বিভিন্ন প্রকারের জলনির্গম প্রণালী

Rate this post

বিভিন্ন প্রকারের জলনির্গম প্রণালী: ভূমিরূপের তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের জলনির্গম প্রনালীর বিকাশ ভূমিরূপবিদ্যার এক গুরুত্বপূর্ন আলোচনার বিষয়। কোথায় কী ধরণের জলনির্গম প্রনালীর গড়ে উঠবে তা মূলত সেই অঞ্চলের ভূগঠনের উপর নির্ভর করে।

সাধারণত জলনির্গম প্রনালী বলতে বোঝায় – কোন নদী অববাহিকা অঞ্চলে প্রধান নদী, উপনদী ও শাখানদীর পারস্পারিক সমন্বয়ে যে নিদিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি ধারন করে তাকে তাকেই জলনির্গম প্রনালী বলা হয়ে থাকে।কোন অঞ্চলের জলবায়ু ও ভূমিরূপের গঠন সেই অঞ্চলের জলনির্গম প্রনালীর মূখ্য নিয়ন্ত্রক।

বিভিন্ন প্রকারের জলনির্গম প্রনালী সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হল

বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রনালী

ভূমিভাগের প্রাথমিক ঢাল অনুসারে প্রবাহিত প্রাথমিক নদী এবং তার উপনদী ও শাখানদী সম্বনয়ে গাছের শাখাপ্রশাখার মতো যে জলনির্গমন প্রনালী গড়ে ওঠে তাকে, বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রানালী বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • সমস্বত্ব শিলা গঠিত অঞ্চলে এই ধরণের নদী নকশা দেখা যায়।
  • এই ক্ষেত্রে উপনদী গুলি প্রধান নদীর সাথে সূক্ষ্মকোণে এসে মিলিত হয়।
  • ভূগঠনের সাথে সামঞ্জস্যহীন জলনির্গমন প্রনালীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রনালী।
  • প্রধান বা অনুগামী নদী যে দিকে প্রবাহিত হয় উপনদী গুলিও সেই দিকে প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীর সাথে এসে মিলিত হয়।
  • উপনদী গুলি যখন অতি সূক্ষ্ম কোণে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয়ে পাখির পালকের ন্যায় নদী নকশা গঠন করে তখন তাকে পিনেট বা চুনট নদী প্রনালী বলা হয়।

জাফরিরূপী জলনির্গমন প্রনালী

একনত ও ভাঁজ গঠিত অঞ্চলে অনুগামী নদী, পরবর্তী নদী, বিপরা ও পূনর্ভব নদীর সমন্বয়ে যে নদী নকশা গড়ে ওঠে তাকে, তাকে জাফরিরূপী জলনির্গম প্রনালী বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • সাধারনত ভাঁজ ও একনত গঠন যুক্ত অঞ্চলে এই ধরণের নদী নকশা গড়ে ওঠে।
  • এখানে নদী গুলি একে অপরের সাথে সমকোনে এসে মিলিত হয়।
  • ভাঁজ বা একনত অঞ্চলে ভূমিভাগের প্রাথমিক ঢাল অনুসারে যে সব নদী প্রবাহিত হয়, তাদের অনুগামী নদী বলে।
  • শিলাস্তরের আয়াম বরাবর প্রবাহিত হয়ে পরবর্তী নদী প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয় বলে, একে আয়াম নদীও বলা হয়।

আয়তাকার জলনির্গম প্রনালী

দারণ, ফাটল ও চ্যুতি সমৃদ্ধ অঞ্চলে দারণ ও ফাটলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলি একটি আর একটির সাথে সমকোনে মিলিত হয়ে আয়তাকার নদীনকশা গঠন করে।

বৈশিষ্ট্য 

  • এই নদী গুলি মূলত ৯০ ডিগ্রি কোণে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে থাকে।
  • প্রধান নদী ও উপনদী গুলির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়ে থাকে।

কেন্দ্রবহির্মুখী জলনির্গম প্রনালী

গম্বুজাকৃতি ভূমিরূপ, আগ্নেয়চূড়া ও শাঙ্কব পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নদী গুলি সাইকেলের রিং এর মতো বাইরের দিকে বেরিয়ে রেডিয়াল বা কেন্দ্রবহির্মুখী জলনির্গমন প্রনালী গড়ে তোলে।   

বৈশিষ্ট্য 

  • সাধারনত উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরণের নদী নকশা দেখা যায়।
  • এক্ষেত্রে নদী গুলি উঁচু পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।
  • শ্রীলঙ্কায় এই ধরণের জলনির্গমন প্রনালী দেখা যায়।

কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রনালী

উঁচু পার্বত্য অঞ্চলের কেন্দ্রে কোন নিচু অঞ্চল অবস্থান করলে পার্শ্ববর্তী উঁচু অঞ্চল থেকে সৃষ্ট নদী গুলি সেই নিচু অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়ে কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রনালী গড়ে তোলে।

বৈশিষ্ট্য 

  • উপত্যকা অঞ্চল, ক্যালডেরা, ক্রাটার, ডোলাইন ও হ্রদ কে কেন্দ্র করে এই ধরণের নদী নকশার বিকাশ ঘটে।
  • শুষ্ক মরু অঞ্চলে পর্বত বেষ্ঠিত প্লায়া হ্রদ কে করে এই ধরণের কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রনালী দেখা যায়।

অঙ্গুরীয়াকার জলনির্গমন প্রনালী

গম্বুজাকৃতি পার্বত্য অঞ্চলে যে চক্রাকারে আংটির মতো নদী নকশা গড়ে উঠতে দেখা যায় তাকে অঙ্গুরীয়াকৃতি জলনির্গম প্রনালী বলে।

বৈশিষ্ট্য 

  • এই নদী নকশায় প্রধান নদী বৃত্তাকারে অবস্থান করে এবং শাখানদী গুলি সমকোনে প্রধান নদী থেকে নির্গত হয়।
  • গম্বুজ আকৃতির পার্বত্য অঞ্চলে কঠিন ও নরম শিলার পাশাপাশি ও উপর নিচে অবস্থান এই ধরণের নদী প্রনালীর বিকাশে সাহায্য করে।

সমান্তরাল জলনির্গম প্রনালী

পর্বতের ঢাল বরাবর প্রবাহিত নদী গুলি খুব একটা একে বেঁকে প্রবাহিত না হয়ে সোজা পথে পরস্পরের সমান্তরালে নিচের দিকে নামতে থাকে, এর ফলে যে জল নির্গমন প্রনালীর বিকাশ ঘটে তাকে, সমান্তরাল জলনির্গম প্রনালী বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য 

  • এই নদী গুলি সাধারণত শিলাস্তরের নতি বরাবর প্রবাহিত হয়।
  • পর্বতের ঢাল বরাবর অবনমিত নদীর উপনদী গুলি প্রধান নদীর সাথে সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়।
  • এই নদী নকশা গুলি যে সমস্ত অঞ্চলের শিলাগুলি গাঠনিক দিক থেকে প্রায় সমান কাঠিন্য যুক্ত হয় সেখানে দেখা যায়।  

বঁড়শি বা আঁকশিরূপী জলনির্গমন প্রনালী

যেখানে উপনদী গুলি প্রধান নদীর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয়, সেখানে এই ধরণের নদী নকশা  দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য 

  • সাধারণত নদী গ্রাসের ফলে এই নদী নকশার বিকাশ ঘটে।
  • এই ক্ষেত্রে উপনদী প্রধান নদীর সাথে স্থূল কোণে মিলিত হয়ে থাকে।

বিনুনীরূপী জলনির্গম প্রনালী

নদীর নিম্ন গতিতে নদীর শক্তি খুব কম থাকে বলে নদীতে সঞ্চয় কাজের প্রাধান্য দেখা যায়। ফলে নদীর মাঝে অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ বা চর গড়ে ওঠে। এই চর গুলি নদীর গতিপথে বাধার সৃষ্টি করলে নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হলে বিনুনী রূপী নদী নকশা সৃষ্টি হয়। সাধারণত বদ্বীপ অঞ্চল গুলিতে এই ধরণের নদী নকশা দেখা যায়।

Leave a Comment