উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য: উত্তর ভারতের নদীগুলি হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে, এদের হিমালায়ান নদী এবং দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি দাক্ষিণাত্যের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে সেগুলিকে উপ দ্বীপীয় নদী বলে। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের এই নদী গুলির মধ্যে উৎপত্তি, বিস্তার, জলপ্রবাহ, গতিবেগ ইত্যাদি বিষয়ে নানা পার্থক্য দেখা যায়। সেগুলি নিচে বিস্তারিত দেখানো হল
1) উৎপত্তি
উত্তর ভারতের নদী গুলি অপেক্ষাকৃত নবীন।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলি অপেক্ষাকৃত প্রাচীন।
2) দৈর্ঘ্য
উত্তর ভারতের নদী গুলির দৈর্ঘ্য খুব বেশি।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলির দৈর্ঘ্য খুব কম হয়।
3) জলপ্রবাহ
উত্তর ভারতের নদী গুলি বৃষ্টি ও হিমবাহ উভয়ের জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জলপ্রবাহ থাকে।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলি কেবল বৃষ্টির জলে পুষ্ট বলে বৃহৎ নদী ব্যতিত ছোট নদীতে জল থাকে না।
4) গতিবেগ
পার্বত্য অংশে উত্তর ভারতের নদী গুলি তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন ও সমভূমিতে মৃদু বেগ সম্পন্ন হয়।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলি র উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত গতিবেগ প্রায় সব জায়গায় সমান হয়।
5) আদর্শ নদী
উত্তর ভারতের নদী গুলির উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতি সুস্পষ্ট বলে, এগুলি এক একটি আদর্শ নদী।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলিকে আদর্শ নদী বলা যায় না।
6) নদী অববাহিকা
উত্তর ভারতের নদী গুলির অববাহিকা অঞ্চল বিশাল হয়।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলির অববাহিকা খুব একটা বড়ো হয় না।
7) প্রবাহ দিক
উত্তর ভারতের বেশির ভাগ নদী হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে।
দক্ষিণ ভারতের বেশির ভাগ নদী পূর্ব বাহী।
8) জলবিদ্যুৎ
পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া উত্তর ভারতের নদী গুলিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।
দক্ষিণ ভারতের নদী গুলি মালভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে পক্ষে আদর্শ।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য
বিষয় | উত্তর ভারতের নদ – নদী | দক্ষিণ ভারতের নদ – নদী |
১. সংজ্ঞা | উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভারতের মধ্যভাগের উচ্চভূমি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিমালয় পর্বত , কারাকোরাম পর্বতসহ অন্যান্য উৎস থেকে অসংখ্য নদ – নদী উৎপত্তি লাভ করে প্রবাহিত হয়েছে । এরা উত্তর ভারতের নদ – নদী নামে পরিচিত । | ভারতের মধ্যভাগের উচ্চভূমি অঞ্চল থেকে শুরু করে সমগ্র দক্ষিণ ভারতব্যপী বিভিন্ন উৎস থেকে অসংখ্য নদ – নদী উৎপত্তি লাভ করে প্রবাহিত হয়েছে । এরা দক্ষিণ ভারতের নদ – নদী নামে পরিচিত । |
২. উৎস | এগুলির উৎস মূলত হিমালয় পর্বত , কারাকোরাম পর্বত । | এগুলির উৎস মূলত মধ্যভাগের উচ্চভূমি , পশ্চিমঘাট পর্বত । |
৩. বয়স | এরা বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন | এরা বয়সে প্রাচীন |
৪. গতিবেগ | এদের গতিবেগ উচ্চগতিতে তীব্র কিন্তু মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে কম । | এরা খরস্রোতা হওয়ায় সমগ্র গতিপথ জুড়েই গতিবেগ বেশী । |
৫. অববাহিকার আয়তন | এদের অববাহিকার আয়তন বেশী । | এদের অববাহিকার আয়তন কম । |
৬. উপনদীর সংখ্যা | উত্তর ভারতের নদ – নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা বেশী । | দক্ষিণ ভারতের নদ – নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম । |
৭. দৈর্ঘ্য | এদের দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশী । | এদের দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম । |
৮. গতিপথের স্পষ্টতা | উচ্চগতি , মধ্যগতি ও নিম্নগতি – এই তিন প্রকার গতিই এদের সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয় । | গতিপথের পর্যায়গুলি অস্পষ্ট প্রকৃতির । |
৯. ব – দ্বীপের উপস্থিতি | এদের মোহনায় ব – দ্বীপের উপস্থিতি দেখা যায় । | এদের মোহনায় ব – দ্বীপের উপস্থিতি দেখা যায় না বললেই চলে । কোথাও তা গড়ে উঠলেও ক্ষুদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে । |
১০. কার্য ক্ষমতা | ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্য – উভয় ক্ষেত্রেই এদের কার্য ক্ষমতা যথেষ্ট বেশী । | ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্য – উভয় ক্ষেত্রেই এদের কার্য ক্ষমতা যথেষ্ট বেশী । |
১১. বিদ্যুৎ উৎপাদন | এই নদ – নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে অনুপযুক্ত । শুধু নদীর উচ্চপ্রবাহেই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবেশ পাওয়া যায় । | এই নদ – নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে উপযুক্ত । |
১২. বন্যার প্রকোপ | নদীবক্ষ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে থাকায় বর্ষাকালে দুকূল ছাপিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বন্যা দেখা যায় । | নদীবক্ষ পলিমুক্ত থাকায় বন্যার প্রকোপ অপেক্ষাকৃত অনেক কম । |
১৩. মিয়েন্ডার ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ | এই অঞ্চলের নদ – নদীগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মিয়েন্ডার ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের উপস্থিতি দেখা যায় । | এই অঞ্চলের নদ – নদীগুলিতে মিয়েন্ডার ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের উপস্থিতি দেখা যায় না বললেই চলে । |
১৪. জলের পরিমাণ | এইসকল নদ – নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীতে জলের পরিমাণ অনেক বেশী । | এইসকল নদ – নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীতে জলের পরিমাণ অনেক বেশী । |
১৫. জলসেচের সুবিধা | নদীগুলিতে সারাবছর জলের যোগান থাকায় জলসেচের সুবিধা হয় । | বাঁধ দিয়ে জল ধরে না রাখলে নদীগুলি থেকে জলসেচ অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে । |
১৬. ভূমিভাগের প্রকৃতি | নদীগুলি কোমল শিলাগঠিত ভূমিভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । | নদীগুলি কঠিন শিলাগঠিত ভূমিভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । |
১৭. ঢালের প্রকৃতি | এইসকল নদ – নদীগুলির নদীখাতের ঢাল সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । | এইসকল নদ – নদীগুলির নদীখাতের ঢাল সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় । |
১৮. নাব্যতা | এইসব নদ – নদীগুলির নাব্যতা বেশী । | এইসকল নদ – নদীগুলির নাব্যতা কম । |
১৯. মৃত্তিকা স্তরের গভীরতা | নদ – নদীগুলির অববাহিকা অঞ্চলে মৃত্তিকা স্তরের গভীরতা বেশী । | এইসকল নদ – নদীগুলির অববাহিকা অঞ্চলে মৃত্তিকা স্তরের গভীরতা কম । |
২০. পলির পরিমাণ | এইসকল নদ – নদীগুলিতে পরিবাহিত পলির পরিমাণ অনেক বেশী । | এইসকল নদ – নদীগুলিতে পরিবাহিত পলির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম । |
২১. নিত্যবহতা | বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় এইসকল নদ – নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে , অর্থাৎ এগুলি নিত্যবহ । | বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় এইসকল নদ – নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না , অর্থাৎ এগুলি অনিত্যবহ । |
২২. তীরবর্তী শহর | নদ – নদীগুলির তীরবর্তী বহু শহর – নগর গড়ে উঠেছে । | নদ – নদীগুলির তীরবর্তী শহর – নগরের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম । |