সম্পদ সৃষ্টির উপাদানগুলি আলোচনা করো: ভূগোলে সম্পদ বলতে কোন বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় না, কোন বস্তু বা পদার্থের মধ্যে যে কার্যকারিতা ও উপযোগিতা থাকে, তাকে সম্পদ বলে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানগুলি পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকেই প্রকৃতিতে মজুত থাকলেও মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোন বস্তু সম্পদে পরিণত হয় না। সম্পদ যেহেতু মানুষের চাহিদা পূরণ করে,তাই মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সম্পদ সৃষ্টি করে নেয়। অবশ্য সূর্যকিরণ, মৃত্তিকা, বায়ুপ্রবাহ, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি হলো প্রকৃতির দান। মানুষ এগুলি সৃষ্টি করেনি। তথাপি অধিকাংশ সম্পদই মানুষের প্রচেষ্টায় জ্ঞান, বুদ্ধি ও শ্রমের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়।
সম্পদ সৃষ্টির উপাদান
প্রধানত তিনটি উপাদানের অহরহ ঘাত-প্রতিঘাতে সম্পদ সৃষ্টি হয়। সেগুলি হল-
১)প্রকৃতি: মানুষের কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া যা কিছু স্বাভাবিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলি প্রকৃতির অন্তর্গত। বিভিন্ন বস্তু বা পদার্থের অফুরন্ত ভান্ডার হলো এই প্রকৃতি। প্রকৃতির দানে কৃপণতা থাকলে সম্পদ সৃষ্টি হতে পারে না। কারণ অধিকাংশ সম্পদ প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ উপাদান হিসেবে প্রকৃতিতে অবস্থান করে। এরপর মানুষের প্রচেষ্টায় ও সংস্কৃতির প্রয়োগে সেগুলি সম্পদে পরিণত হয়।
২)মানুষ: সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।কারণ মানুষের চাহিদা ও অভাব পূরণ করতে না পারলে যেমন কোন বস্তুকে সম্পদ বলা যায় না, তেমনি আবার মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো বস্তুই সম্পদে পরিণত হতে পারে না। মানুষ আপন শ্রম ও বুদ্ধিবলে প্রাকৃতিক উপকরণগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজের অভাব ও চাহিদা পূরণ করে নেয়।এইভাবে সম্পদ সৃষ্টি হয়।
সম্পদ সৃষ্টিতে মানুষের দ্বৈত ভূমিকা আছে। মানুষ একদিকে সম্পদ সৃষ্টি করে এবং অন্যদিকে নিজেই তা ভোগ করে।তাই অধিকতর সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে মানুষ নিত্যনতুন চাহিদা সৃষ্টি করে তা পূরণ করে নেয়।এভাবে সম্পদের সৃষ্টি ও বিনাশ ঘটে।
৩)সংস্কৃতি: মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বুদ্ধি অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তিবিদ্যা, কলাকৌশল ইত্যাদির সার্থক সমন্বয়কে সংস্কৃতি বলে। প্রকৃতির ভান্ডার থেকে বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে মানুষ তার সংস্কৃতির দ্বারা সম্পদ সৃষ্টি করে নেয়। প্রচুর পরিমাণে নিরপেক্ষ সামগ্রিক যোগান দিয়ে প্রকৃতি সম্পদ সৃষ্টির মূল ভিত্তি রচনা করলেও তাকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে যে বাধা বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তা মানুষ সংস্কৃতির সাহায্যে অতিক্রম করে।
উপরিলিখিত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, প্রকৃতি মানুষ ও সংস্কৃতির সার্থক সমন্বয় ও গতিশীল ঘাত-প্রতিঘাতে সম্পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সম্পদ সৃষ্টির তাগিদ আসে মানুষের চাহিদা থেকে।