জলবায়ুবিদ্যা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর – ভূগোল-অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: জলবায়ুবিদ্যা বলতে প্রাকৃতিক ভূগোলের এমন একটি শাখাকে বুঝানো হয় যেখানে কোন একটি স্থানের কয়েক বছরের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়।
জলবায়ুবিদ্যা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর – ভূগোল-অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. সৌর বিকিরন বা ইনসোলেসন কাকে বলে?
উত্তর – সূর্য থেকে আগত শক্তি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০০,০০০ কিমি বা ১৮৬,০০০ মাইল বেগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়, একেই সৌর বিকিরন বা ইনসোলেসন বলে ।সূর্য থেকে পৃথিবী পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিমি পথ অতিক্রম করতে সময় নেয় ৮মিনিট ১৫ সেকেন্ড।
২. সৌরঝর (Solar Wind) বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সূর্য থেকে ঘন্টায় ১.৫×১০৬ কিমি বেগে উত্তপ্ত গ্যাস বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে, একেই সৌরঝড় বলে।
৩. সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) বলতে কী বোঝ?
উত্তর পৃথিবী পৃষ্টের প্রায় ৪৮০ কিমি উপরে থার্মোস্ফিয়ারে সূর্য থেকে নির্গত তাপের যে অংশ এসে পৌঁছায়, তার গড় মান কে সৌর ধ্রুবক বলে। সৌর ধ্রুবকের পরিমান ১৩৬৭ ওয়াট/ বর্গমিটার বা ১.৯৬৮ ক্যালরি/বর্গসেমি/ মিনিট।
৪.দৃশ্যমান সৌর বিকিরন (Visible Rays) সৌরপৃষ্টের কোন অংশ থেকে নির্গত হয়?
উত্তর – সৌরপৃষ্টের শীতল বহিভাগ থেকে যা ফটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
৫. উষ্ণতা ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে কীরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান?
উত্তর – উষ্ণতা ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে বৈপরীত্য সম্পর্ক বিদ্যমান অর্থাৎ যে বস্তু যত বেশি উষ্ণ
সে বস্তু তত ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে বিকিরন করে। যেমন – সূর্য ।
৬. কোন বস্তুর তাপ গ্রহন করার ক্ষমতা বেশি?
উত্তর – কালো রঙের বস্তুর
৭. সূর্য থেকে বিকিরিত তাপ কীরূপ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে পৃথিবী পৃষ্টে এসে পৌঁছায়?
উত্তর – ক্ষুদ্র তরঙ্গ (০.২ – ০.৪µm) রূপে
৮. সৌরবিকিরনে কোন কোন তরঙ্গ রশ্মির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর – মোট সৌর বিকিরনের ৮ % অতিবেগুনি রশ্মি (০.২ – ০.৪µm), ৫০ % দৃশ্যমান
রশ্মি (0.4 -0.7 µm) এবং ৪২ % ইনফ্রা রেড বা লাল রশ্মি (> 0.7µm)।
৯. পৃথিবী পৃষ্টের গড় তাপমাত্রা কত?
উত্তর – ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
১০. সৌরবিন্দু বা Sunspot কী?
উত্তর – সৌর পৃষ্টের গায়ে যে কালো গায়গা গুলি দেখা যায়, তাকে Sunspot বলে। এগুলি সৌর
পৃষ্টের শীতল অংশ। প্রতি ১১ বছর অন্তর Sunspot দেখা যায়।
১১. রেলি বিচ্ছুরন (Rayleigh Scattering) কখন দেখা যায়?
উত্তর – যখন বাতাসে ভাসমান ধুলিকনার আয়তন বিকিরিত তরঙ্গের দৈর্ঘ্য অপেক্ষা কম হয়,
তখন যে বিচ্ছুরন ঘটে, তাকে রেলি বিচ্ছুরন বলে। এর ফলে দিনে আকাশের রং নীল হয়।
১২. মাই বিচ্ছুরন (Mie Scattering) কখন হয় ?
উত্তর – যখন বিকিরনের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও ধুলিকনার আয়তন সমান হয়, তখন এই ধরণের বিচ্ছুরন
হয়ে থাকে।
১৩. গ্লোবাল ডিমিং (Global Dimming) কী?
উত্তর – ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীব্যাপী যে সৌর বিকিরন গৃহীত হয়, তার পরিমান ৪ % কমে যায়। এই ঘটনা টি গ্লোবাল ডিমিং নামে পরিচিত। এর প্রধান কারণ বাতাসে এরোসলের দ্বারা সৌর বিকিরন শোষনের পরিমান বৃদ্ধি।
১৪. অ্যালবেডো কাকে বলে?
উত্তর – সূর্য থেকে আগত শক্তির বেশ কিছু অংশ পৃথিবী পৃষ্টকে উত্তপ্ত না করেই মহাশূন্যে ফিরে
যায়, একে অ্যালবেডো বলে। পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিমান ৩৫%। নিম্নস্তরের ঘন কালো মেঘ, বালি, তুষার প্রভৃতি থেকে অ্যালবেডো বেশি হয়।
১৫. কোন রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোটো?
উত্তর – গামা রশ্মি ও এক্স রশ্মির
১৬. দৈশ্যমান রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর – ০.৪ মাইক্রো মিটার থেকে ০.৭ মাইক্রোমিটার
১৭. বায়ুমন্ডলীয় বাতায়ন বা Atmospheric Window কী?
উত্তর – পৃথিবী পৃষ্ট থেকে বিকিরিত দীর্ঘতরঙ্গের কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলের অন্তর্গত ছিদ্রের
মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়, একেই বায়ুমন্ডলীয় বাতায়ন বলে। সাধারণত ৮ থেকে ১৩ মাইক্রো
মিটারের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মি গুলি বেরিয়ে পরে।
১৮. কোথায় দৈনিক উষ্ণতার প্রসার সবচেয়ে বেশি?
উত্তর – মরু অঞ্চলে
১৯. তাপীয় নিরক্ষরেখার অবস্থান কোথায়?
উত্তর – ৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ বরাবর অবস্থিত।
২০. দৃশ্যমান রশ্মি গুলির মধ্যে কোন রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং কোন রশ্মির তরঙ্গ
দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি?
উত্তর – বেগুনির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং লালের রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি।
২১. সৌর বিকিরন পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর – সূর্য থেকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে আগত সৌর বিকিরন ও পৃথিবী থেকে দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে প্রত্যাবর্তন কারী পার্থিব বিকিরন পরিমাপের জন্য রেডিও মিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সৌর বিকিরন পরিমাপক রেডিও মিটার যন্ত্র আবার বিভিন্ন প্রকারের হয় । যথা –
১. Pyranometer – এই রেডিও মিটার যন্ত্রটি কেবল মাত্র ক্ষুদ্র তরঙ্গ পরিমাপ করে। অর্থাৎ
একটি নির্দিষ্ট পরিমান অঞ্চলে কী পরিমান সৌর শক্তি এসে পৌঁছায় তা এই রেডিওমিটার যন্ত্রের
সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।
২. Pyrgeometer – এটি কেবল দীর্ঘ তরঙ্গ পরিমাপ করতে পারে। অর্থাৎ একক আয়তন বিশিষ্ট
অঞ্চল থেকে কী পরিমান পার্থিব বিকিরন হয়ে থাকে তা পরিমাপ করতে এই রেডিওমিটার যন্ত্র
ব্যবহৃত হয়।।
৩. Pyrradiometer – এই যন্ত্রটি সব ধরণের তরঙ্গ পরিমাপ করতে সক্ষম। পৃথিবীর দিকে
আগত ও পৃথিবী থেকে বিকিরিত ক্ষুদ্র ও দীর্ঘ উভয় প্রকার তরঙ্গ এই যন্ত্র পরিমাপ করে।