Jasimuddin Biography In Bengali: পল্লী কবি জসীমউদ্দিন এর জীবন পরিচয়
বাংলার পল্লীপ্রকৃতি ও গ্রাম বাংলাকে প্রধান বিষয় করে কাব্য রচনার মাধ্যমে সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন জসীমউদ্দিন (Jasimuddin)। বাংলার রাখালী, সাজী, মুরশেদি, ভাটিয়ালি, বাউল, মারফতী গানের ধারার উত্তরসাধক হিসেবেই তিনি চিহ্নিত হয়েছেন।
জসীমউদ্দিনের (Jasimuddin) কবিতায় বাংলার যে সাধারণ মানুষের অন্তরঙ্গ চিত্র চিত্রিত হয়েছে, তারা চিরকাল দাঁড় টেনেছে, লাঙ্গল দিয়ে মাঠে চাষ করেছে, কামারশালায় হাঁপর টেনেছে, নেহাইয়ে লােহা পিটিয়েছে। এরাই ঝড়তুফানের ঝাপটা মাথায় নিয়ে নৌকায় সাগর প্রমাণদুরন্ত পদ্ময় বদর বদর বলে পাড়ি দিয়েছে। এদেরই সাধারণ সুখ দুঃখ, ভালবাসা, বিরহ, মিলন, পালা, পার্বণের আনন্দ, জমি নিয়ে মাঠের ফসল নিয়ে কলহ, শশাকে অবুঝের মতাে কান্না এদের মতাে করে, এদেরই মুখের ভাষায় এ অনুভূতিকে জসীমউদ্দিন আন্তরিকভাবে তুলে ধরেছেন তার রচনায়। তার কবিতার সহজ সরল ভাষা ও নিরাভরণ সৌন্দর্য সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে।
জসীমউদ্দিন এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Jasimuddin
বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় কবি জসীমউদ্দিনের জন্ম ১৯০৪ খ্রিঃ। তিনি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র সেই সময় রচনা করেন বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতা। কবিতাটি শুরু হয়েছে আশ্চর্য এক মর্মস্পর্শী আবেগ নিয়ে –
“এইখানে তাের দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে।
তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
অতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু, পুতুলের মত মুখ।
পুতুলের খেলা ভেঙ্গে যেতাে বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।।”
জসীমউদ্দিন এর শিক্ষাজীবন: Jasimuddin’s Educational Life
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম – এ পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের রামতনু লাহিড়ী অধ্যাপক ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা লােকগীতি ও লােকসাহিত্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে তরুণ জসীমউদ্দিনকে নিযুক্ত করেছিলেন। দীনেশচন্দ্র জসীমউদ্দিনের (Jasimuddin) কবিতার বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।
১৯২৯ খ্রিঃ ‘নক্সীকাঁথার মাঠ’ – জসীমউদ্দিনের কবিতা – কাহিনীর বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা কাব্য – অঙ্গনে সাড়া তােলে। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হলে বিদেশেও তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। অবনীন্দ্রনাথ এই কাব্যগ্রন্থের ভুমিকায় লিখেছিলেন, “ শহরবাসীদের কাছে এই একখানি সুন্দর কথার মতাে করে বােনা লেখার কতটা আদর হবে জানি না- আমি এটিকে আদরের চোখে দেখেছি। কেননা এই লেখার মধ্য দিয়ে বাংলার পল্লীজীবন আমার কাছে চমৎকার মাধুর্যময় ছবির মত দেখা দিয়েছে।”
এই কাব্যগ্রন্থের সুবাদে মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সেই জসীমউদ্দিন (Jasimuddin) দেশজোড়া খ্যাতি লাভ করেন। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের দীপ্তিতে উজ্জ্বল বাংলার কবিতার অঙ্গন। তারই মধ্যে নতুন ভাষা ও নতুন ভাবের জন্য জসীমউদ্দিনের কবিতা তার নিজস্ব স্থান করে নিতে সক্ষম হল।
গােড়ার দিকে তিনি নিজের নাম লিখতেন জসীমউদ্দিন মােল্লা। কাজী নজরুল ইসলাম তার নামটি ঘেঁটে শুধু জসীমউদ্দিন করবার পরামর্শ দিলে, কবি পরবর্তীকালে সেই নামই ব্যবহার করতে থাকেন।
জসীমউদ্দিন এর রচনা: Written by Jasimuddin
জসীমউদ্দিন (Jasimuddin) নিজে গান লিখতেন; গাইতেও পারতেন ভাল। বহু সারি, জারি, ভাটিয়ালি গান তিনি লিখেছেন, তাতে সুর দিয়েছেন। ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে রে ভ্রমর’ কিংবা ‘ ও রঙিলা নায়ের মাঝি, এই ঘাটে লাগাইয়া নাও, নিগুণ কথা কইয়া যাও শুনি’ প্রভৃতি ভাটিয়ালি গানের সুর স্বনামধন্য গায়ক সুরকার শচীনদেব বর্মনের কন্ঠে একসময় সমস্ত দেশ মাতিয়ে তুলেছিল। এই মন – পাগল করা গান – গুলি জসীমউদ্দিনের রচনা।
জসীমউদ্দিনের উল্লেখযোেগ্য গ্রন্থাবলী, রাখালী, নক্সীকাথার মাঠ, সােজনবাদিয়ার ঘাট, বালুচর, মাটির কান্না, ধান ও ক্ষেত, ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায় ইত্যাদি। এছাড়া গ্রামবাংলার প্রচলিত গল্প ও কাহিনী সংগ্রহ করে ‘বাঙালীর হাসির গল্প’ নামে কয়েক খন্ডে প্রকাশ করেন।
জসীমউদ্দিন এর মৃত্যু: Jasimuddin’s Death
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৭১ খ্রিঃ কবি লােকান্তরিত হন।