সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝ?: কোনো সামজিক পরিবেশের অন্তর্গত ফাঁকা জায়গায়, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে বা অন্য কোনো ফাঁকা জায়গায় বন সৃজনকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এখানে সাধারণত স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহনের দ্বারা বৃক্ষরোপণ করা ও রোপিত বৃক্ষের যত্ন করানো হয় এবং বৃক্ষ গুলি থেকে উৎপাদিত দ্রব্য সকলের মধ্যে সমান ভাবে বন্টন করা হয়। অন্য ভাবে বলতে গেলে সামাজিক বনসৃজন হল – “forestry by the people, of the people for the people”.
১৯৭৬ সালে ‘ভারতের জাতীয় কৃষি কমিশন’ এর সম্মেলনে প্রথম সামাজিক বনসৃজন কথার ব্যবহার করা হয়। তখন থেকে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পও গ্রহন করা শুরু হয়। অরণ্য গুলি থেকে জ্বালানি কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ, পাতা ও উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ ও অর্থের জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প গড়ে ওঠে।
সামাজিক বনসৃজন সাধারণত পতিত জমিতে করা হয়ে থাকে। কৃষি দপ্তর ও ICAR প্রদত্ত একটি অনুমান অনুসারে ভারতে পতিত জমির পরিমান ৬.৪ কোটি থেকে ১৮.৮ কোটি হেক্টর । ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং এজেন্সি ও ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ এগরিক্যালচারাল সায়েন্স এর মতে ভারতে পতিত জমির পরিমান ১২ কোটি হেক্টর। ভারতে এই বিপুল পরিমান জমিকে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পের অধীনে আনা যেতে পারে।
সামাজিক বনসৃজনের উদ্দেশ্য – সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের উদ্দেশ্যেই সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হল গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনসাধারনের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটানো। ফলে জনমুখী কাজের উদ্দেশ্য ও বনভূমির উপর চাপ হ্রাসের মধ্যে দিয়ে গ্রামাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অরণ্য সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য নিয়েই এই বনসৃজন গড়ে ওঠে।
সামাজিক জনসৃজনের সুবিধা
উপরিক্ত উদ্দেশ্য নিয়ে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প গড়ে উঠলেও এর আরও কিছু সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধিত হয়। যেমন –
১. বন্ধ্যা, রুক্ষ, পতিত জমির ওপর এই প্রকল্প তৈরি করলে ওই জমির অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব বাড়ে।
২. এরুপ বনসৃজনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক অরন্যের সুরক্ষা বলয় তৈরি করা সম্ভব হয় ।
৩. গরিব মানুষের প্রাথমিক উদ্দেশ্য না থাকলেও ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প গৃহীত হলে তার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
৩. গরিব মানুষের প্রাথমিক উদ্দেশ্য না থাকলেও ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প গৃহীত হলে তার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য
বিষয় | কৃষি বনসৃজন | সামাজিক বনসৃজন |
১. উপাদান | এটি একই সাথে নিদিষ্ট পরিমান জমিতে কৃষিজ ফসল, বনজ বৃক্ষ ও পশু খাদ্যের প্রযোজনীয় বৃক্ষের চাষ করা হয়। | এটি একটি সমাজের ফল, পশু খাদ্য ও জ্বালানি কাঠ প্রভৃতির চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে করা হয়। |
২. উদ্যোগ | এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হয়। | এতে সমাজের সকল মানুষ অংশ গ্রহন করে। |
৩. গবেষণার প্রয়োজনীয়তা | কৃষি বনসৃজনের আগে সঠিক গবেষণার প্রয়োজন। | এক্ষেত্রে কৃষি বনসৃজনের মতো পূর্ব গবেষণার প্রয়োজন হয় না। |
৪. জমির ব্যবহার | কৃষি বনসৃজনের জন্য উর্বর কৃষি জমি ব্যবহার করা হয়। | সামাজিক বনসৃজনের জন্য পতিত বা উন্মুক্ত জমির বেশি ব্যবহার করা হয়। |
৫. অর্থনীতি | ব্যক্তিগত উপার্জন বৃদ্ধি এর প্রধান লক্ষ্য। | এখানে আর্থিক উপার্জনের থেকে সামাজিক চাহিদা কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। |