ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা নীতি

Rate this post

এখানে ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চিনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত, যার বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭% মানুষ ভারতে বসবাস করে। তাই ভারতের জন্মহারকে নিয়ন্ত্রন করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কে স্থির অবস্থায় নিয়ে আনার জন্য ভারতে একটি জনসংখ্যা নীতি খুবই আবশ্যক। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে মোট জনসংখ্যার একটা বড়ো অংশ অশিক্ষিত, ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী, প্রজনন ক্ষম জনসংখ্যার আধিক্য এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, সেখানে সরকারী প্রচেষ্ঠা ও সদিচ্ছা ছাড়া জনসংখ্যার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে কে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। 

এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৭৬ সালে প্রথম জনসংখ্যা নীতি গ্রহন করা হয়েছিল, কিন্তু এই পরিকল্পনায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য তেমন কোন গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় নি। 

২০০০ সালের মে মাসে ভারতের জনসংখ্যা এসে পৌছায় ১০০ কোটিতে এবং গত বিংশ শতকে অর্থাৎ ১৯০১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা হয়েছে ২৩ কোটি থেকে বেড়ে ১০০ কোটি। এই ভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে United Nation এর মতে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত চীন কে পেড়িয়ে বিশ্বের জনবহুল দেশে পরিনত হবে। 

তাই জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য ভারত সরকার নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৯৯৪ সালে ডঃ এম. এস. স্বামীনাথন এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং এই কমিটি ২০০০ সালে ড্রাফট এর আকারে ভারতের প্রথম পূর্নাঙ্গ জনসংখ্যা নীতি প্রকাশ করেন । 

ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা নীতি – ২০০০ 

ভারতের ২০০০ সালের জনসংখ্যা নীতিতে যে সব লক্ষ্য স্থির করা, সেগুলি কে সময়ের ওপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – স্বল্প মেয়াদি উদ্দেশ্য, মধ্যম মেয়াদি উদ্দেশ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি উদ্দেশ্য।

২০০০ সালের জনসংখ্যা নীতির গুরুত্বপূর্ন কিছু উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য 

১. ২০১০ সালের মধ্যে জন্মদান ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিকাঠামোর বিকাশ সাধন। 

২. ১৪ বছর বয়সী সকলের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা । 

৩. স্কুল ছুট বালক ও বালিকার পরিমান ২০% এর নিচে কমিয়ে আনা। 

৪. আইন করে মেয়েদের বিবাহের স্রর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিবাহের বয়স ২১ বছর করা।

৫. ৮০% প্রসব কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে করা এবং বাকি ২০% প্রশিক্ষন প্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মীর দ্বারা করানো। 

৬. জন্ম, মৃত্যু, গর্ভধারন, বিবাহের ১০০% নথিভুক্ত করন। 

৭. AIDS এর প্রসার কাটকানো। 

৮. শিশু মৃত্যুর হার কে কমিয়ে প্রতি হাজারে ৩০ জনে নিচে কমিয়ে আনা। 

৯. প্রসুতি মৃত্যুর হারকে কমিয়ে প্রতি লক্ষে ১০০ জনের নিচে নামিয়ে আনা। 

১০. জন্মহার কে ভারতের প্রতিস্থাপন সীমানা ২.১ এ নামিয়ে আনা। 

১১. দেশের সমস্ত শিশুকে রোগ মুক্ত করার জন্য সকলের জন্য টীকা করনের ব্যবস্থা করা। 

১২. ছোয়াচে রোগের নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। 

১৩. ২০৪৫ সালের মধ্যে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্জন করা ।

১৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ, গর্ভনিরোধক ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনা মূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। 

Leave a Comment