বিভিন্ন প্রকারের কৃষিকাজের সংক্ষিপ্ত আলোচনা

Rate this post

বিভিন্ন প্রকারের কৃষিকাজের সংক্ষিপ্ত আলোচনা: এখানে বিভিন্ন ধরণের কৃষি – আর্দ্র কৃষি, শুষ্ক কৃষি, সেচন কৃষি, খারিফ কৃষি, রবি কৃষি, স্থানান্তর কৃষি কাকে বলে এবং কৃষি সম্পর্কীত কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হল

ট্রাক ফার্মিং কাকে বলে ?

বাজার বাগান কৃষিকে ট্রাক ফার্মিং বলা হয়। এটি একধরনের প্রগাঢ় কৃষি ব্যবস্থা । যেখানে নিকটবর্তী শহরকে কেন্দ্র করে শহরবাসীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শাকসবজি, ফল, ফুল ইত্যাদির চাষ হয়। শহরের অভ্যন্তরে এই সব পন্য কে সহজেই সড়ক পথে ট্রাক পরিবহন মারফৎ দ্রুত পাঠানো হয়। তাই একে ট্রাক ফার্মিং বলা হয়।

 উদাহরণ – কলকাতা শহরের সংলগ্ন ধাপার মাঠ থেকে শাকসবজি ট্রাক, ম্যাটাডর, ভ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি বৈঠক খানার বাজারে পৌঁছায়। 

ইন্টার কালচার কাকে বলে ?

বহুফসলি কৃষি ব্যবস্থায় একই জমিতে একই সঙ্গে সারিবদ্ধ ভাবে একাধিক ফসল চাষ করা হলে তাকে ইন্টার কালচার বা আন্তঃকৃষি বলে। এই কৃষি ব্যবস্থায় বিভিন্ন জাতের ফসল যেগুলি বিভিন্ন সময় পরিপক্ক হয় সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন সারিতে লাগানো হয়। এক এক সময় এক একটি ফসল পাকে, তাই সারাবছর ধরে ফসল ফলানো ও তোলা চলতে থাকে, এই ধরণের কৃষি ব্যবস্থায়।  যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমান কম সেখানেই এই পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়। 

আর্দ্র কৃষি কাকে বলে ?

পৃথিবীর যে সব অঞ্চলে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়, সে সব অঞ্চলে জলসেচ ছাড়া কেবল বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে কৃষিকাজ করা হয়ে থাকে, তাকে আর্দ্র কৃষি বলে। 
ধান আর্দ্র কৃষির প্রধান অন্যতম প্রধান ফসল। উষ্ণ আর্দ্র নিরক্ষীয় এবং মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের দেশ গুলিতে এই কৃষিকাজ করা হয়ে থাকে। 

শুষ্ক কৃষি কাকে বলে ?

বছরে ৫০ সেমির কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে যেখানে জলসেচের সুবিধা নেই, সেই সব অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে খরা সহ্যকারী ফসল উৎপাদন করা হয়, তাকে শুষ্ক কৃষি বলে। 

শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল মিলেট, ডাল ইত্যাদি। এই ধরণের কৃষি ব্যবস্থা মূলত উষ্ণ, শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল গুলিতে এই কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন দেখা যায়। 

সেচন কৃষি কাকে বলে ?

পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে প্রাকৃতিক জলের জোগান অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় কম ও অনিশ্চিত সে সমস্ত অঞ্চলে জলসেচের সাহায্যে কৃষিকাজ করা সম্ভব হলে তাকে সেচন কৃষি বলে। 

বিভিন্ন ধরণের নদী অববাহিকা অঞ্চলে সেচন কৃষি দেখা যায়। যেমন – মিশরের কার্পাস চাষ সেচন কৃষির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

খারিফ কৃষি কাকে বলে ?

বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যে কৃষিকাজ করা হয় অর্থাৎ যে সব শস্যের চাষ বর্ষাকালে করা হয় ও ফসল তোলা হয় শীতের শুরুতে তাকে খারিফ কৃষি বলে। 
ভারত ও দক্ষিন – পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে মৌসুমি বায়ুর আগমন কালে খারিফ ফসল চাষ করা হয়। যেমন – ধান, আখ প্রভৃতি। 

রবি কৃষি কাকে বলে ?

শীতকালে শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়ায় ফসলের চাষ করাকে বলা হয়, রবি কৃষি। সাধারণত ভারতে নভেম্বর মাসে রবিচাষ শুরু হয় এবং ফসল কাঁটা হয় বসন্তকালে। গম, বোরো ধান, সর্ষে, বার্লি, ছোলা প্রভৃতি রবি শস্যের অন্যতম প্রধান ফসল। ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের দেশ গুলিতে রবি চাষ দেখা যায়। 

ব্যাপক কৃষি রপ্তানী নির্ভর হয় কেন? ব্যাখ্যা কর

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উন্নত দেশ গুলিতে ব্যাপক কৃষি প্রচলিত। যেখানে বৃহৎ আকৃতির কৃষিজোতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি মাত্র খাদ্যশস্য হিসাবে প্রচুর পরিমানে গম চাষ করা হয়ে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে এই কৃষিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমান হয় খুব বেশি। আবার এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ গুলিতে জনসংখ্যা কম হওয়ায় খাদ্যশস্যের চাহিদা কম, তাই উৎপন্ন ফসলের পরিমান জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি হয় অর্থাৎ প্রচুর পরিমানে ফসল উদবৃত্ত থাকে। যা আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। তাই ব্যাপক কৃষি রপ্তানী নির্ভর হয়ে থাকে। 

স্থানান্তর কৃষি কাকে বলে ?

সাধারণত বনভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম অধিবাসীগন কোণ অঞ্চলের জঙ্গল পুড়িয়ে, জমি পরিষ্কার করে সেই জমির স্বাভাবিক উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে পরপর দুই তিন বছর ফসল চাষ করার পর সেই স্থান ত্যাগ করে অপর স্থানে একই পদ্ধতিতে জঙ্গল পুড়িয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকে। দুই তিন বছর অন্তর অন্তর চাষের জমিকে পরিবর্তন করা হয় বলে, একে স্থানান্তর কৃষি বলে। 

এই ধরণের কৃষিকাজ আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিন আমেরিকার অরণ্য ও পার্বত্য অঞ্চলে এখনও প্রচলিত আছে।  

নিবিড় কৃষির ক্ষেত্রে মাথাপিছু উৎপাদন কম হয় কেন ?

সাধারণত মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের দেশ গুলিতে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমান অনেক কম হওয়ায় প্রচুর শ্রম ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যশস্য হিসাবে ধান চাষ করা হয়ে থাকে তাকে প্রগাঢ় বা নিবিড় কৃষি বলে। 

নিবিড় কৃষিতে অত্যন্ত নিবিড় পদ্ধতিতে সার, উচ্চ ফলনশীল বীজ, জলসেচ প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে চাষ করা হয় বলে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান অনেক বেশি কিন্তু এই নিবিড় কৃষি অঞ্চলের দেশ গুলিতে জনসংখ্যার পরিমান অনেক বেশি হওয়ায় প্রচুর ফসল উৎপাদন হলেও মাথাপিছু বা প্রতি ব্যক্তি পিছু উৎপন্ন ফসলের পরিমান হয় খুব কম। আবার এই কৃষিতে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রচুর রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং জলসেচ করা হয় বলে জমি লবনাক্ত হয়ে পড়ছে, মাটির অম্লতা ও ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  ফলে উৎপাদনের পরিমান হ্রাস পাচ্ছে । যার ফল স্বরূপ স্বাভাবিক ভাবেই মাথাপিছু উৎপাদন কমে যাচ্ছে। 

বানিজ্যিক কৃষি কাকে বলে? 

বিক্রি বা বানিজ্যের উদ্দেশ্যে যে কৃষিকাজ করা হয়, তাকে বানিজ্যিক কৃষি বলে। প্রকৃতপক্ষে প্রচুর কৃষিজমি, মূলধন, যন্ত্রপাতির ব্যাপক ব্যবহার এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তির সাহায্যে যে রপ্তানি ভিত্তিক ব্যাপক কৃষির উদ্ভব হয়েছে, তাকে বানিজ্যিক কৃষি বলা হয়। 

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউক্রেন প্রভৃতি দেশে এই কৃষি ব্যবস্থা দেখা যায়। নিরক্ষীয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে বানিজ্যের জন্য কফি, ইক্ষু, চা, রাবার, কোকো প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করা হয়।

নিবিড় কৃষি কাকে বলে ?

পৃথিবীর যে সব দেশে লোকসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমান কম সেই সব দেশে অধিক শ্রম ও মূলধন বিনিয়োগ করে সর্বাধিক ফসল উৎপাদনের যে কৌশল গ্রহন করা হয়, তাকে নিবিড় কৃষি বলে। নিবিড় কৃষি প্রকৃতপক্ষে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি। এই কৃষির মূল উদ্দেশ্য হল জীবন ধারনের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করা, রপ্তানী বা বানিজ্য করা নয়।

দক্ষিন, দক্ষিন – পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলিতে নিবিড় কৃষি অধিক পরিলক্ষিত হয়।

Leave a Comment