প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব – ভূত্বকীয় পাত সংস্থান তত্ত্ব: ১৯৬০ এর দশকের ভূতাত্ত্বিক বিদ্যার নবীন তম সংযোজন হল পাত সংস্থান তত্ত্ব বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব। এই প্লেট টেকটনিক তত্ত্বটি আবিষ্কারের আগে পৃথিবীর পৃষ্ঠে সংঘটিত বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য পৃথক পৃথক তত্ত্ব ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে আবিষ্কৃত এই পাত সংস্থান তত্ত্বের প্রবর্তনের ফলে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি, মহীসঞ্চারন ও আরো অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনার ব্যাখ্যা এই একটি মাত্র তত্ত্বের দ্বারা সহজেই দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পৃথিবীর উপরি ভাগে যে ১০০ কিলোমিটার গভীরতা বিশিষ্ট শক্ত ও দৃঢ় শিলামন্ডলীয় অংশ , যা গুরুমন্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে অবস্থিত উষ্ণ ও সান্দ্র অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান ও চলনশীল অবস্থায় রয়েছে তাকে পাত বা প্লেট বলে এবং এই পাত গুলির বিবর্তন, গতিশীলতা, প্রকৃতি ও পাত গুলির মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের বিদ্যমানতা কে একত্রে পাত সংস্থান বা Plate Tectonic বলা হয়ে থাকে। টেকটনিক একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ হল গঠন বা construction । পাত বা প্লেট গুলি পরস্পর একত্রিত অবস্থায় না থেকে খণ্ডিত বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অবস্থান করে এবং এই শিলামণ্ডলীয় অংশ গুলির ঘনত্ব অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের থেকে কম হওয়ায় পাত বা প্লেট গুলি সমুদ্রের উপর ভাসমান বরফ খণ্ডের ন্যায় ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
পাত সংস্থান তত্ত্বের উৎপত্তি
পাতসংস্থান তত্ত্ব বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্বটির উৎপত্তি হয় ১৯৬০ এর দশকে । কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে পাত সংস্থান তত্ত্বের আবিষ্কার হলেও এই তত্ত্বের ভিত্তি অনেক আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে। যেমন – ১৯১২ সালে জার্মান ভূতত্ত্ববিদ ও আবহবিদ অ্যালফ্রেড ওয়েগনার The Origins of the Continents and the Oceans নামক গ্রন্থে তাঁর বিখ্যাত Continental Drift বা মহীসঞ্চারন তত্ত্বটি উপস্থাপনা করেন । কিন্তু ওয়েগনার এই তত্ত্বে মহাদেশ গুলির সঞ্চারনের সঠিক কারণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয় নি । মহীসঞ্চারন তত্ত্বটি ভূবিজ্ঞানীদের দ্বারা গ্রহন যোগ্য হলেও মহাদেশ গুলির সঞ্চারনের কারণ সম্পর্কীত একটি প্রশ্ন থেকেই যায়।
এরপর ১৯২৭ সালে আর্থার হোমস ভূঅভ্যন্তরের গুরুমন্ডলে অন্তর্গত অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে পরিচলন স্রোতের আবিষ্কার করেন, যা Convectional Current Theory নামে পরিচিত। যা মহাদেশীয় খণ্ড বা পাত গুলির চলনের কারণ হতে পারে বলে ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন।
ওয়েগনার মূলত পৃথিবীর স্থলভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে মহীসঞ্চারন তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন কারণ সেই সময় পৃথিবীর ৭০% সমুদ্র তলদেশের ভূভাগ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না। পরবর্তীকালে নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার এই সমুদ্র তলদেশের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন তথ্য তুলে ধরতে সাহায্য করে। যার পরিপ্রক্ষিতেই আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ হ্যারি হেস ১৯৬২ সালে “History of Ocean Basins” নামক গ্রন্থে সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি বা Sea Floor Spreading নামক তত্ত্বটির উপস্থাপনা করেন। যেখানে তিনি দুটি পাতের বিপরীত মুখী চলনকে সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতির কারণ হিসাবে তুলে ধরেন। যা পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ ভূবিজ্ঞানী Vine ও Matthews কর্তৃক মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বরাবর বিপরীত মূখী চৌম্বকীয় মেরুর আবিষ্কারের দ্বারা এই সমুদ্র বক্ষের বিস্তৃতির সত্যতা প্রমানিত হয়।
হ্যারি হেস কর্তৃক উপস্থাপিত এই সমুদ্র বক্ষের বিস্তৃতির তত্ত্বটি পাত সংস্থান তত্ত্বের ভিত প্রতিষ্ঠা করে পাত সংস্থান তত্ত্বটিকে এক সর্বাধুনিক তত্ত্ব হিসাবে তুলে ধরতে সাহায্য করে, যা পৃথিবী পৃষ্ঠে সংঘটিত সমস্ত সমস্ত রকম ভূ তাত্ত্বিক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম ।
- ভূমিকম্প (মহাদেশীয় পাত – মহাসাগরীয় পাত)
- অগ্ন্যুৎপাত ও আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি (মহাদেশীয় পাত – মহাসাগরীয় পাত)
- ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি
- গভীর সামুদ্রিক খাতের সৃষ্টি (মহাদেশীয় পাত – মহাসাগরীয় পাত)
- বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালার সৃষ্টি (মহাসাগরীয় পাত – মহাসাগরীত পাত)
- মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা (যেমন – মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা)
- গ্রস্ত উপত্যকা (যেমন – পূর্ব আফ্রকার গ্রস্ত উপত্যকা)
- মৃদু ভূমিকম্প
- বিদার অগ্ন্যুৎপাত (যা সমুদ্র তলদেশে নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টিতে সাহায্য করে)
- হ্রদের সৃষ্টি (যেমন – মৃতের সাগর)
সুপার প্লিউম – ভূ-অভ্যন্তরে গুরুমন্ডলের অন্তর্গত এমন কিছু স্থান যে জায়গার উষ্ণতা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি, সেখান থেকে উত্তপ্ত গরম ম্যাগমা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে, তাকে সুপার প্লিউম বলে। সুপার প্লিউম গুলি সাধারনত কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমন্ডলের মিলন অঞ্চল কিংবা ঊর্ধ্ব ও নিম্ন গুরুমন্ডলের সীমানা থেকে সৃষ্ট হয়ে থাকে। এই প্লিউম অঞ্চলের তাপমাত্রা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হয়ে থাকে। সুপার প্লিউম অঞ্চলেই পৃথিবীর হিরার খনি গুলি অবস্থিত হয়।
হটস্পট – গুরুমন্ডলের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বা সুপার প্লিউম বরাবর অবস্থিত ভূত্বকের উষ্ণতম স্থান গুলিকে উষ্ণবিন্দু বা হটস্পট বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর যেখানে সমুদ্র তলদেশে হটস্পট রয়েছে সেখানে ক্রমাগত লাভা নির্গমনের ফলে সমুদ্রের উপর আগ্নেয় দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। হটস্পট বরাবর আগ্নেয় দ্বীপের শৃঙ্খল সৃষ্টি সম্পর্কে প্রথম ব্যাখ্যা দেন জে.টি.উইলসন।
পৃথিবী উল্লেখযোগ্য হটস্পট গুলি হল – হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আইসল্যান্ড, রিইউনিয়ন দ্বীপ, আফার প্রভৃতি।
পাতের চলনে পরিচলন স্রোতের ভূমিকা
পৃথিবীর উপরি পৃষ্ঠের ভূ-ত্বকীয় অংশ বা পাত গুলি রয়েছে তা গুরুমন্ডলের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে এবং এই পাত গুলি শুধুমাত্র ভাসমান অবস্থায় নেই, এগুলি চলনশীল অবস্থায়ও রয়েছে। পাত গুলির চলনের কারণ কী – সেই সম্পর্কে আমাদের মনে প্রশ্ন উদিত হয়। পাতের চলনের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা উপস্থিত থাকলেও সবচেয়ে গ্রহন যোগ্য কারণ হল আর্থার হোমসের পরিচলন স্রোত মতবাদ।
এই পরিচলন স্রোত মতবাদ অনুসারে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে অবস্থিত তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতির জন্য প্রচুর তাপ নির্গত হয়। এই তাপ গুলি স্রোতের আকারে প্রবাহিত হয়ে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে পরিচলন প্রকোষ্ঠের সৃষ্টি হয়। এই ভাবে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পরিচলন প্রকোষ্ঠের মধ্যে অবস্থিত উষ্ণ স্রোত গুলি ঊর্ধ্বগামী হয়ে শিলামন্ডল পর্যন্ত পৌঁছে কখনো কখনো পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় আবার কখনো কখনো পরস্পরের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়।
যখন পরিচলন স্রোত গুলি পরস্পরের দিকে বা অভিমুখে অগ্রসর হয়, তখন তার ওপরে অবস্থিত ভূখণ্ড বা পাত গুলি পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় অর্থাৎ অভিসারী পাত সীমানার সৃষ্টি করে।
আবার যখন দুটি পরস্পরের বিপরীত মুখী পরিচলন স্রোত পাশাপাশি অবস্থান করে তখন তার ওপরে অবস্থিত ভূখণ্ড গুলিতে প্রচন্ড টানের ফলে পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রসারিত হয়ে প্রতিসারী পাত সীমানার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আর্থার হোমসের এই পরিচলন স্রোত মতবাদ পাতের চলনের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম।
কানাডিয়ান ভূপদার্থবিদ জে.টি.উইলসন ১৯৬৫ সালে প্রথম পাত বা Plate শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৬৭ সালে পার্কার ও মাকেঞ্জি পাতের চলন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন। এরপর মরগ্যান ও পিচো পাত সংস্থান তত্ত্বের বিভিন্ন দিক বা বিষয় পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরেন ১৯৬৮ সালে। তাই পিচোকে পাত সংস্থান তত্ত্বের জনক বলা হয়।
পাতের সংখ্যা
পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর যে পাতগুলো রয়েছে সেগুলো কে প্রধানত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা – মহাদেশীয় পাত এবং মহাসাগরীয় পাত।
আবার আকার বা আকৃতি অনুসারে পৃথিবীকে ৬ টি প্রধান পাতে এবং বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র বা মাঝারি পাতে ভাগ করা হয়েছে।
৬ টি প্রধান পাত হল –
আয়তন – ১০০ মিলিয়ন বর্গকিমির থেকে বড়ো
১. আফ্রিকান পাত
২. আমেরিকান পাত
৩. ইউরেশীয় পাত
৪. ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাত
৫. আন্তার্কটিকা পাত
৬. প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত
মাঝারি পাত গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
আয়তন – ১ থেকে ১০ মিলিয়ন বর্গকিমির মধ্যে
১. নাজকা পাত
২. আরবীয় পাত
৩. স্কোসিয়া পাত
৪. জুয়ান ডা ফুকা
৫. কোকোস পাত
৬. ফিলিপিন্স পাত
৭. ক্যারিবিয়ান পাত
৮. সোমালি পাত
৯. বিসমার্ক পাত
পাত সীমানা শ্রেণীবিভাগ
পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত পাত গুলির চলনের অভিমুখ অনুসারে পাত সীমানা গুলি প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় ।
১. অভিসারী পাত সীমানা
২. প্রতিসারী পাত সীমানা
৩. নিরপেক্ষ পাত সীমানা
অভিসারী পাত সীমানা
যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলা হয়।
যেমন – প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ও আমেরিকান পাত, ইন্দো- অস্ট্রেলীয় পাত ও ইউরেশিয় পাত অভিসারী পাত সীমান্তের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
অভিসারী পাত সীমানা বরাবর সাধারনত ভূত্বকের বিনাশ বা ধ্বংস হয় বলে অভিসারী পাত সীমানা কে বিনাশকারী পাত সীমানা বলা হয়ে থাকে।
যে সীমানা বরাবর দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পর মিলিত হয় তাকে সুচার লাইন বলে।
অভিসারী পাত সীমানা বরাবর সংঘটিত ভূ তাত্ত্বিক ঘটনাবলি হল যেমন – মহাদেশীয় পাত – মহাদেশীয় পাতের চলনে সৃষ্ট হিমালয় পর্বত শ্রেণী । মহাদেশীয় পাত – মহাসাগরীয় পাতের চলনে সৃষ্ট আন্দিজ ও রকি পর্বত শ্রেণী।
পাতের অভিসারী চলনের ফলে অনেক সময় একটি পাতের নিচে অপর পাতের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং তার ফলে পাত সীমানা বরাবর সামুদ্রিক খাত ও দ্বীপ পুঞ্জের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – পেরু – চিলি খাত, জাপান খাত , মারিয়ানা খাত যেমন – অ্যালুসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ, টোঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি।
প্রতিসারী পাত সীমানা
যে সীমানা বরাবর দুটি পাত একটি অপরটির থেকে দূরে সরে যায়, তাকে প্রতিসারী পাত সীমানা বলা হয়।
প্রতিসারী পাত সীমানা বরাবর ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন ভূত্বকের সৃষ্টি হয় বলে, প্রতিসারী পাত সীমানা কে গঠনকারী পাত সীমানা বলা হয়ে থাকে।
দক্ষিণ আমেরিকান পাত ও আফ্রিকান পাত এবং উত্তর আমেরিকান পাত ও ইউরেশিয় পাত প্রতিসারী পাত সীমান্তের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
প্রতিসারী পাত সীমানা বরাবর ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ও সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির মধ্যে প্রধান হল মধ্য সামুদ্রিক শৈল শিরা।
নিরপেক্ষ পাত সীমানা
যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে পাশাপাশি চলনশীল থাকে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোন রকম সংঘর্ষ হয় না, তাকে নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে। এই ধরণের পাত সীমানা গুলি সাধারনত চ্যুতি বরাবর গড়ে উঠতে দেখা যায়।
যেমন – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানআন্ড্রিজ চ্যুতি বরাবর নিরপেক্ষ পাত সীমানা দেখা যায়। নিরপেক্ষ পাত সীমানা গুলি মাঝারি থেকে প্রবল ভূমিকম্প প্রবন হয়ে থাকে।
অধঃপাত মণ্ডল বা Subduction Zone
অভিসারী পাত সীমানা বরাবর যখন দুটি মহাদেশীয় পাত বা একটি মহাদেশীয় পাত ও একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় তখন অপেক্ষাকৃত ভারী পাত টি দুটি পাতের সংযোগ বরাবর হালকা পাতটির নিচে অধঃপতিত বা নিমজ্জিত হয়। যে সীমানা বরাবর একটি পাত আর একটি পাতের নিচে অবনমিত হয়, তাকে অধঃপাত মণ্ডল বা Subduction Zone বলে । সাধারনত পাত গুলি ৩০ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি কোণে অধঃনমিত হয়। অধঃপাত মণ্ডলের আবিষ্কর্তা জাপানি ভূকম্পবিদ কিয়ো ওদাটি এবং আমেরিকান ভূকম্পবিদ হুগো বেনিয়ফের নাম অনুসারে একে ওদাটি-বেনিয়ফ জোন বলা হয়ে থাকে। এই বেনিয়ফ জোন অঞ্চলটি পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবন অঞ্চল । যেমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘলা এই বেনিয়ফ জোনের প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ এবং এই অঞ্চলটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রবন অঞ্চল ।
আবার অনেক সময় ভারী পাত টি হালকা পাতের নিচে প্রবেশ না করে হালকা পাতের উপরে উঠে যায়, এই ঘটনাকে অবডাকশন বলে। এই অবডাকসনের ফলে সিপরাসের ট্রডস পার্বত্য অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।