মাও সেতুং জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Mao Zedong Biography in Bengali. আপনারা যারা মাও সেতুং সম্পর্কে জানতে আগ্রহী মাও সেতুং এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
মাও সেতুং কে ছিলেন? Who is Mao Zedong?
মাও ৎসে-তুং বা মাও সেতুং বা মাও জেদং (চীনা: 毛泽东), (ইংরেজি: Mao Zedong ) (ডিসেম্বর ২৬, ১৮৯৩ – সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৭৬) চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন। নেতা ছিলেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তাঁর তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তাঁর কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত।
মাও সেতুং জীবনী | Mao Zedong Biography in Bengali
নাম | মাও সেতুং |
জন্ম | 26 ডিসেম্বর 1893 |
পিতা | মাও ইছাং |
মাতা | ওয়েন কিমি |
জন্মস্থান | শাওশান, হুনান |
জাতীয়তা | চীনা |
পেশা | চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা |
মৃত্যু | 9 সেপ্টেম্বর 1976 (বয়স 82) |
মাও সেতুং এর জন্ম: Mao Zedong’s Birthday
মাও সেতুং 26 ডিসেম্বর 1893 জন্মগ্রহণ করেন।
রুশ অক্টোবর বিপ্লবের পরে যে দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হয়, সে দেশ হল চীন। এই পরিবর্তনের মূলে যাঁর ভূমিকা ছিল সবেচেয়ে উজ্জ্বল তিনি হলেন মাও সে তুং। জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সোভিয়েট রাশিয়ায় শ্রমিকের সরকার স্থাপনে লেনিনের যেমন কৃতিত্ব, চীনে জাপানের বিরুদ্ধে এবং চিয়াং কাইসেক পরিচালিত কোওমিনটাং দলের প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে শ্রমিক – কৃষকের সমাজতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় মাও সে তুং – এর কৃতিত্বও তদ্রুপ।
সমস্ত বিশ্বে মাও সে তুং অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ রূপে স্বীকৃতিলাভ করেন। মাও – এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব যে, তিনি পাশ্চাত্যের মার্কস – লেনিনবাদের অন্ধ অনুকরণ না করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে, চীনের সাধারণ মানুষ, শ্রমিক কৃষক বুদ্ধিজীবীদের প্রাচীন ঐতিহ্যের অনুসারী করে গঠন করেছিলেন।
তিনি লেনিন প্রচারিত মার্কসের মতবাদকে চীনের জলবাতাস, ইতিহাস, ধর্মচেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে এক অভিনব প্রাচ্য ধাঁচের সাম্যবাদ দেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কেননা তিনি জানতেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মানুষের চিন্তা, জীবনধারা ও সমাজভাবনায় যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই বাস্তব অবস্থাকে অবজ্ঞা করে সমাজবিপ্লব সার্থকতা মন্ডিত করা সম্ভব হবে না।
মাও সেতুং এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Mao Zedong’s Parents And Birth Place
মহান নেতা মাও সে তুং – এর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিঃ ২৬ শে ডিসেম্বর হুনানের এক কৃষক পরিবারে। ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সহায়তা করতে হতো তাঁকে। ফলে পড়ার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও স্কুলে যেতে পারতেন না। বাবাকে বলেও লাভ হত না, তিনি বলতেন, কৃষিকাজে মন দেবার কথা — লেখাপড়া করে কি হবে ? শেষ পর্যন্ত অদম্য আগ্রহ বশে মাও তাঁর এক ধনী বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে স্কুলে ভর্তি হলেন।
মাও সেতুং এর শিক্ষাজীবন: Mao Zedong’s Educational Life
ছাত্রাবস্থা থেকেই মাও স্কুলের পাঠ্য বইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়াশুনা করতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেন। মনীষীদের জীবন ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের বই পাঠেই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। চীনের ইতিহাস পাঠ করে মাও জানতে পারেন, ১৮৫০ খ্রিঃ থেকে ১৮৬৫ খ্রিঃ পর্যন্ত চীনে কৃষক সমাজের উদ্যোগে যে বিপ্লব সঙ্ঘটিত হয় তার নাম তাইপে বিদ্রোহ ৷
এই সূত্রে জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী মহান নেতা সান ইয়াৎসেনের বিষযেও অবহিত হন। চীনে কৃষক বিপ্লব সঙ্ঘটিত হয়েছিল তাঁরই নেতৃত্বে, অবসান ঘটেছিল চীনের মাংচু রাজবংশের প্রজানিপীড়নের। মাও চীনের সেই তাইপে বিদ্রোহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন এবং বুঝতে পারেন এই সংগ্রামী ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করেই চীনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিশ্চিত হবে।
১৯৪৯ খ্রিঃ চীনে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করলে, মাও সে তুং তাইপে বিদ্রোহ ও সান ইয়াৎসেনের আন্দোলনকে সাফল্যের প্রেরণাদাতৃ শক্তি হিসেবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই ছাত্র শিক্ষক কৃষক শ্রমিক সর্বশ্রেণীর মানুষের সঙ্গেই মাও ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে পারতেন। পিকিং অবস্থান কালেই তিনি পরিচিত হন চিও সু চিউ – এর সঙ্গে। এই পন্ডিত মানুষটির উদ্যোগেই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল।
মাও সেতুং এর প্রথম জীবন: Mao Zedong’s Early Life
যৌবনে মাও চীন সফরে বেরিয়ে সাংহাইতে উপস্থিত হন। এখানে তিনি এক ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল প্রথম মহাযুদ্ধকালে ইংরাজ ও ফরাসীরা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তার প্রতিবাদে। প্রথম মহাযুদ্ধে চীন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত ছিল। যুদ্ধ শেষ হলে জার্মানীর সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকার জাপানকে দেওয়া হয়েছিল এক চুক্তির মাধ্যমে। এর ফলে চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। চীনে জাপানের অনুপ্রবেশ ঘটলে সমগ্র চীনে প্রতিবাদ আন্দোলন দেখা দেয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন সান ইয়াৎসেন।
এই সময়ে ইংলন্ড বা ফ্রান্সের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না এলেও লেনিন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। ফলে ক্যান্টনের কুওমিনটাং শক্তি সান ইয়াৎসেনের নেতৃত্বে জাপানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। এই সময়ের জাতীয়তাবাদী গণআন্দোলন তরুণ মাওকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ১৯২০ খ্রিঃ কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পাঠ করার পর মাও নিজেকে কমিউনিস্ট বলে ঘোষণা করেন।
মাও সেতুং এর কর্ম জীবন: Mao Zedong’s Work Life
১৯২১ খ্রিঃ মে মাসে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা উৎসবে যোগ দিতে তিনি সাংহাই যান। এর কিছুদিন আগেই তিনি বিবাহ করেন। রুশ দেশের বলসেভিক দল এবং চীনের কুওমিনটাং দল যৌথভাবে চীনে প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে তুলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলে। রাজনীতি শিক্ষার জন্য এই সময় সান ইয়াৎ সেনের উত্তরসূরী হিসেবে চিয়াং কাইসেককে মস্কো পাঠান হয়। দেশে ফিরে তিনি কুওমিনটাং দলের নেতৃপদে বৃত হন। ঘোষণা করা হয় সান ইয়াৎসেনের ত্রয়ীনীতি — জনগণের জন্য জীবিকা, খাদ্য, স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব অর্জনে কুওমিনটাং ও বলসেভিক উভয় দল যৌথভাবে আন্দোলন সংগঠিত করবে।
জাপানের আক্রমণের মোকাবেলা করবার জন্য চীনকে সদাসর্বদাই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হত। মাও জাপানের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র ও সামন্ততন্ত্রের বিষয়ে দেশের কৃষকদের সচেতন করবার জন্য ও ব্যাপক জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ত্রিশের দশকের শেষ দিকেই মাও চীনে এক অসাধারণ শক্তিশালী সাম্যবাদী দল গড়ে তুলতে সমর্থ হন। সারা বিশ্বে তিনি প্রথম শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
লেনিন সোভিয়েট রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে যেভাবে শ্রমিকের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক একই ভাবে চীনে মাও জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করে, চিয়াং কাইসেক পরিচালিত কুওমিনটাং দলের প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে পরাস্ত করে কৃষকদের সমাজতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন। তবে তিনি পাশ্চাত্যের মার্কস – লেনিনের প্রচারিত মার্কসবাদকে পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করেন নি। তার সাম্যবাদ ছিল চীনের ইতিহাস ও ধর্মচেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পরবর্তীকালে এই প্রাচ্য ধারার মার্কসবাদই বিশ্বে মাওবাদ নামে স্বীকৃতি লাভ করে। ত্রিশের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান ছিলেন জেনারেল চিয়াং কাইসেক। ইনি ধীরে ধীরে সান ইয়াৎসেনের সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে সরে যান। মাঞ্চুরাজবংশের দুঃশাসন থেকে চীনা কৃষকদের মুক্ত করতে পারলেও সান ইয়াৎসেন জীবনের সায়াহ্ন বেলায় বুঝতে পেরেছিলেন কৃষকদের জন্য জীবিকা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।
তিনি সামন্ততান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা ও চিন্তাকে নিয়োজিত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সান ইয়াৎসেনের মন্ত্রশিষ্য চিয়াং কাইসেকও গুরুর আরব্ধ কার্য সম্পন্ন করতে পারেননি। সামরিক ও সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাচীর ভাঙ্গা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। মাও পার্টির পাদপ্রদীপের আলোয় এসে চীনা জনগণের প্রিয় নেতা সান ইয়াৎসেনকে যোগ্য মর্যাদা দিতে ভুল করলেন না। তিনি মাদাম সান ইয়াৎসেনকে কমিউনিস্ট পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করলেন।
মাও – এর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় ছিল সান ইয়াৎসেনের ইচ্ছার স্ফুরণ। ফলে মাদাম সান ইয়াৎসেন হয়ে উঠলেন চীনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আর সাম্যবাদী মাও সে তুং স্বীকৃতি লাভ করলেন চীনের একমাত্র জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে এবং তার পরবর্তী সময়ে মাও হয়ে উঠেছিলেন চীনের সাধারণ মানুষের মহান নেতা। আর তার পরিচালনায় সান ইয়াৎ সেনের আদর্শে পুষ্ট সাম্যবাদী দল সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতায় এক মহাশক্তিশালী জনমুখী জনদরদী ও বাস্তববাদী দলে পরিণত হল।
ফলে চারের দশক থেকেই চীনের প্রাচীর অতিক্রম করে মাও – এর নাম বিশ্বরাজনীতির দরবারে হয়ে উঠল পরিচিত নাম। চীনের জনদরদী নেতা সান ইয়াৎসেনের দূরদৃষ্টি, উদারতা, কৃষকদরদ তার উত্তরসূরী চিয়াং কাইসেকের মধ্যে ছিল অনুপস্থিত। ফলে সান ইয়াৎসেনের মৃত্যুর পরই চীনে কমিউনিস্ট মতবাদী ও জাতীয়তাবাদী কুওমিনটাং দলের মানসিকতার বদল ঘটেছিল। কমিউনিস্ট দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বদলে বৃদ্ধি পায় প্রতিদ্বন্দিতার মানসিকতা।
এই ঘটনা মাও সে তুংকে যথেষ্ট আহত করে। কিন্তু চীনে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯২৭ খ্রিঃ থেকেই কমিউনিস্ট পার্টি ও কুওমিনটাং পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবের ফলে এই গৃহযুদ্ধ দুই দশকেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। চিয়াং শইসেক একদা মস্কো থেকে বলসেভিক পার্টির নিকট রাজনৈতিক ও সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনিই পরবর্তীকালে প্রতিক্রিয়াশীল জমিদার জোতদার ও সামন্ত শ্রেণীর স্বার্থরক্ষকের ভূমিকা নিয়েছিলেন।
এর ফলে হতাশ চীনের মানুষ কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী শ্রেণী কুওমিনটাং দলের প্রতি শ্রদ্ধা হারায় এবং সাম্যবাদী দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এদেরই সাহায্যে মাও প্রতিক্রিয়াশীল চিয়াং সরকারের বিরুদ্ধে জনআন্দোলন ক্রমেই দুর্বার করে তুললেন। মাও সে তুং এবং চু – তে প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সর্ব প্রথম হুনান, উত্তর কুকিয়েন প্রভৃতি অঞ্চলে সোভিয়েট গঠন করেন। এই সব অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে ভূমি বন্টন করে কৃষক ও শ্রমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
নবপ্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট সরকার অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ফলে অসহিষ্ণু চিয়াং কাইসেক উত্তর – পশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত সোভিয়েট চীন সরকারকে উৎখাত করবার জন্য বিরাট বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। মাও – এর নেতৃত্বে ৬,০০০ সমর্থক ১৯৩৪ খ্রিঃ থেকে ১৯৩৬ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বারো হাজার বর্গমাইল পায়ে হেঁটে দক্ষিণের হুনান, ফুকেন, ইয়াংসি থেকে উত্তর পশ্চিমের শেনানি প্রদেশে পিছিয়ে যান। পশ্চাদপসরণের এই ঘটনা মানুষের ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়। এই দীর্ঘ পদযাত্রাকেই বলা হয় লংমার্চ যা বিশ্বের ইতিহাসে এক নব চেতনার বার্তাবাহক।
বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে বহু নদী, বরফঢাকা পর্বত, জনহীন প্রান্তর, জলাভূমি অতিক্রম করে পশ্চাদপসরণকালে মাও যে কঠিন মনোবল ও সামরিক কুশলতার পরিচয় দেন তার ফলে পরবর্তীকালে তিনি বিশ্বের একজন অসাধারণ সংগঠকও অসামান্য সমরবিশারদ নেতা হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেন। চূড়ান্ত সাফল্যের সঙ্গে সমগ্র চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পর জীবনের অপরাহ্ন বেলায় মাও – কে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে চীনের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন।
মাও – এর জীবিতকালেই চীনের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ছাত্র ও শ্রমিক কৃষক শ্রেণী চৌ – এন – লাই – এর চিন্তা ও চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হন। ফলে সমগ্র চীনে অনিবার্য হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক বিপ্লব যা ছিল দেশের সংহতি ও সুস্থিতির পক্ষে এক অগণতান্ত্রিক জনবিরোধী আন্দোলনের নামান্তর। দেশের প্রভূত ক্ষতির কারণ হয়েছিল তথাকথিত এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এই বিধ্বংসী সাংস্কৃতিক বিপ্লব অবশ্য দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নি।
চীনের পার্টির বিশ্বস্ত নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যেই ধিকৃত ও নিগৃহীত হন — কমিউনিস্ট পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ পার্টির মধ্যেই দেখা দেয় তীব্র মতবিরোধ। সংস্কারকামী উদারপন্থী নেতৃবর্গ জনসমর্থন লাভ করেন। এই সময় থেকেই চীনে মুক্ত অর্থনীতির প্রতি চীনের সাধারণ মানুষ ও কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অল্পকালের মধ্যেই চীনে মুক্ত অর্থনীতি জোরদার হয়ে ওঠে।
সংস্কারপন্থী নেতৃবর্গের এই আদর্শ ও পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে গিয়ে মাদাম মাও সে তুং থেকে শুরু করে মাওপন্থী কট্টর নেতৃবর্গ কারারুদ্ধ হন। চীনের সাধারণ মানুষ ও কমিউনিস্ট পার্টির কাছে এই নেতৃবর্গ গ্যাং অব ফোর নামে ধিকৃত হন। বর্তমানে মাও – এর চীনদেশে কমিউনিস্ট পার্টি সর্ববাদী সম্মত সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশে বিদেশী পুঁজির আহ্বান ও মুক্তবাণিজ্য নীতি সার্থক ভাবে অনুসরণ করে চলেছে।
মাও সেতুং এর মৃত্যু: Mao Zedong’s Death
9 সেপ্টেম্বর 1976 (বয়স 82) মাও সেতুং এর জীবনাবসান হয়।