সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে দন্ডীর অবদান আলোচনা করো।

সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে দন্ডীর অবদান আলোচনা করো।

ভূমিকা: সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যের অন্যতম রূপকার ছিলেন দন্ডী। সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যের শব্দ বিন্যাসে তিনি শিল্প সুষমা সৃষ্টি করেছেন। তার প্রকোষ্ঠে ছিল শব্দ শিল্পের অপূর্ব সম্ভার। তাই সাহিত্য সমালোচকগণ দণ্ডীর প্রশংসা করে বলেছেন-“দন্ডীনপদলালিত্যম্”।

কবি পরিচয়: প্রাচীন কাল থেকেই গদ্যকাব্য রচনায় দন্ডীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তার জীবনী সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি কৌশিক গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর পিতার নাম বীর দত্ত এবং মাতা ছিলেন গৌরী দেবী। অতি বাংলার বয়সেই তিনি পিতা মাতাকে হারান। শ্রুত ও সরস্বতী নামক দুজনের কাছে তিনি লালিত পালিত হন।

দন্ডীর রচনাবলী: “ত্রয়োদন্ডী প্রবন্ধশ্চ ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতাঃ”- রাজশেখরের এই উক্তি থেকে জানা যায় যে, দন্ডী তিন খানি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল-ক) দশকুমারচরিত, খ) কাব্যাদর্শ এবং গ) অবন্তীসুন্দরী কথা।

দশকুমারচরিত: “দশকুমারচরিত” হল একটি আখ্যায়িকা শ্রেণীর গদ্যকাব্য।এই কাব্যটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত-ক) পূর্ব পিঠীকা খ) উত্তর পিঠীকা এবং গ) উপসংহার ।এই গ্রন্থের নায়ক হলেন রাজবাহন এবং নায়িকা অবন্তীসুন্দরী। এখানে মাতঙ্গের উক্তির মধ্য দিয়ে স্বর্গের যমরাজের কাছে কিভাবে বিচার হয় এবং কিভাবে অপরাধীরা শাস্তি পায় তার একটি সুন্দর বর্ণনা আছে। সেখানে অপরাধের তারতম্য অনুসারে কারোর শরীর থেকে মাংস কাটা হচ্ছে, কাউকে গরম তেলের কড়াইতে ছাড়া হচ্ছে ইত্যাদি এই সমস্ত ঘটনা যেমন একদিকে পাঠককে রোমাঞ্চিত করে তেমনি অন্যদিকে কবির কবীত্ব শক্তির পরিচয় বহন করেছে। এইভাবে রোমাঞ্চকর বর্ণনার মধ্য দিয়ে কাব্যে ১০ জন কুমারের ভ্রমণ কাহিনীকে গ্রন্থকার পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

উপসংহার: দণ্ডীর কবি প্রতিভা ছিল অনন্য সাধারণ। কথা সাহিত্যের মূল মে অদ্ভুত রস দন্ডীর সাহিত্যে তা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আর সেই শব্দ কুসুমের মঞ্জুল প্রবাহ তাকে করে তুলেছে পদলালিত্যের জনক। তাঁর উদ্দেশ্যে একটি প্রচলিত উক্তি হল –

“জাতে জগতে বাল্মীকৌ কবি রিংত্যাভিধাভবৎ।

কবি ইতি ততোব্যাসে কবয়স্ত্বয়ি দন্ডিনী।।”

দন্ডীর প্রতিভা সম্পর্কে কীথ যথার্থই বলেছেন-“Dandin is unquestionably masterly in his use of language.”

Leave a Comment