মাটি দূষণের কারণ

Rate this post

মাটি দূষণের কারণ: মাটি দূষণ বলতে মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে মাটিদূষণ, মাটি ক্ষয়, মরু বিস্তার, মাটির লবনাক্তকরন প্রভৃতি পরিবেশের সার্বিক গুনমান হ্রাস কে বোঝায়। মাটি এক গুরুতবপূর্ন সম্পদ। মাটির অপরের স্তরের উৎকর্ষ মানের ওপর মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে।

কিন্তু মানুষ সৃষ্ট বিভিন্ন দূষণের ফলে মাটির ওপরের স্তরের পুষ্টি পদার্থ অপসারিত হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষুদ্র জীবানুর ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত্ ঘটছে এবং মাটিতে বাইরের জৈব ও অজৈব উপাদানের সংযোজন ঘটছে। 

মাটির দূষক – মাটির দূষণ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান গুলি হল – ১) বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, কৃমি প্রভৃতি সজীব দূষক।  ২) সালফেট, ফসফেট প্রভৃতি বিভিন্ন অজৈব দূষক, ভারী ধাতু (সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি)। লবন, অ্যাসিড প্রভৃতি অজীব দূষক।  ৩) বিভিন্ন জৈব ক্লোরিন, কীটনাশক, প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি জৈব দূষক। 

মাটি দূষণের কারণ গুলি হল 

রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার – আধুনিক কৃষির অন্যতম একটি উপাদান হল রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। এই সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটি দূষণের অন্যতম কারণ। সাধারণত জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে ও ক্ষতিকারক কীট ও পতঙ্গদের হাত থেকে কৃষিজ ফসল কে রক্ষা করতে এই গুলি ব্যববার করা কিন্তু অনেক সময় এই সব বিষাক্ত জীবানুনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি কারী কিছু কিছু উপকারী প্রানী মারা পড়ে। অতিরিক্ত পরিমানে রাসায়নিক সার ব্যবহারের দরুন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের প্রচুর পরিমান জমি লবনাক্ত হয়ে পড়েছে। 

শহর ও শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য – সঠিক ব্যবস্থাপনা না করেই শহর ও শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য গুলিকে যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়ার ফলে আবার অনেক সময় শহরের নর্দমার নোংরা জল যে সব জলাশয়ে পড়ে, সেই সব জলাশয়ের জল সেচের কাজে ব্যবহারের ফলে মাটির গুনমান নষ্ট হয়ে পড়ে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত জল দ্বারাও মাটি দূষণ ঘটে থাকে। 

অ্যাসিড বৃষ্টির জনিত মৃত্তিকা দূষণ – বৃষ্টির জলের সাথে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড প্রভৃতি মিশ্রিত হলে তা অ্যাসিড বৃষ্টি রূপে পৃথিবী পৃষ্ঠে ঝরে পড়ে, যার ফলে মাটির ওপরের স্তরের উর্বরতা ও পুষ্টি পদার্থ হ্রাস পায়। এর ফলে মাটির অম্লতা বাড়ে এবং মাটির ধাতব ও জৈব আয়ন গুলির প্রকৃতি পালটে যায়। একেই মাটির অ্যাসিড দূষণ বলে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ ঘটিত দূষণ – বিভিন্ন শিল্প, পারমানবিক বিস্ফোরণ, পারমানবিক শক্তি কেন্দ্র প্রভৃতি থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মাটির নিচে পুতে দেওয়া হয়, যার ফলে মাটি তেজস্ক্রিয় দূষণ ঘটে। 
প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার – প্লাস্টিক একটি অবিয়োজিত পদার্থ অর্থাৎ এগুলি সহজে নষ্ট হয় না। কিন্তু মানুষের দ্বারা এই প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অব্যবহৃত প্লাস্টিক,পলিথিন, চায়ের কাপ প্রভৃতির যথেষ্ট ব্যবহার ও আবর্জনা হিসাবে যেখানে সেখানে নিক্ষেপ ব্যাপক ভাবে মাটি দূষণ ঘটায়। এগুলি বিয়োজিত হয় না বলে দীর্ঘ দিন ধরে মাটিতে সঞ্চিত থাকে এবং বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে মাটিকে দূষিত করে। এর ফলে মাটির বিভিন্ন অনুজীব মারা যায় এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হয়। 

বিষাক্ত কঠিন ধাতুর মিশ্রন – সিসা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি বিষাক্ত ধাতু আবর্জনার মাধ্যমে মাটিতে সংক্রামিত হয়। এছাড়া বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, কাগজ, গ্লাস, স্টোরেজ ব্যাটারি, রাসায়নিক সার প্রভৃতি মাটিতে সঞ্চয়ের ফলে বিভিন্ন অজৈব রাসায়নিক ও ধাতু মাটিতে সংক্রমিত হয়। যার ফলে মাটি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। 

খনিজ তেলের মিশ্রন – দুর্ঘটনা ফলে বা কোন ছিদ্রের মাধ্যমে খনিজ তেল ও গ্যাসোলিন ভূ.-পৃষ্ঠের ওপরে বিস্তৃর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, মাটিকে ব্যবহারে অনুপযুক্ত করে তোলে।

মৃত্তিকার গুণগত মানের অবনমনের প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণ গুলি হল 

১] বৃক্ষচ্ছেদন   

২] অতিরিক্ত পশুচারন 

৩] খনিজ উত্তোলন 

৪] মৃত্তিকা ক্ষয় 

৫] অতিরিক্ত জলসেচ

৬] মৃত্তিকাস্থিত অনুজীবের পরিমান হ্রাস 

৭] রাসায়নিক সারের ব্যবহার 

৮] পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের অভাব 

৯] জৈব পদার্থের পরিমান হ্রাস 

১০] অবৈজ্ঞানিক শস্যাবর্তন প্রভৃতি। 

Leave a Comment