টমাস আলভা এডিসন জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Thomas Alva Edison Biography in Bengali. আপনারা যারা টমাস আলভা এডিসন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
টমাস আলভা এডিসন কে ছিলেন? Who is Thomas Alva Edison?
টমাস এডিসন বা টমাস আলভা এডিসন (ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৪৭ – অক্টোবর ১৮, ১৯৩১) ছিলেন মার্কিন উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী। তিনি গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতি (বাল্ব) সহ বহু যন্ত্র তৈরি করেছিলেন যা বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
টমাস আলভা এডিসন জীবনী – Thomas Alva Edison Biography in Bengali
নাম | টমাস আলভা এডিসন |
জন্ম | 11 ফেব্রুয়ারি 1847 |
পিতা | স্যামুয়েল ওডেন এডিসন জুনিয়র |
মাতা | ন্যান্সি ম্যাথুস এলিয়ট |
জন্মস্থান | মিলান, ওহাইও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
জাতীয়তা | মার্কিন |
পেশা | আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী |
মৃত্যু | 18 অক্টোবর 1931 (বয়স 84) |
টমাস আলভা এডিসন এর জন্ম: Thomas Alva Edison’s Birthday
টমাস আলভা এডিসন 11 ফেব্রুয়ারি 1847 জন্মগ্রহণ করেন।
টমাস আলভা এডিসন – এর মত এত বেশি সংখ্যক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আজ পর্যন্ত আর কোন বিজ্ঞানীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাকে বলা হয় বিজ্ঞানের যাদুকর। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বিজ্ঞানীর বিচিত্র আবিষ্কার সম্ভারের মত নিজের জীবনও ছিল বিচিত্র। তিনি স্কুল কলেজে প্রথাগত শিক্ষা লাভ করেন নি। তার শিক্ষাদীক্ষার জন্য কোন গৃহশিক্ষকও নিযুক্ত হননি। নিজের চেষ্টাতেই নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন তিনি।
টমাস আলভা এডিসন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Thomas Alva Edison’s Parents And Birth Place
অসাধারণ প্রতিভা, অনুসন্ধিৎসা আর অধ্যবসায় বলে তিনি নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর অবদান ধারণ করে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে মানবসভ্যতা। প্রতিভা যে নিষ্ফল হয় না এই সত্য বহুভাবে বহু মনীষীর জীবনেই প্রমাণ হতে দেখা গেছে। একেবারে সাধারণ অবস্থা থেকে, সম্পূর্ণভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে অনেকেই নিজেদের দুর্মর প্রতিভাবলে বিশ্বমানবের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় কীর্তি রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
এডিসন ছিলেন এমনি এক দুর্লভ প্রতিভার মানুষ। স্কুল কলেজে শিক্ষা দীক্ষাহীন একজন মানুষ, যাঁর জীবন আরম্ভ হয়েছে এক সাধারণ ফেরিওয়ালা রূপে, তিনিই একদিন আপন কর্মকুশলতায় শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী রূপে প্রভূত অর্থ ও যশের অধিকারী হয়েছিলেন। এডিসনের জন্ম হয়েছিল ওহিও প্রদেশের মেনলো নামক স্থানে, ১৮৪৭ খ্রিঃ ১১ ই ফেব্রুয়ারী। পিতার আর্থিক অবস্থা ভালই ছিল একরকম।
টমাস আলভা এডিসন এর শিক্ষাজীবন: Thomas Alva Edison’s Educational Life
মা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বাড়িতে লেখাপড়ার একটা পরিবেশ ছিল ধারণা করা চলে। যথাসময়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোও হয়েছিল তাঁকে। তবু, বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন এডিসন। এক্ষেত্রে তাঁর সহজাত প্রতিভাই যে দায়ি ছিল তা বলা চলে। কেননা প্রবল কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। যা দেখেন তার সম্পর্কেই নানান প্রশ্ন জেগে ওঠে তাঁর মাধ্যে।
সেই প্রশ্ন সমাধান করবার জন্য বালককে স্বাভাবিক ভাবেই অভিভাবকের শরণাপন্ন হতে হত। কিন্তু উত্তর পাবার সঙ্গে সঙ্গেই আবারশুরু হত একের পর এক প্রশ্ন। এডিসন ছিলেন পিতামাতার সপ্তম ও কনিষ্ঠ সন্তান। বাড়িতে নিজের লোকেরা তাঁর কৌতূহল ও জিজ্ঞাসার প্রবাহ সামাল দিলেও স্কুলের শিক্ষকরা হার মেনে গিয়েছিলেন। তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতেন বালক এডিসনকে নিয়ে। কিন্তু কে বিরক্ত হল, কে হল বিব্রত, এসব দিকে কোন ভূক্ষেপ থাকত না তার।
সব বিষয়ই তিনি জানতে চাইতেন, বুঝতে চাইতেন। প্রশ্নবাণে নাজেহাল হয়ে শিক্ষকরা শেষ পর্যন্ত তাঁকে নানাভাবে বিদ্রূপ করতে আরম্ভ করলেন। হতাশ ও বিতশ্রদ্ধ বালক এডিসনকে বাধ্য হয়েই একসময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হল। পুত্রের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন পিতা। তিনি যথাসাধ্য এডিসনের কৌতূহল নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করতেন এবং তার অনুসন্ধিৎসাকে উৎসাহিত করতেন। নিজেই তিনি সাধ্যমত এডিসনকে শিক্ষা দিতেন।
টমাস আলভা এডিসন এর প্রথম জীবন: Thomas Alva Edison’s Early Life
পিতা ও মাতার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাই ভাবীকালের বিশ্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর প্রাথমিক শিক্ষার বুনিয়াদ গঠন করে দিয়েছিল। বার বছর বয়সে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই এডিসনকে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় নামতে হল ৷ শৈশব থেকেই ছেলেদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সেই দেশে এটাই ছিল প্রচলিত রীতি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে বা মেয়েরা স্বাধীনভাবে রোজগারেরও চেষ্টা করবে। এডিসন খবর কাগজ ফেরি করতে নামলেন। ট্রেনে ট্রেনে কাগজ নিয়ে হাঁকেন।
সেই সঙ্গে সংগ্রহ করেন নানা রকম খবর। নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতার গুণেই তিনি সেই বয়স থেকেই বিচিত্র সব কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে লাগলেন। মাত্র পনের বছর বয়সেই রেলগাড়ির একটি কামরায় তিনি সাজসরঞ্জাম জুটিয়ে প্রেস তৈরি করে ফেললেন। এরপর সংগৃহীত খবর ছাপিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করলেন। সেই সংবাদপত্র আবার নিজেই ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। এর ফলে যা উপার্জন হত তাতেই তাঁর নিজের খরচ কোনরকমে কুলিয়ে যেত। এইভাবেই চলছিল দিন।
একদিন ঘটল এমন একটা ঘটনা যা এডিসনকে তার নিজের ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে সাহায্য করল। সেদিন অন্যান্য দিনের মত তিনি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন, বগলে খবরের কাগজের বাণ্ডিল, গাড়ি এসে দাঁড়ালে কামরায় কামরায় উঠে বিক্রি করবেন, এই উদ্দেশ্য। এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন, সেখানকাব ষ্টেশনমাষ্টারের ছোট ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে রেললাইনের ওপরে। আর ভীষণ শব্দে মাটি কাঁপিয়ে লাইন ধরে ছুটে আসছে রেলগাড়ি। বাচ্ছা ছেলেটি এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। লাইন থেকে লাফিয়ে সরে যাবার কথাও সে ভুলে গেছে।
এডিসন দেখলেন কিছুক্ষণেই মধ্যে চোখের সামনে ঘটে যাবে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। তিনি মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে লাফিয়ে নামলেন লাইনের ওপরে। ছুটে গিয়ে একটানে সরিয়ে নিয়ে এলেন ছেলেটিকে। বিপুল গর্জন তুলে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল যন্ত্রদানব। এডিসনের প্রত্যুৎপন্নমতির জন্যই রক্ষা পেয়ে গেল ষ্টেশনমাষ্টারের ছেলেটি। কৃতজ্ঞ ষ্টেশনমাষ্টার এডিসনকে নিয়ে গেলেন নিজের ঘরে।
টমাস আলভা এডিসন এর কর্ম জীবন: Thomas Alva Edison’s Work Life
সেইদিন থেকেই তিনি তাকে নিজের কাছে রেখে টেলিগ্রাফের কাজ শেখাতে আরম্ভ করলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজটা রপ্ত করে ফেললেন এডিসন। ষ্টেশনমাষ্টার তাঁকে টেলিগ্রাম অপারেটরের চাকরিতে ঢুকিয়ে দিলেন। কাজটা পছন্দসই হয়েছিল এডিসনের। বেশির ভাগ সময়টাই অফিসে বসে কাজ করতে হত। যেসব টেলিগ্রাম অফিসে আসত, সেগুলো তাকে ধরতে হত। ক্বচিৎ কখনো বাইরে যেতে হত। তিনি নিজের মনে কাজ করেন আর স্বভাববশতঃ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যন্ত্রপাতিগুলো দেখেন।
এভাবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সম্বন্ধে ভালরকম ধারণা গড়ে উঠল তাঁর। অনুসন্ধিৎসার সঙ্গে উদ্ভাবনী শক্তি তার ছিল সহজাত। এবারে সেই শক্তি নিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি নির্মাণের কাজে মেতে উঠলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এমন একটা যন্ত্র বানিয়ে ফেললেন যে তাতে সঙ্কেত ধরা পড়তে লাগল। ফলে নিজের কাজেরই সুবিধা হল অনেক। যখন তিনি কাছে থাকতেন না তখন আপনা থেকেই কাগজে টেলিগ্রাম রেকর্ড হয়ে যেত। কিন্তু এই সুবিধাই একদিন বিপদ ডেকে আনল। ব্যাপারটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে গেল। ফলে কাজে গাফিলতির অপরাধে চাকরিটি খোয়াতে হল।
এডিসন এবারে চলে এলেন নিউইয়র্কে। এক বন্ধুর আস্তানায় আশ্রয় নিলেন। এখানে কেবল রাত্রিটা কাটাতেন, আর গোটা দিন টো – টো করে ঘুরতেন চাকরির সন্ধানে। বন্ধুটি কাজ করত এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে। একদিন তার অফিসের একটি যন্ত্র বিকল হয়ে গেল। যন্ত্র সারাই করার জন্য শহরের বড় বড় মিস্ত্রীদের ডাকা হল। বিশেষজ্ঞবাও ব্যর্থ হলেন। যন্ত্রটি ছিল এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেটি সারাই না হওয়ায় অফিসের প্রধান কাজই গেল বন্ধ হয়ে।
প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ল। বন্ধুর কাছ থেকে খবরটা পেয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠলেন এডিসন। একদিন গিয়ে দেখলেন মেসিনটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বিশেষজ্ঞরা হার মেনেছেন। এডিসন বিশেষজ্ঞ নন। তবু তাঁর মনে হল, এ মেসিন তাঁর দ্বারা সারাই করা সম্ভব। প্রথমে ইতস্ততঃ ভাব থাকলেও বন্ধুকে সাহস করে জানালেন কথাটা। বন্ধুটি তাঁকে নিয়ে হাজির করল ম্যানেজারের কাছে। সেই সময় এডিসনের বয়স মাত্র ষোল। এইটুকুনি ছেলের মুখ থেকে যখন ম্যানেজার শুনলেন যে সে যন্ত্রটা সারাই করতে পারবে, কথাটা তার অবিশ্বাস্য মনে হওয়াই স্বাভাবিক। হলও তাই।
তবু মানুষ ভেসে যাবার মুহূর্তে খড়কুটোকে বিরাট অবলম্বন বলে মনে করে, তেমনি ম্যানেজারের মনেও যতই অবিশ্বাস আর বিস্ময় থাক না কেন, মুখে তিনি তা প্রকাশ করলেন না। দেখা যাক না কি হয়। এমনি একটা মনোভাবের বশবর্তী হয়ে তিনি এডিসনকে সঙ্গে করে যন্ত্রের কাছে নিয়ে গেলেন। এডিসন খুব বেশি সময় নিলেন না। গলদটা কোথায় তা নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বলে বুঝে গিয়েছিলেন। খানিকটা নাড়াচাড়া করতেই সচল হয়ে গেল যন্ত্র। আনন্দে কৃতজ্ঞতায় ম্যানেজার এডিসনের প্রশংসা করলেন। এতেই ক্ষান্ত হলেন না তিনি।
নির্দ্বিধায় এডিসনকে চাকরিতে বহাল করে নিলেন। মাইনে স্থির হল মাসে তিনশো ডলার ৷ দৈব যোগাযোগেই বলতে গেলে এডিসনের এভাবে অর্থের ভাবনা দূর হয়ে গেল ৷ মাইনের টাকাতে নিজেই পছন্দমত একটা আস্তানা ভাড়া করলেন। রাহা খরচ বাব দ যা ব্যয় হত তার পরেও কিছু অর্থ থেকে যেতো হাতে। এডিসন তা দিয়ে তার বিজ্ঞান গবেষণার নানা সাজসরঞ্জাম কিনতে লাগলেন। চিন্তাভাবনা করে যন্ত্রপাতি নির্মাণের কাজও শুরু করলেন। যেই প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতেন, সেই অফিসের কাজের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এডিসন বিশেষ ধরনের একটি মেসিন তৈরি করে ফেললেন কয়েক মাসের চেষ্টাতেই।
মেসিনটির কার্যকারিতা দেখে উক্ত প্রতিষ্ঠান নগদ চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে কিনে নিল। সেই সঙ্গে যন্ত্রনির্মাতা হিসেবে এডিসন পরিচিত হয়ে উঠলেন। একেবারে অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি। প্রচুর অর্থ। এবারে এডিসন মনের মত একটি গবেষণাগার তৈরি করে নিলেন মেসিন বিক্রীর অর্থে। গবেষণাগার তৈরি হবার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বহু জায়গা থেকে অর্ডার আসতে লাগল। চাহিদা মত যন্ত্রও তৈরি করে দিতে লাগলেন তিনি। অর্থাগমের এই সুযোগ অল্প দিনের মধ্যেই এডিসনকে ধনবান করে তুলল। তিনি মহা উৎসাহে ১৮৭৬ খ্রিঃ নিউ জার্সির মেনলো পার্কে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করলেন।
মেতে উঠলেন আবিষ্কারের নেশায়। পরবর্তীকালে যা কিছু তিনি আবিষ্কার করেছেন, তার সবই মেনলো পার্কের এই গবেষণাগার থেকে প্রকাশিত হয়েছে। টেলিগ্রাফ নিয়েই আরম্ভ হয়েছিল গবেষণা। তারপর টেলিফোন। দুটি যন্ত্রেরই উন্নতি সাধন করেছেন তিনি। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর গবেষণা আরম্ভ হল বিচিত্র এক ব্যাপার নিয়ে। কি করে মানুষের কণ্ঠস্বর ধরে রাখা যায় সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করলেন।
এডিসনের চিন্তা ও গবেষণার ফলেই ১৮৭৭ খ্রিঃ ১৮ ই জুলাই একটি যন্ত্র উদ্ভাবিত হল। তিনি মোম মাখান কাগজে নিজের কন্ঠস্বর রেকর্ড করে যন্ত্রের সাহায্যে সেই কন্ঠস্বর পুনরায় শুনতে পেলেন। ক্রমে এই যন্ত্রটিরই উন্নতি সাধন করে পরে এডিসন আবিষ্কার করলেন ফোনোগ্রাফ। এরপর তিনি আবিষ্কার করলেন বৈদ্যুতিক বাতি। ততদিনে ডায়নামো আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তার সাহায্যে সহজেই বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করা যেত। কিন্তু ঘরে আলো জ্বালাবার ব্যবস্থাটি এডিসনের পছন্দ হল না।
তিনি অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বায়ুশূন্য কাচের বাল্বের মধ্যে কার্বন ফিলামেন্ট রেখে তড়িৎ প্রবাহের সাহায্যে বাতি জ্বালাতে সমর্থ হলেন। বেশ কয়েকদিন ধরে টানা বাতি জ্বালিয়ে রাখলেন তিনি। দেখা গেল বাল্বের ভেতরের ফিলামেন্ট একই ভাবে রয়ে গেল, পুড়ে গেল না। ইচ্ছামত এবং প্রয়োজন মত বাল্বের আলো জ্বালানো এবং নিবানোর আর কোন বাধা রইল না। এডিসনের এই অভিনব সাফল্যের পর তাঁর খ্যাতি আরও বৃদ্ধি পেল। মেনলো পার্কের ঘরে বসে তিনি অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা নিয়ে মেতে থাকেন।
আর এতদিন যা মানুষ ভাবতে পারেনি করতে পারেনি তেমনি সব কান্ড ঘটিয়ে মানুষকে ক্রমাগত চমকে দিচ্ছেন। অদ্ভুতকর্মা এডিসন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে নতুন নাম পেলেন ‘ মেনলো পার্কের যাদুকর ‘। এডিসন যেই সময়ে বৈদুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন, প্রায় একই সময়ে আর একজন ইংরাজ বিজ্ঞানী একই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎবাতি আবিষ্কার করলেন। বিজ্ঞানীর নাম যোসেফ স্বোয়ান। ১৮৮০ খ্রিঃ একটি প্রদর্শনীতে এই আবিষ্কার প্রমাণিত হল। একই বিষয়ের দুইজন আবিষ্কারক। ফলে আমেরিকা এবং ইংলন্ড দুই দেশের মধ্যে প্রথম আবিষ্কারের গৌরবের দাবি নিয়ে আরম্ভ হয়ে গেল বাদ প্রতিবাদ।
কেউ কারোর দাবি ছাড়তে রাজি নয়। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মামলাও আরম্ভ হল। শেষ পর্যন্ত বিবাদের মীমাংসা করতে এগিয়ে এলেন এডিসন নিজেই। তিনি বাতিটির নামকরণ করলেন এডিস্বোয়ান ল্যাম্প। উভয় আবিষ্কারকের নামই জড়িত হয়ে রইল বাতির নামের সঙ্গে। এই ব্যবস্থায় কারোরই আর প্রতিবাদের কোন প্রশ্ন থাকল না। মানুষের কণ্ঠস্বর ধরে রাখার যন্ত্র ফোনোগ্রাফ নিয়ে গবেষণা করবার সময়েই চিত্রের চলমান অবস্থার চিন্তা এডিসনের মাথায় এসেছিল। এবারে সেই চিন্তা কাজে রূপ দেবার প্রয়াস পেলেন।
এডিসনের ধারণা হয়েছিল, ফোনোগ্রাফের গায়ে পরপর কতগুলি ছবি বসিয়ে হাতে ঘুরিয়ে দ্রুত ছবিগুলিকে বার করলে সচল ছবি পাওয়া যেতে পারে। ব্যাপারটা হাতে কলমে করবার জন্য কতগুলো ফোটো তুললেন। সেই ফোটোগুলো সিলিণ্ডারের গায়ে এঁটে বসিয়ে দিলেন। তারপর হাতল ঘুরিয়ে ছবিগুলোকে যখন একে একে বার করে আনলেন, একটি শক্তিশালী লেন্সের ভেতর দিয়ে ছবিগুলোকে দেখে তার মনে হল, তার চিন্তা সঠিক পথেই রয়েছে। এবারে গবেষণায় মেতে উঠলেন। সামান্য চওড়া এবং পঞ্চাশ ফুট দীর্ঘ সেলুলয়েডের ফিল্ম অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে আনলেন। সেই ফিল্ম নিজের তৈরি মুভি ক্যামেরায় লোড করে ছবি তুললেন।
এইসব ছবি দেখানোর জন্য একটি যন্ত্রও তৈরি করলেন। এবারে লেন্সের সাহায্যে ফিলমের ছবিকে পর্দায় প্রদর্শনেব ব্যবস্থা হল। সুন্দর ছবি প্রতিফলিত হলো পর্দার গায়ে। নিজের কৃতিত্বে এডিসন স্বয়ং বিস্মিত হলেন। তিনি এই যন্ত্রটির নামকরণ করলেন কিনেটোস্কোপ। এরপর আরও পরীক্ষা – নিরীক্ষার পর এডিসনের এই আবিষ্কার থেকেই জন্ম নিল আজকের চলচ্চিত্র। অবশ্য এডিসনের অবলম্বিত ব্যবস্থার বহু অদল বদল ঘটেছে বর্তমানে ৷
তবুও কতগুলো বিষয়ে এখনো পর্যন্ত এডিসনের ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এডিসনের প্রতিভা ছিল বিস্ময়কর। যে বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন, তাতেই লাভ করেছেন সাফল্য। তাঁর আবিষ্কার এমন বহুবিচিত্র আর বহুল যে তার সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া শক্ত। জানা যায়, সারা জীবনে তিনি একহাজারেরও বেশি আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়েছিলেন।
টমাস আলভা এডিসন এর মৃত্যু: Thomas Alva Edison’s Death
বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসের বিস্ময় প্রতিভা মহান বিজ্ঞানী এডিসন ১৯৩৩ খ্রিঃ ১৮ ই অক্টোবর ওয়েস্ট অরেঞ্জে চুরাশি বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।