হেনরি ক্যাভেন্ডিশ জীবনী – Henry Cavendish Biography in Bengali

Rate this post

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Henry Cavendish Biography in Bengali. আপনারা যারা হেনরি ক্যাভেন্ডিশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ কে ছিলেন? Who is Henry Cavendish?

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ (10 অক্টোবর 1731 – 24 ফেব্রুয়ারি 1810) একজন ইংরেজ প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষামূলক এবং তাত্ত্বিক রসায়নবিদ এবং পদার্থবিদ ছিলেন। তিনি তার হাইড্রোজেন আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত, যাকে তিনি “দাহ্য বায়ু” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাহ্য বায়ুর ঘনত্ব বর্ণনা করেন, যা দহনের উপর জল তৈরি করে, 1766 সালের একটি কাগজে, অন ফ্যাক্টিশিয়াস এয়ারস। অ্যান্টোইন ল্যাভয়েসিয়ার পরে ক্যাভেন্ডিশের পরীক্ষা পুনরুত্পাদন করেন এবং উপাদানটির নাম দেন।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ জীবনী – Henry Cavendish Biography in Bengali

নামহেনরি ক্যাভেন্ডিশ
জন্ম10 অক্টোবর 1731
পিতালর্ড চার্লস ক্যাভেন্ডিশ
মাতা
জন্মস্থানসার্ডিনিয়া রাজ্য
জাতীয়তাব্রিটিশ
পেশাদার্শনিক এবং বিজ্ঞানী
মৃত্যু24 ফেব্রুয়ারি 1810 (বয়স 78)

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর জন্ম: Henry Cavendish’s Birthday

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ 1731 সালের 10 অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।

হেনরি ক্যাভেন্ডিস একা নিরিবিলি থাকতেই ভালবাসতেন। হাঁটু সমান ঝোলা কোট পরতে পছন্দ করতেন। সাধারণত জন কোলাহলের বাইরে নির্জন রাস্তা ধরে চলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। কেন না মেয়েদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেই তিনি কেমন কুঁকড়ে যেতেন। তার হাঁটাচলা কথাবলা সবই অদ্ভুত ভাবে পাল্টে যেত। লন্ডনের নির্জন রাস্তায় একসময় এই অদ্ভুত স্বভাব ও বেশভূষার মানুষটিকে প্রায়ই চলাফেরা করতে দেখা যেত।

এই আশ্চর্য প্রতিভাধর মানুষটিকে সেদিন যে অনেকেই পাগল বা বিকৃতমস্তিষ্ক বলে মনে করতো তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। ইংলন্ডের অন্যতম ধনবান ব্যক্তি হেনরি ক্যাভেন্ডিসকে তার সময়ে যে যাই বলুক না কেন নিজের অসাধারণ অবদানের জন্য রসায়ন বিজ্ঞানের ইতিহাসে তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। ইংলন্ডের বিখ্যাত ব্যাঙ্ক অব ইংলন্ডের সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক হয়েও অদ্ভূত ছিল ক্যাভেণ্ডিসের জীবনযাত্রার ধরন। দিন যাপন করতেন অতি সাধারণভাবে।

গোটা সপ্তাহে তাঁর নিজের জন্য খরচ হত মাত্র কয়েক পাউন্ড যা অনেক হতদরিদ্র ব্যক্তির চাইতেও কম। অথচ তিনি ছিলেন অগাধ অর্থের মালিক। কিন্তু আশ্চর্য মনীষা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানী হিসেবে দেশে বিদেশে যখন তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বিজ্ঞানপিপাসু মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন, বহু জায়গা থেকে বক্তৃতার আমন্ত্রণ আসত। ক্যাভেণ্ডিস প্রতিটি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতেন, দর্শনার্থীদের সঙ্গেও ভদ্রজনোচিত ব্যবহার করতেন না।

আসলে তিনি লোকসমাগম একেবারেই বরদাস্ত করতে পারতেন না। নারীর মুখ তার কাছে ছিল সবচেয়ে অসহ্য। দৈবাৎ কোন মহিলার মুখোমুখি হয়ে পড়লে আর্তনাদ করে উঠে তিনি পালাতে থাকতেন। তাঁর শরীর কম্পিত হতে থাকত — তিনি অসুস্থ বোধ করতেন। সারাজীবন তাকে এই কারণে অকৃতদার থাকতে হয়েছিল। একজন মানুষের এমন আচরণকে মানসিক বিকৃতি ছাড়া আর কি বলা যায় ? তার সমসাময়িক কালের বিজ্ঞানীরা ও তাকে বুঝবার চেষ্টা করেননি — তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করেছেন। তার নাম দিয়েছিলেন তাঁরা booby Cavendish বা হাবা ক্যাভেণ্ডিস।

তাঁর জীবনীকারও তাকে সরাসরি পাগল বলেই উল্লেখ করেছেন। ক্যাভেণ্ডিসের মত বিকৃত মানসিকতার প্রতিভাধর বিজ্ঞানের ইতিহাসে বড় বেশি দেখা যায় না। অথচ বহুবিধ গুণের সমাবেশ ঘটেছিল তার মধ্যে। তার দর্শনের জ্ঞান ছিল অসাধারণ বিজ্ঞানী হিসেবেও কালের তুলনায় ছিলেন অগ্রবর্তী।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Henry Cavendish’s Parents And Birth Place

ক্যাভেণ্ডিসের জন্ম হয় ১৭৩১ খ্রিঃ ইংলণ্ডের নাইম শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতা লর্ড চার্লস ক্যাভেণ্ডিস ছিলেন ইংলন্ডের এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। মা লেডি অ্যানিও ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। তার এক পূর্বপুরুষ জন ক্যাভেণ্ডিস ছিলেন ইংলন্ডের রাজা ৩ য় এডওয়ার্ডের প্রধান বিচারপতি। আর এক পূর্বপুরুষ টমাস ক্যাভেণ্ডিস সাগরপথে সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন।

সেই সময় এই ঘটনা সমগ্র ইউরোপেই আলোড়ন তুলেছিল। ক্যাভেণ্ডিসের পিতামহ হেনরি ক্যাভেণ্ডিস ছিলেন ডাকসাইটে ডিউক। পিতা এবং মাতা দুই তরফের অভিজাত রক্ত শিরায় নিয়েই জন্মেছিলেন ক্যাভেণ্ডিস ৷ পারিবারিক পরিবেশও ছিল পরিশীলিত। মাত্র দুই বছর বয়সেই মাতৃহারা হন। এর ফলেই দিনে দিনে তিনি সমাজ সংসার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আত্মমগ্নতার আড়ালে সরে গিয়েছিলেন।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর শিক্ষাজীবন: Henry Cavendish’s Educational Life

লোকসঙ্গ একদম সহ্য করতে পারতেন না। অথচ অসাধারণ মেধা ছিল তার। স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। অভিজাত স্কুলের পড়া শেষ করে ভর্তি হয়েছিলেন কেমব্রিজে। সেখানে কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্র ও শিক্ষক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠলেন। ধর্মের ক্লাসে তিনি যোগ দিতেন না। অনেক শাসানিতেও কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত ধর্মের পরীক্ষা বয়কট করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হলেন।

ইংলন্ডের ধর্মব্যাপারের গোঁড়ামির কথা বিবেচনা করে ক্যাভেণ্ডিসের বাবা তাঁকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিলেন। উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থান প্যারিসে ধর্ম নিয়ে অতটা কড়াকড়ি ছিল না। ক্যাভেণ্ডিস সেখানে বিজ্ঞানের আধুনিক পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলেন। বিজ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের পর ক্যাভেণ্ডিসের যুক্তিবাদী মন আরও পরিপক্ক হল। তিনি পুরোপুরি ধর্ম বিরোধী হয়ে উঠলেন। ক্যাভেণ্ডিস তাঁর এই বিজ্ঞানমনস্কতা লাভ করেছিলেন পিতার কাছ থেকে। বাবা চার্লস ক্যাভেণ্ডিস ছিলেন সখের বিজ্ঞানী

এবিষয়ে তিনি নিয়মিত পড়াশুনা করতেন। রয়াল সোসাইটিতে যাতায়াতের সূত্রে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর সঙ্গেও ওঠাবসা ছিল তার। সোসাইটির বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রদর্শনীতেও উৎসাহের সঙ্গে যোগদান করতেন। প্রাসাদে নিজের ব্যবহারের জন্য তিনি একটা ছোটখাট ল্যাবরেটরিও তৈরি করে নিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় ক্যাভেণ্ডিস কাছাকাছি থেকে বাবার কাজকর্ম পরীক্ষা – নিরীক্ষা দেখতেন। বিজ্ঞান বিষয়ের নানান গল্পও শুনতেন। বাবার ল্যাবরেটারি তাঁর নাগালের মধ্যেই ছিল সবসময়।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর কর্ম জীবন: Henry Cavendish’s Work Life

প্যারিস থেকে ফিরে এসে বাবার ল্যাবরেটরিতেই নিজের মত করে গবেষণা আরম্ভ করলেন ক্যাভেণ্ডিস। সেইযুগে রসায়ন বিজ্ঞানে ফ্লোজিস্টন তত্ত্ব নিয়ে খুব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, সমস্ত দহনশীল বস্তুতেই ফ্লেজিস্টন নামক পদার্থ বর্তমান থাকে — তার সাহয্যেই দহনকার্য সম্পন্ন হয়। দাহ্যবস্তুতে ফ্লোজিস্টন থাকা পর্যন্তই দহনকার্য চলে, ফ্লেজিস্টন নিঃশেষ হয়ে গেলে দহনও বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কোন বস্তুতে ফ্লোজিস্টননা থাকে তাহলে সেই বস্তুর দহন সম্ভব হবে না।

বিষয়টি ধারণা এবং প্রচার করলেও বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা দ্বারা কেউ প্রমাণ করতে পারেন নি। ফলে বস্তুর দহন ক্রিয়ার ওপরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর নানা অভিমত ক্রমশই বিষয়টাকে জটিল করে তুলছিল। ক্যাভেণ্ডিস স্থির করলেন, এবিষয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছবার চেষ্টা করবেন। প্রথমে তিনি দাহ্য বস্তুর শরীর থেকে ফ্লোজিস্টনকে আলাদা করবার জন্য পরীক্ষা আরম্ভ করলেন। একদিন সালফিউরিক অ্যাসিডকে দস্তার সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলেন।

তিনি দেখলেন দুটি পদার্থ মিশতেই কিরকম একটা গ্যাস বেরতে আরম্ভ করল। এরপর হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডকেও একইভাবে দস্তার সঙ্গে মেশালেন। প্রতিক্রিয়াও হল একই — ভুরভুর করে গ্যাস বেরিয়ে এল। পরে পরীক্ষা করে ক্যাভেণ্ডিস দেখলেন দুটি পরীক্ষাতে যে গ্যাস উৎপন্ন হল তা একই। সেই গ্যাসকে নিয়ে বসলেন পরীক্ষায়। একটা অদ্ভুত ব্যাপার আবিষ্কার করলেন। সেই গ্যাসকে আগুনের কাছাকাছি নিয়ে এলেই নীল শিখা বিস্তার করে জ্বলে উঠছে।

তিনি লক্ষ করলেন গ্যাসটি বাতাসের চেয়ে হাল্কা। এর পরে তিনি হাইড্রোক্লোরিক ও সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে লোহা ও টিন এর বিক্রিয়া ঘটিয়েও দেখলেন একই গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। এইভাবে দিনের পর দিন পরীক্ষা করার পর ক্যাভেণ্ডিস সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে এই উদ্বায়ী গ্যাসই ফ্লোজিস্টন ! ক্যাভেণ্ডিস এরপর তার ফ্লোজিস্টন গ্যাস আবিষ্কারের বর্ণনা দিয়ে প্রবন্ধ লিখে রয়াল সোসাইটিতে পাঠালেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন বিজ্ঞান সবে চোখ মেলতে শুরু করেছে, সেই সময়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা এখনকার মত এত স্পষ্ট ছিল না।

তাই ক্যাভেণ্ডিসের আবিষ্কার করা ফ্লোজিস্টন গ্যাসটি যে আসলে হাইড্রোজেন গ্যাস তা তারা বুঝতে পারেন নি। অনেক পরে এই ফ্লোজিস্টন গ্যাসকে হাইড্রোজেন গ্যাস বলে চিহ্নিত করেছিলেন ফরাসী রসায়ন বিজ্ঞানী আতেঁ ল্যাভয়সিয়ার। নামটিও তারই দেওয়া। ক্যাভেণ্ডিসের আবিষ্কৃত ফ্লোজিস্টন গ্যাস নিয়ে তৎকালীন সময়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ মানুষও খুবই উৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। এক উৎসাহী একটা কাগজের খোলায় এই গ্যাস পুরে মুখ বন্ধ করে ছেড়ে দিয়েছিল। চোখের পলকে সেই গ্যাসভর্তি খোলাটা সকলকে চমকে দিয়ে দূর আকাশে মিলিয়ে গেল।

ফ্লোজিস্টনকে নিয়ে অদ্ভুত অদ্ভূত কাণ্ড হতে লাগল চারদিকে। একজন কিছুটা গ্যাস মুখে নিয়ে জুলন্ত মোমবাতির ওপরে ছাড়তেই দাউদাউ করে শূন্যে আগুন জ্বলে উঠল। দেখা গেল একটা আগুনের স্রোত যেন লোকটির মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে। ক্যাভেণ্ডিসের উপস্থিতিতেই একবার একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটল। দর্শকঠাসা একটা হলঘরে একজন যাদুকর ফ্লোজিস্টন গ্যাসের নানা কারিকুরি দেখাচ্ছিলেন। একসময় তিনি একটা গ্যাসজারে ফ্লোজিস্টন গ্যাস ঢোকালেন। তারপর যেই একটু বাতাস গ্যাসজারে ঢোকান হল অমনি আকাশফাটান বিস্ফোরণের শব্দ উঠে দর্শকদের আতঙ্কিত করে তুলল।

এই বিস্ফোরণের সময় ক্যাভেণ্ডিস লক্ষ্য করেছিলেন, গ্যাসজারের গায়ে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। এই জল বিন্দুই তাকে ভাবিত করে তুলল। এই জল এল কোথা থেকে এই প্রশ্ন মাথায় নিয়েই তিনি আবার গবেষণায় বসলেন। তিনি একটা কাচের গোলাকে ম্যাজিশিয়ানের মত প্রথমে ফ্লোজিস্টন পরে ফ্লোজিস্টন – হীন বাতাস ঢোকালেন। যথারীতি প্রচন্ড শব্দ হল এবং গোলকের ভেতরের দেয়ালে জলকণাও পাওয়া গেল। ক্যাভেণ্ডিস জিবে ঠেকিয়ে বুঝতে পারলেন, স্বাদহীন বিশুদ্ধ জল ছাড়া আর কিছু নয়।

ওজনের পরীক্ষা নিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। তরলটি জল ছাড়া কিছু নয়। তিনি তার নোটে লিখলেন, ওই ফ্লোজিস্টন (দাহ্য বাতাস) আর বাতাসে যে গ্যাসটির এক পঞ্চমাংশ বর্তমান, দুয়ের সংযোগেই জলকণার সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই জলকণা যে বিশুদ্ধ জল তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। ফ্লোজিস্টন যে একটি মৌল এবং এই মৌলই অন্যান্য মৌলের উৎস স্বরূপ এই সিদ্ধান্তের কথাও ক্যাভেণ্ডিস পরে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন। ফ্লোজিস্টন তথা হাইড্রোজেন গ্যাসের আবিষ্কার রসায়ন বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী ঘটনা।

বিশ্ব বিজ্ঞানের ইতিহাসকে এই একটি আবিষ্কারের দ্বারাই ক্যাভেণ্ডিস নানাভাবে সমৃদ্ধি দান করেছিলেন। এর পরেও বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন ক্যাভেণ্ডিস। তার অবদানগুলিও স্মরণীয়। তার মধ্যে রয়েছে, নাইট্রোজেন গ্যাস আবিষ্কার, পৃথিবীর নির্ভুল ঘনত্ব নির্ণয়। এছাড়াও স্থির তড়িৎ বিজ্ঞান, তাপ ও তড়িৎ নিয়ে তার গবেষণা সম্ভাবনাময় দিগনির্দেশ করেছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ জুড়ে খ্যাতিও লাভ করেছেন ক্যাভেণ্ডিস। কিন্তু তিনি সবসময়েই নিজেকে একান্তে জনসমাজের বাইরেই রেখেছেন।

কেবলমাত্র বিজ্ঞানকে সঙ্গী করে বলা যায় একরকম নির্বাসিতের জীবনই যাপন করেছেন তিনি। পিতার মৃত্যুর পর বিপুল সম্পত্তির অধিকার লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঐশ্বর্য তাঁর জীবনযাত্রাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তার জীবন ছিল সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মত। তিনি আমৃত্যু তিনটি বিষয়কে সভয়ে এড়িয়ে চলতেন। সেগুলো হল — অর্থ, সাফল্য আর লোকসঙ্গ। অথচ তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের পৃথিবীতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী দেশের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। অর্থ – বিত্ত লাভ করেছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে। বিজ্ঞান – চর্চার সূত্রে যশ এসেছিল অযাচিত ভাবে।

আর তারই সূত্রে বিপুলভাবে জনসম্বর্ধনার সুযোগও। এই সবকিছুর মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন একজন নিস্পৃহ নিবাসক্ত দার্শনিক। নিজের গবেষণা ঘরটিই ছিল তার পৃথিবী। স্বেচ্ছায় এই নির্বাসিতের জীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

হেনরি ক্যাভেন্ডিশ এর মৃত্যু: Henry Cavendish’s Death

আর এভাবেই একদিন ১৮১০ খ্রিঃ নিঃশব্দে মৃত্যুর শীতল কোলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর ক্যাভেণ্ডিসের বিপুল অর্থের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ব্রিটেনের সুবিখ্যাত ক্যাভেণ্ডিস ল্যাবরেটরি। এখনো পর্যন্ত এই পীঠস্থান বহু তরুণ বিজ্ঞানীর নিবিড় বিজ্ঞান – সাধনার স্থল হয়ে রয়েছে।

Leave a Comment