জীবমণ্ডল কাকে বলে এবং জীবমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি

Rate this post

এখানে জীবমণ্ডল কাকে বলে এবং জীবমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। 

জীবমণ্ডল কাকে বলে? – পৃথিবীতে জীবের বসবাসযোগ্য অঞ্চল গুলিকে একত্রে জীবমণ্ডল বা বায়োস্ফিয়ার বলা হয়। বিজ্ঞানী জোনাথান টার্ক এর মতে পৃথিবী ও তার বায়ু মণ্ডলের যে অংশ প্রান ধারনের উপযুক্ত তাকে জীবমণ্ডল বলে। অর্থাৎ পৃথিবী ও তার বায়ুমণ্ডলে যেখানে প্রানের স্ফুলন ঘটে, সেই অংশটি হল জীবমণ্ডল। এককথায় জীবমণ্ডল একটি সামগ্রিক এলাকা। পৃথিবীর জল, মাটি, বাতাস যেখানেই প্রানের অস্তিত্ব আছে, তা জীবমণ্ডলের অন্তর্গত। 

জীবমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি – ভূপৃষ্ঠে জীবগোষ্ঠীর আবাসস্থল কে এক কথায় জীবমণ্ডল বলে। অঞ্চল ভেদে জীবমণ্ডল বৈচিত্র্যপূর্ন হলেও সমগ্র ভূপৃষ্ঠের জীবমণ্ডলের প্রকৃতি বা ধর্ম একও অভিন্ন।

সুনির্দিষ্ট সীমারেখাহীন – ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতা এবং সমুদ্রের ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত জীবের কেন্দ্রীভবন সবথেকে বেশি। মাটির গভীরে ১০ মিটার পর্যন্ত এর বিস্তৃতি রয়েছে। বস্তুত শিলামণ্ডল, বারিমণ্ডল বা বায়ুমণ্ডলের মতো জীবমণ্ডলের সুনির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। 

বাস্তুতন্ত্রের বৃহত্তম একক – জীবমণ্ডল একক ভাবে একটি বৃহত্তম বাস্তুতন্ত্র। কারন এর মধ্যে অসংখ্য ছোটো ছোটো বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। মনে করা হয় যে বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে। 

উপাদানগত বৈচিত্র্য – জীবমন্ডলের পরিকাঠামো সজীব ও জড় উপাদানে গঠিত। উদ্ভিদ ও প্রানী জগৎ যেমন নিজেদের লক্ষ লক্ষ জিন ও প্রজাতি গত বৈচিত্র্য দিয়ে এখানে প্রাকৃতিকপরিবেশ গড়ে তুলেছে, তেমনি জড় উপাদানের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। এছাড়া জীবমন্ডলের অপর একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান হল শক্তি।

উন্মুক্ত পদ্ধতি – জীবমন্ডলে শক্তির প্রবাহ প্রতিনিয়ত সংগঠিত হওয়ার কারণে জীবমণ্ডলকে উন্মুক্ত পদ্ধতি হিসাবে পরিগঠিত করা হয়। কারণ শক্তি প্রবাহে আগত শক্তি ও বর্হিগত শক্তি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলতেই থাকে। 

পদার্থের চক্রাকার আবর্তন ও পরিবহন – জীবমণ্ডলে সজীব ও জড় উপাদান গুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত মিথস্ক্রিয়ার ফলে পুষ্ঠি পদার্থের স্থানান্তর ও পরিবহন চক্রাকার পথেই ঘটে থাকে। 

শ্রেষ্ঠত্ব – পৃথিবীর সামগ্রিক আয়তনের বিচারে জীবমণ্ডলের আয়তন অতিনগন্য কিন্তু সব আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আছে এই জীবমণ্ডল। শিল্পায়ন ও নগরায়নযে কোনো উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহন কালে জীবকুলের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের কথা ভাবতে হবে। কারণ এদের অস্তিত্ব বিলোপের অর্থ হল মৃত পৃথিবী। তাই জীবমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য। 

জীবমন্ডলের শক্তির উৎস – জীবমণ্ডলের সমগ্র জীবগোষ্ঠীর জীবনধারনের মূল উৎস হল সূর্য। সবুজ উদ্ভিদ সৌর শক্তির সাহায্যে জীবনধারনের শক্তি সংগ্রহ করে। পরে তা জীবমণ্ডলের অন্তর্গত সমস্ত জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে। 

জীবমন্ডলের প্রকার ভেদ – জীবমণ্ডল তিন প্রকারের, যথা – ১) স্থল জীবমন্ডল  ২) বারি জীবমণ্ডল ও ৩) বায়ু জীবমণ্ডল। 

বৈচিত্র্যময়তা – জীবের বৈচিত্র্যময়তাই জীবমণ্ডলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

জীবমন্ডলের বিকাশের অনুকূল অবস্থা – জীবমন্ডলের গঠন ও বিকাশের অনুকূল অবস্থা গুলি হল- 

সূর্যরশ্মি – জীবমন্ডলের শক্তির মূল উৎস হল সূর্য। সবুজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য সালোকসংশ্লেষকারী জীবগোষ্ঠী সৌরশক্তিকে সরাসরি আবদ্ধ করতে পারে। সবুজ উদ্ভিদ থেকে রূপান্তরিত সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তি রূপে এবং পুষ্ঠি দায়ক পদার্থ হিসাবে খাদ্যের মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলের তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রানীতে সঞ্চারিত হয়। 

জলের জোগান – জলের অপর নাম জীবন। এই জলের উপর নির্ভর করেই সমগ্র জীবগোষ্ঠী বেঁচে থাকে। জলের চক্রাকার আবর্তনের মাধ্যমে জীবমন্ডলে জলের জোগান বজায় থাকে। 

বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানের উপস্থিতি – বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় উপাদানের সিংহভাগ নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন দখল করে আছে। এর ফলে জীবদেহের শোষণ কার্যের প্রক্রিয়াটি যেমন অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়, তেমনি নাইট্রোজেন পর্যাপ্ত পরিমানে থাকায় উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়াটি বিঘ্নিত হয় না। 

মৃত্তিকার বিদ্যমানতা – উর্বর মৃত্তিকা যেমন পৃথিবীকে শস্য শ্যামল করে তুলতে সাহায্য করে। তেমনি অনুর্বর মৃত্তিকা পশুচারন রূপে গড়ে ওঠে। 

জীব ভূ-রাসায়নিক চক্রের বিদ্যমানতা – জীবমণ্ডলের মৌলিক উপাদান, যেমন – অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদির ভারসাম্য কেবল জীবভূ-রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে বজায় থাকে।

Leave a Comment