শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী | Sivanath Sastri Biography in Bengali

Rate this post

শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Sivanath Sastri Biography in Bengali. আপনারা যারা শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

শিবনাথ শাস্ত্রী কে ছিলেন? Who is Sivanath Sastri?

শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৪৭ – ১৯১৯) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, দার্শনিক, লেখক, অনুবাদক, ঐতিহাসিক।

শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী – Sivanath Sastri Biography in Bengali

নামশিবনাথ শাস্ত্রী
জন্ম31st জানুয়ারি 1847
পিতাপণ্ডিত হরানন্দ ভট্টাচার্য
মাতা
জন্মস্থানপশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার চাংড়িপোতা গ্রামে (বর্তমানে সুভাষগ্রাম)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত
পেশাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ-সংস্কারক ও ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক
মৃত্যু30th সেপ্টেম্বর 1919 (বয়স 72)

শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম: Sivanath Sastri’s Birthday

আচার্য শিবনাথ শাস্ত্রী ১৮৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Sivanath Sastri’s Parents And Birth Place

বিশিষ্ট সাহিত্য সাধক, সমাজ সেবী ও রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে স্মরণীয় শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম হয়েছিল ১৮৪৭ খ্রিঃ ৩১ শে জানুয়ারী, চব্বিশ পরগনা জেলার মজিলপুরে। তার পিতার নাম হরানন্দ ভট্টাচার্য।

শিবনাথ শাস্ত্রীর শিক্ষাজীবন: Sivanath Sastri’s Educational Life

প্রথমে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও পরে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৭২ খ্রিঃ সংস্কৃতে এম . এ . পাশ করে শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রথম জীবন: Sivanath Sastri’s Early Life

সময়টা ছিল উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ। সেই যুগের তরুণ সমাজ নতুন চেতনা ও নতুন আবেগে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজে আলােড়ন সৃষ্টি করেছে। একদিকে স্বদেশপ্রেমও অন্যদিকে পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী ভাবধারা এই দুইয়ের সমন্বয়ে সনাতন পন্থী সমাজে প্রবল পরিবর্তনের ঢেউ জাগিয়ে তুলেছিল।

এই ভাব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ব্রাহ্মধর্ম কলেজে অধ্যয়নকালে শিবনাথ ও যুক্ত হলেন ব্রাহ্মসমাজ ও সামাজিক সংস্কারমূলক কাজে। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে এই সময় তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর কর্ম জীবন: Sivanath Sastri’s Work Life

জন্মেছিলেন গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। কিন্তু সেকালের হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার ও আচার সর্বস্ব তথাকথিত ধর্মের প্রতি তিনি ক্রমেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন।

অচিরেই (১৮৬৯ খ্রিঃ) ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করে উপবীত ত্যাগ করেন এবং মূর্তিপূজার সঙ্গে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এর ফলে তাকে পিতার বিরাগ ভাজন হতে হয়েছিল।

কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বে যে সংস্কার আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল তার প্রধান লক্ষ ছিল শিক্ষা, সুলভ সাহিত্য ও কারিগরী বিদ্যার প্রচার এবং মদ্যপান নিবারণ। শিবনাথ কেশবচন্দ্রের Indian Reforms Association- এ যােগ দেন এবং মদ গরল নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।

তিনি কেশবচন্দ্রের নারীমুক্তি আন্দোলনেরও একজন প্রধান সহযােগী ছিলেন। এই আন্দোলনের ফলেই পরবর্তী সময়ে (১৮৭২ খ্রিঃ) মেয়েদের ন্যূনতম বিবাহের বয়স চোদ্দ আইনসিদ্ধ হয়েছিল।

মহিলাদের উচ্চশিক্ষার প্রশ্নে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে মতভেদ ঘটলে তিনিকয়েকজন তরুণকে নিয়ে একটি বৈপ্লবিক সমিতি গঠন করেন। সমিতির গঠনতন্ত্র রচিত হয়েছিল জাতীয়তা মূলক ও সমাজ সংস্কারমূলক শিক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার পরিকল্পনাকে সামনে রেখে।

এই গুপ্ত সমিতিতে যােগ দিয়েছিলেন আনন্দমােহন বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। গুপ্ত সমিতির প্রধান কর্মসূচী ছিল জাতিভেদ প্রথা অস্বীকার, সরকারী চাকরি অস্বীকার, সারা ভারতে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংহতি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা, সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। ঘােড়ায় চড়াও বন্দুক চালনা শিক্ষাও কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই সময় শিবনাথ যুগান্তর নামে একটি সামাজিক উপন্যাস প্রকাশ করেন। এই নামানুসারেই পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯০৭ খ্রিঃ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নামকরণ হয়েছিল। ১৮৭৪ খ্রিঃ শিবনাথ প্রথমে ভবানীপুরে সাউথ সুবার্বন স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে যােগদান করেন। ১৮৭৬ খ্রিঃ এই কাজ ছেড়ে হেয়ার স্কুলে সংস্কৃত শিক্ষক রূপে যােগ দেন। কিন্তু সামাজিক সংস্কার মূলক কাজ ও ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অচিরেই সরকারি চাকুরিতে বিরাগ জন্মে। এছাড়া গুপ্তসমিতিব কাজে যে কর্মসূচী গৃহীত হয়েছিল তার জন্যও চাকরি ত্যাগ করা জরুরী হয়ে পড়েছিল। ১৮৭৮ খ্রিঃ তিনি চাকরি ত্যাগ করেন।

কেশবচন্দ্রের সঙ্গে মতবিরােধের পর শিবনাথের নেতৃত্বে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় এই বছরই। তার মাধ্যমে তিনি সর্বশক্তি নিয়ে সমাজ সংস্কারের কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। তিনি ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমােহন বসুর সঙ্গে একযােগে ১৮৭৯ খ্রিঃ সিটি স্কুল স্থাপন করেন। এছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করবার জন্য স্টুডেন্টস সােসাইটি নামে একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র প্রতিষ্ঠান তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয়।

কিশােরদের জন্য ভারতে প্রথম মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ থেকে। এই পত্রিকার নাম ছিল সখা। এই পত্রিকা ১৮৮৩ খ্রিঃ শিবনাথের উৎসাহ ও উদ্যোগেই প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮৮৮ খ্রিঃ শিবনাথ ব্রাহ্মধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে ছয়মাসের জন্য বিলেত গিয়েছিলেন। ইংরাজ চরিত্রের জাত্যাভিমান, নিয়মানুবর্তিতা ও বিবিধ সদগুণ তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। এই সকল গুণাবলীর প্রতি লক্ষ রেখে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাধনা শ্রমের কর্মপ্রণালী প্রস্তুত করেছিলেন। সমাজ সংস্কারক শিবনাথের প্রধান পরিচয় কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রূপে। তার বিখ্যাত তথ্যমূলক গ্রন্থ আত্মচরিত এবং রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

শিবনাথ শাস্ত্রীর রচনা: Written by Sivanath Sastri

প্রবন্ধকার রূপে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থ –হিমাদ্রিকুসুম, নির্বাসিতের বিলাপ, নয়নতারা, বিধবার ছেলে, ধর্মজীবন, রামমােহন রায়, History of Brahmo Samaj, Men I have seen প্রভৃতি। শিবনাথ রচিত মেজবৌ উপন্যাসের ইংরাজি অনুবাদ ইংলন্ডের Indian National journal– এ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৯৫ খ্রিঃ প্রকাশিত মুকুল পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করতেন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর মৃত্যু: Sivanath Sastri’s Death

১৯১৯ খ্রিঃ ৩০ শে সেপ্টেম্বর শিবনাথ শাস্ত্রী লােকান্তরিত হন।

Leave a Comment