টাইকো ব্রাহে জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Tycho Brahe Biography in Bengali. আপনারা যারা টাইকো ব্রাহে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী টাইকো ব্রাহে র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
টাইকো ব্রাহে কে ছিলেন? Who is Tycho Brahe?
ট্যুকো ব্রাহে (ডেনীয় নাম: Tyge Ottesen Brahe) (১৪ই ডিসেম্বর, ১৫৪৬ – ২৪শে অক্টোবর, ১৬০১) ডেনীয় অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যক্তি যিনি নিখুঁত এবং নির্ভুল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার আদি বাসস্থান Scania-তে যেটি তখন ডেনমার্কের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বর্তমানে আধুনিক সুইডেনের একটি প্রদেশ। তিনি জীবদ্দশায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং আলকেমিবিদ হিসেবে সুখ্যাত ছিলেন।
টাইকো ব্রাহে জীবনী – Tycho Brahe Biography in Bengali
নাম | টাইকো ব্রাহে |
জন্ম | 14 ডিসেম্বর 1546 |
পিতা | অট ব্রাহে |
মাতা | – |
জন্মস্থান | নাটস্টর্প ক্যাসেল, স্ক্যানিয়া, ডেনমার্ক-নরওয়ে (বর্তমান সুইডেন) |
জাতীয়তা | ডেনীয় |
পেশা | অভিজাত ব্যক্তি, জ্যোতির্বিদ |
মৃত্যু | 24 অক্টোবর 1601 (বয়স 54) |
টাইকো ব্রাহে র জন্ম: Tycho Brahe’s Birthday
টাইকো ব্রাহে ১৫৪৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
শেক্সপীয়রের অমর চরিত্র হ্যামলেটের দৌলতে বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছে ডেনমার্কের ছোট্ট শহর এলসিনোর। এই শহরেই জন্মেছিলেন আজীবন অনুসন্ধানী এক বিস্ময় প্রতিভা, টাইকো ব্রহে তার নাম। পৃথিবীর মাটিতে থেকেই তিনি তার সন্ধিৎসু দৃষ্টি সতত সঞ্চরমান রাখতেন মহাকাশের নিঃসীম নক্ষত্রলোকে। অজানা নক্ষত্রের সন্ধানে হাতড়ে ফিরেছেন নীহারিকাপুঞ্জ। নিমেষহীন দৃষ্টিতে তিনি ধরবার চেষ্টা করেছেন জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর প্রতিটি চ্ছটা — নিরীক্ষণ করবার চেষ্টা করেছেন সৌরগঠন। খালি চোখেই এই কাজ সারাজীবন করতে হয়েছে ব্রাহেকে। কেননা দূরবীন ছিল তখনো পর্যন্ত মানুষের কল্পনার বাইরে।
টাইকো ব্রাহে র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Tycho Brahe’s Parents And Birth Place
১৫৪৬ খ্রিঃ ডেনমার্কের এক জমিদার বংশে জন্ম হয় ব্রাহের। তার আসল নাম ছিল টাইজি। বাল্যে নিঃসন্তান এক কাকার কাছে মানুষ হয়েছিলেন তিনি। দশের মধ্যে কি করে একজন হয়ে ওঠা যায়, পথের বাধাকে তুচ্ছ করে কি করে নিজের গতিপথকে অব্যাহত রাখতে হয় সেই শিক্ষা কাকার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন তিনি। মাথা তুলে দাঁড়াবার শিক্ষা নিতে গিয়েই বুঝি অনন্ত আকাশের মহাবিস্ময় তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল।
টাইকো ব্রাহে র প্রথম জীবন: Tycho Brahe’s Early Life
মহাকাশের সৌন্দর্যে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন ব্রাহে যে আত্মহারা হয়ে কবিতা লিখেছেন, গান রচনা করেছেন। মাত্র বার বছর বয়সেই তাঁর কবিত্বশক্তির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। স্কুলের পাঠ শেষ করে দর্শন ও সাহিত্যের পাঠ নেবার জন্য ব্রাহে ভর্তি হলেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময়ে একটি আকস্মিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্রাহের জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য।
সময়টা ১৫৪০ খ্রিঃ আগস্ট মাস। ডেনমার্কের কয়েকজন জ্যোতিষী ঘোষণা করলেন একটি গ্রহণের কথা। দিন এবং সময়ও তারা নির্দিষ্ট করে দিলেন। গোড়ার দিকে ব্যাপারটাকে কেউ বিশেষ আমল দেয় নি। কিন্তু কারোরই বিস্ময়ের অবধি রইল না যখন দেখা গেল সত্যি সত্যিই নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্ধারিত সময়ে গ্রহণ হল। টাইকো এই ঘটনায় খুবই অভিভূত হলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন গ্রহ – নক্ষত্রের গতির হিসাব কষে জোতিষীরা যখন গ্রহণের সময় নির্ণয় করতে পারছেন তখন সেই হিসাব ধরে মহাকাশের অনেক অজানা রহস্যেরই সন্ধান করা সম্ভব। টাইকো উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। সব কাজ ফেলে রেখে তিনি টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই নিয়ে বসলেন। প্রথমে অনুবাদের কাজটা করলেন। তারপর মেতে উঠলেন জ্যোতিষশাস্ত্র ও জোতির্বিজ্ঞান নিয়ে।
ক্রমে তার হাতেই ষোড়শ শতকের জ্যোতির্বিজ্ঞান লাভ করল নতুন রূপ নতুন গতিপথ। ডেনমার্কের লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় সেই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। দেশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেখানে পঠন – পাঠনের সঙ্গে যুক্ত। টাইকোর ইচ্ছা সেখানেই ভর্তি হন। বাবাকে মনের কথা খুলে জানালেন। তারপর একদিন নাম লেখালেন লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাশে।
ক্লাশের পড়ার সঙ্গে আরম্ভ হল টাইকোর আকাশ পর্যবেক্ষণের অভ্যাস। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে করেই হোক ওই অনন্ত বিস্তারের অজানা রহস্যকে জানতে হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিজের স্থানটি নির্দিষ্ট করে নেবেন তিনি। দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে লাগল। ক্রমেই একটি ব্যাপার দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে উঠল তাঁর কাছে। টাইকো বুঝতে পারলেন, প্রচলিত জ্যোতির্বিজ্ঞানে সবটাই বিজ্ঞান নয় — তার বেশির ভাগ অংশটাই জুড়ে আছে মানুষের কল্পনা — ভেলকি আর কুসংস্কার।
তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্রহের পৌরাণিক গল্প – কাহিনী। সৃষ্টির সেই কোন আদি যুগ থেকে মানুষের ভাবনা – চিন্তা একই গতিধারার অনুসরণ করে চলেছে। অন্তহীন মহাকাশে বিচরণ করছে দেবতারা — আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের চ্যুতি তাদের বস্ত্রালঙ্কারের বিচ্ছুরণ ছাড়া কিছু নয়। মানুষের এই আদিম চিন্তার জগতে কিছু বিপ্লবী চিন্তাবিদ নিজেদের প্রতিভা ও ধ্যান – ধারণা বলে শুনিয়েছেন নতুন কথা। তাঁদের কাছ থেকেই জানা সম্ভব হয়েছে, আকাশের জ্যোতিষ্কের কথা। পৃথক পৃথক সময়ে জন্মে মহাজ্ঞানী হিপারকাস আর ক্লডিয়াস টলেমি পৃথিবীর মানুষকে মহাকাশের দেড় হাজারেরও বেশি নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
খ্রিষ্ট জন্মের দুশো বছর পরের অন্ধকার যুগে বসেই টলেমি নিজের মত জ্যোতিষ্কলোকের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে অবস্থান করছে স্থির পৃথিবী। একে ঘিরেই আবর্তন করছে সূর্য চন্দ্র মিলিয়ে সৌরক্ষেত্রের সকল গ্রহ নক্ষত্র। মানুষের অ – জ্ঞান টলেমির এই তত্ত্বকেই মেনে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময়। তাই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মানুষ নতুন কিছু আর ভাবতে পারেনি। অবশেষে কোপারনিকাসের বৈপ্লবিক আবির্ভাব সব কিছুকে তছনছ করে দিল। তিনি টলেমির তত্ত্বকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে পৃথিবীকে নতুন কথা শোনালেন।
কোপারনিকাস ঘোষণা করলেন, টলেমিকে নিয়ে মেতে থাকবার অর্থ অন্ধকারকে সঙ্গী করা। কেননা টলেমির পর্যবেক্ষণ ভ্রান্ত। আমাদের পৃথিবী বিশাল সৌরজগতের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সদস্য মাত্র। তার আকার গোল। কোপারনিকাসকেই বেছে নিলেন টাইকো। সৌর – সংসারের রহস্যভেদ করবার জন্য কোপারনিকাসের পরীক্ষাগুলোর অনুসরণ করে অগ্রসর হতে লাগলেন। কিন্তু বারবার বাধা পেতে লাগলেন। চিন্তার মৌলিকত্বে স্পষ্ট ফারাক আবিষ্কার করতেও বিলম্ব হল না। কোপারনিকাস ছিলেন ঈশ্বরতত্ত্বে অবিশ্বাসী। ফলে তার চিন্তার গতি হয়েছে অবাধ।
গবেষণা কখনো ঈশ্বরচিন্তায় আছন্ন বা সঙ্কীর্ণ হয়নি। তার চিন্তার সূত্র অনুসরণ করতে গিয়ে ধর্মের অনুশাসন টাইকোকে বাধার সম্মুখীন করতে লাগল। তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে ঈশ্বরবিশ্বাসী। চিন্তা – ভাবনা করে মধ্যপন্থা উদ্ভাবন করলেন শেষ পর্যন্ত যার দ্বারা যুক্তিবাদের বিজ্ঞান ও ধর্মবিশ্বাস উভয়ই বজায় থাকবে। তিনি সৌরসংসারের চেহারার যে রূপ দিলেন, তা হল এই রকম—পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে দিনে একবার করে ঘুরপাক খাচ্ছে যাবতীয় গ্রহতারা। সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে সকলে, সূর্য সকলকে নিয়ে ঘুরছে পৃথিবীর চারদিকে। এই মডেল সামনে রেখেই খালি চোখেই তার পর্যবেক্ষণ ও হিসেবনিকেশের কাজ করে চললেন।
এইভাবেই তিনি সৌর সংসারের নক্ষত্রমণ্ডলীর বৃত্তাকার পথের হিসাব করলেন। টাইকোর সেই হিসাব এমনই নিখুঁত হল যে আধুনিক যুগের হিসাবের সঙ্গে তার ফারাক ধরা পড়েছে মাত্র এক সেকেণ্ডের। ১৫৭২ খ্রিঃ একরাতে ছাদে বসে আকাশেয় বুকে খুঁজে পেলেন এক উজ্জ্বল তারা। আনন্দে উদ্বেল হয়ে তিনি এই তারার নাম দিলেন নোভা। কিছুদিনের মধ্যেই আকাশের নক্ষত্রদের চরিত্র সমীক্ষার সঙ্গে নোভা আবিষ্কারের বর্ণনা দিয়ে একটি বই লিখে ফেললেন।
তিনি স্পষ্ট করেই জানালেন যে প্রত্যেক নক্ষত্রেই রয়েছে তিনটি পর্ব — আরম্ভ চূড়ান্ত এবং শেষ। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন নক্ষত্ররা স্থির এবং যে কোন নক্ষত্রের অবস্থাই অপরিবর্তিত। কিন্তু প্রত্যেক নক্ষত্রকেই নিরন্তর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার শেষ পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। আরম্ভ চূড়ান্ত অবস্থা এবং শেষ — এই তিনটি পর্বকে ছোট বড় কোন নক্ষত্রই এড়াতে পারে না। মহাকাশে নতুন নতুন তারার জন্মের কথা তিনিই প্রথম ঘোষণা করলেন।
অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, এরা মূলতঃ স্থির ও অপরিবর্তিত। টাইকোর ঘোষণা অ্যারিস্টটলের প্রাচীন ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে দিল। সুপার নোভা সম্বন্ধে রচিত টাইকোর বইটি ডেনমার্কে সাড়া জাগাল। তাঁর গবেষণাকার্যে মুগ্ধ হলেন ডেনমার্কের রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক। জ্যোতির্লোকের গবেষণায় বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে ডেনমার্কও স্থান লাভ করবে এই মহৎ উদ্দেশ্যে উদ্বুদ্ধ হলেন দ্বিতীয় ফ্রেডরিক। অবিলম্বেই তিনি টাইকোর গবেষণার জন্য কোপেনহেগেনের অদূরে হার্ডিন দ্বীপে একটি মানমন্দির তৈরি করিয়ে দিলেন।
টাইকো ব্রাহে র কর্ম জীবন: Tycho Brahe’s Work Life
গবেষণা কাজের জন্য নগদ কুড়ি হাজার পাউন্ড আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হল টাইকোকে। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে রাজাকে বিজ্ঞানের সেবায় এগিয়ে আসতে দেখে এবং গবেষণার অচিন্তনীয় সুযোগ লাভ করে টাইকো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেন। মানমন্দিরের নাম দেওয়া হল উরানিয়েন বার্গ অর্থাৎ সৌরপ্রাসাদ। রাজকীয়ভাবেই নির্মিত হল প্রাসাদটি। আকাশ পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য চারদিকই রাখা হল খোলা।
দেয়াল জুড়ে নানান চিত্রাঙ্কন, সেই সঙ্গে শোভা বর্ধনের জন্য রয়েছে ভাস্কর্য। ভেতরে সাজানো গোছানো অনেক ঘর। টাইকোর জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে সবচেয়ে ভাল ঘরটি। তার লাগোয়াই বিরাট হলঘর। অতিথিদের সঙ্গে দেখা করবার উপযুক্ত সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে ঘরটি। ল্যাবরেটরি, প্রেস ও লাইব্রেরী রয়েছে প্রাসাদের অন্যধারে। নানাদেশ থেকে আনা যন্ত্রপাতিতে গবেষণা – ঘর সজ্জিত। গোটা প্রাসাদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত হল লোকজন। বিজ্ঞানগবেষণার ক্ষেত্রে এমন রাজানুকূল্যের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে দুর্লভ। এই সুসজ্জিত ও সুগঠিত মানমন্দিরে বসে গবেষণা আরম্ভ করলেন টাইকো।
দীর্ঘ কুড়ি বছর এই মানমন্দিরে বসে গবেষণা করেছিলেন তিনি। সর্বমোট সাতাত্তরটি নতুন তারা স্থান পেয়েছিল টাইকোর জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার রেকর্ডে। গবেষণার সুবিধার জন্য আগে নিজেই অনেক যন্ত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন টাইকো। পর্যবেক্ষণের জন্য মানমন্দিরের যে যন্ত্রটি তিনি পরে ব্যবহার করতেন তার ব্যাস পাঁচ ফুট। নতুন কোন নক্ষত্র চোখে পড়লেই যে কোণ থেকে সেটি দেখতেন, সেখানে চিহ্ন দিয়ে রাখতেন। কোণ পরিমাপক একটি যন্ত্র নিজেই বানিয়ে নিয়েছিলেন।
যন্ত্রটা ছিল খুবই ভারি ৷ অনেক লোকের সাহায্য না পেলে সেটি নাড়াচাড়া করা যেত না। তবু তাই নিয়েই গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে তার গবেষণাপত্রের সংখ্যা বেড়েছে। টাইকোর গবেষণার এক চূড়ান্ত পর্যায়ে অকস্মাৎ এক দুর্ঘটনা ঘটল। রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিকের মৃত্যু হল। নতুন রাজা টাইকোকে জানিয়ে দিলেন মানমন্দিরের খাতে রাজকোষ থেকে আর অর্থব্যয় করা হবে না।
কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তিগত দান নেবার ব্যবস্থা করে তিনি যেন গবেষণার খরচ চালান। টাইকো পড়ে গেলেন অকূল পাথারে। গবেষণা এমন পর্যায়ে যে তা বন্ধ করা যায় না। উপায়ান্তর না দেখে তিনি প্রাগে সম্রাট দ্বিতীয় রুডলফের কাছে চিঠি পাঠালেন। গুণগ্রাহী সম্রাটের সহৃদয় সাড়া পাওয়া গেল। তার আহ্বানে টাইকো কোপেনহেগেনের মানমন্দির ছেড়ে ১৫৯৯ খ্রিঃ প্রাগে চলে এলেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের মহৎ স্বার্থেই কোপেনহোগেন ত্যাগ করতে হয়েছিল। এখানে এসে তিনি মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেন। তাঁর এইসব তথ্য পরবর্তী জ্যোতির্বিদ্যাকে প্রভাবিত করেছিল। এছাড়া তিনি কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ এবং টলেমীয় ভূ – কেন্দ্রিক মতবাদ মিশিয়ে যে নতুন এক মতবাদ সৃষ্টি করেছিলেন তার নাম দেন টাইকোনিকা। অবিশ্রান্ত পরিশ্রমের পরিণামে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন টাইকো।
অজীর্ণরোগ তার আয়ুকে ক্রমশই জীর্ণ করে ফেলছিল। অথচ অনেক কাজই তখনো তিনি করে উঠতে পারেন নি। জীবনের অন্তিম লগ্নে টাইকো প্রিয় শিষ্য কেপলারকে অনুরোধ করে যান তার অবর্তমানে তিনি যেন আরব্ধ কাজ সম্পূর্ণ করেন। কেপলার কথা দিয়েছিলেন এবং গুরুর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে নিজেও অনেকদূর অগ্রসর হয়েছিলেন।
টাইকো ব্রাহে র মৃত্যু: Tycho Brahe’s Death
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অন্যতম টাইকো ব্রাহে ১৬০১ খ্রিঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র পঞ্চান্ন বছর।