কাম্য জনসংখ্যা কাকে বলে? কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব

Rate this post

কাম্য জনসংখ্যা কাকে বলে? কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব: অধ্যাপক এডউইন ক্যানান ১৯২৪ সালে প্রকাশিত ‘Wealth’ নামক গ্রন্থে  ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের বদলে কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব নামে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন এবং রবিন্স, ডালটন ও কার-সয়ান্ডার কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটির জনপ্রিয়তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। 

কাম্য জনসংখ্যা বলতে  কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সবথেকে অনুকূল জনসংখ্যাকে বোঝানো হয় । অর্থাৎ কোন দেশের জনসংখ্যার সেই দেশের কার্যকরী জমির অনুপাতে গড়ে উঠলে, তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।

আবার অন্যভাবে বলা যায় – কোন দেশের প্রাপ্ত সম্পদের পরিপূর্ন ব্যবহারের মাধ্যমে যে পরিমান জনসংখ্যার জীবনযাত্রার মানের চরমতম  ও সর্বাঙ্গিন স্বাচ্ছন্দ সুনির্দিষ্ট করা যায়, সেই নিদিষ্ট পরিমান জনসংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।

কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বে বলা হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সম্পদের কাম্য ব্যবহারে আবার সম্পদের কাম্য বা পরিপূর্ন ব্যবহার নির্ভর করে মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আবার বলা যায় কোন দেশের বা অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সেই দেশের বা অঞ্চলের উৎপাদিত মোট সম্পদের উপর। আবার সম্পদের উৎপাদনের পরিমান নির্ভর করে জমির পরিমান, মানুষের কর্মদক্ষতা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির উপর ।

সাধারণত কোন দেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হলে সেই দেশ অতি জনাকীর্ন  বা জনাধিক্য বলে বিবেচিত হয় এবং সেই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান হয় কম । সেখানে মানব সম্পদের পরিপূর্ন বিকাশ ঘটে না । উপযুক্ত খাদ্যাভাব, দারিদ্র, অপুষ্টি, বেকারত্ব ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। যেমন – বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থান ।

অন্যদিকে সম্পদের তুলনায় কোন দেশের জনসংখ্যা কম হলে সম্পদের পরিপূর্ন ব্যবহার সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, দেশটিতে জনস্বল্পতা রয়েছে । এক্ষেত্রে মানব সম্পদের আংশিক বিকাশ ঘটে। এর ফলে মাথাপিছু উৎপাদন বাড়লেও মোট উৎপাদন বাড়ে না । যেমন – অস্ট্রেলিয়া, কানাডা।

কোন দেশ কাম্য জনসংখ্যার স্তরে পৌছালে সে দেশের মানুষদের জীবনযাত্রার মান সর্বাধিক উন্নত হয়। যেমন – বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ। সম্পদ উৎপাদনের হার যেমন বেশি তেমনি মানুষের জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট উন্নত। তাই এ সমস্ত দেশের জনসংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।

কাম্য জনসংখ্যা নির্ভর করে

(ক) সম্পদের উৎপাদনের পরিমান

(খ) দেশের জনসংখ্যার পরিমান

(গ) জমির কার্যকারিতা

(ঘ) সাংস্কৃতিক উন্নতি

(ঙ) উপনিবেশ দেশ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের উপর

কাম্য জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য

১. মানুষ ও জমির আদর্শ অনুপাতই হল কাম্য জনসংখ্যা ।

২. দেশের সম্পদ মানুষের ভোগ ব্যবস্থার উপযোগী হয়।

৩. এটি জনসংখ্যা ও সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির চূড়ান্ত লক্ষ্যের একটি স্থিতিশীল অবস্থা।

৪. এই অবস্থায় সম্পদ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় শ্রম শক্তির অভাব হয় না । ফলে সম্পদ উৎপাদন হয় সর্বাধিক।

৫. জন সাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং জন প্রতি আয় হয় সর্বাধিক ।

৬. কাম্য জনসংখ্যার দ্বারা দেশের উন্নতি হয় সর্বাধিক।

৭. পৃথিবীর বিভিন্ন  দেশের কাম্য জনসংখ্যার পরিমান হয় বিভিন্ন।

৮. কাম্য জনসংখ্যার সঠিক ভাবে নির্নয় করা কঠিন।

কাম্য জনসংখ্যার নির্ধারনের শর্ত

কাম্য জনসংখ্যা নিরুপমের জন্য Veryet Verner কয়েকটি শর্তের উল্লেখ করেছেন । যেমন –

ক) কর্মসংস্থানের পূর্ন সুযোগ – কাম্য জনসংখ্যা হল জনগনের জন্য পূর্ন কর্ম সংস্থানের সুযোগ যার ফলে জনগন সন্তোষপূর্ন জীবিকা ও জীবনযাপন করবে। এই জনসংখ্যায় বেকারত্ব বা কর্মহীনতা থাকবে না।

খ) পরিমিত খাদ্য গ্রহন – জনসংখ্যার প্রতিদিন মাথাপিছু ২৫০০ কিলো ক্যালরি সম্পন্ন খাদ্য গ্রহন করার সুযোগ থাকে।

গ) খাদ্যের জন্য ব্যয় – খাদ্যের জন্য মোট আয়ের ৫০ % এর কম ব্যয় হবে।

ঘ) নির্ভরতার হার কম – কাম্য জনসংখ্যার ক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধদের অন্যের উপর নির্ভরতা কম হবে।

ঙ) মেধাভিত্তিক শ্রম বিভাজন – কাম্য জনসংখ্যার শ্রম বিভাজন মেধার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

চ) বিজ্ঞান সম্মত সম্পদ ব্যবহার – কাম্য জনসংখ্যায় সম্পদের ব্যবহার বিজ্ঞান সম্মত উপায়ের মাধ্যমে করা উচিত । যাতে পরিবেশের উপর কোন প্রভাব না পরে।

সমালোচনা – ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব অপেক্ষা কাম্য জনসংখ্যার তত্ত্বটি অপেক্ষাকৃত উন্নত। কারণ – এই মতবাদে জনসংখ্যার সমস্যাটি শুধু খাদ্য সরবরাহের পরিপ্রেক্ষিতে না দেখে দেশের সমগ্র সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হয়েছে।

এই তত্ত্বের দূর্বলতা গুলি হল 

১.  এই তত্ত্বটি স্থিতিশীল কারণ এই তত্ত্বে কত গুলি বিষয় অপরিবর্তিত রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। যেমন – দেশের  উৎপাদন পদ্ধতি, দেশের সম্পদ প্রভৃতি।

২. এই তত্ত্বে জনসংখ্যা কীভাবে বেড়েছে সে সম্পর্কে কোন আলোকপাত করা হয়নি।

Leave a Comment