবস্থায় এলেন যে ইঞ্জিন তৈরির জন্য সবচেয়ে ভাল লোহার কলকব্জা তৈরি করে দেবেন। এই চুক্তি হল ১৭৭৪ খ্রিঃ গোড়ার দিকে। জেমসের উৎসাহের অন্ত ছিল না।

কয়েক মাসের চেষ্টাতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি হয়ে গেল। সারা ব্রিটেনে এই নিয়ে উৎসাহ ও উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেল। এরপর একের পর এক ইঞ্জিন তৈরি হয়ে চলল। নতুন পেটেন্ট নিয়ে আরও নতুন ইঞ্জিনও তৈরি হতে লাগল। যতদিন যেতে লাগল জেমসের হাতে ইঞ্জিনেরও ক্রমোন্নতি ঘটতে লাগল। এমন ইঞ্জিন গড়া হল তাতে গতিবেগকে অপরিবর্তিত রাখার এবং গতিকে সীমিত করার যন্ত্রও যুক্ত হল। প্রচুর বাষ্পকে উৎপন্ন করে ইঞ্জিনে এই স্বয়ংক্রিয় সীমিতকরণের ব্যবস্থা করা হল। এতদিন ব্রিটেনে নিউকমেন ইঞ্জিনেরই প্রাধান্য ছিল।

১৭৮৩ খ্রিঃ থেকে জেমসের ইঞ্জিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাজার থেকে নিউকমেন হটে যেতে বাধ্য হল। বাষ্পীয় ইঞ্জিন নির্মাণের সূত্রে জেমস অচিরেই প্রভূত অর্থ ও খ্যাতির অধিকারী হলেন। এই সূত্রে বিশ্ববিখ্যাত লৌহ কারখানার মালিক ম্যাথু বুলটনের সঙ্গেও বন্ধুত্ব নিবিড় হল। লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যবসায়ী বুলটন ছিলেন প্রকৃত অর্থেই মানবদরদী। বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরির নতুন ফ্যাকটরিতেও তার সেই সহৃদয়তার প্রমাণ রাখলেন। তাঁর ব্যবস্থাপনায় ফ্যাকটরিতে প্রকৃত অনাথ ও দুঃস্থরাই শিক্ষানবীশের অগ্রাধিকার পেত ৷ বুলটন খুঁজে খুঁজে এদের সংগ্রহ করতেন। পরম মমতায় তাদের থাকা খাওয়া ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতেন। ওখানেই শেষ নয়।

কারখানায় কাজ শেখার পরে দুঃস্থ কর্মীদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগও বুলটনই করে দিতেন। অপরদিকে, উৎপাদিত ইঞ্জিনের গুণগত মান বজায় রাখার ব্যাপারে জেমসের শ্রম ও ভাবনাচিন্তার অন্ত ছিল না। তাঁর ভদ্রোচিত ব্যবহার ও যন্ত্রের মান প্রতিটি ক্রেতাকেই সন্তুষ্ট করত। জ্বালানীর অপচয় রোধ হত বলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জেমসের বাষ্পীয় ইঞ্জিন ইংলন্ডের কয়লাখনিগুলিতে একচেটিয়া হয়ে গেল। এই ইঞ্জিনকে দেখা গেল ব্যবসায়ীরা তাদের কারখানায় আরও নানা কাজে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। ফলে দেখতে দেখতে শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্রবিপ্লব উপস্থিত হল।

১৮০০ খ্রিঃ নাগাদ জেমসের ইঞ্জিনের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হল। চুক্তিমত ইঞ্জিন বিক্রির এক তৃতীয়াংশ জেমসের প্রাপ্য হয়েছিল। তাতে প্রচুর অর্থের মালিক হলেন তিনি। এই অর্থ দিয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণা আরম্ভ করলেন জেমস। একে একে আবিষ্কার করলেন প্রতিলিপিমুদ্রণযন্ত্র, জমিপরিমাপের বিশেষ যন্ত্র, অঙ্কন যন্ত্র ও গ্রহনক্ষত্রাদির দূরত্ব পরিমাপক যন্ত্র। যন্ত্রবিদ্যা ছাড়াও রসায়ন বিদ্যাতেও যথেষ্ট দান রয়েছে জেমসের।

তিনিই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন জল কোন মৌল নয়। যৌগিক পদার্থ। এতে আছে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস। শেষ বয়সে জেমস মানব সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ব্রিটেনের বস্তি অঞ্চল গুলোতে তিনি নিয়মিত ঘুরে বেড়াতেন। নিরন্নকে যোগাতেন অন্ন, আশ্রয়হীনকে আশ্রয় আর রুগীকে নিরাময়ের ওষুধ।

জেমস ওয়াট এর মৃত্যু: James Watt’s Death

১৮১৯ খ্রিঃ অদম্য কর্মপ্রেরণার আদর্শ পুরুষ বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট ৮৪ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন।

Leave a Comment