দীন-ই-ইলাহী কী? – Din-I-Ilahi
দীন-ই-ইলাহী:
আকবরের মা হামিদা বানু বেগম ও তার গৃহশিক্ষক আব্দুল লতিফ তাঁকে পরমতসহিষ্ণু করে মানুষ করেন। পরবর্তীকালে রাজপুতদের সংস্পর্শে এবং রাজপুত রমণীকে বিবাহ করে তিনি পরম উদারতার পরিচয় দেন। শেখমুবারক ও তাঁর দুই পুত্র ফৈজি ও আবুলফজলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব তাকে ধর্মীয় ব্যাপারে প্রভাবিত করে। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্ম মতের প্রচারকদের সান্নিধ্যে তার মনে গভীর প্রভাব পড়ে ধর্মীয় ব্যাপারে।
ধর্মীয় ব্যাপারে প্রকৃত সত্য কী তা জানার জন্য আকবরের মন ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল। এই উদ্দেশ্যে 1575 খ্রিস্টাব্দে আকবর ফতেপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা নির্মাণ করেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ করে তাঁর সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করতে অনুরোধ করেন।
সুফি, ব্রাহ্মণ, খ্রিস্টান, জৈন ও পারসিক ধর্ম গুরুরা আকবরের আমন্ত্রণে ফতেপুরের ইবাদতখানায় আসতেন এবং তার ধর্মীয় তৃষ্ণা মেটাবার চেষ্টা করতেন। তাঁদের সকলের কথা শুনে আকবরের মনে ধারণা জন্মায় যে, সকল ধর্মের মর্ম কথা এক ও অভিন্ন।
1582 খ্রিস্টাব্দে আকবর কোরান, বাইবেল, হিন্দুশাস্ত্র সব কিছুর মধ্য থেকে ভালো ভালো কথা নিয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ে দ্বীন-ই-ইলাহী নামে একটি নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেন।
দীন-ই-ইলাহী ছিল একেশ্বরবাদী সর্বধর্ম সমন্বয়ী ধর্মমত। এই ধর্ম মতে কোন দেবদেবীর স্থান ছিল না এবং সম্রাট আকবর নিজেই ছিলেন পীর বা গুরু। এতে পার্থিব উদারতা ও চারিত্রিক পবিত্রার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। উদারতা, আত্মত্যাগ, মোহমুক্তি, নিরামিষ ভোজন, মদ্যপান ত্যাগ প্রভৃতি ছিল দীন-ই-ইলাহির পালনীয় কর্তব্য।
18 জন বিশিষ্ট মুসলমান ও বীরবল দীন-ই-ইলাহী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ভগবান দাস ও মানসিংহ এই ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।