স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী – Isaac Newton Biography in Bengali

Rate this post

স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Isaac Newton Biography in Bengali. আপনারা যারা আইজ্যাক নিউটন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আইজ্যাক নিউটন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

আইজ্যাক নিউটন কে ছিলেন? Who is Isaac Newton?

স্যার আইজ্যাক নিউটন (৪ জানুয়ারি ১৬৪৩ – ৩১ মার্চ ১৭২৭) প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে তার বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয় যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, আর তার গবেষণার ফলে উদ্ভূত এই চিরায়ত বলবিজ্ঞান পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগতে একক আধিপত্য করেছে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সাথে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তার গবেষণার ফলেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণার পেছনে সামান্যতম সন্দেহও দূরীভূত হয় এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়।

আইজ্যাক নিউটন জীবনী – Isaac Newton Biography in Bengali

নামআইজ্যাক নিউটন
জন্ম4 জানুয়ারী 1643
পিতাআইজাক
মাতাহানাহ্‌ এইসকফ
জন্মস্থানউল্‌সথর্প-বাই-কোল্‌স্টারওয়ার্থ, লিংকনশায়ার, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাইংরেজ
পেশাপদার্থ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ
মৃত্যু31 মার্চ 1727 (বয়স 84)

আইজ্যাক নিউটন এর জন্ম: Isaac Newton’s Birthday

আইজ্যাক নিউটন ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

আইজ্যাক নিউটন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Isaac Newton’s Parents And Birth Place

বিজ্ঞানের আশ্চর্য প্রতিভা নিউটন মাত্র সাত মাস বয়সেই মায়ের গর্ভ থেকে জন্মে নিশ্চিত মৃত্যুকে ফাকি দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন আশ্চর্যভাবে। নিজের প্রতিভায় জগৎকে আশ্চর্য করবার, চমকিত করবার পালা শুরু হয় তাঁর তখন থেকেই। এরপর দীর্ঘ জীবনে একের পর এক আশ্চর্যের মালা গেঁথে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসকে স্বকীয় কৃতিত্বের মালিকায় ভূষিত করেছেন। জন্মের তিনমাস আগেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। দুবছর বয়স হতে না হতেই মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে বসলেন।

আইজ্যাক নিউটন এর ছোটবেলা: Isaac Newton’s Childhood

নিউটনের নতুন বাবা ছিলেন পাদ্রী। তিনি রোগা পটকা নিউটনের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। ফলে উলসথরপের খামার বাড়িতে ঠাকুমার কাছেই মানুষ হতে থাকেন তিনি। বাবাকে হারিয়েছেন, মা নেই, নেই কোন ভাইবোন। এই অবস্থায় একাকীত্বের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি আসবার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। চারপাশের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তখন থেকেই।

আর এই অভ্যাসের ফলেই তো পরিণত বয়সে একদিন গাছ থেকে আপেল পড়ার সামান্য ঘটনা থেকে মাধ্যাকর্ষণের সূত্র আবিষ্কার করে গোটা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিলেন। বয়স বারো বছর পূর্ণ হতেই ঠাকুমা নিউটনকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রানথাম শহরে তার পরিচিত ক্লার্ক নামে এক ভদ্রলোকের বাড়িতে। ক্লার্ক – এর স্ত্রী ছিলেন নিউটনের মায়ের বান্ধবী।

সেই সূত্রে এখানেই প্রথম তিনি মাতৃস্নেহের স্বাদ পান। ক্লার্ক ভদ্রলোক ওষুধের ব্যবসা করতেন। নিজেই বাড়িতে তৈরি করতেন সেসব। বিজ্ঞানের বিশেষ করে রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় যথেষ্ট পড়াশোনা ছিল তার। পারিবারিক অবস্থাও স্বচ্ছল। এখানে চার বছর ছিলেন নিউটন। এখানেই বিজ্ঞানী নিউটনের জীবনের ভিত তৈরি হয়েছিল বলা যায়। বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে হঠাৎ একদিন রত্নভান্ডার আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন নিউটন।

চিকিৎসাবিদ্যা, রসায়ন, সৌরজগতের বিষয়ে প্রচুর বই জড়ো করা ছিল সেই ঘরে। নিউটন সেই সব বইতে ডুবে গেলেন। সব কি আর বুঝতে পারেন, তবু পড়ার নেশায় পড়ে যান। এইভাবে ক্লার্কের ওষুধ তৈরির ল্যাবরেটরির সন্ধানও পেয়ে যান একদিন। কৌতূহল নিয়ে কাচের যন্ত্রপাতি, রসায়নিক বোঝাই শিশি – বোতল সব নাড়াচাড়া করে দেখেন। এই বাড়ির নিরিবিলি চিলেকোঠায় বসেই সর্বপ্রথম সৃষ্টির নেশায় মেতে উঠেছিলেন বালক নিউটন।

বাতাসি কলযন্ত্রের গাড়ি, জলঘড়ির নানা মডেল বানিয়েছেন তিনি। কখনো নানা রসায়নিকের গুণাগুণ পরীক্ষা করে দেখেছেন। ক্লার্কভবনে নিউটনের সঙ্গী ছিল ক্লার্কের একমাত্র মেয়ে স্টোরি। বন্ধুত্বের সহজ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তাদের মধ্যে ৷ নিউটনের যখন ষোল বছর বয়স, তখন উলসথরপ থেকে মায়ের চিঠি পেয়ে জানতে পারেন তাঁর নতুন বাবা মারা গেছেন।

আইজ্যাক নিউটন এর শিক্ষাজীবন: Isaac Newton’s Educational Life

জমিদারির ব্যাপার নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। ক্লার্ক পরিবারের চার বছরের জীবনে ছেদ পড়ে এরপর। নিউটন উলসফরপে মায়ের কাছে চলে আসেন। কিন্তু জমিদারির লাভক্ষতি আর চাষ আবাদের হিসেবের মধ্যে অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠেন নিউটন। মাকে জানালেন কলেজে পড়বেন। লেখাপড়ায় ছেলের আগ্রহ দেখে মা খুশি হন। ছেলেকে পাঠিয়ে দেন কেমব্রিজে। নিউটন ভর্তি হন ট্রিনিটি কলেজে। এই কলেজে আইজ্যাক ব্যারো নামে অঙ্কের অধ্যাপক ছিলেন খাঁটি জহুরী।

নিউটনের সুপ্ত প্রতিভার পরিচয় তার কাছে গোপন রইল না। ব্যারো নিজে ছিলেন এক প্রতিভা। বিজ্ঞান, বিশেষ করে পদার্থ বিদ্যায় তার ছিল অসামান্য দখল। নিজস্ব কিছু গবেষণাও ছিল তার। ব্যারোর সুপারিশে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিউটনকে অঙ্কে ছাত্রবৃত্তি পড়ার সুযোগ দিলেন। এই সময় থেকেই অধ্যাপক ব্যারোর প্রেরণায় নিউটনের বিজ্ঞান প্রতিভার উন্মেষ ঘটতে থাকে। নিউটনকে তিনি জ্যামিতি ও আলোকবিজ্ঞানের রহস্যালোকের সন্ধান দেন।

অল্পসময়ের মধ্যেই গণিতের মূলনীতিগুলো নিউটন চমৎকার রপ্ত করে ফেললেন। তবে বিশুদ্ধ গণিতের চেয়ে ব্যবহারিক গণিতই তার পছন্দ ছিল বেশি। এই গণিতের মধ্যেই ছিল প্রকৃতি জগৎ ও সৌর বৈচিত্র্যের রহস্য লোকের চাবিকাঠি। ব্যারোর তত্ত্বাবধানে থেকে নিজের বিচারবুদ্ধি ও নানা পরীক্ষা – নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ নিয়ে মেতে রইলেন নিউটন। নিউটন বৃত্তি পান ১৬৬৪ খ্রিঃ।

আইজ্যাক নিউটন এর কর্ম জীবন: Isaac Newton’s Work Life

সেই বছরই গোড়ার দিকে ইংলন্ড জুড়ে মহামারীর আকারে দেখা দিল প্লেগ। কাতারে কাতারে লোক মরল। দিশাহারা লোক জন দলে দলে যে যেদিকে পারল শহর ছেড়ে পালাতে লাগল। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। মড়ক – পীড়িত লন্ডন ছেড়ে উলসথরপের খামার বাড়িতে চলে এলেন নিউটন। এখানে এসে মায়ের সঙ্গে জমিদারি দেখাশোনার কাজে হাত লাগালেন।

তবে পাশাপাশি বিজ্ঞানের গবেষণাও চালিয়ে চললেন। উলসথরপে দেড় বছর ছিলেন নিউটন। এই সময়ের মধ্যে এক এক করে তিনটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাজ সম্পূর্ণ করলেন। তাব প্রথম আবিষ্কার দ্বিপদতত্ত্ব অর্থাৎ দুই অংশযুক্ত রাশি ও দ্বিতীয় আবিষ্কার প্রভেদক গণনা গণিতের মৌলসূত্র। এই দুটির বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে বাইনোমিরাল থিয়োরেম ও ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস।

প্রভেদক গণনা গণিতের সাহায্যে অনবরত পরিবর্তনীয় রাশির পরিবর্তনের হার বার করা যায়। এই রাশিগুলির নাম হল প্রবহপুঞ্জ বা Fluxions. কিছুদিনের মধ্যেই প্রবাহপুঞ্জের বিকল্প প্রবাহেরও সন্ধান পেয়ে গেলেন নিউটন। এইভাবেই পাওয়া গেল গণনা গণিতের এক শাখা অখন্ড গণনা গণিত বা ইনটিগ্রাল ক্যালকুলাস। এই সঙ্গেই আরও একটি কাজ করলেন নিউটন। শংকুর কোন এক অংশ নিয়ে যে বক্ররেখা বা কারভ রচিত হয় সেই পরা বলয়ের ক্ষেত্রফল ও ঘনবস্তুর আয়তনের পরিমাপের উপায়ও বার করে ফেললেন।

এইভাবে জমিদারির কাজ আর নিজের গবেষণা নিয়ে দেখতে দেখতে দেড়টি বছর কেটে গেল। নিউটন আবার কেমব্রিজে ফিরে এলেন। এখানে এসে তার তিনটি গবেষণা প্রকাশ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে গণিত বিজ্ঞানী মহলে সাড়া পড়ে গেল। প্রভেদক গণনা গণিতের উদ্ভাবক হিসাবে বিজ্ঞানী মহল তাঁকে স্বীকৃতি জানাল। কোপারনিকাশের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব থেকে নিউটন জেনেছিলেন, গ্রহমন্ডলী অধিবৃত্ত পথে নিজ নিজ কক্ষে ঘুরপাক খায়।

গ্যালিলিওর গতিসূত্র ও চলমান বস্তুর যান্ত্রিকতা সম্পর্কেও তার ধারণা পরিষ্কার ছিল। এই ধারণার ভিত্তিতেই তাঁর দ্বিতীয় আবিষ্কার রূপ পেয়েছিল। সেইকালে বিজ্ঞানীরা জানতেন না গ্রহরা নিজ নিজ কক্ষপথে কার প্রভাবে নিয়মিতভাবে আবর্তিত হয়ে চলেছে। নিউটন তার অঙ্কের সাহায্যে বুঝতে পারলেন যে সূত্রের সাহায্যে পৃথিবীর সমস্ত বস্তু ও তাদের গতির নিয়ন্ত্রণ ঘটে সেই একই সূত্রের প্রভাবে সৌরজগতের গ্রহতারকাদের কক্ষনির্ভর আবর্তনও নিয়ন্ত্রিত হয়।

যে সূত্র বা বলের টানে গাছের আপেল আকাশে না উঠে মাটিতে এসে পড়ে, সেই একই বল সৌরমন্ডলের গ্রহতারাদেরও পরিচালিত করে। নিউটন এই বলেরই নাম দিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। যে সূত্রের সাহায্যে তিনি এই বলকে প্রকাশ করলেন তারই নাম হল মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বা Law of gravitation. এরপর নিউটন দেখলেন যেই অভিকর্ষ বলকে কেন্দ্র করে সৌরবস্তুদের নড়াচড়া সেই কেন্দ্র থেকে সৌর বস্তুর দূরত্বের বর্গের বিষয়ানুপাতিক। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে সৌর বস্তুর দূরত্ব যদি বাড়ে অভিকর্ষ কমে আসে, আবার যদি দূরত্ব কমে অভিকর্ষ বলের পরিমাণও বেড়ে যায়।

নিউটন তার আবিষ্কৃত মাধ্যাকর্ষণ সূত্র ও অভিকর্ষ বলের কথা বাইরে প্রকাশ করবার আগেই বুঝতে পারলেন, এই মহাসত্য ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পদার্থবিজ্ঞান ও সৌরবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিপ্লব উপস্থিত হবে, নিয়ে আসবে নতুন যুগ। আবিষ্কৃত সত্যকে দৃঢ় মূল ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য পুনঃ পুনঃ বিশ্লেষণ ও পরীক্ষার দরকার। তাই নিয়েই মেতে উঠলেন তিনি।

১৬৬৫-৬৬ খ্রিঃ মধ্যে নিউটন আবিষ্কার করলেন আলোর প্রতিসরণ সূত্র বা Law of Refraction of Light তিনি দেখালেন, এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে ঢুকবার সময় আলো যে বাঁক নেয়, তার পরিমাণ নির্ভর করে মাধ্যমের ঘনত্বের ওপর। ইতিপূর্বে তেফলা কাচ মাধ্যম বা প্রিজম আর লেনস- এই দুই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কাচের সাহায্যে দৃষ্টি বিবর্ধক চশমা তৈরি সম্ভব হয়েছে, সম্ভব হয়েছে দূরবীন তৈরি। লিউয়েন হক তৈরি করেছিলেন জীবজগতের সূক্ষ্মতম অধিবাসীদের দেখবার উপযোগী অণুবীক্ষণযন্ত্র।

নিউটন প্রিজন ও লেনস নিয়ে নাড়াচাড়া করে দূরবীনের একটি মারাত্মক ত্রুটি আবিষ্কার করে ফেললেন। দূরবীনের লেনসে সৌরজগতের যে ছবি ভেসে উঠত, তাতে থাকত নানা বর্ণের রেখার বর্ণবৃত্ত। এর ফলে গ্রহনক্ষত্রের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের কাজ বড় রকমের বাধার সম্মুখীন হত। এই বর্ণঘটিত বিভ্রাটকে বলা হয় CHROMATIC ABERRATION বা বর্ণঘটিত স্থানচ্যুতি। আলোক বিজ্ঞানীরা দূরবীনের এই ত্রুটি সম্পর্কে বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। কিন্তু তাঁরা মনে করতেন দূরবীনের এই ত্রুটি প্রকৃতিগত অর্থাৎ ন্যাচারাল ফ্লো — এই ত্রুটিমুক্ত দূরবীন তৈরি অসম্ভব।

নিউটন এই বর্ণবিভ্রাট মুক্ত দূরবীন তৈরি করলেন। এর সাহায্যে গ্রহনক্ষত্রদের প্রকৃত দূরত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে বর্ণঘটিত স্থান চ্যুতির বিঘ্ন থাকল অতি সামান্য মাত্রায় ৷ পরে ১৭৬০ খ্রিঃ তাঁর অনুসরণেই সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত দূরবীন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন আলোকবিজ্ঞানী জন ডোনাল্ড। আলো ও বর্ণঘটিত নানা তত্ত্বও তথ্য যখন প্রকাশ করেন তখন নিউটনের বয়স ত্রিশের কোঠা ছুঁই ছুঁই। তাঁর এই গবেষণা প্রবন্ধ ইউরোপের বিজ্ঞানীমহলে প্রবল বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল।

লন্ডনের বিখ্যাত রয়াল সোসাইটি তার প্রতিভার স্বীকৃতি জানালেন তাকে সংস্থার সদস্য পদে নির্বাচিত করে। এই সম্মান প্রাপ্তির পর নিউটন কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ নিজের বর্ণঘটিত ত্রুটিমুক্ত দূরবীনটি রয়াল সোসাইটিতে উপহার পাঠিয়ে দেন। ১৬৬৭ খ্রিঃ নিউটনকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অঙ্কের অধ্যাপকপদে নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি এই মহাবিদ্যালয়ের কাজে ছিলেন।

এই সময়ে অঙ্ক আর পদার্থবিদ্যা নিয়ে একের পর এক গবেষণা করেছেন তিনি। রসায়ন নিয়েও কিছুকাল কাজ করেছেন। ক্ষারীয় বা ক্ষারধর্মী ধাতুকেবৈজ্ঞানিক উপায়ে সোনায় পরিণত করা যায় কিনা তা নিয়েও পরীক্ষা করেছেন। নিরন্তর গবেষণার মধ্যে থেকে বয়স তিরিশ হতে না হতেই সমস্ত চুল ধবধবে সাদা হয়ে গেল তাঁর।

যে কোন বিষয়ে একনিষ্ঠ মনঃসংযোগের বিরল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। যে কোন বিষয় একবার মাথায় ঢুকলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারতেন না। তাঁর সবচেয়ে মহৎ গুণ যেটি ছিল তা হল অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ এড়িয়ে মূল লক্ষে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা। তাঁর প্রতিটি গবেষণার কাজ এগিয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মের পথ ধরে। প্রথমে বিষয় নির্বাচন, পরে মূলনীতি নির্ধারণ। সবশেষে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা।

১৬৮৪ খ্রিঃ এক তরুণ সৌরবিজ্ঞানী কেমব্রিজে এসে নিউটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এই বিজ্ঞানীর নাম এডমুন্ড হ্যালি। তাঁর নামেই পরে একটি বিশেষ ধূমকেতুর নাম হ্যালির ধূমকেতু রাখা হয়েছিল। প্রকৃতির মহাশক্তি অভিকর্ষের ওপর গবেষণা করার আগ্রহ প্রকাশ করে হ্যালি নিউটনের সহযোগিতা প্রার্থনা করলেন। নিউটন এতদিন তাঁর যে গবেষণার কথা চেপে রেখেছিলেন, তা প্রথম প্রকাশ করলেন হ্যালির কাছে। জানালেন, বারো বছর আগেই তিনি এ সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কারও করেছেন।

হ্যালির প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ – ও জানালেন যে বিশেষ কারণেই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত মূল্যবান তত্ত্ব দীর্ঘকাল গোপন করে রেখেছেন। কারণটিও গোপন করলেন না নিউটন। তার আলোেক বিজ্ঞানের ওপর গবেষণা প্রকাশিত হবার পর তাঁকে বহু মিথ্যা সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল। বহু বিশিষ্ট বিজ্ঞানীও এই দলে ছিলেন। তাঁদের নীচতা দেখে তাঁর মন এমনই ভেঙ্গে পড়েছিল যে জীবনে আর কোন গবেষণার কথাই প্রকাশ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত করেন।

আইজ্যাক নিউটন এর রচনা: Written by Isaac Newton

তরুণ বিজ্ঞানী হ্যালির আগ্রহ ও তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত নিউটন তাঁর গবেষণা প্রকাশ করবেন বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হলেন। টানা দুই বছর পরিশ্রম করে তিনি তাঁর যে গবেষণা প্রবন্ধটি তৈরি করেন তা বিশ্ববিজ্ঞানের এক অমূল্য সম্পদ। বইটির নাম রাখা হয় ফিলোসফিয়া নেচারালিস প্রিনসিপিয়া ম্যাথেমেটিকা যা ইংরাজি করলে দাঁড়ায় Mathematical Principle of Natural Philosophy.

তরুণ হ্যালি এই সময় নানাভাবে নিউটনকে সাহায্য করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর আগ্রহেই বইটি তৈরি হয়েছিল, প্রকাশও করলেন নিজের পয়সায়। নিউটনের এই বই – এর ভিত্তি উচ্চশ্রেণীর জ্যামিতি হলেও এর মধ্যে যেমন রয়েছে গভীর দর্শন তেমনি জটিল গণিত ও অসাধারণ সব বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। বইটির সংক্ষিপ্ত নাম প্রিন্সিপিয়া। ইংরাজি প্রিনসিপল শব্দের ল্যাটিন উচ্চারণ হল প্রিন্সিপিয়া। পরপর তিনটি বইয়ের সংকলন হল প্রিন্সিপিয়া।

প্রথম বইটির আলোচ্য বিষয় গতিসূত্র। এতে রয়েছে পরপর তিনটি সূত্র।

প্রথম সূত্র হল: Every body continues in its state or rest or of uniform motion in a straight line unless it is compelled by external force to change that state of inertial.

দ্বিতীয় সূত্র হল: Rate of change of momentum is proportional to the force acting, and the change takes place in the direction in which the force acts.

তৃতীয় সূত্র: To every action there is an equal and opposite reaction.

প্রিন্সিপিয়ার দ্বিতীয় বইতে নিউটন আলোচনা করেছেন প্রতিরোধী বস্তুর মাধ্যমের ভেতরে যে কোন বস্তুর গতি নিয়ে। প্রতিরোধী বস্তু হিসেবে তিনি তরল ও বায়বীয় এই দুই পদার্থকেই গ্রহণ করেছেন। নিউটনের মতে যে কোন গ্যাসই অসংখ্য স্থিতিস্থাপক পরমাণুর মিশ্রণ। গ্যাসের ওপর চাপই তার আয়তন নিয়ন্ত্রণ করে। প্রিন্সিপিয়ার তৃতীয় খন্ডে রয়েছে সৌরজগৎ ও প্রকৃতির অভিকর্ষ বলের কথা।

তিনি পরিষ্কার ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে পৃথিবীর বুকে পতনশীল বস্তুর ওপর অভিকর্ষ বল কাজ করে এবং এই একই বলের প্রভাবে মহাকাশের গ্রহতারা তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে থেকে নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ করে। এই অভিকর্ষ বলের টানেই যে সমুদ্রে জোয়ার ভাটা খেলা করে সেই কথাও তিনি বলেছেন। নিউটনের বক্তব্যের অর্থ হল, সৃষ্টির প্রতিটি বস্তুর পেছনেই রয়েছে নির্দিষ্ট যুক্তি ও অবিসংবাদি কারণ। প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের পর এবারে নিউটন পেলেন অকুন্ঠ প্রশংসা, সাধুবাদ আর অপ্রতিহত খ্যাতি। খ্যাতির সঙ্গে এল প্রাপ্তি।

আইজ্যাক নিউটন এর পুরস্কার ও সম্মান: Isaac Newton’s Awards And Honors

১৮৮৯ খ্রিঃইংলন্ডের পার্লামেন্ট নিউটনকে সদস্যপদে বরণ করল। কেমব্রিজের বিজ্ঞান বিভাগ পরিচালনার সর্বময় দায়িত্বও তিনি পেলেন। ১৭০১ খ্রিঃ পেলেন দেশের সমস্ত টাকশালের অধ্যক্ষপদ। অবশ্য এই পদ পাবার পর তিনি পার্লামেন্ট থেকে অবসর নেন। ১৭০৩ খ্রিঃ তিনি রয়াল সোসাইটির সভাপতি পদে বৃত হলেন। আমৃত্যু, ১৭২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি এই পদ অলঙ্কৃত করেছেন।

১৭০৫ খ্রিঃ মহারানী অ্যান নিউটনকে নাইট উপাধিতে সম্মানিত করলেন। তাঁর নামের আগে যুক্ত হল স্যার। এই বিরল সম্মান বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনিই প্রথম লাভ করেন।

আইজ্যাক নিউটন এর মৃত্যু: Isaac Newton’s Death

১৭২৭ খ্রিঃ ৩১ মার্চ আইজ্যাক নিউটন এর জীবনাবসান হয়।

Leave a Comment