ইকো-ট্যুরিজম কাকে বলে? ইকো টুরিজম প্রয়োজন কেন? ইকোট্যুরিজমের বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব

4.5/5 - (2 votes)

ইকো-ট্যুরিজম কাকে বলে? ইকো টুরিজম প্রয়োজন কেন? ইকোট্যুরিজমের বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব: এখানে ইকো ট্যুরিজম কাকে বলে, ইকো ট্যুরিজমের উদ্দেশ্য ও ইকো ট্যুরিজমের গুরুত্ব আলোচনা করা হল। 

বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইকো-ট্যুরিজম তথা পরিবেশগত পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে এক জন প্রকৃতি প্রেমী মানুষ দায়িত্ব শীল ভ্রমনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছপালা, পশুপাখি ও প্রকৃতির যে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য অধ্যয়ন ও উপভোগ করে।ইকো-ট্যুরিজম প্রবর্তন ও প্রচারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল স্থানীয় পরিবেশের সংরক্ষন, অর্থনৈতিক – সামাজিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষন।

ইকো-ট্যুরিজম ধারনার উৎপত্তিহেক্টর সেবালাস ল্যাসকুরেন  (Hector Ceballas Lascurain) ১৯৮৩ সালে মেক্সিকোতে PRONATURA নামক NGO প্রতিষ্ঠার সময় ইকো-ট্যুরিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন Hector লক্ষ্য করেন পর্যটক, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মধ্যে এক জটিল সম্পর্কের বিদ্যমানতা রয়েছে।
১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে পরিবেশ আন্দোলনের মাধ্যমে ইকো-ট্যুরিজম এর প্রয়োজনীয়তা শুরু হয়। যেমন- ১৯৭২ সালে মানব পরিবেশ সম্পর্কীত সম্মেলন ও এরপর ১৯৮০ সালে IUCN দ্বারা আয়োজিত বিশ্ব সংরক্ষণ কৌশলে পরিবেশ গত স্থিতিশীল উন্নয়নের রূপরেখা প্রকাশ করা হয়।

সংজ্ঞা: What Is Eco Tourism??

হেটজার (Hetzer, 1965) ইকো-ট্যুরিজমের চারটি স্তম্ভের কথা বলেন –

১. ন্যূনতম পরিবেশ গত প্রভাব।

২. স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সর্বাধিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও স্থানীয় সংস্কৃতি কে প্রভাবিত না করা।

৩. ভ্রমন কারী দেশের সর্বনিম্ন স্তর থেকে আর্থিক বিকাশ সাধন।

৪. পর্যটক দের সর্বাধিক বিনোদনের সু্যোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।

হেক্টর সেবালাস ল্যাসকুরেন (Hector Ceballas Lascurain, ১৯৮৭) এর মতে – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্য প্রানী ও উদ্ভিদ এবং সর্বপরি বিদ্যমান সংস্কৃতির (অতীত ও বর্তমান) উপভোগের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত শান্ত বা অনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পর্যটন কে ইকো-ট্যুরিজম বলে।

ল্যারমান ও ডাস্ট (Laarman & Dust, 1987) ইকো-ট্যুরিজম কে প্রকৃতি ভ্রমন (Natural Tourism) বলে ব্যক্ত করেছেন, যেখানে পর্যটক তার গন্তব্য স্থলের এক বা একাধিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, সেখানে ভ্রমন করে। সেই ভ্রমন টি শিক্ষা, বিনোদন এমনকি দুঃসাহসিক অভিযান মূলক ও হতে পারে।

International Ecotourism Society (1991) এর মতে ইকো-ট্যুরিজম হল প্রাকৃতিক অঞ্চলে দায়িত্ব শীল ভ্রমন যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় মানুষের মঙ্গল সাধন করে।

ইকো-ট্যুরিজমের উদ্দেশ্য

১ম – সুসংগত ও স্থিতিশীল পর্যটন সরবরাহ করা।

২য় – দর্শন কারীদের ভিন্ন ভিন্ন বন্য উদ্ভিদ ও প্রানী প্রজাতি এবং স্থানীয় বাসিন্দা সম্পর্কে 

অভিজ্ঞতা প্রদান।

৩য় – সংরক্ষনের গুরুত্ব সম্পর্কে পর্যটকদের সচেতন করা।

৪র্থ – ইকো-ট্যুরিজম কে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য পরি কাঠামোর সুব্যবস্থা করা।

৫ম – কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।


 
ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব:

ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব গুলি হল –

ক) ইকো-ট্যুরিজম পিছিয়ে থাকা প্রত্যন্ত এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশে সাহায্য করে।

খ) কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে, স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে।

গ) বিভিন্ন বন্য পশু ও উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষ জানতে শেখে।

ঘ) প্রকৃতির মধ্যে থেকে মানুষ বিনোদনের সুযোগ পায়।

ঙ) ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সমাগম ঘটায় সংস্কৃতির মিলন ঘটে।

চ) স্থানীয় এলাকার পরিকাঠামো গত বিকাশ ঘটে। যেমন- রাস্তাঘাট নির্মান, বিদ্যুৎ, হোটেল 
প্রভৃতি।

ছ) মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়।

জ) স্থানীয় মানুষদের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রতি মনোনিবেশ দেখা যায়।

ঝ) সর্বপরি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটে।

অর্থাৎ বর্তমান সময়ে ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব অনুধাবন করে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইকো-
ট্যুরিজমের বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। যেমন – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, 
জার্মানি , জাপান এবং এশিয়ার কিছু শিল্প উন্নত দেশে ইকো-ট্যুরিজমের যথেষ্ট বিকাশ সাধন 
ঘটেছে।

ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশে জাতীয় সংস্থা গুলির গুরুত্ব

সংরক্ষিত বা সুরক্ষিত এলাকার আর্থ- সামাজিক বিকাশে একমাত্র পন্থা হল ইকো-ট্যুরিজম, যা ভারতের কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। পর্যটন থেকে যে আয় হয়, তার দ্বারাই প্রকৃতির বাস্তবিক সংরক্ষণ সম্ভব। এমনকি ইকো-ট্যুরিজম থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ স্থানীয় মানুষদের অরণ্য নিধন ও বন্য পশু হ্ত্যা থেকে বিরত রাখে। তাই ভারত সরকারের পরিবেশ ও অরণ্য দপ্তর আর পর্যটন দপ্তর জাতীয় উদ্যান, অভয়ারন্য ও জীব মণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল গুলিতে ইকো-ট্যুরিজম মূলক প্রকল্প গুলিতে স্থানীয় দের যুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে।

ভারতবর্ষে কিছু ইকো-ট্যুরিজম সাইট

১. কেরালার পেরিয়ার ব্র্যাঘ্র প্রকল্প ইকো-ট্যুরিজম সাইট

২. থেনমালা – কেরালার একটি পুরস্কৃত ইকো-ট্যুরিজম সাইট

৩. সুন্দরবন ইকো-ট্যুরিজম সাইট

৪. উত্তরাখণ্ডের নন্দাদেবী জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল – যেটি একটি UNESCO World Heritage Site

৫. উত্তরাখণ্ডের জীম করবেট জাতীয় উদ্যান

Leave a Comment