মিশ্র কৃষি কাকে বলে? মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য সুবিধা ও অসুবিধা: অনুকূল প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে যে বানিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় একই কৃষি খামারে কৃষি জমি থেকে ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে পশুপালন ও হাঁস, মুরগি প্রতিপালন এবং ফল ও শাক সবজি উৎপাদন করা হয়, তাকে মিশ্র কৃষি বলে।
অবস্থান – পৃথিবীর অধিকাংশ মিশ্রকৃষি অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত।
মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য
শস্যাবর্তন – ফসল উৎপাদনে শস্যাবর্তন পদ্ধতি অবলম্বিত হয়। এই পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে ।
কৃষিজোত – মিশ্রকৃষি অঞ্চলের কৃষি জোত গুলি মাঝারি থেকে বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। কারণ এই কৃষিতে একই কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালন করা হয় বলে বড়ো আকৃতির জমির প্রয়োজন হয়।
ঝুঁকিহীন লাভজনক কৃষি – বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন হওয়ায় বাজারে কোণ না কোণ দ্রব্যের চাহিদা সবসময় থাকে। তাই কৃষকেরা তা বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে।
উদ্বৃত্ত ফসল – এই মিশ্র কৃষি মূলত বাজারে বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের জন্য করা হয় বলে কৃষিজ দ্রব্য ও পশুজাত বিভিন্ন উপাদান প্রচুর পরিমানে উদ্বৃত্ত থাকে।
শ্রম নিবিড় কৃষি – সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষ ও তার সাথে পশুপালনও করা হয় বলে মিশ্র কৃষিতে প্রচুর শ্রম শক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে। সারা বছর ধরে কাজের জোগান থাকে বলে ছদ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি হয় না।
যন্ত্রপাতি – এই কৃষিতে অনেক ছোট বড়ো বিভিন্ন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় এবং এই মিশ্র কৃষি অঞ্চলের শ্রমিকরা শিক্ষিত হওয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে তেমন কোণ অসুবিধা হয় না।
জমির উর্বরতা – এই কৃষিতে শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে এবং জৈব সারের ব্যবহারের মাধ্যমে চাষ করা হয় বলে, জমির উর্বরতা হ্রাস পায় না।
মিশ্র কৃষির সুবিধা
মিশ্র কৃষির সুবিধা গুলি হল-
১) মিশ্র কৃষি ব্যবস্থায় একইসঙ্গে কৃষিকাজ ও পশু পালন করায় কৃষকের আর্থিক ঝুঁকি কম থাকে। কোন কারনে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হলেও কৃষক পশু জাতীয় সামগ্রী বিক্রি করে তার আর্থিক ক্ষতি পূরণ করতে পারে।
২) কৃষকরা তাদের নিজের প্রয়োজনের জন্য খাদ্যশস্য,
শাকসবজি ও দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে।
৩) এই কৃষি ব্যবস্থায় জমির ব্যবহার অনেক বেশি সুষম ও সর্বাঙ্গীণ হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।
৪) এই কৃষি ব্যবস্থায় শস্যাবর্তন পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ ঘটে বলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা বজায় থাকে।
৫) মিশ্র কৃষিতে স্থানীয় চাহিদা পূরণের সাথে সাথে বাণিজ্যের প্রাধান্য থাকে বলে কৃষক বিভিন্ন ফসল থেকে বাজারের বর্ধিত মূল্য গ্রহণ করার সুযোগ পায়। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে কৃষক অনেক বেশি লাভবান হয়।
৬) এই কৃষি ব্যবস্থায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ও পশুপালন একসঙ্গে ঘটায় কৃষক অনেক বেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।
মিশ্র কৃষির অসুবিধা
কৃষির অসুবিধা গুলি হল
১) মিশ্র কৃষির উপযোগী অনুকূল পরিবেশ পৃথিবীর সকল স্থানে পাওয়া যায় না।
২) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা মিশ্র কৃষির সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। অনেক সময় উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে মিশ্র কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না।
৩) মিশ্র কৃষি ব্যবস্থার উৎপাদিত ফসল লাভজনক দামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তাই বাজারে ফসলের দাম কমে গেলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪) মিশ্র কৃষিতে অনেক ক্ষেত্রে কৃষি বিষয়ে সকল কৃষকের জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকায় এই কৃষি ব্যবস্থা সফলতা লাভ করতে পারে না।
৫) মিশ্র কৃষি ব্যবস্থায় কোন একটি ফসল রোগে আক্রান্ত হলে তার দ্রুত অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬) মিশ্র কৃষির সাফল্যের জন্য যে পরিমাণ মূলধন ও কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তা অনেক সময় কৃষকদের মধ্যে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।