গুরু নানক ও শিখ ধর্মের দশজন গুরু – শিখ গুরু

Rate this post

গুরু নানক ও শিখ ধর্মের দশজন গুরু – শিখ গুরু: শিখ ধর্মে গুরু সকল জ্ঞানের আধার হিসেবে বিবেচিত হন। শিখ ধর্মের প্রবক্তা হলেন গুরু নানক দেব, যিনি ছিলেন এই ধর্মের প্রথম গুরু। তার পরে আরো নয় জন মানবরূপী গুরু আবির্ভূত হন। একাদশ এবং অন্তিম গুরু কোন মানব নন। দশম গুরু গোবিন্দ সিংহ পরবর্তী গুরু হিসেবে গুরু গ্রন্থ সাহিব নামক শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থকে একাদশ গুরুর মর্যাদা দান করেন। শিখ ধর্মাবলম্বীরা গুরুদের শিক্ষা অনুসরণ করে থাকেন এবং তারা বিশ্বাসকরে থাকেন যে, এই শিক্ষাগুলিকে মনে রেখে তারা মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হন।

শিখ ধর্ম একেশ্বর বাদী ধর্ম। এক ওমকারের উপাসনায় বা ‘ওয়াহেগুরু’ তেই তাঁরা বিশ্বাসী । নিরাকার ব্রাহ্ম সমাজ ও আর্য সমাজের মতোই তাঁরা মূর্তি পূজাতে বিশ্বাসী নন। শিখ ধর্ম গুরু নানকের হাত ধরেই গড়ে ওঠে এবং ওনার মাধ্যমেই প্রচার ও প্রসার লাভ হয়। আমাদের সনাতন ধর্মে যেমন গুরুদেবকেই ‘পরমব্রহ্ম’ বলা হয়, শিখরাও তাই মনে করেন। বস্তুত শিখ ধর্ম হিন্দু ধর্মের একটি পার্ট। যেমন বৌদ্ধ ধর্ম বা জৈণ ধর্ম। শিখ গণ মনে করেন ওয়াহেগুরু হল সাক্ষাৎ ঈশ্বরের প্রতীক এবং সর্বব্যাপী । তাই ওয়াহে গুরু আরাধ্য। অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির এই ধর্মের স্থাপত্য। এটি নির্মাণ করেন গুরু রাম দাস ,এর জন্য জমি দান করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবর।

গুরু নানক ও শিখ ধর্মের দশজন গুরু

প্রথম শিখগুরু – গুরু নানক

  • জীবনকাল-এপ্রিল ১৫, ১৪৬৯-সেপ্টেম্বর ২২, ১৫৩৯
  • গুরুপদ অর্জন করেন-আগস্ট ২০, ১৫০৭
  • পিতা-মেহেতা কালু ও মাতা-তৃপ্তা
  • তিনিই হলেন শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা
  • জন্ম পাঞ্জাবের তালবন্দী গ্রামে
  • তাঁর সমস্ত বাণী ও কথা “গুরু গ্রন্থসাহেব”-এ বর্ণিত ও সংরক্ষিত আছে

দ্বিতীয় শিখগুরু – অঙ্গদ দেব

  • জীবনকাল- মার্চ ৩১, ১৫০৪-মার্চ ২৯, ১৫৫২
  • গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ৭, ১৫৩৯
  • তিনি ‘গুরুমুখি লিপি’ আবিষ্কার করেন
  • তিনি নানকের বাণী ও উপদেশসমূহ লিপিবদ্ধ করেন

তৃতীয় শিখগুরু  – অমর দাস

  • জীবনকাল-মে ৫, ১৪৭৯-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪
  • গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ২৬, ১৫৫২
  • শিখ ধর্মকে ২২টি ভাগে ভাগ করেন
  • এই ভাগ গুলিকে বলা হয় “মঞ্চিম”
  • লঙ্গর ব্যবস্থা চালু করেন
  • সতী ও পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন

চতুর্থ শিখগুরু – রামদাস

  • জীবনকাল-সেপ্টেম্বর ২৪, ১৫৩৪-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১
  • গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪
  • তার বাবা ছিলেন হরি দাস ও তার মা অনুপ দেবী( দয়া কৌর)
  • লাহোরের চুনা মান্ডিতে জন্ম গ্রহণ করেন
  • গুরু রাম দাসের শ্বশুর ছিলেন গুরু অমর দাস, যিনি ছিলেন দশ গুরুর তৃতীয় গুরু।
  • তিনি হরি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন
  • ১৫৭৭ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে সরোবর খনন করেন

পঞ্চম শিখগুরু – অর্জন দেব

  •  জীবনকাল-এপ্রিল ১৫, ১৫৬৩-মে ৩০, ১৬০৬
  •  গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১
  • পিতা-গুরু রামদাস ও মাতা-ভানি
  • তিনি একাদশ তথা বর্তমান শিখ গুরু গুরু গ্রন্থসাহেবের রচনা সংকলন করেছিলেন
  • তিনি অমৃতসর শহরের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করেন
  • গুরু অর্জন মসন্দ নামে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছিলেন
  • তিনি দসভন্দ প্রথাও চালু করেন
  • দরবার সাহেব স্বর্ণমন্দির নির্মান করেন
  • এই সময় থেকে গুরুপদ বংশানুক্রমিক হয়
  • বিদ্রোহী রাজপুত্র খসরুকে সাহায্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীর অর্জনদেবকে প্রাণদন্ড দেন

ষষ্ঠ শিখগুরু – হরগোবিন্দ

  • জীবনকাল-জুন ১৯, ১৫৯৫-ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৬৪৪
  •  গুরুপদ অর্জন করেন-মে ২৫, ১৬০৬
  • পিতা- গুরু অর্জন দেব মাতা- গঙ্গা
  • মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর দ্বারা তার বাবা, গুরু অর্জনের মৃত্যুদন্ড হবার পর মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি গুরুপদ লাভ করেন
  • “সাচ্চা বাদশাহ” উপাধী গ্রহণ করেছিলেন
  • তিনি অকাত তকত গঠন করেন

সপ্তম শিখগুরু –  হর রায়

  • জীবনকাল-জানুয়ারি ১৬, ১৬৩০-অক্টোবর ৬, ১৬৬১
  • গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ৩, ১৬৪৪
  • শাহজাহানের পুত্র দারার পক্ষ অবলম্বন করায় ঔরঙ্গজেব তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়

অষ্টম শিখগুরু – হরকিষন

  • জীবনকাল-জুলাই ৭, ১৬৫৬-মার্চ ৩০ ১৬৬৪
  • গুরুপদ অর্জন করেন-অক্টোবর ৬, ১৬৬১

নবম শিখগুরু – তেগবাহাদুর

  • জীবনকাল-এপ্রিল ১, ১৬২১-নভেম্বর ১১, ১৬৭৫
  • গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ২০, ১৬৬৫
  • ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করায় ঔরঙ্গজেব তাকে হত্যার আদেশ দেয়

দশম শিখগুরু – গোবিন্দ সিংহ

  • জীবনকাল-ডিসেম্বর ২২, ১৬৬৬-অক্টোবর ৭, ১৭০৮
  • গুরুপদ অর্জন করেন-নভেম্বর ১১, ১৬৭৫
  • তিনি বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন
  • তিনি ছিলেন শিখ জাতির নেতা, যোদ্ধা, কবি ও দার্শনিক
  • “অমৃত পন্থল” পদ্ধতির প্রচলন করেন
  • ১৬৯৯ সালে “খালসা বাহিনী” গঠন করে শিখদের সামরিক জাতিতে পরিনত করেন
  • ১৭০৮ সালের ৭ অক্টোবর তিনি শিখধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবকে শিখদের পরবর্তী এবং চিরস্থায়ী গুরু ঘোষণা করেন।

Leave a Comment