বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গ – বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নাম

Rate this post

বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গ – বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাস অঙ্গের নাম: যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় দেহকর্তৃক গৃহীত খাদ্য অক্সিজেন সহযোগে জারিত হয়ে তাপ ও স্থিতিশক্তি উৎপন্ন করে তাকে শ্বসন বলে ৷ আর যে তন্ত্রের মাধ্যমে শ্বসনকার্য সম্পন্ন হয় তাকে শ্বসনতন্ত্র বলে ৷ শ্বসনের সাথে জড়িত অঙ্গসমূহ (নাসারন্ধ্র, গলবিল, ল্যারিংস, ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলাই, ফুসফুস) -কে শ্বসনিক অঙ্গ বলে ।

Name the respiratory organs of animals

নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ

শ্বসনতন্ত্রের প্রথম অংশের নাম নাসিকা বা নাক। এটা মুখগহ্বরের উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার গহ্বর। নাক বা নাসিকার সাহায্যে কোনো বস্তুর সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ বুঝা যায়। এক বিশেষ ধরনের স্নায়ু এই অঙ্গকে উদ্দীপিত করে, ফলে আমরা গন্ধ পাই। নাসিকা এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে সেটি প্রশ্বাসের সময় বাতাসকে ফুসফুসের গ্রহণের উপযোগী করে দেয়।

নাসাপথ সামনে নাসিকাছিদ্র এবং পিছনে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পাতলা প্রাচীর দিয়ে এটি দুই ভাগে বিভক্ত। এর সামনের অংশ লোমাবৃত এবং পিছনের অংশ শ্লেষ্মা প্রস্তুতকারী একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বায়ুতে বিদ্যমান ধূলিকণা, রোগজীবাণু এবং আবর্জনা থাকলে তা এই লোম এবং পর্দাতে আটকে যায়। এতে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করার পূর্বে কিছু পরিমাণে নির্মল হয়ে যায়। এছাড়া শ্বসনের জন্য গ্রহণ করা বায়ু নাসাপথ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা উষ্ণ এবং আর্দ্র হয়। এর ফলে হঠাৎ ঠাণ্ডা বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে সাধারণত কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।

গলবিল

মুখ হাঁ করলে মুখ গহবরের পিছনে যে অংশটি দেখা যায় সেটি গলবিল। নাসা পাতের পিছনের অংশ থেকে ষড়যন্ত্রের উপরিভাগ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত। এর পিছনের অংশের বিপরীতলে একটি ছোট জিহ্বার মত অংশ থেকে এটাই আল জিব্বা । খাদ্য এবং পানীয় গলাধরকরণের সময় এটা নাসা পদের পশ্চাৎপদ বন্ধ করে দেয়। ফলে কোনো প্রকার খাদ্য নাসিকা পথে বাইরে আসতে পারে না। খাদ্য গ্রহণের সময় প্রচুর পরিমাণে পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসরণ করাও এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সম্ভবত উন্নততর ষড়যন্ত্রের বিবর্তনের সাথে আলাজিব্বার উদ্ভবের একটা সম্পর্ক আছে যেটি কেবলই মানুষের সবচেয়ে বেশি বিকশিত।

স্বরযন্ত্র

এটা গলবিদের নিচে এবং শ্বাসনালির উপরে অবস্থিত ।স্বরযন্ত্রের দুই ধারে দুটি পেশী থাকে এগুলোকে ভোকাল কর্ড বলে। স্বরযন্ত্রের উপরে একটা জিব্বা আকৃতির ঢাকনা রয়েছে। একে উপ জিব্বা বলে। শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সময় এটি খোলা থাকে এবং এই পথে বাতাস ফুসফুসে যাতায়াত করতে পারে। খাবার সময় ওই ঢাকনাটা স্বরযন্ত্রের মুখ ঢেকেতে ফলে আহার্য দ্রব্যাদি সরাসরি খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে শ্বাস-প্রশ্বাসে এর কোন ভূমিকা নেই।

শ্বাসনালি

এটি খাদ্যনালীর সামনে অবস্থিত একটি ফাপানল। এই নালিটির স্বরযন্ত্রের নিচের অংশ থেকে শুরু করে কিছুদূর গিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি বায়ু নলের সৃষ্টি করে এগুলো শ্বাসনালি। এর প্রাচীর কতগুলো অসম্পূর্ণ বলায়াকার তরুণাস্থি ও পেশী দিয়ে গঠিত। এর অন্তর্গত্র ঝিল্লি দিয়ে আবৃত। এ ঝিল্লিতে সুক্ষ লোমযুক্ত কোষ থাকে। এর ভিতর দিয়ে বায়ু আসা-যাওয়া করে শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তুকণা প্রবেশ করলে সুখ্য লোম যুক্ত সেগুলোকে শ্লেষ্মা এর সাথে বাইরে বের করে দে।

ব্রংকাস

ব্রঙ্কাস স্বরযন্ত্রের নিম্নাংশ শুরু হয়ে ফুসফুসের নিকটবর্তী স্থানে গিয়ে ডান এবং বাম দিকে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এ শাখা গুলো যথাক্রমে বাম ও ডান ফুসফুসের প্রবেশ করে। এগুলো ব্রঙ্কাই একবচনে ব্রংকাস নামে পরিচিত। ফুসফুসে প্রবেশ করার পর ব্রংকায় দুটি অসংখ্য শাখা প্রশাখার বিভক্ত হয়। এগুলোকে অনুক্রমশাখা বলে এদের গঠনশৈলী শ্বাসনালীর অনুরুপ।

ফুসফুস

ফুসফুস শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। বক্ষ গহবরের ভিতর হৃদপিণ্ডে দুই পাশে দুটি ফুসফুস অবস্থিত। এটি স্পঞ্জ এর মত নরম এবং হালকা লাল রংয়ের। ডান ফুসফুস তিন খন্ডে এবং বাম ফুসফুস দুই খন্ডে বিভক্ত। ফুসফুস দুই ভাজ বিশিষ্ট প্লুরা নামক পর্দা দিয়ে আবৃত। ২ ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার রস নির্গত হয়।ফলের শ্বাসকিয়া চলার সময় ফুসফুসের সাথে বক্ষবাত্রের কোন সংঘর্ষ হয় না। ফুসফুসে অসংখ্য বায়ুথলি এবং সুক্ষ সুক্ষ শ্বাসনালী ও রক্তনালী থাকে। বায়ুথলি গুলোকে বলে আলভিউলাস। বায়ুথলি গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুক্রম শাখা প্রান্তে মৌচাকের মতো অবস্থিত। নাসাপথ দিয়ে বায়ু সরাসরি বায়ুথলিতে যাতায়াত করতে পারে। বায়ুথলি পাতলা আবরণী দিয়ে আবৃত এবং প্রতিটি বায়ুথলির কৈশিক নালিকা দিয়ে পরিবেশিত। বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মত ফুলে ওঠে এবং পরে আপনা আপনি সংকুচিত হয়। বায়ুথলি ও কৌশিক নালিকার গাত্র এত পাতলা যে এর ভিতর দিয়ে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।

বিভিন্ন প্রাণীর শ্বাসঅঙ্গ

প্রাণীশ্বাসঅঙ্গ
স্তন্যপায়ী, পক্ষী ও সরীসৃপফুসফুস
মাছ, জলজ শামুক, ঝিনুকফুলকা
কই, শিং ও মাগুরঅতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র
কুনোব্যাঙফুসফুস (ডাঙ্গায়), মুখবিবর-গলবিলীয় মিউকাস পর্দা (জলে), ত্বক (শীত ঘুমের সময়)
ব্যাঙাচি অন্তঃফুলকা ও বহিঃফুলকা
মাকড়সা ও কাঁকড়াবিছে বুকলাং বা বইফুসফুস
রাজকাঁকড়া বা লিমুলাস, চিংড়ি বুকগিল বা বইফুলকা
পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী (আরশোলা, প্রজাপতি, ফড়িং, মশা, মাছি প্রভৃতি) শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া
অ্যামিবা, স্পঞ্জ, হাইড্রা, জেলিফিশ দেহতল
কেঁচো, জোঁক, কৃমি ভিজে ত্বক

Leave a Comment