কোরিয়া সংকট বলতে কী বোঝো? কোরিয়া সংকটের ফলাফল ও গুরুত্ব আলোচনা করো। কোরিয়া সংকটে রাষ্ট্রসংঘ ও ভারতের ভূমিকা আলোচনা করো: 1910 খ্রিষ্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত কোরিয়ায় জাপানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল। 1945 খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে কোরিয়ার উত্তরাংশে অর্থাৎ 38° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরাংশ সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে এবং কোরিয়ার দক্ষিণাংশ অর্থাৎ 38° উত্তর অক্ষরেখার দক্ষিণাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে কোরিয়ার উত্তরাংশে সোভিয়েত রাশিয়া এবং দক্ষিণাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। উভয় পক্ষই নিজে নিজ অধিকৃত অঞ্চলে নিজেদের মতাদর্শ অনুযায়ী অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়।
স্বাধীন সরকার গঠনের পরিকল্পনা-1945 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোরিয়া নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।ওই বৈঠকে স্থির হয় কোরিয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি যুগ্ম কমিশন গঠিত হয় এবং ওই কমিশন কোরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে একটি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন-যুগ্ম কমিশন গঠনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1947 খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার সংক্রান্ত বিষয়টি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা, ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে.পি.এস মেননকে সভাপতি নিযুক্ত করে 9 সদস্যের একটি অস্থায়ী কমিশন গঠন করে। ওই কমিশনের দায়িত্ব ছিল কোরিয়া থেকে বিদেশি সেনাদের অপসারণ করে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কোরিয়ায় একটি স্বাধীন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
কোরিয়ায় দুই সরকার প্রতিষ্ঠা-রুশ-মার্কিন ঠান্ডা লড়ায়ের আবর্তে পড়ে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দুটি পৃথক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশনের সদস্যরা উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করতে চাইলে রাশিয়া তাদের অনুমতি দেয়নি। এমত অবস্থায় ওই কমিশনের তত্ত্বাবধানে 1948 খ্রিস্টাব্দের 10ই মে দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং 15 ই আগস্ট সেখানে মার্কিন অনুগত ড.সিংম্যান.রি-এর নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ওই সরকারকে সমগ্র কোরিয়ার একমাত্র বৈধ সরকার বলে স্বীকৃতি দেয়।1948 খ্রিস্টাব্দের 22শে ডিসেম্বর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্তত 31 টি রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নবগঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার নাম হয় প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া এবং এ রাজধানী হয় সিওল।
অপরদিকে উত্তর কোরিয়ায় সোভিয়েত রাশার মদতে কমিউনিস্ট নেতা কিম-উল-সুঙ এর নেতৃত্বে 1948 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসেই একটি সোভিয়েত অনুগামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নবগঠিত উত্তর কোরিয়ার নাম হয় গণতান্ত্রিক কোরিয়া এবং তার রাজধানীর নাম হয় পানমুনজম। সোভিয়েত রাশিয়া এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।
কোরিয়া যুদ্ধের সূচনা ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপ-দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন একাধিকত্বের বিরুদ্ধে 1950 খ্রিস্টাব্দের 25শে জুন রাশিয়ার মদতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী 38° অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে। এর ফলে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কোরিয়া সংক্রান্ত কমিশন উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে অভিহিত করে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তার সমস্ত সেনা অপসারণের দাবি জানায়। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা স্বার্থে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য জন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানান।
কোরিয়া সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
1950 খ্রিস্টাব্দের 25শে জুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য দানের কথা ঘোষণা করেন। মার্কিন সেনাপতি জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারকে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।1950 খ্রিস্টাব্দের 7ই জুলাই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে সেনাবাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ 16টি সদস্য রাষ্ট্র ওই বাহিনীতে সামিল হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ওই সেনাদলের স্থলবাহিনীর 60%, নৌবাহিনীর 86% এবং বিমানবাহিনী 93% ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন সেনাপতি ডগলাস ম্যাকআর্থারকে এই সেনাবাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া দখল মুক্ত-সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বাহিনীর বিপুল উদ্যোগ সত্ত্বেও 1950 খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় 95% ভূখণ্ড দখল করে নেয়।যুদ্ধে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে নতুন করে 50 হাজার সেনা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবতরণ করে। অবশেষে 1950 খ্রিস্টাব্দে 30শে সেপ্টেম্বর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার দখল থেকে মুক্ত করে।
কোরিয়া যুদ্ধে চীনের যোগদান-দক্ষিণ কোরিয়া দখলমুক্ত হওয়ার পরেও মার্কিন সেনাপতি ডগলাস ম্যাকআর্থারের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বাহিনী 7ই অক্টোবর 38° অক্ষরেখা অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করে এবং ইয়ালু নদীর তীরে চীন সীমান্তে উপস্থিত হয়। চীনের ভূখণ্ডে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নামে মার্কিন আধিপত্য চীনের রাষ্ট্রপতি মাও-সে-তুং মেনে নিতে রাজি ছিলেন না তাই চিনের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। চীনের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর অগ্রগতি রোধ করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর পশ্চাৎভাগে পানমুনজম মার্কিন সেনা অবতরন করে। এইভাবে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধ মার্কিন-চীন যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। অল্পদিনের মধ্যেই চিনা বাহিনী মার্কিন নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বাহিনীকে উত্তর কোরিয়া থেকে বিতাড়িত করে। এমনকি 1951 খ্রিস্টাব্দের 4ঠা জানুয়ারি সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলও দখল করে নেয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা-মার্কিন সেনাপতি ডগলাস ম্যাক আর্থারের আগ্রাসী নীতি মার্কিন কংগ্রেসের পছন্দ ছিল না। এছাড়া সুদূর প্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে নামার বিরুদ্ধে মার্কিন রাজনীতিবিদগণ সোচ্চার হোন। এই অবস্থায় সুদূর প্রাচ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান সেনাপতি ম্যাকআর্থারকে পদচ্যুত করেন এবং ম্যাথু রিজওয়েকে সেনাপতি পদে নিযুক্ত করেন।ম্যাকআর্থারকে অপসারণের ফলে যুদ্ধের তীব্রতা হ্রাস পায়। অবশেষে এই যুদ্ধে 1951 খ্রিস্টাব্দের 23শে জুন শহীদ রাশিয়া উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দেয়। অসংখ্য বৈঠক ও দীর্ঘ আলোচনার পর 1953 খ্রিস্টাব্দের 27শে জুলাই উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পানমুনজমে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী-
ক)38°অক্ষরেখা বরাবর উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্র সীমা নির্ধারিত হয়।
খ)ভারতের সভাপতিত্বে একটি নিরপেক্ষ কমিশনকে বন্দী বিনিময়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।60 দিনের মধ্যে যুদ্ধবন্দীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।।
কোরিয়া সংকটে ভারতের ভূমিকা
কোরিয়া সংকটে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এই সংকটে ভারতের ভূমিকা ছিল নিম্নরূপ-
1)জোট নিরপেক্ষ নীতি প্রয়োগ-কোরিয়া সংকটে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া কোনপক্ষেই যোগদান না করে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, জোট নিরপেক্ষ নীতির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন।
2)কে.পি.এস. মেননের অবদান-কোরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা যে 9 সদস্য বিশিষ্ট অস্থায়ী কমিশন বা United Nations Temporary Commission on Korea (UNTCOK) গঠন করেছিল তার সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন ভারতের বিশিষ্ট কূটনীতিক কে.পি.এস. মেনন। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল বিদেশি সেনা অপসারণ করে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কোরিয়ায় একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
3)ভারতের প্রতিবাদ-সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী দেশ বলে ঘোষণা করলে ভারত তা সমর্থন করে। কিন্তু কোরিয়া সমস্যা সমাধানে অন্য কোন রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কথা মতো পরিচারিত হতে থাকলে ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
4)চিন আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারত-মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আর্থারের বাহিনী চীন আক্রমণ করলে ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এই সময় চীনকে আক্রমণকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করলেও ভারত এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করে।
5)যুদ্ধ বন্দীদের মুক্তি-যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হওয়ার পর যুদ্ধ বন্দীদের মুক্তির জন্য ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নিরপেক্ষ রাষ্ট্রদের নিয়ে একটি প্রত্যাগমন কমিশন গঠন করে। ভারত এই কমিশনের সভাপতি মনোনীত হয়। এই কমিশনের চেষ্টায় বহু যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়, প্রায় 1500 চিনা যুদ্ধবন্দী ফরমোজাতে বসবাসের অনুমতি পায় এবং 1000 উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধ বন্দি দক্ষিণ কোরিয়াতে থেকে যায়।
কোরিয়া সংকটের গুরুত্ব ও ফলাফল
আপাত দৃষ্টিতে কোরিয়া সংকট একটি নিরর্থক যুদ্ধ হলেও বাস্তবে এই যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
1)কোরিয়ার বিভাজন-কোরিয়া যুদ্ধের দ্বারা দুই কোরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। কোরিয়া সংকটে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির ফলশ্রুতি হিসাবে 38° উত্তর অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়ার বিভাজন মোটামুটি স্থায়ী ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়।
2)আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি-কোরিয়া যুদ্ধে দুই কোরিয়াকেই চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। মার্কিন, কোরীয় ও চীনা সবমিলিয়ে 25 লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, 5 মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয় এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দুই কোরিয়ারই অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়।
3)ঠান্ডা লড়ায়ের প্রসার-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই এতদিন পর্যন্ত ইউরোপীয় ভূখণ্ডের সীমাবদ্ধ থাকলেও কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে তা এশিয়ায় সম্প্রসারিত হয়। এই যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে ঠান্ডা লড়ায়ে রাশিয়ার সঙ্গে চিনও সামিল হয়।
4)আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রস্তুতি-কোরিয়া যুদ্ধের সুযোগে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দুর্বল করতে চাইলেও তা পারেনি। তাই তখন থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রস্তুতি শুরু করে। ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তাইওয়ান, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক সামরিক জোট প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়।
5)রাষ্ট্রসঙ্ঘের মর্যাদা হ্রাস-কোরিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে রাষ্ট্রসংঘকে ব্যবহার করা হলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরপেক্ষ চরিত্র বিনষ্ট হয় ও মর্যাদা হ্রাস পায় কারণ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্য সোভিয়েত রাশিয়ার অনুপস্থিতিতে মার্কিন মদতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বাহিনী উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করে এবং পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাশিয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগদান শুরু করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদকে নিষ্ক্রিয় করে সাধারণ সভার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
6)পরিবর্তিত মার্কিন নীতি-কোরিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। এতদিন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ছিল সোভিয়েত রাশিয়া বিরোধী। কিন্তু কোরিয়া যুদ্ধের সময় থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বৃহত্তর সাম্যবাদ বিরোধী হয়ে ওঠে।
7)সোভিয়েত-চীন মৈত্রী প্রতিষ্ঠা-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে চিনকে দুর্বল করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে দ্বারা মার্কিন-চীন বিরোধ বৃদ্ধি পায় এবং সোভিয়েত-চীন মৈত্রী সুদৃঢ় হয়।
উপসংহার-পরিশেষে বলা হয়, কোরিয়া সংকট ছিল প্রকৃত অর্থে একটি অনাবশ্যক ও নিষ্ফল যুদ্ধ। কারণ দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল শূন্য। ঐতিহাসিক ডি.এফ.ফ্লেমিং তাঁর ‘The Cold war and it’s origin’ গ্রন্থে বলেছেন, “The balance sheet of Korean war was heavily negative”. অর্থাৎ “মার্কিন নাগরিকদের কাছে কোরিয়া যুদ্ধের ফল ছিল অত্যন্ত নেতিবাচক”।