ভারতের নদ-নদী – Rivers of India: এটি ভারতের নদীগুলির একটি তালিকা যা পশ্চিমে শুরু হয়ে ভারতের উপকূল ধরে দক্ষিণে, তারপর উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। উপনদী নদীগুলি প্রবাহিত ক্রম অনুসারে শ্রেণিবদ্ধভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ভারতের নদ-নদী (Rivers of India)
ভারত নদীমাতৃক দেশ । সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের নদী নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে । ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা নদনদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল । বর্তমানে পরিবহন ব্যবস্থায়, জলসেচে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, পানীয় জল সরবরাহে, শিল্পের বিকাশে নদ নদীগুলির ভূমিকা ভারতের জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জরিয়ে আছে । তাই নদ নদীকে ভারতের হৃদয় রূপে আখ্যা দেওয়া হয় ।
ভারতে বিভিন্ন নদ-নদীর প্রবাহ আঞ্চলিক জলবিভাজিকার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে । প্রধান জল্বিভাজিকা মধ্য ভারতের উঁচুভূমি অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন নদনদীকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা হয়, যেমন – উত্তর ভারতের নদ-নদী ও দক্ষিণ ভারতের নদ-নদী ।
উত্তর ভারতের নদনদী
হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন সিন্ধু, গঙ্গা, বহ্মপুত্র,এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীকে উত্তর ভারতের নদনদী বলা হয় । হিমালয় থকে উৎপন্ন নদীগুলির প্রত্যেকটিই হিমালয়কে গভীরভাবে কেতে প্রবাহিত হয়েছ । এদের অনেকগুলি হিমালয়ের সৃষ্টির পূর্বেই স্থান দিয়ে প্রবাহিত হত । তাই এদের পূর্ববর্তী নদী (Antecedent River) বলে ।
সিন্ধু নদ
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৩১৮০ কিমি, আর ভারতে এই নদের দৈর্ঘ্য ৭০৯ কিমি
- উৎসস্থল : সিন-কা-কাব উষ্ণ প্রসবণ
- পতনস্থল : আরব সাগর
- উপনদী : বিপাসা, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, শতুদ্র
উৎপত্তি
তিব্বতের মানস সরবরের উত্তরে সিঙ্গিখাবাব হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।
প্রবাহপথ
তিব্বতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদ ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে প্রবেশ করেছ । জম্মু ও কাশ্মীরের জাস্কর ও লাডাক পর্বতশ্রেণী অতিক্রম করে এই নদ বুঞ্জির কাছে গভীর গিরিখাত (৫ কিমি) সৃষ্টি করেছে । । এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রায় ৭০৯ কিম প্রবাহিত হয়ে সিন্ধু নদ পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে ।
উপনদী : ভারতের অর্থনীতিতে সিন্ধুনদ অপেক্ষা এর উপনদীগুলির গুরুত্ব বেশি ।
ক। সিন্ধুর ডানতীরের উপনদীগুলি হল – শায়ক, সিগার ও গিলগিট
খ। সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলি হল –বিতস্তা (ঝিলাম), চন্দ্রভাগা, ইরাবতী (রাভি) শতদ্রু(শতলজ) ও বিপাশা (বিয়াস) । বামতীরের এই পাঁচটি নদী পঞ্চনদের সমভূমি ‘পাঞ্জাব’ গঠন করেছে ।
বিতস্তা নদী পিরপঞ্জালের ভেরিনাগ প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে ৪০০ কিমি পথ অতিক্রম করে চন্দ্রভাগা নদিতে মিলিত হয়েছে । হিমাচলপ্রদেশ থেকে চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, ও বিপাশা নদী উৎপন্ন হয়ে যথাক্রমে সিন্ধু চন্দ্রভাগা ও শতদ্রু নদিতে মিলিত হয়েছে । সিন্ধুর গুরুত্বপুর্ন উপনদী হল শতদ্রু । তিব্বত মালভূমির রাকস হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী সিপকি লা গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে হিমাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে । রোপারের নিকট পাঞ্জাব সমভূমিতে প্রবেশ করার আগে এই নদী মৈনাদেবীধর পর্বতের নিকট গভীর ভাকরা গিরিখাত সৃষ্টি করেছে । ভারতে প্রবাহিত শতদ্রুর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫০ কিমি ।
উল্লেখযোগ্য শহর :বিতস্তা নদীর তিরে শ্রীনগর, শতদ্রু নদীর তিরে ভাকরা প্রভৃতি ।
গঙ্গা নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ২৫২৫ কিমি
- উৎসস্থল : গঙ্গোত্রী হিমবাহ
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : যমুনা, কোশী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, গোমতী
গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদী ।
উৎপত্তি:
কুমায়ুন হিমালয়ের চৌখাম্বা শৃঙ্গের নিকট গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী নদী সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । বদ্রীনাথের নিকট অলকানন্দা হিমবাহ থকে উৎপন্ন অলকানন্দা, পিন্ডার হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পিন্ডার ও কেদারনাথের নিকট ঘোড়াবাড়ি হিমবাহ থকে উৎপন্ন মন্দাকিনী নদীর মিলিত প্রবাহ দেবপ্রয়াগের নিকট ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে । এই মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত ।
প্রবাহপথ :
হরিদ্বারের নিকট নাগাটিব্বা ও শিবালিক পাহাড় অতিক্রম করে গঙ্গা নদী সমভূমিতে এসে মিশেছে । সমভূমি অংশে গঙ্গা প্রথমে দক্ষিণ পূর্ব, পরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে । মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের নিকট গঙ্গা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে । প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে । অপর শাখাটি ভাগীরথী-হুগলী নাম ধারণ করে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপের নিকট বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে । এই নদী মোহনার নিকট পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।
উপনদী:
ক। বামতীরের উপনদী: হিমালয় থেকে উৎপন্ন বেশ কয়েকটি নদী গঙ্গার বামতীরে এসে মিলিত হয়েছে । এদের মধ্যে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা (কারনালী ও সরযূর মিলিত প্রবাহ), গণ্ডক (কালীগণ্ডক, কৃষ্ণ গণ্ডকী ও নারায়ণীর মিলিত প্রবাহ), বুড়িগণ্ডক, বাঘমতী, কোশী (ইন্দ্রাবতী, তমকোশী,দুধকোশী, লিখুখোলা, সুনকোশী, অরুন ও তামুর – এই সপ্তনদীর মিলিত প্রবাহ) এবং মহানন্দা উল্লেখযোগ্য ।
খ। ডানতীরের উপনদী: যমুনা গঙ্গার উপনদী । এই নদী যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে এলাহাবাদের নিকট গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে । হিমালয় পর্বত হতে উৎপন্ন যমুনার উপনদীগুলি হল টোনস ও গিরি । দক্ষিণের মধ্যভারতের উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন চম্বল, বেতওয়া, কেন প্রভৃতি নদী যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে । মধ্যভারতের উঁচুভূমি থেকে উৎপন্ন শোন নদী গঙ্গানদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে । রিহান্দ শোন নদীর উপনদী ।
ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত বেশ কয়েকটি নদী ভাগীরথী হুগলীর সাথে মিশেছে । এদের মধ্যে বাঁশলই, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা,ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রুপনারায়ন (শিলাই ও দারকেশ্বর) হলদি ( কাঁসাই ও কেলেঘাই ) প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য ।
শাখানদী :গঙ্গার প্রধান শাখানদী ভাগীরথী-হুগলী । মুর্শিদাবাদ থেকে হুগলী পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী এবং হুগলী থেকে মোহনা পর্যন্ত এর নাম হুগলী নদী । এই নদী থেকে অসংখ্য শাখানদী বদ্বীপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে । এদের মধ্যে ভৈরবী, জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী, পিয়ালী, রায়মঙ্গল, গড়াই, বড়তলা, জামিরা, সপ্তমুখী, মাতলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখযোগ্য শহর: গঙ্গা নদীর তীরে উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হল – হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর, কলকাতা প্রভৃতি।
ব্রহ্মপুত্র নদ
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ২৯০০ কিমি, তবে ভারতে এই নদের দৈর্ঘ্য ৮৮৫ কিমি
- উৎসস্থল : চেমাযুংদুং হিমবাহ
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : তিস্তা, তোর্সা
- এটি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ নদী, তাই এই নদীকে আকাশ নদী (Sky River) বলা হয়ে থাকে ।
উৎপত্তি: তিব্বতের মানস সরোবর ও কৈলাস পর্বতের মধ্যবর্তী চেমায়ুংদং হিমবাহ থেকে সাংপো নদ উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম থেকে পুরবে প্রবাহিত হয়েছে । ভারতের উত্তর পুরবে নামচাবারওয়ার নিকট সংকীর্ণ ও গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদ ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে । এই অংশের নাম দিহং নদীর সঙ্গে মিলিত হএয় ব্রহ্মপুত্র নদ নাম ধারণ করেছে ।
প্রবাহপথ: ব্রহ্মপুত্র নদ আসামের মধ্য দিয়ে ধুবড়ির নিকট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । বাংলাদেশে এর নাম যমুনা । যমুনা নদী পরে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে । এদের মধ্যে মাজুলি নদী দ্বীপ পৃথিবীতে বৃহত্তম । ভারতে নদীগুলির মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জল পরিবাহিত হয় । এই নদীর খাত অগভীর হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষাকালে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয় ।
উপনদী: ব্রহ্মপুত্রের ডানতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদীগুলি হল – সুবর্নশিরি, কামেং,মানস, সংকোশ, তিস্তা প্রভৃতি । এর বামতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদীগুলি হল – বুড়ি ডিহং, ডিসাং, ধনসিরি প্রভৃতি ।
উল্লেখযোগ্য শহর: ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হল – ডিব্রুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ী প্রভৃতি ।
যমুনা নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৩৮০ কিমি
- উৎসস্থল : যমুনেত্রী হিমবাহ
- উপনদী : গিরি, চম্বল, বেতোয়া
- গঙ্গা তথা ভারতের দীর্ঘতম উপনদী
শতদ্রু নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৪৫০ কিমি, তবে ভারতে এই নদীর দৈর্ঘ্য ১০৫০ কিমি
- উৎসস্থল : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী রাক্ষস তাল
- পতনস্থল : সিন্ধুর উপনদী
- উপনদী : বিপাশা
- এটি একটি পূর্ববর্তী নদী এবং সিন্ধুর দীর্ঘতম উপনদী
বিতস্তা নদী বা ঝিলাম নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৭২৫ কিমি, তবে ভারতে এই নদীর দৈর্ঘ্য ৪০০ কিমি
- উৎসস্থল : কাশ্মীরের ভেরিনাগ প্রস্রবণ
- পতনস্থল : চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদী
- উপনদী : লিডার, পীরপঞ্জল, পোহরু
- কাশ্মীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নদী
চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১১৮০ কিমি
- উৎসস্থল : বারালাচা পাস
- সিন্ধুর দ্বিতীয় দীর্ঘতম উপনদী
লুনি নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৪৫০ কিমি
- উৎসস্থল : আরাবল্লী পর্বতমালার পুষ্কর ভ্যালি
- পতনস্থল : কচ্ছের রণ
- উপনদী : জোজরী, সাগি নদী
- ভারতের মরুভূমি অঞ্চলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নদী
দক্ষিণ ভারতের নদ-নদী
দক্ষিণ ভারতের নদ-নদীর পশ্চিমঘাট, অমরকণ্টক, আরাবল্লী, বিন্ধ্য প্রভৃতি প্রধান জল্বিভাজিকা এবং বহু গৌণ জল্বিভাজিকা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে । প্রবাহপথের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতের নদ-নদীকে দুভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন –
ক। পূর্ববাহিনী নদী ও খ। পশ্চিমবাহিনী নদী ।
পূর্ববাহিনী নদীগুলি বঙ্গোপসাগরে এবং পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি আরব সাগর ও অন্যান্য উপসাগরে মিলিত হয়েছে ।
পূর্ববাহিনী নদী
মহানদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৮৫৮ কিমি
- উৎসস্থল : সিয়াওয়ারা উচ্চভূমি
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : ইব, হাঁসদেও, মান্দ
ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার সিহওয়া পাহাড় থেকে মহানদীর উদ্ভব হয়েছে । ছত্তিসগড় ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী কটকের নিকট বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে বদ্বীপ গঠন করে বঙ্গোপসাগরের মিলিত হয়েছে । ব-দ্বীপ অঞ্চলে শাখানদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাটাজুড়ি, কুশভদ্রা, বিরূপা, (ব্রাহ্মণী নদীতে মিশেছে), ভার্গবী, দয়া (চিল্কা উপহ্রদে মিশেছে) দেবী প্রভৃতি ।
গোদাবরী নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৪৬৫ কিমি
- উৎসস্থল : ত্রিম্বক মালভূমি
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : ইন্দ্রাবতি, প্রাণাহিতা, মঞ্জিরা
গোদাবরী দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম ও দীর্ঘতম নদী । পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে । মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী রাজমহেন্দ্রীর নিকট তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ব-দ্বীপ গঠন করে বঙ্গোপসাগরের মিলিত হয়েছে । ব-দ্বীপ অংশে শাখানদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – গৌতমী, গোদাবরী, বশিষ্ঠ, বৈনতেয় প্রভৃতি ।
কৃষ্ণা নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৪০০ কিমি
- উৎসস্থল : পশ্চিমঘাটের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : তুঙ্গভদ্রা, ভীমা, ঘাটপ্রভা
পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ (১৩৩৭ মি) থেকে কৃষ্ণা নদীর উৎপত্তি হয়েছে । মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে বিজয়ওয়াড়ার নিকট বঙ্গোপসাগরের মিলিত হয়েছে । এই নদীও মোহনায় নিকট ব-দ্বীপ গঠন করেছে । ব-দ্বীপ অঞ্চলে শাখানদীগুলির মধ্যে ভামসধারা ও নাগবতী উল্লেখযোগ্য ।
কাবেরী নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৮০৫ কিমি
- উৎসস্থল : পশ্চিমঘাটের ব্রহ্মগিরি শৃঙ্গ
- পতনস্থল : বঙ্গোপসাগর
- উপনদী : হেমবতী, ভবানী, বেদবতী, সিমুসা
পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রহ্মগিরি শৃঙ্গ (১৩৪১ মি) থেকে কাবেরি নদীর উৎপত্তি হয়েছে । কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিরুচিরাপল্লীর নিকট এই নদী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে । উত্তরদিকের অংশটি কোলেরুন এবং দক্ষিণ দিকের অংশটি কাবেরী নামে প্রবাহিত হয়েছে । এই দুটি নদীর মিলিত প্রবাহ শ্রীরঙ্গম দ্বীপ গঠন করেছে । পরে পৃথকভাবে দুটি নদী ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর শিবসমুদ্রম ও হোগেকনাকল জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য।
পশ্চিমবাহিনী নদী
নর্মদা নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ১৩১২ কিমি
- উৎসস্থল : অমরকন্টক শৃঙ্গ
- পতনস্থল : খাম্বাত উপসাগর
- উপনদী : হিরণ, বর্ণা, ওরসাং
মধ্য ভারতের মহাকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ (১০৫৭ মি) থেকে নর্মদা নদীর উৎপত্তি হয়েছে । বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ন গ্রস্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ও গুজরাত রাজ্যের মধ্যে দিয়ে ভারুচ এর নিকট খাম্বাত উপসাগরে মিলিত হয়েছে । জব্বলপুরের ভেরাঘাটের নিকট এই নদী মার্বেল পাথর অধ্যুষিত অঞ্চলে ধুয়াধার জলপ্রপাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয়েছে ।
তাপ্তী নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৭২৫ কিমি
- উৎসস্থল : সাতপুরার মুলতাই
- পতনস্থল : খাম্বাত উপসাগর
- উপনদী : পূর্ণা, গিরনা
মধ্যভারতের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উঁচুভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী সঙ্কীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরাট এর নিকট খাম্বাত উপসাগরে মিলিত হয়েছে ।
সবরমতী নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৪১৬ কিমি
- উৎসস্থল : আরাবল্লী পর্বত
- পতনস্থল : খাম্বাত উপসাগর
- উপনদী : ওয়াকাল, হরনভ
আরাবল্লী পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে সবরমতী নদী গুজরাত সমভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে মিলিত হয়েছে ।
মাহী নদী
- দৈর্ঘ্য : প্রায় ৫৩৩ কিমি
- উৎসস্থল : বিন্ধ্য পর্বত
- পতনস্থল : খাম্বাত উপসাগর
বিন্ধ্য পর্বতশ্রেণী থকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কাম্বে উপসাগরে মিলিত হয়েছে।
অন্যান্য নদী
পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন কঙ্কন, বৈতর্ন, বশিষ্ঠ,অম্বিকা, কালিন্দী, নেত্রবতী, উলহাস, অম্বা, মাণ্ডবী, পেরিয়ার, সরাবতী প্রভৃতি নদী আরব সাগরে মিলিত হয়েছে। সরাবতী নদীর যোগ বা গেরসোপ্পা জলপ্রপাত ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত।