মাস্টারদা সূর্য সেন স্মরণীয় কেন? মাষ্টারদা কে ছিলেন? | Masterda Surya Sen: বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেন। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী মাস্টারদা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি এক সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের পরিকল্পনা করেন, যার ফলশ্রুতি ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন।
মাস্টারদা সূর্য সেনের বৈপ্লবিক কার্যকলাপ: মাস্টারদা সূর্যসেন যে সমস্ত বৈপ্লবিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সেগুলি হল-
1)বিপ্লবী সমিতি গঠন-মাস্টারদা সূর্যসেন ছিলেন চট্টগ্রাম বৈপ্লবিক সংগঠনের সভাপতি। সশস্ত্র অভ্যুত্থান সংঘটনের উদ্দেশ্যে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সদস্য অনন্ত সিং, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, লোকনাথ বল, অম্বিকা চক্রবর্তী, বিনোদ দত্ত, হিমাংশু সেন প্রমুখ তরুণকে নিয়ে 1928 খ্রিস্টাব্দে তিনি গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি।
2)চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন ও বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা: সূর্য সেনের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবীরা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলাকে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করে বিপ্লবী আন্দোলনের গতি সঞ্চারের জন্য চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন।1930 খ্রিস্টাব্দের 1লা এপ্রিল এই সংগঠনের নামে এক প্রচার পত্র প্রকাশ করে সূর্যসেন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ঠিক হয় 18ই এপ্রিল রাত 10টায় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করা হবে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী 18ই এপ্রিল সূর্যসেনের নির্দেশে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের দুটি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। ইউরোপীয়দের হত্যা করে, টেলিফোন এক্সচেঞ্জের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে, সেতু ও রেলপথ ধ্বংসের দ্বারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বানচাল করে দিয়ে সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
3)জালালাবাদের যুদ্ধ: চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর 1930 খ্রিস্টাব্দের 22শে এপ্রিল ব্রিটিশ সেনা বাহিনী চট্টগ্রাম পুনর্দখলের জন্য এলে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। তিন দিন ধরে চলা এই যুদ্ধে 11 জন বিপ্লবী নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন বিপ্লবী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
4)ইউরোপীয় নাইট ক্লাব আক্রমণ: সূর্যসেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্য নরেশ রায় ও ত্রিগুনা সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় নাইট ক্লাবে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয় এবং এই সংগঠনের মহিলা সদস্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে 1932 খ্রিস্টাব্দের 28শে সেপ্টেম্বর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। যদিও এই সংঘর্ষে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মৃত্যু ঘটে।
মৃত্যুবরণ: চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় অভিযুক্ত সূর্যসেন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অকথ্য অত্যাচারের পর 1934 খ্রিস্টাব্দের 12 ই জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ফাঁসি দেয়।