স্বাভাবিক চ্যুতি ও বিপরীত চ্যুতির মধ্যে পার্থক্য লেখ:
স্বাভাবিক চ্যুতি ও বিপরীত চ্যুতির মধ্যে পার্থক্যগুলি হলো-
১)সংজ্ঞা-শিলাস্তরে টানের ফলে অধোস্তূপের তুলনায় ঊর্ধ্বস্তূপ চ্যুতিতল বরাবর নিচের দিকে অবনমিত হলে যে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক চ্যুতি বলে। অন্যদিকে, ভূ-আলোড়নের সময় সংনমন বল তীব্র হলে অধোস্তূপের তুলনায় ঊর্ধ্বস্তূপ চ্যুতিতল বরাবর উপরের দিকে উত্থিত হয়ে যে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে বিপরীত চ্যুতি বলে।
২)নামকরণ-স্বাভাবিক চ্যুতির ক্ষেত্রে নতি ও ভূমি ভাগের অবনমনের দিকটি একই পাশে অবস্থান করে বলে এই চ্যুতির এই ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতির ক্ষেত্রে চ্যুতির যে অংশ ভূমিভাগের ঊর্ধ্বে উঠে আসে, চ্যুতিতল সেদিকের নিচের অংশ অবস্থান করলেও ভূমির ঢাল বিপরীত দিকে হেলে যায় বলে এই চ্যুতির এই ধরনের নামকরণ করা হয়েছে।
৩)সৃষ্টি-শিলাস্তরে টানের ফলে স্বাভাবিক চ্যুতি সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, শিলাস্তরে পার্শ্বচাপ বা সংনমন বলের প্রভাবে বিপরীত চ্যুতি সৃষ্টি হয়।
৪)নতির পরিমাণ-স্বাভাবিক চ্যুতিতে নতির পরিমাণ প্রায় 70° হয়। বিপরীত চ্যুতিতে নতির পরিমাণ প্রায় 30° হয়।
৫)চ্যুতিতলের অবস্থান-স্বাভাবিক চ্যুতিতে চ্যুতিতল সচরাচর 45°-90° মধ্যে আনত থাকে। অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতিতে চ্যুতিতল সচরাচর 0°-45 মধ্যে আনত থাকে।
৬)ঝুলন্ত প্রাচীরের অবস্থান-স্বাভাবিক চ্যুতিতে ঝুলন্ত প্রাচীর চ্যুতিতল বরাবর নীচে বসে যায়। অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতিতে ঝুলন্ত প্রাচীর চ্যুতিতল বরাবর উপরে উঠে যায়।
৭)ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল-স্বাভাবিক চ্যুতির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়।অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হ্রাস পায়।
৮)ভূমিধ্বসের সম্ভবনা-স্বাভাবিক চ্যুতি গঠিত হওয়ার আগে বা পরে ভূমিরূপের অবস্থা একই রকম থাকে বলে ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা খুব কম। অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় ঝুলন্ত প্রাচীর নিজের ভার বহন করতে না পেরে ধ্বসে পড়ে।
৯)ভূমিরূপ-স্বাভাবিক চ্যুতির প্রভাবে খাড়া ঢাল যুক্ত চ্যুতি ভৃগুতট সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, বিপরীত চ্যুতির প্রভাবে ঝুলন্ত ভৃগু সৃষ্টি হয়।
১০)উদাহরণ-পশ্চিম হিমালয়ের মেইন বাউন্ডারি চ্যুতি হলো স্বাভাবিক চ্যুতির উদাহরণ। অন্যদিকে, পাঁচমারি পর্বতের জটাশঙ্করে বিপরীত চ্যুতি দেখা যায়।