পেনিপ্লেন ও পেডিপ্লেন বলতে কী বোঝো? পেডিপ্লেন ও পেনিপ্লেনের মধ্যে পার্থক্য: স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যে প্রায় সমতল ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তিকে পেনিপ্লেন বলে।অন্যদিকে মরু ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে বায়ু ও জলধারার সম্মিলিত কার্যের ফলে যে প্রায় সমতল ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তিকে পেডিপ্লেন বলে।
শুষ্ক বা শুষ্কপ্রায় অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের অস্তিম অবস্থায় সৃষ্ট স্বপ্ন বন্ধুর ও মৃদু ঢালযুক্ত বিস্তৃত সমগ্ৰায় ভূমিকে পেডিপ্লেন বলা হয়। কিন্তু, আর্দ্র অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের অভিম অবস্থায় সৃষ্ট সঙ্গ বন্ধুর ও মৃদু ঢালযুক্ত বিস্তৃত সমগ্ৰায় ভূমিকে পেনিপ্লেন বলা হয়।
মরু ও স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের পরিনত ও বার্ধক্য পর্যায়ে গঠিত ভূমিরূপ হচ্ছে পেনিপ্লেন ও পেডিপ্লেন । পেনিপ্লেন ও পেডিপ্লেন বলতে সাধারণত ক্ষয়চক্রের অন্তিম পর্যায়ে গঠিত মৃদু ঢালু ও কিছু অবশিষ্ট ঢিপি বিশিষ্ট সমপ্রায়ভূমিকে বোজানো হয়ে থাকে। নিম্নে পেনিপ্লেন ও পেডিপ্লেন সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
পেনিপ্লেন – পেনি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ প্রায় এবং প্লেন শব্দের অর্থ সমভূমি। অর্থাৎ পেনিপ্লেন শব্দটির অর্থ হল প্রায়সমতল ভূমি।
সংজ্ঞা – স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর কার্যের ফলে যে বৈচিত্র্য হীন সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে পেনিপ্লেন বলে।
জলবায়ুর প্রভাব- আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে পেনিপ্লেন সৃষ্টি হয়। পেনিপ্লেন মৃদু উত্তল প্রকৃতির হয়।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া– পেনিপ্লেন সৃষ্টিতে আবহবিকার ও পুঞ্জিত স্খলন অংশ গ্রহন করলেও নদীর কাজই প্রাধান্য বিস্তার করে।
অবশিষ্ট ভূমিরূপ – পেনিপ্লেনের মধ্যে কঠিন শিলা গুলি ক্ষয়কাজ প্রতিরোধ করে অবশিষ্ট ভূমিরূপ মোনাডনক গঠন করে। যা সমপ্রায় ভূমির মাঝে কিছুটা বৈচিত্র আনে।
পেডিপ্লেন – জার্মান শব্দ পেডি যার অর্থ পর্বতের পাদদেশ এবং প্লেন যার অর্থ সমভূমি। অতএব পেডিপ্লেন শব্দের অর্থ হল পর্বতের পাদদেশের সমভূমি।
সংজ্ঞা – মরু অঞ্চলে উচ্চভূমির সম্মুখভাগে আবহবিকার, জলধারা ও বায়ুর মিলিত কার্যের ফলে শিলাখন্ড সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তৃর্ন সমভূমির সৃষ্টি করে, তাকে পেডিমেণ্ট বলে।
জলবায়ুর প্রভাব – শুষ্ক মরু বা মরুপ্রায় জলবায়ুতে পেডিপ্লেন সৃষ্টি হয়। পেডিপ্লেন কিছুটা অবতল প্রকৃতির হয়।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া – আবহবিকার, পুঞ্জিত স্খলন, জলধারা ও বায়ু প্রবাহ একযোগে পেডিপ্লেন সৃষ্টিতে সমান ভূমিকা পালন করে।
অবশিষ্ট ভূমিরূপ – পেডিপ্লেনের মাঝে ক্ষয় প্রতিরোধী জল বিভাজিকার শেষ চিহ্ন হিসাবে ইনসেলবার্জ অবস্থান করে।
পেডিপ্লেন ও পেনিপ্লেনের মধ্যে পার্থক্য – Difference Between Pedeplain and Peneplain
বিষয় | পেনিপ্লেন | পেডিপ্লেন |
---|---|---|
সংজ্ঞা | স্বাভাবিক ক্ষয় চক্রে বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর ক্ষয়কার্যে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেনিপ্লেণ বলে। | মরু বা শুষ্ক ক্ষয় চক্রের শেষ পর্যায়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেডিপ্লেন বলে। |
প্রবক্তা | 1899 খ্রীঃ উইলিয়াম মরিস ডেভিস পেনিপ্লেনের ধারণা দেন। | 1948 খ্রীঃ এল.সি. কিং পেডিপ্লেনের ধারণা দেন। |
জলবায়ু | আদ্র জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে গঠিত হয়। | শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলে গঠিত হয়। |
প্রক্রিয়া | নদীই প্রধান শক্তি রূপে কাজ করে। | বায়ু ও জলধারা মিলিত ভাবে কাজ করে। |
ঢাল | এটি মৃদু উত্তল প্রকৃতির হয়। | এটি অবতল প্রকৃতির হয়। |
অন্তিম ভূমিরূপ | এর উপর ক্ষয় প্রতিরোধী টিলাকে মোনাডনক বলে। | এর উপর ক্ষয় প্রতিরোধী শিলাকে ইনসেলবার্জ বলে। |
বিস্তার | পেনিপ্লেন অপেক্ষাকৃত কম স্থান জুড়ে বিস্তার করে | পেডিপ্লেন বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে। |