সমুদ্র জলের লবনতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা করো: সমুদ্র জলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লবনতা। সমুদ্র জলে মিশ্রিত যাবতীয় খনিজ পদার্থের মধ্যে লবণের পরিমাণ সর্বাধিক। তবে বিভিন্ন সমুদ্রে বা একই সমুদ্রের বিভিন্ন অংশে লবণতার পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিম্নে সমুদ্র জলের লবনতা তারতম্যের কারণ গুলি আলোচনা করা হলো-
১)বাষ্পীভবন: সমুদ্রের জল কতটা লবণাক্ত হবে তা নির্ভর করে বাষ্পীভবনের পরিমাণের ওপর। অধিক বাষ্পীভবনের ফলে সমুদ্রে জলের পরিমাণ কমে যায় বলে লবণতার পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। আবার অল্প বাষ্পীভবনের ফলে সমুদ্রে জলের পরিমাণ খুব একটা কমে না বলে লবণতার পরিমাণও কম থাকে।
উদাহরণ-ভূমধ্যসাগর ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে এখানে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি। তাই এখানকার সমুদ্র জলের লবনতা পরিমাণ বেশি। আবার বাল্টিক সাগর উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত বলে বাষ্পীভবনের পরিমাণ কম। তাই এখানকার সমুদ্র জলের লবনতা পরিমাণও কম।
২)বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত: কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পরিমাণ বেশি হলে সেখানে অধিক বিশুদ্ধ জল (বৃষ্টির জল ও তুষার গলা জল) সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে সেই অঞ্চলে সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ কম হয়। অপরপক্ষে কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পরিমাণ কম হলে সেখানে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত থেকে উদ্ভূত বিশুদ্ধ জলের সরবরাহ কম হয়। ফলে সেই অঞ্চলের সমুদ্র জলের লবনতা পরিমাণ বেশি হয়।
উদাহরণ-নিরক্ষীয় অঞ্চলে অধিক বাষ্পীভবন হওয়া সত্বেও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানকার সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্র জলের তুলনায় কম।
৩)নদীবাহিত মিষ্টি জলের সরবরাহ: নদীবাহিত মিষ্টি জলের সরবরাহ সমুদ্র জলের লবনতার তারতম্যের অন্যতম কারণ। সমুদ্রের যেসব অংশে বড় বড় নদনদী এসে পতিত হয়, সেখানে নদনদীবাহিত মিষ্টি জলের সরবরাহ বেশি হওয়ার জন্য সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ কম। অপরপক্ষে সমুদ্রের যেসব অংশে কোন বড় নদনদী এসে পতিত হয়নি, সেখানে নদীবাহিত মিষ্টি জলের অভাবে সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ বেশি।
উদাহরণ-নদীবাহিত মিষ্টি জলের সরবরাহ বেশি থাকার জন্য বাল্টিক সাগরের জলের লবনতার পরিমাণ কম এবং নদীবাহিত মিষ্টি জলের সরবরাহ না থাকায় লোহিত সাগর ও এডেন সাগরের জলের লবনতার পরিমাণ বেশি।
৪)সমুদ্র জলের অভাব মিশ্রণ: সমুদ্র জলের অভাব মিশ্রণ সমুদ্র জলের লবনতার সমতা রক্ষা করে। প্রবল বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে উন্মুক্ত সমুদ্রের জলরাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ধাবিত হওয়ার কারণে অধিক লবণাক্ত জল স্বল্প লবণাক্ত জলের সাথে মিশ্রিত হয়ে সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ সমান করে দেয়। তাই উন্মুক্ত সমুদ্র জলের লবনতা বেশি হয় না। অপরদিকে স্থলবেষ্টিত বা আবদ্ধ সমুদ্রে জলের অবাধ সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই আবদ্ধ সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণ বেশি হয়।
উদাহরণ-ভূমধ্যসাগর আংশিক ভাবে স্থল বেষ্টিত হওয়ায় সমুদ্র জলের অবাধ সঞ্চালন কম। তাই এর লবণের পরিমাণ বেশি। অপরদিকে ভারত মহাসাগর উন্মুক্ত হওয়ায় সমুদ্র জলের অবাধ মিশ্রণ হেতু সমুদ্র জলের লবণতার পরিমাণ কম।
৫)জোয়ার ভাটার প্রভাব: জোয়ার ভাটার প্রভাবে সমুদ্র জলের লবনতার পরিমাণের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। যেসব নদীতে জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জল প্রবেশ করে সেই সব নদীর জল লবণাক্ত হয়। কিন্তু ভাটার সময় নদীর মিষ্টি জল সমুদ্রের জলে মিশ্রিত হয়ে লবণতার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।