আমেদেও অ্যাভোগাড্রো জীবনী: gksolve.inআপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Amedeo Avogadro Biography in Bengali. আপনারা যারা আমেদেও অ্যাভোগাড্রো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো কে ছিলেন? Who is Amedeo Avogadro?
লরেঞ্জো রোমানো আমেদেও কার্লো অ্যাভোগাড্রো, কোয়ারেগনা এবং সেরেতোর কাউন্ট (৯ আগস্ট ১৭৭৬ – ৯ জুলাই ১৮৫৬) একজন ইতালীয় রসায়নবিদ। তিনি বর্তমানের অ্যাভোগাড্রোর সূত্র নামের আণবিক তত্ত্বের জন্য অধিক সমাদৃত। এই সূত্রানুযায়ী, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে একই আয়তনের গ্যাসসমূহে একই সংখ্যক অণু থাকবে। তাকে সম্মান জানাতে ১ মোলে প্রাথমিক সত্তার (পরমাণু, অণু, আয়ন বা অন্য কণা) পরিমাণ, ৬.০২২১৪০৭৬×১০২৩ কে অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক নামকরণ করা হয়েছে, যা সাতটি মৌলিক এসআই এককের মধ্যে অন্যতম, যাকে NA দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো জীবনী – Amedeo Avogadro Biography in Bengali
নাম | আমেদেও অ্যাভোগাড্রো |
জন্ম | 9 আগস্ট 1776 |
পিতা | Count Filippo Avogadro |
মাতা | Anna Maria Vercellone |
জন্মস্থান | তুরিন, পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া |
জাতীয়তা | ইতালীয় |
পেশা | রসায়নবিদ |
মৃত্যু | 9 জুলাই 1856 (বয়স 79) |
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র জন্ম: Amedeo Avogadro’s Birthday
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো ১৭৭৬ সালের ৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Amedeo Avogadro’s Parents And Birth Place
পরমাণুর প্রবর্তক হিসেবে জন ডালটনের নামের সঙ্গে আর একজন বিজ্ঞানীর নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, তার নাম অ্যামদিও অ্যাভোগাদ্রো। ডালটনের তত্ত্বের মধ্যে অনেক ত্রুটি ধরা পড়েছিল পরবর্তীকালে। অ্যাভোগাদ্রোর তত্ত্ব সেই হিসেবে ত্রুটিহীন বলে স্বীকৃতিলাভ করেছে। তাঁর মতবাদকে ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত বহু তথ্য ব্যাখ্যা করা সহজ হয়েছিল। ইতালির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৭৭৬ খ্রিঃ অ্যাভোগাদ্রোর জন্ম হয়েছিল। ফলে উপযুক্ত তত্ত্বাবধানেই তাঁর শিক্ষারম্ভ হয়েছিল।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র শিক্ষাজীবন: Amedeo Avogadro’s Educational Life
তার ছাত্রজীবন ছিল অত্যন্ত গৌরবময়। আশ্চর্যের বিষয় হল, ভবিষ্যতে তিনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেছিলেন, ছাত্রাবস্থায় তাঁর শিক্ষার বিষয় কিন্তু বিজ্ঞান ছিল না। আইন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন অ্যাভোগাদ্রো।
বিজ্ঞানে প্রথাগত কোন শিক্ষা বা ডিগ্রি তাঁর ছিল না। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ছিল নীরব আকর্ষণ। ফলে কর্মজীবনে প্রবেশ করে তিনি বিজ্ঞানচর্চার দিকে ঝুঁকলেন। বিষয়টা ছিল তাঁর অবসর বিনোদনের মাধ্যম। শিক্ষালাভের পর যথারীতি আইন ব্যবসায় আরম্ভ করলেন। কিন্তু ক্রমেই বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে লাগল। পরে অবস্থা এমন হল যে অবসরকালের চর্চার বিষয়টিই তাঁর ভাবনা – চিন্তা অধিকার করে বসল।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র প্রথম জীবন: Amedeo Avogadro’s Early Life
শেষ পর্যন্ত আইন ব্যবসায় বন্ধ করে পুরোপুরিভাবে বিজ্ঞান সাধনায় মনোনিবেশ করলেন। আইনব্যবসায়ী পরিণত হল বিজ্ঞানীতে। রসায়ন বিজ্ঞানই ছিল অ্যাভোগাদ্রোর চর্চার বিষয়। ডালটনের পরমাণুবাদের প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তারই প্রেরণায় গবেষণা আরম্ভ করলেন পদার্থের গঠন সম্পর্কে। এই সময়েই তিনি লক্ষ করলেন, ডালটনের পরমাণুবাদের তত্ত্ব প্রয়োগ করে সর্বক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তার যথার্থতা বিচারের জন্য নিজেই একটি প্রকল্প রচনা করলেন।
তার এই প্রকল্প বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যাভোগাদ্রো প্রকল্প নামে খ্যাতিলাভ করেছিল। তার এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত হল, যে কোন পদার্থকেই ক্রমাগত ভাঙ্গতে থাকলে এমন এক অবস্থা আসবে যা হল পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকা অবস্থা। এই কণিকায় পদার্থের নিজস্ব গুণ বা অবস্থা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু এই কণিকাটিকে আরও ভাঙ্গা হলে শেষ পর্যন্ত তা পদার্থের গুণ হারাবে। অ্যাভোগাদ্রো পদার্থের ধর্ম ও গুণ সমন্বিত কণিকা অবস্থার নাম রাখলেন অণু আর পদার্থের গুণও ধর্ম হারানো চরমতম অবস্থার কণিকার নাম রাখলেন পরমাণু।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র কর্ম জীবন: Amedeo Avogadro’s Work Life
এবিষয়ে তিনি আরও একটি সিদ্ধান্ত করলেন যে একই উষ্ণতা ও চাপে মৌলিক কিংবা যৌগিক যে কোন সম আয়তন গ্যাসের মধ্যে অণু থাকে সমান সংখ্যায়। অ্যাভোগাদ্রোর পূর্বেও একজন বিজ্ঞানী পদার্থকে বিভাজিত করে প্রায় একইরকম সিদ্ধান্ত করেছিলেন। তাঁর নাম বার্জিলিয়াস ৷ অবশ্য তার সিদ্ধান্তে একটি ভুল থাকার জন্য সেটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। তিনি অণুকে পরমাণু কল্পনা করেছিলেন। তখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা পরমাণুকে কেন্দ্র করেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাই অ্যাভোগাদ্রোর সিদ্ধান্ত ও প্রবর্তিত মতবাদ বিজ্ঞানীদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হল না।
তাঁদের মতে ডালটন বা বার্জিলিয়াস প্রবর্তিত মতবাদ নির্ভুল। প্রতিভাধর বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তের প্রতি অন্ধ ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন বিজ্ঞানী অ্যাভোগাদ্রোর নতুন মতবাদকে পরীক্ষা করে দেখারও উৎসাহ বোধ করলেন না। ফলে অ্যাভোগাড্রোর গবেষণা উপেক্ষিতই রইল। সময় এককালে তাঁকে বিস্মৃতির আড়ালে সরিয়ে নিল। স্ট্রানিসলাও ক্যানিজারো ছিলেন অ্যাভোগাদ্রোর ছাত্র।
তিনি আবার এককালে গুরুর মতবাদটিকে তুলে ধরলেন। তখনো পর্যন্ত ডালটনের পরমাণুবাদই অপরিবর্তিত। যদিও বিজ্ঞানীদের অনেকের মধ্যেই তখন প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে। তারা এবারে বাধ্য হয়ে অ্যাভোগাদ্রোর প্রকল্পের সত্যতা যাচাই করতে উৎসাহী হলেন। এবারে পরমাণু জগতের অনেক রহস্যই ধরা দিতে লাগল বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ৷ অ্যাভোগাদ্রোর যথার্থতা বিষয়ে তাদের আর সংশয় রইল না।
মৃত্যুর পরে স্বীকৃতি পেলেন অ্যাভোগাদ্রো। তার প্রকল্পটি যুগান্তকারী আখ্যা লাভ করল। যথারীতি এই প্রকল্প প্রয়োগ করে ডালটনের পরমাণুবাদ সংশোধিত হল বিজ্ঞানীদের দ্বারা। প্রমাণিত হল, যে কোন গ্যাসীয় অণু দুই পরমাণু বিশিষ্ট। এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে পদার্থের আণবিক ওজন নির্ণয় করা সম্ভব হল। অ্যাভোগাদ্রোর মতবাদ সূত্ররূপে বিজ্ঞান জগতে গৃহীত হল। অ্যাভোগাদ্রো বিজ্ঞানের প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না।
তার পেশাও ছিল ভিন্ন ৷ তবু আন্তরিক আকর্ষণের বশে বিজ্ঞানের চর্চাতেই আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি বিজ্ঞানীদের কাছে উপেক্ষিতই ছিলেন। প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার নীরব সাধনা ব্যর্থ হয়নি। মৃত্যুর পর রসায়ন বিজ্ঞান তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতে বাধ্য হল।
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো র মৃত্যু: Amedeo Avogadro’s Death
১৮৫৬ খ্রিঃ অ্যাভোগাড্রোর জীবনাবসন হয়।