বাগিচা কৃষি কাকে বলে? বাগিচা কৃষির বৈশিষ্ট্য: ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রচুর মূলধন, শ্রমিক, উন্নত পরিকাঠামো ও দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার সাহায্যে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের উদ্দেশ্যে যে রপ্তানী নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে বাগিচা কৃষি বলে।
যেমন – ভারত, চিন, কেনিয়ায় – চা, ব্রাজিল, কলম্বিয়ায় – কফি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে – রবার, পূর্ব আফ্রিকার আইভোরি কোস্টে – কোকো।
বাগিচা কৃষির বৈশিষ্ট্য
১. শ্রম প্রগাঢ়তা – গাছের রক্ষনাবেক্ষন, কীটনাশক ও সার দেওয়া, গাছ থেকে ফসল সংগ্রহ করা প্রভৃতির জন্য প্রচুর কায়িক শ্রমের প্রয়োজন হয়। তাই এই কৃষি ব্যবস্থাকে শ্রমপ্রগাঢ় কৃষি ব্যবস্থা বলে।
২. বৃহদায়তন কৃষিজোত – বাগিচা শস্যের চাষের জন্য সাধারনত বৃহদায়তন কৃষিজোতের প্রয়োজন হয়। এক একটা কৃষিজোতের পরিমান কমপক্ষে ১০০ হেক্টর ।
৩. বৈদেশিক মূলধন – বাগিচা কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ মূলধন আসে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ সমূহ থেকে। একই ভাবে প্রশাসনিক ও কারিগরি দল, যন্ত্রপাতি, শিল্পের মেশিন, সার প্রভৃতির কিছু অংশ বাইরে থেকে আসে।
৪. আর্থসামাজিক নির্ভরতা – বাগিচা কৃষি প্রাকৃতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। এই কৃষিতে ফসলের উৎপাদন বা ফসলের হার ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। আবার অন্যভাবে বাগিচা কৃষির সাফল্য নির্ভর করে শ্রমিকের কাজের দক্ষতা, শ্রমিক পরিচালনা, মূলধন বিনিয়োগ ইত্যাদি আর্থসামাজিক কারনের ওপর।
৫. একক শস্যের বিশেষীকরণ – অধিকাংশ বাগিচা মালিক একটি মাত্র ফসলের চাষ করে। এই ফসল গুলি হল চা, কফি, রাবার, কোকো ও আনারস প্রভৃতি। এই সব অর্থকরী ফসলের প্রত্যেকটির আঞ্চলিক বিশেষীকরণ আছে।
৬. ব্যাপকতা ও নিবিড়তা – বাগিচা কৃষিকে ব্যাপক কৃষি বলা হয়। কারণ বাগিচা কৃষি ক্ষেত্র গুলি আকারে খুব বড়ো হয়। অন্যদিকে এই কৃষিতে প্রচুর শ্রমশক্তির প্রয়োজন হয় বলে, একে নিবিড় কৃষিও বলা হয়।
৭. বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচালনা – দেশের প্রথাগত কৃষিকাজের তুলনায় বাগিচা শস্যের চাষ অধিকতর বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে।
৮. প্রথাগত কৃষির সাথে অসম প্রতিযোগিতা – বাগিচা কৃষি ক্ষেত্র গুলি এমন জায়গায় অবস্থিত হয়, যেখানে প্রথাগত কৃষি, যেমন – ধান, পাট, গম প্রভৃতি করা যায় না। অর্থাৎ বাগিচা কৃষিকে অন্যান্য প্রথাগত কৃষির সাথে প্রতিযোগিতার সম্মুখিন হতে হয় না।