পাবলো নেরুদা জীবনী – Pablo Neruda Biography in Bengali

Rate this post

পাবলো নেরুদা জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Pablo Neruda Biography in Bengali. আপনারা যারা পাবলো নেরুদা [(রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো) (Ricardo Eliécer Neftalí Reyes Basoalt)] সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাবলো নেরুদা এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

পাবলো নেরুদা কে ছিলেন? Who is Pablo Neruda?

পাবলো নেরুদা (12 জুলাই 1904 – 23 সেপ্টেম্বর 1973) প্রকৃত নাম রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো (Ricardo Eliécer Neftalí Reyes Basoalt)। তিনি তাঁর বাবার জন্য পাবলো নেরুদা ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজেতা একজন চিলিয় কবি, কুটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন যখন তিনি বিভিন্ন ধরণের কবিতা লিখতে শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্নজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা যা তাঁর ১৯২৪ সালে প্রকাশিত বিশটি ভালোবাসার কবিতা ও একটি মন খারাপের গান শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।

পাবলাে নেরুদা চিলির জাতীয় কবি, পাবলাে নেরুদা লাতিন আমেরিকার কবি রূপেই প্রসিদ্ধ। দেশপ্রেম ও মানবতার আবেদনধর্মী কবিতার জন্য তিনি আজ সারাবিশ্বে পরিচিত।

পাবলো নেরুদা জীবনী – Pablo Neruda Biography in Bengali

নামপাবলো নেরুদা [(রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো) (Ricardo Eliécer Neftalí Reyes Basoalt)]
জন্ম12th জুলাই 1904
পিতাজোসে দেল কারমেন রেয়েস মোরালেস
মাতারোসা নেফতালি বাসো আল্টো ওপাজো
জন্মস্থানপারাল, মৌলে অঞ্চল, চিলি
জাতীয়তাচিলিয়
পেশাকবি, কুটনীতিবিদ, সিনেটর
মৃত্যু23rd সেপ্টেম্বর 1973 (বয়স 69)

পাবলো নেরুদা এর জন্ম: Pablo Neruda’s Birthday

পাবলো নেরুদা ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।

পাবলো নেরুদা এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Pablo Neruda’s Parents And Birth Place

পাবলাে নেরুদার আসল নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েজ বাসােয়ল (Neftali Ricardo Reyes Basoalto), জন্ম চিলির পারেলের রিকাডাে গ্রামে ১৯০৪ খ্রিঃ ১২ ই জুলাই। তার শৈশব ও কৈশাের কাটে দক্ষিণ চিলির সীমান্তবর্তী শহর তেমুকাতেয়।

নেরুদার পিতা যােশে কামেন রেয়েজ ছিলেন আরাউফো প্রদেশে নতুন নতুন রেললাইন বসাবার কাজে নিযুক্ত। সেখানকার বেশির ভাগ মানুষেরই জীবিকা ছিল পশুপালন ও কৃষি।

এই সরলপ্রাণ কৃষিজীবী মানুষদের সংস্কারমুক্ত সমাজ ও ধর্মের আবহাওয়ায় এবং বন্যপ্রকৃতির খােলামেলা পরিবেশে নেরুদা বড় হয়ে ওঠেন। নেরুদার মা রােজা বাসােয়াল্টো ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। মাত্র তিন বছর বয়সেই নেরুদা মাতৃহারা হন। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা পুনরায় বিয়ে করে সপরিবারে চলে এসেছিলেন তেমুকোতে।

পাবলো নেরুদা এর ছোটবেলা: Pablo Neruda’s Childhood

স্কুলের পড়ায় বিশেষ মনােযােগ ছিল না নেরুদার। তিনি পড়তেন বাইরের বই – জুলে ভার্ন, ভিক্টর হুগাে, ওয়াল্টার স্কট, আর ম্যাক্সিম গাের্কির লেখার মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন। এভাবেই শৈশব থেকে তার সাহিত্যপ্রতিভা বিকাশের সুযােগ লাভ করেছিল।

মাত্র দশ বছর বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। এই বয়সেই কবিতার বিষয় নির্বাচনের প্রতি ছিল তার সতর্ক নজর। কবিতা লেখার সুবাদে পরিচিত মহলে কবিখ্যাতি লাভ করেন ১৩ বছর বয়সের মধ্যেই।

এই সময়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয় চিলির তৎকালীন বিখ্যাত কবি গ্যাব্রিয়েলা মিস্রালের। গ্যাব্রিয়েলা ১৯৪৫ খ্রিঃ সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। নেরুদার জীবনে তার প্রেরণা গভীর রেখাপাত করেছিল। স্কুলের পড়া শেষ করে নেরুদা ফরাসী ভাষা শেখার জন্য ভর্তি হন সানটিয়াগাের অপর একটি স্কুলে। কিন্তু তিনি নিজের সাহিত্যচর্চা নিয়ে এতই মেতে উঠেছিলেন যে পড়াশােনায় বেশি দূর অগ্রসর হতে পারলেন না। পনের বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পাবলাে নেরুদা ছদ্মনামে নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত কবি হওয়ারই স্বপ্ন দেখছেন তখন তিনি।

পাবলো নেরুদা এর রচনা: Written by Pablo Neruda

এই বয়সে তার কবিতার বিষয় ছিল প্রেম ভালবাসা, বিরহ, মৃত্যু এই অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। নেরুদার প্রথম কবিতার বই টুইলাইট প্রকাশিত হয় ১৯২৩ খ্রিঃ। প্রথম বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সমালােচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। উৎসাহিত হয়ে তিনি পরের বছরেই প্রকাশ করলেন দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ Veinte Poemas de amar বা কুড়িটি প্রেমের কবিতা।

বয়স কুড়িতে পৌছনাের আগেই নেরুদার কবিখ্যাতি সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ততদিনে তিনি অর্জন করেছেন নিজস্ব শৈলী ও বক্তব্য। বেরিয়ে এসেছেন প্রচলিত প্রকরণ ও ঢঙ – এর গন্ডি থেকে। কবিতার পাশাপাশি গল্প লেখাতেও হাত দিয়েছিলেন নেরুদা। তার প্রথম উপন্যাস El habitante ysu caperanza বা নিবাসী ও তার আশা প্রকাশিত হয় ১৯২৬ খ্রিঃ।

পাবলো নেরুদা এর রাজনৈতিক জীবন: Pablo Neruda’s Political Life

পরের বছর থেকেই শুরু হল নেরুদার বিচ্ছিন্ন কূটনৈতিক জীবন। ১৯২৭ খ্রিঃ থেকে পাঁচবছরের জন্য তাকে দূতাবাসের চাকরিতে নিয়ােগ করলেন চিলি সরকার। দেশের বুদ্ধিজীবীদের সম্মান জানাবার এটাই ওই দেশের সরকারের প্রচলিত রীতি।

নেরুদা প্রথমে গেলেন ব্রহ্মদেশ, সেখান থেকে রেঙ্গুন, তারপর কলম্বাে এবং পরে জাভায় কাটালেন নিঃসঙ্গ জীবন। কবিতা রচনাই ছিল তার এই বিচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গী। প্রবাসবাসকালীন রচনা Residencia eu latierra বা পৃথিবীর বাসা কবিতা গুচ্ছ। দেশের বাইরে থাকার যন্ত্রণা ও “ একাকীত্ব স্মৃতিমেদুরতা ছিল এই কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তু।

চিলি সরকারের কনসাল হয়ে ১৯৩৩ খ্রিঃ নেরুদা গেলেন স্পেনে। বার্সিলােনা ও মাদ্রিদে এলেন জনসাধারণের ঘনিষ্ঠ সান্নিধে। স্পেনের গৃহযুদ্ধে নিহত কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া কাফকা তাকে প্রভাবিত কবলেন।

কূটনৈতিক জীবনে এসে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হলেন রাজনীতির প্রতি। পালাবদল এলাে কবিতাতেও। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হল সরকার হত্যার বিরুদ্ধে আবেগময় প্রতিবাদ। এই কারণে তাকে হারাতে হল কনসালের পদ ১৯৩৭ খ্রিঃ।

১৯৪০ খ্রিঃ থেকে ৪৩ খ্রিঃ পর্যন্ত তিন বছর কনসাল রূপে মেক্সিকোতে কাটালেন। এই সময়েই নেরুদা মার্কসবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। হয়ে উঠলেন পুরােপুরি সৈনিক। ১৯৪৫ খ্রিঃ নেরুদা কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগ দেন এবং চিলির আইনসভা সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজনীতিতে যােগ দেবার পর দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসাই তাকে প্রেসিডেন্ট ভিদেলার জনস্বার্থ বিরােধী কাজের সমালােচনা করতে উৎসাহ যােগাল। এই সময় গ্রেপ্তার হবার আশঙ্কায় তাকে আত্মগােপন করতে হল। তার সরকার বিরােধী ছড়া তখন ফিরতাে লােকের মুখে মুখে। চিলির মহাকাব্য বলে কথিত Canto General বাকান্ড সর্বময় প্রকাশিত হল ১৯৫০ খ্রিঃ।

১৯৫২ খ্রিঃ নাগাদ চিলির বামপন্থী বিরােধী আইন কিছুটা শিথিল হলে নেরুদা দেশে ফিরে এলেন। এই সময় তাঁর কবিতার ধরন – ধারণ সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। তার লেখা হয়ে উঠল সমাজের বৃহত্তর অংশের আদরণীয়। তিনি হলেন সাধারণের প্রিয় কবি।

পাবলো নেরুদা এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Pablo Neruda’s Marriage Life And Family

১৯৫৫ খিঃ নেরুদা বিয়ে করলেন মাতিল দে উরুতীয়াকে। বিয়ের অব্যবহিত আগে এবং পরে লিখলেন অসংখ্য প্রেমের কবিতা। ১৯৫৯ খ্রিঃ প্রকাশিত হল তার প্রেম বিষয়ক সনেট শতক Cien Sonetos dc amar। বয়স পঞ্চাশ উত্তীর্ণ করে কবি তাঁর কবিতার মােড় ফিরিয়েছিলেন। বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল ভ্রমণ, রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত জীবনে সুখ – দুঃখের হিসেব নিকেশের প্রসঙ্গ।

১৯৬৭ খ্রিঃ প্রকাশিত হয় তার গীতিনাট্য Fulgar 4 muirte de Joaquin Murieta বা হােয়াকিন মুরিয়েতের মহিমা ও মৃত্যু এবং মানব প্রগতি ও সৃষ্টি সম্পর্কে অতিকথনমূলক কবিতা La eshada encendida বা জাজ্বল্যমান তরবারি।

পাবলো নেরুদা এর পুরস্কার ও সম্মান: Pablo Neruda’s Awards And Honors

ইতিমধ্যে চিলির রাজনৈতিক পটভূমিতে এলাে পরিবর্তন। ১৯৭০ খ্রিঃ সালভাদর অলিন্দে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। নেরুদাকে রাষ্ট্রদূত হয়ে যেতে হল প্যারিসে। এখানে অবস্থান কালেই নেরুদা পেলেন তার সাহিত্যের সর্বোচ্চ মর্যাদার স্বীকৃতি নােবেল পুরস্কার (১৯৭১ খ্রিঃ)। এর আগে তিনি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার এবং লেনিন ও স্তালিন পুরস্কার। চিলিতে গৃহযুদ্ধের মুখে মুখে রােগাক্রান্ত নেরুদা ফিরে এলেন দেশে। তার স্মৃতিকথা Conficsoque he vivido: Memorias (১৯৭১ খ্রিঃ) -এর চূড়ান্ত রূপ দিলেন।

পাবলো নেরুদা এর মৃত্যু: Pablo Neruda’s Death

রােগাক্রান্ত অবস্থাতেই ১৯৭১ খ্রিঃ ২৩ শে সেপ্টেম্বর চিলির প্রিয় মানুষ নেরুদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

Leave a Comment