কৃষিকাজ কী? ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?: ভারতে কৃষির ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রায় দশ হাজার বছর আগে এই ভূখণ্ডে কৃষিকাজের সূচনা হয়। বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের জিডিপি-তে কৃষি এবং বনবিদ্যা, কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদি কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলির অবদান ১৬.৬ শতাংশ। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত। জিডিপি-তে কৃষিক্ষেত্রের অবদান বর্তমানে অনেকটা কমলেও, এই ক্ষেত্র আজও ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী।
দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারকেল, চা,পাট, আদা, হরিদ্রা ও কালো মরিচ,আম, লেবু,পেঁপে,ফুলকপি, উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। গবাদি পশুর সংখ্যার হিসেবেও ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম (২৮১,০০০,০০০)। গম, ধান, আখ, চিনাবাদাম,পেঁয়াজ ও অন্তর্দেশীয় মৎস্য উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। তামাক উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়। কলা ও সাপোটা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম। ভারতে ধান ও গম উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য – মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অতি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন। এই ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলি সহজ ভাবে তুলে ধরার চেষ্ঠা করা হলো।
ভারত একটি কৃষি নির্ভর দেশ। ভারতের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে অর্থাৎ তারা সরাসরি কৃষিকাজের সাথে যুক্ত থাকে। ভারতের অর্থনীতিতেও কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। এই ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলি নীচে আলোচনা করা হল –
১. অত্যাধিক প্রকৃতি নির্ভর – ভারতের কৃষি ব্যবস্থা অত্যাধিক মাত্রায় প্রকৃতি নির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা ভারতে কৃষিজ উৎপাদন কে প্রভাবিত করে। যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত হয় সে বছর বন্যা হয়ে কৃষিজ ফসল নষ্ট করে দেয় এবং যে বছর বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হয় সে বছর খরা হয়ে কৃষিকাজ কে ব্যাহত করে দেয়।
২. শ্রম নিবিড় কৃষি – ভারতের জনসংখ্যার পরিমান প্রচুর হওয়ায় জমির উপর জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই ভারতে একই জমিতে প্রচুর শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে সারা বছর ধরে ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে । অতি সহজেই কৃষির প্রয়োজনীয় শ্রম পাওয়া যায় বলে কৃষি কাজে তেমন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয় না ।
৩. জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষি – ভারতের প্রচুর জনসংখ্যা থাকায় এখানে খাদ্য শস্যের চাহিদাই বেশি । তাই কৃষি জমিতে মানুষের খাদ্যের প্রয়োজনীয় ফসল ধান, গম প্রভৃতি অত্যন্ত নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। তাই একে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করার মতো ফসল প্রায় থাকে না বললেই চলে।
৪. বহুফসল কৃষি ব্যবস্থা – ভারতীয় কৃষি একটি বহুফসলী কৃষি ব্যবস্থা। ভারতীয় কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে একই বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে।
৫. আঞ্চলিক বিশেষীকরণ – ভারত একটি বিশাল বড় দেশ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন প্রকৃতির জলবায়ুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বলে বিভিন্ন ফসলের আঞ্চলিক বিশেষীকরণ দেখা যায়। যেমন – পূর্ব ভারতে পাট, পশ্চিম ও মধ্যভারতে গম ও ধান, দক্ষিন ভারতের বিভিন্ন স্থানের কোথাও রাবার, কোথাও কফি, কোথাও কার্পাস, কোথাও আবার মশলা চাষের প্রাধান্য দেখা যায়।
৬. শস্যাবর্তন প্রথার প্রবর্তন – ভারতে নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে জমির উর্বতা দ্রুত নষ্ট হয়। এই উর্বরতা পুনরুদ্ধারের জন্য শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রচলন ঘটেছে। যেমন – ধান চাষের পর ডাল, তারপর গম।
৭. প্রচ্ছন্ন বা ছদ্ম বেকারত্ব – ভারতের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ছদ্ম বেকারত্ব। ভারতে কৃষি তে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ অনেক কম। তাই কোণ কোণ বছর বা কোণ কোণ ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হলে কৃষিকাজ করা সম্ভব হয় না। তখন কৃষি কাজের সাথে নিযুক্ত অনেকে কাজ হারিয়ে ছদ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি হয়।
৮. মাথা পিছু উৎপাদনের হার কম – ভারতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান বেশি হলেও অধিক জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমান অনেক কম হয়।
৯. ক্ষুদ্র ও ভাগচাষির প্রাধান্য – ভারতীয় কৃষিতে ক্ষুদ্র ও ভাগচাষীর সংখ্যা অনেক বেশি। বেশিরভাগ কৃষক খুব অল্প পরিমান জমির মালিক আবার অনেকে অন্যের জমিতে কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।