জোসেফ স্তালিন জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Joseph Stalin Biography in Bengali. আপনারা যারা জোসেফ স্তালিন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জোসেফ স্তালিন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
জোসেফ স্তালিন কে ছিলেন? Who is Joseph Stalin?
ইওসিফ ভিসসারিওনোভিচ স্তালিন (১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ – ৫ মার্চ ১৯৫৩), বা যিনি জোসেফ স্তালিন (Joseph Stalin) নামে সমাধিক পরিচিত, একজন জর্জীয় সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৯২৪ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন, যা তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম নেতা করে তুলেছে।
এছাড়াও তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক (১৯২২-১৯৫২) এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রীপরিষদের চেয়ারম্যান (১৯৪১-১৯৫৩) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমদিকে সম্মিলিত নেতৃত্বের অংশ হিসেবে দেশ পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে ১৯৩০ এর দশকে তিনি সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন। আন্তঃযুদ্ধ যুগের সবথেকে আলোচিত সমাজতান্ত্রিক ব্যাক্তিত্বদের একজন ছিলেন তিনি। তিনি স্তালিনবাদ এবং সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের প্রবক্তা।
জোসেফ স্তালিন জীবনী | Joseph Stalin Biography in Bengali
নাম | জোসেফ স্তালিন |
জন্ম | 18 ডিসেম্বর 1878 |
পিতা | বেসারিয়ন জুগাশভিলি |
মাতা | কেকে গেলাদজে |
জন্মস্থান | গোরি, জর্জিয়া, রুশ সাম্রাজ্য |
জাতীয়তা | সোভিয়েত |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
মৃত্যু | 5 মার্চ 1953 (বয়স 74) |
জোসেফ স্তালিন এর জন্ম: Joseph Stalin’s Birthday
জোসেফ স্তালিন 18 ডিসেম্বর 1878 জন্মগ্রহণ করেন।
রুশ বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ভি.আই লেনিনের প্রধান শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জোসেফ স্তালিন। বিপ্লবের পরে জারের সাম্রাজ্যের সর্বপ্রান্তে সোভিয়েট শাসনকে সুদৃঢ় করার কাজে লেনিনের সহযোগী হিসেবে প্রধান ভূমিকা ছিল স্তালিনের। স্তালিন নামটি আসলে ছদ্মনাম। লেলিনই প্রিয় শিষ্যকে এই নাম দিয়েছিলেন। স্তালিন কথার অর্থ হল লৌহমানব।
এই নামটির মধ্যেই স্তালিনের চরিত্রের আভাস পরিস্ফুট। লেনিনের মৃত্যুর পরে সোভিয়েট রাশিয়ায় লৌহ যবনিকার বাতাবরণ সৃষ্টি করে স্তালিন তাঁর নামের সার্থকতা নিরূপণ করেছিলেন। বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল বিষয়েই মার্কসবাদ বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। রাশিয়ার বিপ্লববাদের প্রধান যোদ্ধারা মার্কসবাদের আন্তর্জাতিকতা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করলেও স্তালিন এতে ততটা গুরুত্ব দেবার পক্ষপাতী ছিলেন না।
তিনি বিপ্লবোত্তর রাশিয়াকে সংহত করার কাজকেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কেননা, জারতন্ত্রের পরাজয়ের পরেও বিপ্লবকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত সক্রিয় ছিল। প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লবী শক্তি পশ্চিমী পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মদতে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল। এই শক্তিকে দমন করবার জন্যই স্তালিনকে কমিউনিস্ট পার্টিকে সুসংহত ও শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টায় ব্রতী হতে হয়েছিল।
লেনিনের মৃত্যুর পূর্ব থেকেই নেতৃত্বের ক্ষেত্রে স্তালিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন ট্রটস্কি, জেনেভিউ, কামেনেফ, বুকারিন প্রভৃতি সাম্যবাদী নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এঁদের পরিমন্ডলে থেকেই স্তালিন অনেক বেশি শক্তিশালী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। লেনিন অবশ্য মৃত্যুর পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলেন, তার পরে সোভিয়েট শাসন ক্ষমতায় অনিবার্য ভাবেই একনায়কত্বের আবহ সৃষ্টি হবে। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই।
লেনিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েট দেশে ধীরে ধীরে ক্রেমলিনে ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হয়ে স্তালিনকে করে তোলে মহাশক্তিধর বিপ্লবী নায়ক। ফলে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রান্ত ধ্বংসের উদ্দেশ্যে স্তালিন যে অভিযান চালান তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন হাজার হাজার বিশ্বস্ত আদর্শবান কমিউনিস্ট পার্টি সদস্য। বাদ যায়নি রুশ সামরিক বাহিনীও। প্রধান প্রায় সকল সামরিক নেতাই হয় পদচ্যুত নয় নিহত হয়েছিলেন। এইভাবেই স্তালিন হয়ে উঠেছিলেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। বিপ্লবের পরে স্তালিন গ্রহণ করেছিলেন বাস্তববাদী জাতীয়তাবাদী পথ। এই পথেই তিনি মার্কসীয় কমিউনিস্ট তত্ত্বকে নতুন এক লক্ষে প্রবাহিত করেন।
জোসেফ স্তালিন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Joseph Stalin’s Parents And Birth Place
বিশ্ববিপ্লবের চিন্তাকে সাময়িকভাবে সরিয়ে বেখে তিনি রুশদেশে রাজনৈতিক বিপ্লব তথা ক্ষমতা সংহত করার কাজে আত্মনিয়োগ করে কৃষক, শ্রমিক সকল শ্রেণীর মেহনতি মানুষের কাছে নিজের বাস্তববাদী রাজনৈতিক চিন্তার যথার্থতা তুলে ধরেছিলেন। স্তালিন ছিলেন রুশজনগণের কাছের মানুষ। রাশিয়ার জর্জিয়া প্রদেশে সাধারণ এক দরিদ্র চর্মকার পরিবারে তাঁর জন্ম। মায়ের ইচ্ছা ছিল, স্তালিন একজন বড় ধর্মযাজক হবেন। কিন্তু মায়ের সে স্বপ্ন সার্থক হয়নি।
কৈশোরে পদার্পণ করেই স্তালিন নাম লেখালেন বিপ্লবী দলে। অনেক কষ্ট স্বীকার করে মা তাঁকে জর্জিয়ার টিফলিসে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পড়া অসমাপ্ত রেখেই তিনি বিপ্লবীদলে যোগ দিলেন। স্তালিন ছিলেন রাশিয়ার জনগণের প্রকৃতই কাছের মানুষ। তার জন্ম হয়েছিল ককেসাশ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম রাজ্য জর্জিয়ার অখ্যাত গোরি শহরে ১৯১৪ খ্রিঃ। পারিবারিকভাবে তিনি ছিলেন সার্ফ অর্থাৎ দাসচাষী পরিবারের চর্মকারপুত্র। পিতার নাম বিসোরিক্ত, মা একাতেরিনা।
ছেলেবেলা থেকেই তার শরীর স্বাস্থ্য ছিল বেশ মজবুত। একবার বসন্তরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তাঁর স্বাস্থ্যের ঔজ্জ্বলা ক্ষুণ্ণ হয়নি। দশ বছর বয়সেই স্তালিন পিতৃহারা হন। ফলে মায়ের স্নেহে যত্নেই তাঁকে বড় হয়ে উঠতে হয়। মায়ের স্বপ্ন – সাধ কিন্তু পূর্ণ করতে পারেননি স্তালিন।
জোসেফ স্তালিন এর কর্ম জীবন: Joseph Stalin’s Work Life
কৈশোরে পদার্পণ করেই স্কুলের পাঠ অসমাপ্ত রেখে নাম লিখিয়েছিলেন বিপ্লবী দলে। বিপ্লবীচেতনায় উদ্বুদ্ধ সেই জীবন ছিল পাদ্রীজীবনের চাইতে অনেক বেশি কঠোর ও কঠিন। বিপ্লবী দলে সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে নতুন এক জীবনে পদার্পণ করলেন স্তালিন। মাত্র পনের বছর বয়সেই ১৯২৯ খ্রিঃ স্তালিন নিজের বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতায় সোভিয়েট রাশিয়ায় রাজনৈতিকভাবে গণতন্ত্রের বদলে পার্টিতন্ত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
স্তালিন নানান অভিধায় ভূষিত ! তিনি দৃঢ়চেতা, একগুঁয়ে আবার বাস্তববাদী ও জাতীয়তাবাদী। বস্তুতঃ এই সকল গুণাবলীর প্রভাবেই লেনিনোওর রাশিয়ায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শিল্পায়ন, বৈদ্যুতিকরণ ও সাক্ষরতার কাজ রূপায়িত করা সম্ভব হয়েছিল। এইসব কাজের মাধ্যমেই তিনি লেনিনের সার্থক উত্তরাধিকারী বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রতিবিপ্লবী চক্র সম্বন্ধে অতিমাত্রায় সচেতন ছিলেন তিনি। এই চক্রকে নির্মূল করতে চরম নিষ্ঠুরতার পথ অবলম্বন করতেও তিনি দ্বিধান্বিত হননি।
যদিও এই কাজের ফলে পার্টি গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়েছিল। শিক্ষা সংস্কৃতি, সামরিক — সকল ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাটির সর্বাত্মক ও সর্বময় কর্তৃত্ব। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বহারা একনায়কতন্ত্র। ১৯২৮ খ্রিঃ বহুভাষাভাষী ও বহুধা বিভক্ত সোভিয়েট রাশিয়ার সপ্তবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনর্গঠনের কাজ আরম্ভ হয়। স্তালিন বজ্রের দৃঢ়তায় ও ঝঞ্ঝার দ্রুততার সঙ্গে এই পরিকল্পনাগুলির রূপান্তর ঘটিয়ে পশ্চাদপদ রাশিয়ায় আধুনিকতার জোয়ার এনেছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে মধ্য রাশিয়ার উষর প্রান্তর ছুঁয়ে লেনিনগার্ড থেকে ব্লাডিভস্টক পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথে বৈদ্যুতিকরণ করা হয়।
এছাড়া উদ্ধার করা হয় লক্ষ লক্ষ একর জমি যা বাঁধ ও খাল খনন দ্বারা কৃষিযোগ্য করে তোলা হয়। কৃষকদেবও আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। স্তালিনের গ্রামোন্নয়ন ও কৃষিবিপ্লব সার্থক করতে গিয়ে অবশ্য অনেক সময়েই সারা সোভিয়েটের জনগণকে অশেষ দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে। বারবারই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কাজ হয়েছে বিঘ্নিত। দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে দেশে — প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ।
শিল্পবিপ্লবের অভিযানও ছিল সপ্তবার্ষিক পরিকল্পনার অঙ্গ। ফলে অগ্রগতি এসেছে দ্রুত। কয়েক দশকের মধ্যেই সাক্ষরতার সার্থক অভিযানের ফলে গ্রামীণ জীবনে এসেছে আধুনিক জীবনের স্বাদ। মাঝে মাঝে হঠকারী চেষ্টা থাকলেও সামগ্রিক ভাবে দেশের উন্নতি সাধন করেছেন স্তালিন। বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মমতে বিশ্বাসী ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্লিষ্ট সোভিয়েট সমাজতন্ত্রে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন সূচীত হয় তার প্রধান পুরুষ ছিলেন জোসেফ স্তালিন। সংগ্রামী স্তালিন বিয়ে করেছিলেন দু’বার। তার প্রথমা স্ত্রী ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও সরল প্রকৃতির নারী। তার অকাল মৃত্যুর পরে তিনি বিয়ে করেন অ্যালিনিভাকে।
দ্বিতীয়া স্ত্রী বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। কিন্তু তিনি জ্ঞানবুদ্ধি ও বিবেক – বিবেচনায় স্তালিনের তুলনায় কিছুমাত্র ন্যূন ছিলেন না। স্তালিন তার সমালোচনা সহ্য করতেন না। পার্টির রাজনীতিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অসংখ্য নিরীহ পার্টিকর্মী ও নেতাকে তার রোষে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবুও তার স্বৈরাচারিতার সমালোচনা মাথা তুলতে পারত না। কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী অ্যালিনিভা। একসময় প্রকাশ্যভাবে রুশপার্টির কঠোরতা, নিষ্ঠুরতা ও হৃদয়হীনতার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। স্তালিনের রক্তচক্ষুতাকে ভীত করতে পারেনি। ফলে স্তালিন বিরোধিতার ফল পেতে হল তাঁকে –রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
স্তালিনের শাসন ব্যবস্থায়, ত্রিশের দশকের শেষদিকে কারণে অকারণে হাজার হাজার মানুষকে সাইবেরিয়ার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে দাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পাঠানো হতো। সাধারণ মানুষ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি, পার্টির বিশ্বস্ত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, সামরিক নেতৃত্ব নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্তালিনের আমলে সোভিয়েট উৎপাদন ব্যবস্থায় দাস – শ্রম ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রাচীন গ্রিসের দাস – শ্রম ব্যবস্থার সমপর্যায়ভুক্ত। সমগ্র সোভিয়েট রাশিয়ায় কোথাও কোন রাষ্ট্রীয় কল বা কারখানা, যৌথ খামারে শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সংগঠিত হতে দেননি স্তালিন।
নিষ্ঠুরতা ও নরহত্যার দ্বারা সোভিয়েট রাশিয়ায় স্তালিন যেভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কন্ঠরোধ করেছিলেন তা কেবল হিটলারের কুকর্মের সঙ্গেই তুলনীয় হতে পারে। স্তালিন জমানায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপরে জবরদস্তি হয়েছে, নিবর্তন মূলক আটক আইনে গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে। এভাবেই সোভিয়েট দেশে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার বীজ রোপিত হয়েছিল। সর্বহারারাজ কথার আড়ালে স্তালিন যে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করেছেন, বিশ্বের ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। পাশাপাশি একথাও সত্যি যে স্তালিনের দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই সোভিয়েট রাশিয়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পরাজয় এড়িয়ে জয়ীর আসন লাভ করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই স্তালিনের পরিচালনায় সোভিয়েট পররাষ্ট্রনীতি এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীন বা পরাধীন দেশগুলিতে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধে অনেক সময়েই সোভিয়েট রাশিয়া এমন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। বস্তুত, স্তালিন আমলের সোভিয়েট শাসন বিশ্বে মর্যাদার আসন লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। লেনিনোত্তর রাশিয়ায় স্তালিনের সর্বহারার সরকার গণতান্ত্রিকতার বদলে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারে পরিণত হয়েছিল সত্য। কিন্তু তার জীবিতকালেই রুশ কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে স্তালিন ভজনা ও বন্দনা এমন স্তরে পৌঁচেছিল যে স্তালিন হয়ে উঠেছিলেন এক গগনস্পর্শী মহানায়ক।
অন্য কোন মহানায়ক তার মত এমন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দীর্ঘকাল এমন দীর্ঘতম এক ভূখণ্ডে ভোগ করেন নি। তার শাসনে সঙ্ঘটিত অসংখ্য ভুল, নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যার ব্যাপক বিস্তার কোন যুগের ইতিহাসকেই এমনভাবে কলঙ্কিত করেনি। গত কয়েক দশক যাবৎ সোভিয়েট সমাজে যেরূপ অবক্ষয়, অনটন ও পশ্চাদগামিতা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটেছে তার জন্য স্তালিন নিদের্শিত পার্টির একনায়কতন্ত্রই দায়ী।
কালের নিয়মে স্তালিনের জীবদ্দশাতেই রুশ কমিউনিস্ট পার্টি সিক্রেট পুলিশ বাহিনীর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিল। সুবিধাভোগী নীতিহীন একশ্রেণীর মানুষের অমানবিক ক্রিয়াকলাপ লেনিনের অক্টোবর বিপ্লবের সুমহান আদর্শকে বিপন্ন করে তুলেছে। যার পরিণতি নয়ের দশকে সোভিয়েট রাশিয়ায় মার্কসইজমের পতন।
জোসেফ স্তালিন এর মৃত্যু: Joseph Stalin’s Death
১৯৫৩ খ্রিঃ মার্চ মাসে লৌহমানব স্তালিন সন্ন্যাসরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।