নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে – Features Of Equatorial Climate

নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে – Features Of Equatorial Climate: নিরক্ষরেখার উভয়দিকে ৫-১০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষরেখার মধ্যে যে জলবায়ু বিরাজ করে বলে নিরক্ষীয় জলবায়ু বলে। নিরক্ষীয় জলবায়ু ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু ও ক্রান্তীয় উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলে সূর্য রশ্মি সারা বছর প্রায় লম্ব ভাবে পড়ে বলে সারা বছরই এই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি থাকে এবং পরিচলন প্রক্রিয়ায় এই অঞ্চলে সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে বলে, এখানে একটি মাত্র ঋতু সারা বছর ধরে বিরাজ করে। ঋতু বৈচিত্র্য হীন এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

ক) উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য

১. বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসার – এই অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্ব ভাবে কিরন দেয় এবং ঋতু বৈচিত্র্য তেমন দেখা যায় না বলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর তেমন থাকে না, মাত্র ২ থেকে ৩ ডিগ্রি হয়।

২. দৈনিক উষ্ণতার প্রসার – এই অঞ্চলে বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসর কম হলেও দৈনিক উষ্ণতার প্রসর অনেক বেশি, প্রায় ৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  কারণ নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলে বৃষ্টিপাত হয় বলে রাতে তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। তাই এই অঞ্চলের অধিবাসীরা রাতে শীতকালের মতো শীত অনুভব করে।

৩. আয়ন বায়ুর আগমন – সূর্যের উউত্রায়ন ও দক্ষিনায়নের সময় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন ঘটলে কোন কোন স্থানে আয়ন বায়ুর অনুপ্রবেশ ঘটে।

৪. উষ্ণ – আর্দ্র ঋতুর বিদ্যমানতা – নিরক্ষীয় অঞ্চলে একটি মাত্র উষ্ণ আর্দ্র ঋতু সারা বছর বিরাজ করে।

খ) বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য

১. স্থায়ী নিম্নচাপ অঞ্চল – সারা বছর অধিক উষ্ণতার জন্য এই অঞ্চলে একটি স্থায়ী নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বায়ুর গড় চাপ থাকে ১০০৯ থেকে ১০১২ মিলিবারের মধ্যে। 

২. মৃদুচাপ ঢাল – নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ ঢাল খুব কম থাকে। এই কারণে বায়ু প্রায় গতিহীন। তাই এই অঞ্চল নিরক্ষীয় শান্ত বলয় নামে পরিচিত।

৩. পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি – তীব্র সূর্য কিরনের জন্য এই অঞ্চলের বায়ুতে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়। ঊর্ধবমুখী বায়ু প্রসারিত হয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয়। ফলে এই অঞ্চলে পরিচলন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

৪. আন্তঃক্রান্তীয় অঞ্চলের সৃষ্টি – নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আয়ন বায়ু মিলিত হয়ে আন্তঃক্রান্তীয় অঞ্চলের সৃষ্টি করে।

গ) মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য

১. বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত – সাধারণত রাত্রিবেলা ও সকালবেলা আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। দুপুরের কিছু আগে থেকে আকাশে মেঘ ধরতে শুরু করে এবং বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টার মধ্যে বজ্র বিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাত কে Four O’clock rain বলে।

২. গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত – নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ২৫০ সেমি। এই অঞ্চলে শুষ্কতম মাসেও ৬ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

Leave a Comment