লিয়াকত-নেহরু চুক্তি | দিল্লি চুক্তি | ভারত-পাকিস্তান শান্তি চুক্তি 1950 | Liaquat-Nehru Pact 1950
পটভূমি: 1947 খ্রিস্টাব্দের 15ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করলেও তার এক বছর আগে থেকে অর্থাৎ 1946 খ্রিস্টাব্দ থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিধ্বস্ত হাজার হাজার মানুষ পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে থাকে। ফলে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত রাষ্ট্রের সামনে উদ্বাস্তু বা শরনার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত সমাধানের জন্য ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মধ্যে 1950 খ্রিস্টাব্দের 8ই এপ্রিল এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিত।
নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তির শর্তাবলী
এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি ছিল-
১)সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা-ভারত ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য না হোন সেই উদ্দেশ্যে উভয় দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। সংখ্যালঘুরা যে রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করবে তারা সেই রাষ্ট্রের কাছেই প্রতিকার চাইবে।
২)অনুসন্ধান কমিটি গঠন-ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই উদ্বাস্তুদের দেশত্যাগের কারণ ও উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান কমিটি ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে।।
৩)সরকারি সহায়তা প্রদান-পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে দাঙ্গা বিধ্বস্ত কোন শরণার্থী অন্য কোন দেশের শরণার্থী হতে চাইলে উভয় দেশের সরকারের তরফে তাকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
৪)স্থাবর সম্পত্তি ফেরত-কোন দেশত্যাগী ব্যক্তি 1950 খ্রিস্টাব্দের 31শে মার্চের মধ্যে আবার নিজের দেশে ফিরে এলে তাকে তার স্থাবর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫)সংখ্যালঘু প্রতিনিধি-পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকবে।
মূল্যায়ন:1950 খ্রিস্টাব্দের 8ই এপ্রিল জহরলাল নেহেরু ও লিয়াকত আলী খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত দিল্লি চুক্তি সাফল্য লাভ করতে পারেনি। এই চুক্তির প্রতিবাদে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ক্ষীতিশ চন্দ্র নিয়োগী নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। প্রকৃতপক্ষে এই চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমবাংলার উদ্বাস্তু সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। আজও পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে শরনার্থীর আগমন ঘটেই চলেছে।